মিটিং রুমে পিন পতন নিরবতা।অমলেশ ফাঁকা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সবার দিকে।সবার দৃষ্টিও অমলেশের দিকে।
-তোমাদের স্যার আর আমাদের সাথে নেই।ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার বলে যায়।
-তাহলে উনি কোথায় যাচ্ছেন?আচমকা প্রশ্ন করে বসে এক এম পি ও।
-অন্য কোন কোম্পানীতে ডেপুটি সেলস ম্যানেজার হিসেবে।অদ্ভুদ হেসে সেলস ম্যানেজার বলে।
-উনি অত্যন্ত সৎ ও কাজ জানা লোক বলেই আমরা জানি।উনার চাকুরী যাবে কেন?যাবার প্রশ্নই আসেনা। উঠে দাঁড়িয়ে হারুন বলে ।
সেলস ম্যানেজার কথা ঘুরিয়ে ফেলেন।মিটিং এর অন্য এজেন্ডায় চলে যান।
মিটিং শেষে সেলস ম্যানেজার অমলেশকে তার হোটেল রুমে নিয়ে যায় আর আশস্ত করে অমলেশকে এই বলে যে ওকে প্রোভাইড করা হবে।তবে এটাও জানান এই মূহুর্তে কোথাও ফাঁকা নেই।অপশন খোঁজা হচ্ছে। অমলেশ তার স্যারের কাছ হতে বিদায় নিয়ে হোটেলের নীচে আসে।হোটেল লবীতে ওর জন্যে অপেক্ষা করছিল এরিয়া ম্যানেজার সালেহীনসহ অনেক এম পি ও।সবার একটাই প্রশ্ন পোষ্টিং কোথায় হলো।অমলেশ সবাইকে বলে,আসলে সে জানেনা।তারপর বিদায় নিয়ে চলে আসে। রাস্তায় ওর মাথায় একটি প্রশ্নই ঘুরতে থাকে-চাকুরী আছে না চলে গিয়েছে।বাড়িতে ঢোকার আগে ও নিজেকে খুব দৃঢ় রাখার চেষ্টা করে।কারণ ও জানে, ও যদি ভেঙ্গে পড়ে তবে ওর মা এবং দীপাও ভেঙ্গে পড়বে।অমলেশের মায়ের এর আগে একবার স্ট্রোক হয়েছে।অমলেশ চায়না মা কোন কিছু নিয়ে টেনশান করুক।আর ছোট মেয়ে জন্মের সময় হতে দীপার হাইপার টেনশান।
-বাথরুমে গরম জল দেবো ?দীপা প্রশ্ন করে অমলেশকে।
-দাও।
-কোথায় দিলো জানতে পারলি?মা জানতে চায় অমলেশের কাছে।
-সিলেট হওয়ার সম্ভবনা আছে।
-আবার সিলেট !
-মা,মন খারাপ করোনা।চাকুরীটা থাকুক।
-বাবা,আমি স্কুলে ভর্তি হবো কবে? অমলেশকে বড় মেয়ে অন্তরা প্রশ্ন করে।
-দেখি বাবা।পোস্টিং হবে যেখানে সেইখানকার স্কুলে তোমাকে ভর্তি করতে হবে তাই বগুড়ায় আর ভর্তি করাবোনা।
-আচ্ছা বাবা। মেয়ে জবাব দেয়।
অমলেশ টেপ ছেড়ে দেয়।মেয়ের কথাটা বার বার মনে হতে থাকে।আর ভাবতে থাকে,কত বড় অপদার্থ পিতা।একটি কোম্পানীর রিজিওনাল প্রধান হওয়ার পরও মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেনা।অমলেশ স্নান করতে শুরু করে ।ওর চোখের জল আর স্নানের জল মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬