(৩)
শ্লোগান শুনতে শুনতে দীপ্তর মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়।বিবেককে ডাক দেয়।মানুষের গর্জনের প্রচন্ড শব্দে দীপ্তর ডাক বিবেকের কানে পৌছায়না।দীপ্ত মনে মনে ভাবে বাঙালীর পক্ষেই সম্ভব ছিল উল্টো দিকে হাঁটা।তাই পঁয়তাল্লিশ বছর পর জন্ম নিয়েছে শাহবাগ।
-অতখানি আশাবাদী হওয়া ঠিক হবে?
ঘার ঘুরিয়ে বিবেককে দেখতে পায় দীপ্ত।
-কেন?
-অর্থের স্রোত বইছে এখানে।আর?
বিবেক থেমে যায়।
-আর কি?
-সামনে থাবা বাবা নামক ছদ্মবেশী ব্লগারকে হত্যা করা হবে।এই হত্যাকান্ডের ভেতর দিয়ে একটি নেগেটিভ মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
-আমি থাবা বাবার লেখা পড়েছি।আমার কাছে লেখককে সাইকো মনে হয়েছে।
বিবেক আর কথা বাড়ায় না।হাঁটতে থাকে।দীপ্তও হাঁটতে থাকে।
-আমরা কি সিরাজগঞ্জে যাচ্ছি?
-না।
-আমাকে সিরাজগঞ্জে যেতে হবে।সানু মামার সব গল্প শোনা হয়নি।
-একাত্তরের গল্প শুনতে ভালো লাগে?
-বারে,পূর্বপুরুষের অতীত ইতিহাস জানতে হবেনা?
বিবেক কিছুক্ষণ চুপ থাকে,তারপর দীপ্তকে প্রশ্ন করে
-বদর দিবসের মিছিল তোমার কাছে কেমন লাগলো?
-কোন বদর দিবস?
বিবেক বুঝতে পারে দীপ্তর কোন কিছুই মনে নেই।বিবেক কথা বাড়ায় না হাঁটতে থাকে।সাথে দীপ্ত হাঁটছে। হাঁটছে।হাঁটছে।
ওমর তার চকচকে বাঁকানো ড্যাগার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়।নিরীহ ড্যাগারটি ভাবলেশহীন দৃস্টিতে দেখে দীপ্ত।বিশেষ কিছু মনে হয়না।ওমর জোড়ে জোড়ে হাত ঘুরিয়ে বাতাস কাটার চেষ্টা করে।
-“দিনের বেলায় আমি ওমর।কিন্তু রাত্রে আমি সীমার।তুমি কি আমার এই ড্যাগার দেখছো?কত যে কাফের আমি জবাই করেছি তা গুনে শেষ করা যাবেনা”।
দীপ্ত কোন প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেনা।দীপ্তর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে ওমর।
-কাফেররা ইসলামকে ধ্বংস করতে চায়।তাই ভারতের উস্কানিতে দেশটারে ভাঙ্গতে চাইছে ইসলাম বিদ্বেষীরা।তাদের হত্যা করা তোমার-আমার ঈমানী দায়িত্ব।যদিও তোমার নামটা হিন্দুর তবুও তোমার উচিত পাকিস্থানের এই দুঃসময়ে,ইসলামকে রক্ষা করার স্বার্থে এই যুদ্ধে অংশ নেওয়া।তা না হলে হাসরের ময়দানে তোমার কাছে কোনই জবাব থাকবেনা।
দীপ্তকে ওমর যশোর ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যায়।পাকিস্থানী আর্মিরা তাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে খুব সহজে মানুষ জবাই করা যায়।কিভাবে তীব্র অত্যাচার করে মানুষের মুখ থেকে কথা বের করে আনতে হয়।ট্রেনিং শেষে দীপ্ত ওমরের সাথে নড়াইলে ফিরে আসে।প্রতিদিন ওমরের লোকজন আর্মির সহায়তায় পনেরো-বিশ জন বাঙালী ধরে আনতো।ওমরের লোকজন তাদেরই ধরে আনতো যারা আওয়ামীলীগ করতো,কিম্বা সমর্থক,ধরে আনতো হিন্দুদের অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের।অবশ্য ওমরের কাছে ওরা মুক্তযোদ্ধা নয়,ওরা ইসলাম বিদ্বেষী ওরা শুধুই কাফের।মানুষ নয়।নদানর মাঠে ওরা এই হত্যাকান্ড ঘটাতো।মাঠটিকে ওরা কসাইখানা বানিয়েছিল।দীপ্তর সাথে একাত্তরের এপ্রিলে দেখা হলেও জুনে চুকনগরে গিয়েছিল দীপ্ত।হাত-পা বাঁধা একজনকে এনে প্রথম যেদিন দীপ্তর সামনে এনে ফেলা হয় সেদিন দীপ্ত খুব মজা পেয়েছিল।কত হবে?পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের যুবক হবে।দীপ্ত যুবকটির কান কেটে ফেলে।ওমর হো হো করে হেসে ফেলে।যুবকটির চিৎকার,ওমরের হাসি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।কাতর চোখে দীপ্তকে দেখতে থাকে যুবকটি।দীপ্ত খুঁচিয়ে তার চোখ উপড়িয়ে ফেলে।যুবকটি শুয়োরের মত চেঁচাতে থাকে।অসহ্য লাগে দীপ্তর।ওমরের দিকে তাকায়।ওমর ওই সময় একজনকে জবাই করছিল।দীপ্ত আর সময় নেয়না।সেও জবাই শেষ করে।এরপর দীপ্ত ওমরের কাছ হতে বিদায় নিয়ে চুকনগরের দিকে রওনা দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৩