somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাঁদ (প্রথম পর্ব)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)

আচমকা আজাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।পাশের রুম হতে উত্তেজিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।তারপর ঠাস শব্দ।কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর নারী কন্ঠের তীব্র স্বর-না আমি যাবোনা।আমি বাড়ি যাবোনা।তারপর দ্রুতপদে কেউ ফ্লোর দিয়ে হেঁটে যায়।ছাদের দরজায় ধরাম শব্দ হয়।

শুক্রবারে আজাদ একটু আরাম করে ঘুমাতে চায়।কিন্তু কোন শুক্রবারেই সেই আশা পূরণ হয়না তার।কোন দিন মোবাইল তারস্বরে বেজে উঠে তো কোন শুক্রবারে অন্যকোন হ্যাপা।যেমন আজ পাশের রুমের ভাইবোনের ঝগড়ার শব্দে আজাদের ঘুম ভাঙ্গলো।আজাদ টপ ফ্লোরের একটি রুম ভাড়া নিয়েছে।রুমের পাশে কিচেন আর বাথরুম।তার ওপাশে আর একটি রুম।এক ভাই আর এক বোন ভাড়া থাকে।বোনটা বেশীর ভাগ সময় থাকেনা।গতকাল ওদের মা আর ছোট ভাই এসেছে।ওদের বাবা মাঝে মধ্যে আসে।বেশ অদ্ভুদ ফ্যামিলি।মোবাইল হাতে নেয় আজাদ।সময় দেখে।পৌনে এগারোটা বাজে।শুয়ে থেকেই বাড়িতে ফোন দেয়।
-আব্বা ঘুম ভাঙ্গলো?
বড় মেয়ের প্রশ্ন শুনে আজাদ হেসে উঠে।
মোবাইলের মধ্যেই আজাদ শুনতে পায় ছোট মেয়ের কন্ঠস্বর।সে আপুর কাছে ফোন চাইছে কথা বলার জন্য।
-আব্বা,আমি বড় হয়ে গিয়েছি না?
ছোট মেয়ের প্রশ্ন শুনে কি উত্তর দেবে আজাদ ভাবে।
-কেন মা?
-দেখোনা আপু বলছে আমি নাকি এখনও ছোট।
-তা তুমি বড় হলে কিভাবে?
আজাদ প্রশ্ন করে।
-কেন আব্বা আমার মাথায় উকুন আছে,আম্মার মত আমারও মাথা ধরে।দাদীর মত আমারও ঘাড় ধরে।তাহলে তো আমিও বড় হয়ে গিয়েছি বলো?
-দাদীর মত তোমারও ঘাড় ধরে?
-হ্যাঁ আব্বা ।
-তাহলে মা তুমি নিশ্চই বড় হয়ে গিয়েছো।দাও তোমার আম্মাকে দাও।
-বলো কি বলবে?
সুলতানা প্রশ্ন করে।
-তোমার ছোট মেয়ের কথা শুনেছো?উনি নাকি বড় হয়ে গিয়েছেন।
-শুনলাম।উনি আজকে বিছানা ভরে হিসি করে দিয়েছেন।
আজাদ আর সুলতানা একসাথে হেসে উঠে।


আজাদ আর তার দূর সম্পর্কের শ্যালক যখন রুম ভাড়া নেয় তখন পাশের রুমটি ফাঁকাই ছিল।ওদের বাসার পেছনেই মৌচাক।আজাদ অফিস হতে ফেরার সময় মৌচাকে থেমে প্রতিদিন এক কাপ চা খায়।চা খেতে খেতে মানুষ দেখে।আসলে মানুষ নয় আজাদ মেয়ে মানুষ দেখে।কারও বুক দেখে।কারও নিতম্ব দেখে।আজাদ একটি জিনিস ভেবে খুব অবাক হয়-কোন মেয়ের বুক খুব সুন্দর হলে নিতম্ব সুন্দর হয়না।আর নিতম্ব সুন্দর হলে বুক সুন্দর হয়না। প্রতিদিনের মত চা খেয়ে আজাদ বাসায় ফেরে।পাশের ঘরে আলো জ্বলছে।

-ওই রুমে কারা?
আজাদ সানির কাছে জানতে চায়।
-নতুন ভাড়াটিয়া দুলাভাই।
-কয়জন?
-অনেক।

আজাদ জামা কাপড় ছেড়ে রান্নার প্রস্তুতি নেয়।তরকারি কাটা শেষ হলে রান্না চাপিয়ে দেয়।
-আপনার আর কতক্ষণ সময় লাগবে রান্না করতে?
আজাদ পেছনে তাকায়।বেশ মোটাসোটা এক তরুণী দাঁড়িয়ে আছে।
-সময় লাগবে।
আজাদ বেশ বিরক্ত হয় মেয়েটিকে দেখে।ব্যাচেলারদের সাথে মেয়ে থাকবে কিভাবে?বাড়িওয়ালারও কোন আক্কেল নেই।ভাড়া পেলেই হলো আর কি।

বেশ কয়েক মাস হলো আজাদ বাড়ী যেতে পারছেনা।কোন ভাবেই ছুটি ম্যানেজ করতে পারছেনা।শরীর আর মন দুই ছটফট করছে সুলতানার জন্য।পর্ণ সাইট আর মাষ্টারবেশন করে কাঁহাতক ভালো লাগে আর।অফিস ছুটির পর বেশ অশান্ত মন নিয়েই আজাদ বাসায় ফেরে। মেয়েটি রান্না করছে।আজাদ ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বসে।আজকে রান্নায় ঢুকতে বেশ সময় লাগবে তাই আজাদ ইউ টিউবে মুভি অন করে।মেয়েটি গান গাওয়া শুরু করে দেয়।ইদানিং এই সিনড্রোম শুরু হয়েছে।বাসায় যদি কেউ না থাকে আর শুধু আজাদ থাকে তাহলে মেয়েটি গান গাওয়া শুরু কর দেয়।


-আমি শুধু আপনার জন্যেই থেকে গেলাম।।
রিতীকা গাল ফুলিয়ে বলে।
আজাদ কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা।ওর মনের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ চলতে থাকে।একদিকে গোপন শরীরী আকর্ষণ অপরদিকে সুলতানা আর ফুটফুটে দুই মেয়ে।আজাদের মনে হতে থাকে ও পানির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ।এক নিষিদ্ধ আকর্ষণ গ্রাস করে নেয় আজাদকে।


(২)
তারেক মনোযোগ দিয়ে ফাইলটা পড়ে।ভিকটিমের কোন তথ্যই এখন পর্যন্ত নেই।লাশের ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি।থানার দারোগাকে ডেকে নেয় সে।
-বাবর সাব আমি আর একবার ওই স্পটে যাবো আর ফেরার পথে কালুমিঞার লগে দেখা করে আসবো।
-চলেন স্যার।
তারেক গাড়ি নেয়না।বাবরের বাইকে উঠে বসে।ভেড়িবাঁধের কাছে এসে দু’জন নেমে পড়ে।
-এইখানে লাশটা পড়েছিল।
বাবর বলে।
-বস্তায় ভরা ছিল?
-জ্বি স্যার।
-এদিকে তো ভালোই মানুষ চলাচল করে দেখছি।
-সন্ধ্যার পর একদম নির্জন হয়ে পড়ে স্যার।আপনি যখন লন্ডন ছিলেন সে সময়ের মধ্যে তিনটি ক্রস ফায়ার হয়েছে এখানে।
-এখান থেকে কালুমিঞার দোকান কতদূর?
-তিন মাইল হবে।
বাবর উত্তর করে।
-চলেন কালুমিঞার দোকানে যাই।
তারেক আর বাবর আবার বাইকে চড়ে।তারেকের মনে প্রশ্ন উঁকি মারতে থাকে-ঝোপের মধ্যে কালুমিঞা কেন গিয়েছিল।

কালুমিঞার দোকানের সামনে বাবর গাড়ি স্ট্যান্ড করে।বাবরকে দেখেই কালুমিঞা দোকানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে।
-সালাম স্যার।আসেন আসেন।ওই জব্বার কোক লইয়া আয়।
-কোক খাবোনা।চা আনাও।
তারেক বলে।
-স্যার আপনাকে চিনলামনা।
কালুমিঞা হাত কচলাতে কচলাতে বলে।
-আমার স্যার।ওই কেসটা এখন উনি দেখবেন।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×