পৃথিবীর উষ্ণায়ন প্রকৃতি এবং আমাদের জীবন যাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।আমরা যদি স্বাদুপানির মাছ চাষীর দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখবো তাদের মাছ উৎপাদন তাপদাহ প্রবাহের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তাদের মাছ উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে,উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে,আর সময়ের আগেই পুকুর হতে মাছ বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে।ফলে তাদেরকে লসে মাছ বিক্রয় করতে হচ্ছে।
মাছের সহনশীল উচ্চ তাপমাত্রা:
সাধারণত ইন্ডিয়ান মেজর কার্পজাতীয় মাছ ২৫ ডিগ্রী সে.-৩৬ ডিগ্রী সে. এর মধ্যে গ্রোথ ভাল হয়।আর কৈ,শিং,মাগুর মাছ ৪১ ডিগ্রী সে পর্যন্ত সহনশীল।পাংগাস মাছের বৃদ্ধি ৩৭ ডিগ্রী সে. এর উপরে বাধাগ্রস্ত হয়।
মাছ চাষে উচ্চ তাপদাহের প্রভাব:
১। পুকুরের অণুজীবের সংখ্যায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়।যেমন-অ্যামোনিয়া-অক্সিডাইজিং ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।ফলে পুকুরে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন স্পেসিস বৃদ্ধি পায়।
২।পুকুরের পানিতে ক্ষতিকর ছত্রাকের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে মাছের রোগ-বালাই বৃদ্ধি পায়।
৩।উচ্চ তাপমাত্রায় পুকরের জলে সহজলভ্য ফসফরাস হ্রাস পায়।ফলে নাইট্রোজেন-ফসফরাসের রেশিও বদলে যায়।
৪।ফাইটোপ্লাংকটনের ডাইভারসিটি হ্রাস পায়।সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৫।জুপ্লাংকটনের আকার ও অভ্যাসে পরিবর্তন আসে।
৬।কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী মিক্সোট্রফ বৃদ্ধি পায়।
৭। জলে দ্রবিভূত অক্সিজেন কমে যায় ও কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পায়। ফলে মাছ ভাসার প্রবণতা বাড়ে ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়।
৮।রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস বৃদ্ধি পায় ও মাছের রোগ-বালাই বৃদ্ধি পায়।
৯। মাছের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে।
১০। কৃত্রিম খাদ্যের FCR বৃদ্ধি পায়।
মৎস্যচাষীর করণীয়ঃ
চীনা প্রবাদ বলে তোমার পুকুরের গভীরতা এক ইঞ্চি বৃদ্ধি কর,তোমার মাছও এক ইঞ্চি বৃদ্ধি পাবে।
১। কম ঘনত্বে মাছ চাষ করা উচিত।
২।পুকুরে নিয়মিত সেচের পানি দিতে হবে।
৩।এয়ারেটর সহ মাছ চাষ করতে হবে।
৪।এ বছর জুন মাস পর্যন্ত ১৩ টি হিট ওয়েভ আসবে।তাই এই সময় পর্যন্ত কচুরীপানা/কলমী দিয়ে ছায়াঞ্জল পুকুরে তৈরি করতে হবে।
৪।পুকুরের জলের তাপমাত্রার সাথে সামন্জস্য রেখে খাদ্য প্রদানের শিডিউল ঠিক করতে হবে।
৫।পুকুরে ডিও লেভেল বৃদ্ধি করতে হবে।
৬।নাইট্রোজেন-ফসফরাস রেশিও ৪:১ হতে ২০:১ এর মধ্যে রাখতে হবে।
৭। ক্ষতিকর নাইট্রোজেন স্পেসিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৮।যেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যাবে সেদিনের বিকালের খাবার বন্ধ রাখতে হবে ও পুকুরে ভেটেনারী স্যালাইন(প্রোলাইট) ব্যবহার করতে হবে।
৯। CO2 নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে একজন খামার/মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সোডিয়াম বাই কার্বনেট প্রয়োগ করতে পারেন।
১০।মাছ কম খাবার গ্রহণ করলে (অসুস্থতা ব্যাতিত) খাদ্যে পুষ্টিমান বৃদ্ধি করুন।
১১। যে কোন বিশেষজ্ঞ/ল্যাব হতে গিল/টিস্যু বায়োপসি/মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে সম্ভাব্য রোগ-বালাইয়ের হুমকী মোকাবিলা করুন।
নাটোর
২১/০৪/২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৬