somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মে দিবস!

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহমান সাহেব। বিশাল নামজাদা সমাজকর্মী। মে দিবস উপলক্ষে তাকে একটা বিশেষ আলোচনা সভায় যেতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীও আসবেন। রহমান সাহেব সেখানে বিশেষ অতিথি। একটা স্পীচ দিতে হবে সুন্দর করে।গতকাল রাত থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে স্পীচ দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। একটু পরই বের হতে হবে।সকাল থেকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু আর পারলেন কই? বুয়া এসে এই মাসের বেতন আজই দিতে বলল। তার মেয়ে নাকি অসুস্থ।কয়দিন ধরে জ্বরে মরছে। ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে মাস শেষে যে টাকাটা সে পাবে তা যাতে তাকে এখন দিয়ে দেয়া হয়। আরে, টাকা কি গাছে ধরে নাকি??! হাতে এখন টাকা নেই ,টাকা দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না এটা বুয়াকে ভালো ভাবে বক্তৃতা দিয়ে বুঝাতে গিয়েই মাথা গরম হয়ে গেলো তার।

খাবার টেবিলে বসে মেজাজ আর বেশি বিগড়ে গেলো। চা তে চিনি বেশি হয়েছে। রহমান সাহেব ভদ্রলোক, ভীষণ সাস্থ্যসচেতন।চায়ে চিনি কম খান। চায়ে চিনি কেন বেশি হল এই নিয়ে বউ কেও এক হাত দেখে নিলেন। মিসেস রহমানের শরীর আজ বিশেষ ভালো নেই। জ্বর জ্বর লাগছে তাই সব কাজ একটু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছেন।তাড়াহুড়োয় স্বামীর জন্য চা বানাতে গিয়ে ভুলে চিনি বেশি ঢেলে ফেলেছেন। রহমান সাহেব যখন তাকে একহাত দেখে নিচ্ছিলেন তখন মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা করছিল তাই কারণ দর্শানোর সুযোগও পাননি। যাইহোক, বউ কে একহাত দেখে নিয়ে বের হওয়ার সময় দেখেন জুতাটাই পালিশ করা হলনা! রাগে গজ গজ করতে করতে নিজেই পালিশ করে বেরিয়ে পড়লেন।

গাড়িতে এসি অন। তবুও মাথা ঠাণ্ডা হচ্ছে না তার। হাতের script এর উপর চোখ বুলিয়ে একটু থিতু হয়ে বসলেন তখন ড্রাইভার বলল “স্যার, আমার ছুটি লাগবে। আর কিছু টাকাও যদি দিতেন উপকার হতো। ঘরে বৃদ্ধা মা অসুস্থ। ওষুধ কেনার টাকা নাই।মা কে একটু দেখে আসতে চাই স্যার”......
-‘চলে যা বাড়িতে। তোর চাকরি নট। কাল থেকে আর আসা লাগবে না। আমি অন্য ড্রাইভার দেখব। এই নে টাকা । বিদায় হ!!”
গাড়ি থামল জায়গামতো। অনেক গাড়ি আর সিকিউরিটির ভিড়। মন্ত্রি আসবেন বলে কথা। রহমান সাহেব কোটের বোতাম লাগিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। পিছনে হতভম্ব ড্রাইভার একা দাঁড়িয়ে। মাথায় তার হাজার চিন্তা। এই চাকরি না থাকলে বৃদ্ধা মা যে না খেয়ে মরবে, বোনের বিয়ে হবে কি করে? আরেকটা চাকরি পাওয়া তো অতও সোজা না।এখন তার কি হবে............।

বিখ্যাত সমাজকর্মী রহমান সাহেব মে দিবস উপলক্ষে ,শ্রমিক নির্যাতনের বিপক্ষে এবং নির্যাতিত শ্রমিকদের পক্ষে এক জ্বালাময়ী ও মর্মস্পর্শী ভাষন দিলেন। ভাষণ শেষে তিনি যখন করতালি আর প্রশংসার জোয়ারে ভাসছিলেন ড্রাইভারটি তখন ও সজল চোখে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, বুয়াটি তখন ও রান্নাঘরে পাতিল ঘষামাজা করতে করতে অসুস্থ সন্তানের কথা ভেবে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিল আর মিসেস রহমান দাতে দাঁত চেপে ঘরকন্না সম্পন্ন করছিলেন। তাকে যে অসুস্থ হলে চলবে না। তাহলে সংসার চলবে কি করে?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৫৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×