প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা।
ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে ঘটেছিলো ।
আহাম্মদ মুন্সী ছিলেন আফগানিস্তান থেকে আগত পূর্ব পুরুষের বংশধর। গ্রামের অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থ তিনি। বাড়ির সামনেই পুরোনো আম কাঁঠাল গাছের বাগান, জঙ্গলও বলা চলে। কোনো কারণে একদিন আহাম্মদ মুন্সী সিদ্ধান্ত নিলেন, পুরোনো এই জঙ্গল কেটে বড় দীঘি খনন করা হবে।
সেই মতো কাজ চললো। জঙ্গলের বহু পুরোনো সব আম কাঁঠালের বিশাল গাছগুলো কেটে সাফ। এবার মাটি কাটার কাজ। খনন হতে লাগলো দীঘি। একটু একটু করে গভীরতা বাড়তে থাকলো বিশাল গর্তের।
সাধারণত, কয়েক হাত নিচে গেলেই মাটির নিচের পানির স্তরের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার! এই দীঘি খুঁড়া হলো অনেক গভীর করে, তবুও পানি উঠবার নামই নেই !
এই অবস্থা দেখে আহাম্মদ মুন্সী সিদ্ধান্ত নিলেন, যা খুঁড়া হয়েছে তা হয়েছেই, এবার এর তলদেশে কূপ খনন করা হোক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একে একে সাত সাতটি গভীর কূপ খনন করা হলো! কিন্তু পানির দেখা নেই !!
শূণ্য গর্ত এভাবেই পড়ে থাকলো কয়েকদিন।
আহাম্মদ মুন্সীর এক অপরূপা সুন্দরি কন্যা ছিলেন। দীঘি খুঁড়ার কয়েক দিন পর এক বৃহস্পতিবার রাতে আহাম্মদ মুন্সীকে স্বপ্নে দেখানো হলো, তাঁকে বলা হচ্ছে,
"দীঘিতে পানি উঠবে যদি তোমার মেয়েটা দিয়ে দাও!"
স্বপ্নের মধ্যেই বাক-বিতণ্ডা হলো, তিনি মেয়ে দিতে নারাজ।
অবশেষে প্রস্তাব এল, "তাহলে তোমার একটা চোখ দিয়ে দাও!"
তিনিও বিরক্তি ভরে বললেন, "যা..... নিয়ে যা !"
সেই রাতের শেষে, শুক্রবার ভোরে যখন তিনি জেগে উঠলেন, তখন তাঁর একটি চোখে দৃষ্টি শক্তি ছিলো না। সেই থেকে তাঁকে একটি চোখের দৃষ্টি নিয়েই থাকতে হয়েছিলো ।
যাই হোক, সেদিন শুক্রবার, দুপুরে জুমার নামাজ পরতে মুসল্লিরা আসলেন ঐ দীঘিটার পার্শ্ববর্তী মসজিদে। এই মসজিদটিও আহাম্মদ মুন্সীর পারিবারিক মসজিদ, অনেক পুরনো।
নামাজ শেষ করে জামাত ভেঙে যখন মুসল্লিরা বেরোতে শুরু করলেন মসজিদ থেকে, তখন একটি আওয়াজ শোনা গেলো গুঞ্জনের মতো। আওয়াজের উৎস-
সদ্য খননকৃত শুকনো দীঘি।
দেখা গেলো, দীঘির তলদেশের কূপগুলো থেকে ফিনকি দিয়ে পানির ধারা ছিটকে উঠছে !
ক্রমশ বর্ধমান সেই ধারার বেগ একসময় কুন্ডলী পাকিয়ে উথলে উঠতে শুরু করল। দেখতে দেখতে চারপাশের বহু মানুষের চোখের সামনে পানিতে ভরে গেলো দীঘি।
অবশেষে পানি উঠলো দীঘিতে।
কথা রাখলো "তারা", আহাম্মদ মুন্সীর চোখ এর বিনিময়ে দীঘিতে পানি উঠলো ।
পুরনো আম কাঁঠালের জঙ্গল কেটে ফেলে সম্ভবত "তাদের" অসুবিধা করা হয়েছিলো। তাই "তারা" উপযুক্ত মূল্য আদায় করে নিলো!
Note : ঘটনাটি আমার খুব নিকটাত্মীয়ের পরিবারে ঘটেছিলো । এই কাহিনীর সকলেই আমার relative,
শুধু জ্বিনরা ছাড়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:০৭