বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে জামাত শিবির ও ছাত্রদল মিলে যে অপকর্মগুলো করতে পারেনি ছাত্রলীগ একাই সেগুলো করে যাচ্ছে। জামাত শিবির ও ছাত্রদল ছিল তাদের সময়ে সর্বোচ্চ মাত্রার পাগল। কিন্তু আওয়ামী সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে ছাত্রলীগ যে কুকর্ম করে চলেছে তা পূর্বের সকল পাগলকে নিশ্চিন্তে লজ্জায় ফেলবে। তাদের কর্মকান্ডে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত কয়েক বছরে নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন, দখল-বাণিজ্যের সঙ্গে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়ায় বরাবরই শিরোনামে উঠে এসেছে সংগঠনটির নাম। প্রতিষ্ঠাকালীন এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে কেবল অর্থ এবং প্রভাবের পেছনে ছুটছেন নেতাকর্মীরা। গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী নেতাদের অর্থের পাহাড়, বিলাসবহুল জীবন যাপন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অসন্তোষ, দেশব্যাপী কর্মীদের নানা অপকর্ম, গণহারে পদ প্রদানল্লল্ম, অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়েছে সংগঠনটিতে। এসব নিয়ে নিত্য দিনই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে অনেক নিরীহ কর্মী। নেতাকর্মীদের বেসামাল কর্মকান্ডে নাকাল হয়ে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি।
আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার সাথেসাথেই রাজাকার সংঘটন জামাতশিবির গোপনীয়তা অবলম্বনের রাজনীতি শুরু করে। তারা নিজেদের রক্ষায় ইঁদুরের মত গর্ত খোঁজতে থাকে। আর এতে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিবিরের জন্য স্টকে রাখা ভিন্নরকম নির্যাতনগুলোর শিকার হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ। ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই দৈনিক ইনকেলাবের প্রকাশিত খবর অনুযায়ি, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৮ বছরেই অভ্যন্তরীণ ও প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে ১২৫ জন নিহত হয়েছে।
আমরা বিগত আট বছরে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতন ও লজ্জাকর দুর্নীতির অবস্থা দেখে আসছি কিন্তু এর সঠিক বিচার দেখিনি; যেমনটা দেখেছি সাবেক দুর্নীতিবাজ নেত্রীর ক্ষেত্রে। এই বিচারে অনেককে খুশি হতে দেখেছি। আমাদের স্বরণ আছে যে, ১৯৭৫ এর আগষ্টের পর আওয়ামীলীগের কোন নামগন্ধ ছিল না; মানুষের অন্তর ব্যতীত। হয়ত আওয়ামীলীগ চাচ্ছে বিএনপিকে ৭৫এর আগষ্ট উপহার দিতে, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। যদি আগামী কতেক বছরে বিএনপির সূর্য অস্তমিত হয় এতে খুশি হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই বিএনপির পুনর্জন্ম; যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে কলুষিত করবে, যেমনটা এখন আওয়ামীলীগ করে আসছে। যেটাকে অভিধানের ভাষায় বলে প্রতিহিংসা। প্রতিহিংসাগ্রস্থ রাজনীতিবিদরা অবচেতনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে লালঘরে কিংবা কালোঘরে ভাবতে শুরু করেছেন। আর এতে সাধারণ জনগণের রক্তই ক্ষয় হচ্ছে।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, কিছু ব্লগার ভাইয়েরা বাংলাদেশ বিচারবিভাগ স্বাধীন রয়েছে বলে দাবী করেন। কিন্তু বাস্তবিকার্থে বিচারবিভাগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে, হয়ত আগামীতে এর ব্যাপকতা চূড়ান্ত বৃদ্ধি পাবে। তবে প্রত্যেক চূড়ান্ত সীমালঙ্ঘনের পর শান্তি আসে।
ছবি. দৈনিক ইনকেলাব
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:১৩