somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জীবনের এক মজার ভ্রমণ কাহিনী - (স্বপ্নপুরী অভিযান) - পর্ব ১ B-)

০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা নাগরিক মানুষেরা নগর নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে করতে দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। জীবিকার তাগিদে সবাই যেন যন্ত্রের মত দিবারাত্রি কেবল কাজ আর কাজই করে চলেছে। কাজের চাপে অনেক সময় নাওয়া, খাওয়া আর ঘুমটাও ঠিক মত হয়না। কিন্তু এহেন জীবন কাঁহাতক আর সওয়া যায়? মানুষ তো আর যন্ত্র নয়। মনেরও যে একটা চাহিদা আছে। সেটি না মেটালে তো চলবেনা।

নগরের ইট কাঠের বন্ধন আর একঘেয়ে জীবন থেকে সাময়িক মুক্তির জন্যে মানুষ সব শহরেই অনেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। তবে আমার মনে হয় এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, বন্ধুবান্ধব বা আত্নীয় স্বজন অনেকে মিলে একত্রে দূরে কোথাও বনভোজন বা পিকনিক এ যাওয়ার মত আনন্দের বিষয় আর হতে পারেনা। নিষ্প্রাণ জীবনে নতুন করে আনন্দের শিহরন জাগাতে বনভোজন এর তুলনা নেই। আজকে কিছু একটা লিখতে বসে হঠাৎ বনভোজন এর কথা মনে পড়ল। তাই বনভোজন নিয়ে নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি।

যখনকার কথা বলছি সেটা ২০১০ সাল এর ডিসেম্বর মাস। সে সময় আমি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়ি তড়িৎ কৌশল বিভাগে। মাত্র এক মাস আগে তৃতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কঠিন সব পড়াশোনার চাপে আর পরীক্ষা নামক এক অকথ্য নির্যাতনের অত্যাচারে শরীর, মন উভয়ই ভীষণ ক্লান্ত। তাই চতুর্থ সেমিস্টার এর ক্লাশ শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরেই মনে হল এবার একটা অভিযানে বের হতেই হবে। যেই কথা, সেই কাজ। দুই সেকশন এর ছাত্রদের ভেতর থেকে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম কোথাও পিকনিক এ যাব।

ক্লাশের দুই সেকশন এ ঘোষনা দেয়া হল। পিকনিকে যেতে আগ্রহীরা পিকনিক স্পট এর ব্যাপারে জানতে চাইল। ক্লাশের প্রতিনিধিরা আগ্রহীদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করল যে দিনাজপুর এর স্বপ্নপুরী বেড়াতে যাওয়া হবে। শুনে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই রাজী হল। সবার ভেতরেই উত্তেজনা। কিন্তু আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য ডিপার্টমেন্ট এর কোন শিক্ষককেই রাজী করানো গেল না। উনারা সবাই কাজের অজুহাত দেখিয়ে সাফ মানা করে দিলেন। আশা করি আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, কোন গার্জিয়ান ছাড়া শুধুমাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের একপাল ছেলেপেলের দলে কোন মেয়েকে নেয়া ঠিক না। তাও আবার এত দুরের যাত্রা। অগত্যা মেয়েদেরকে অভিযানের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হল। এই সিদ্ধান্তে নিশ্চয়ই তাদের মন খারাপ হয়েছিল কিন্তু, আমাদের এ ব্যাপারে অন্য কিছু করার ছিলনা।

শেষ পর্যন্ত উভয় সেকশন থেকে প্রায় ৫০ জন ছাত্র তালিকাভুক্ত হল। সকল খরচাদি বিবেচনা করে চাঁদা ধার্য করা হল জন প্রতি ৫০০ টাকা। চলতি পথে সকালের, দুপুরের এবং বিকেলের খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হল। রাতের খাবার রাজশাহীতে পৌঁছে পূর্বনির্ধারিত একটি হোটেল থেকে প্যাকেটে করে দেয়া হবে। অতঃপর আমাদের অভিযানের জন্যে ৫২ সিট এর একটি বাস ভাড়া করা হল। যেহেতু রাজশাহী থেকে দিনাজপুর অনেক দুরের পথ তাই আমরা ঠিক করলাম যে রাত্রি ১২ টার সময় রওনা দেব। কিন্তু অনেকেই এই সিদ্ধান্তে বাধ সাধল। একে শীতের রাত। তার ওপর রাস্তায় ভীষণ কুয়াশা। দুর্ঘটনার ভয় আছে। শেষ পর্যন্ত সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে ভোর ৪ টার সময় বাস ছাড়া হবে।

আমি যেহেতু শহরের স্থানীয় বাসিন্দা, তাই ঠিক করলাম রাতটা বন্ধুদের সাথে হলেই কাটাব। কেননা, বাস ছাড়া হবে ক্যাম্পাস থেকে এবং আমার বাসা থেকে তা বেশ খানিকটা দুরের পথ। রাত ৩ টার সময় রিক্সা বা অন্য কোন বাহন পাওয়াটা খুবই মুশকিল। সুতরাং রাত নয়টা বাজতে বাজতেই ক্যাম্পাসে হাজির হলাম। হল এ এসে যে রুম এ উঠলাম সেখানে থাকত আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কয়েকজন। মজার ব্যাপার হল যে সেটাই ছিল হল এ কাটানো আমার জীবনের প্রথম রাত। তাই বন্ধুরা আমাকে দেখে কি যে খুশি হল তা আর বলার নয়।

সেই রাতটা হাসি আর গল্পের মধ্য দিয়ে খুব আনন্দেই কেটেছিল। পিকনিকে যাওয়ার জন্য ভেতরে এতটাই উত্তেজনা অনুভব করছিলাম যে রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুমাতেও পারলাম না। ঘন্টা দুয়েক বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে রাত সাড়ে তিনটার সময় উঠে পড়লাম। বন্ধুদেরকেও ডেকে ডেকে ঘুম থেকে উঠালাম। অতঃপর চটপট হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। প্রচন্ড শীতের ভেতর কাঁপতে কাঁপতে বন্ধুদেরকে নিয়ে বাস এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
হলের বাইরে বেরিয়ে দেখি ক্যাম্পাসের পাকা রাস্তার উপর বাস দাঁড়ানো। দেখলাম আমাদের আগেই ১৫-২০ জন হাজির হয়ে গেছে। তখন বাসে প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র তোলা হচ্ছিল।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ভোর ৪ টা বাজে। অর্থাৎ আমরা ‘লেট লতিফ’ এর দলে। যাই হোক সবাই আসতে আসতে পৌনে ৫ টা বেজে গেল। তার মানে অন্যদের তুলনায় আমরা আসলে খুব একটা লেট ছিলাম না। যাই হোক, আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছিল যে বাসের সিটের জন্য লটারি করা হবে। অতঃপর লটারি শেষে সবাই বাসে উঠে নির্ধারিত সিটে বসে পড়লাম। নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পর ঠিক ৫ টায় বাস ছাড়া হয়েছিল। বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই একত্রে আনন্দধ্বনি করে উঠলাম। এরপর যথারীতি সাথে করে নেয়া মিউজিক সিস্টেমে উচ্চ ভলিউম এ গান বাজানো আর তুমুল হইচই করে নাচানাচি।

প্রায় ঘন্টা খানেক নাচানাচি করে অবশেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সাথে সাথে যে যার সিটে বসে পড়ে নাক ডাকাতে লাগল। বাসের ভেতর পেছন দিকে যখন তুমুল নাচানাচি চলছে আমি তখন রাতজাগা ক্লান্ত শরীরে সামনের দিকে এসে একটা খালি সিটে বসে খানিকটা ঘুমিয়ে নিলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন বাজে সকাল সাড়ে ছ’টা। তাকিয়ে দেখি যে যার সিটে বসে ঢুলছে। ঘুম কাটাতে বাসের একদম সামনে ইঞ্জিন এর উপরের গদি মোড়া জায়গায় এসে বসলাম।

তখন শীতের কেবল শুরু। জানালার ফাঁক ফোকর দিয়ে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া আসছিল। হেলপার কে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে, আমাদের বাস নাটোর পেরিয়ে বগুড়ার পথে হাইওয়ে ধরে ছুটছে। পথের দু পাশে অনেক বড় বড় গাছ আর তার পরেই কুয়াশায় ঢাকা অবারিত মাঠ। দারুন একটা দৃশ্য। রীতিমত চোখে নেশা ধরিয়ে দেয়। একবার তাকালে চোখ ফেরানোই কঠিন। অতএব, পরের একটি ঘন্টা স্থির বসে থেকে শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখেই কাটিয়ে দিলাম। ও আচ্ছা, তখনও আমার ক্যামেরা কেনা হয়নি। তাই ছবি তোলার ইচ্ছেটা তখনকার মত স্থগিত রাখতে হল।

সকাল ৮ টার সময় বগুড়া হাইওয়েরই এক জায়গায় রাস্তার ধারে যাত্রা বিরতি করা হল। ততক্ষণে সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। বাস থামিয়ে আমরা নেমে পড়লাম। পথের পাশে এক টুকরো ফাঁকা জায়গার পরেই ছিল একটা বিশাল কলাবাগান। সেখানে কয়েকজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেল। এই সুযোগে আমাদের কয়েকজন দুষ্টু বন্ধু তাদের মোবাইলের ক্যামেরা নিয়ে ওদের ধাওয়া করল। উদ্দেশ্য বাথরুম করা অবস্থায় ওদের ২-৪ টা ছবি তুলবে যাতে পরে ওগুলা দেখিয়ে খেপানো যায়। কিন্তু যারা বাথরুম করতে গিয়েছিল তাদের অতিরিক্ত সতর্কতার কারনে সেটি সম্ভব হল না। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা চরম হাসাহাসি করেছিলাম।

সবাই বাস থেকে নামলে আমরা পথের ধারেই দাঁড়িয়ে নাস্তা সারলাম। মাখন লাগানো পাউরুটি, কেক, কলা, সেদ্ধ ডিম আর বিস্কিট দিয়ে নাস্তাটা দারুন জমেছিল। নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে আমরা ফটোসেশনও করলাম। তারপর ১৫ মিনিটের যাত্রাবিরতি শেষে আবার সবাই বাসে উঠে পড়ল। আমরা স্বপ্নপুরীর পথে ফের রওনা হলাম।
__________________________________________________

আজ এইটুকুই। বকিটুকু পর্ব-২ তে দিব। লেখা কেমন হয়েছে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি থাকলে তাও জানাবেন। ধন্যবাদ।


স্বপ্নপুরী অভিযান - পর্ব ২ ( ছবি সহ!!) "এটাই কিন্তু শেষ পর্ব।"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:১৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×