ঈদের ছুটিতে ঢাকার চেহারায় ছিমছাম শান্তস্নিগ্ধ আবহ ফিরে আসে। আমার ভালো লাগে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। রিক্সা দিয়েও শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে অনায়েসে ঘুরে বেড়ানো যায়। হাটে, বাজারে, রাস্তাঘাটে হট্টগোল নেই। ফুটপাথে নেই ফেরিওয়ালার পসার। দুদিনের বর্ষণে চারপাশ ঝকঝকে তকতকে লাগছে। মনে হচ্ছে ইউরোপের কোন শহরে আছি।
আমার বাসা এলিফ্যান্ট রোডে। যাচ্ছি বনানীতে ফুপুর বাসায়। রিক্সা করেই। বড় জোর আধা ঘন্টা লাগবে। রিক্সা নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রোকেয়া হলের সামনে আসতেই ফৌজিয়ার কথা মনে পড়ে। ঈদে ফৌজিয়া বাড়ি গেছে। ওর বাড়ি টাঙ্গাইল। দূরে থেকেও সে কাছেই আছে। একটু পর পর মোবাইলে কথা হচ্ছে। ক্লাস শুরু হওয়ার আগের দিন ও চলে আসবে। কোথাও কোন জ্যাম নেই। রিক্সা চলছে একই গতিতে। শাহবাগের মোড়টা কি দারুণই না লাগছে ! আহা শহরটা যদি সবসময়ই এমনটি থাকতো!
পরিবেশবিদদের জরীপে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী। আশংকা করা হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা না নিলে দুইদশকের মাঝেই এটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। বিকেন্দ্রকীকরণই একমাত্র সমাধান। আমাদের রাজনীতিবিদরাও তা জানে। বিকেন্দ্রীকিকরণে রাজনীতিবিদদের এত ভীতি কেন আমি বুঝি না।
রিক্সা এখন যাচ্ছে মহাখালি ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে। ফ্লাইওভারটা তো বেশ সুন্দর। ঈদের ছুটি ছাড়া এ সৌন্দর্য অনুভব করার নয়। ঢাকার এই রূপ ধরে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে শহরে ঢোকার সবকটি ফটক বন্ধ করে দিতে। তাহলেই কেউ আর আসতে পারবে না শহরটিকে বস্তিনগরী বানাতে। অন্ততঃ আমরা যারা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা তারা তো বেঁচে যাব!। অনেকটা স্বার্থপর ভাবনা।
নাহ, নাহ .. এ কী করে হয় ! তাহলে আমার ফৌজিয়া আসবে কী করে ! আমার মতোন অনেক যুবকের ফৌজিয়ারা আসবে কী করে!!
রিকশা বনানীতে ঢুকে পড়েছে। যাচ্ছি কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে। ২৪ নম্বর রোডে ফুপুর বাসা। প্রায় কাছাকাছি। রিকশা চলছে। রাস্তার অন্যপাশে লাল রঙের একটি লেক্সাস জীপ এসে থামলো। জীপ থেকে নামছে সাহেবী পোষাক পড়া সুদর্শন যুবক। ওর হাত পেঁচিয়ে আছে শাড়ী পরা এক নারী। নারীটি হঠাৎ তাকালো রাস্তার উল্টো পাশে। না, সে দেখেনি রিকসায় বসা আমাকে। আমি দেখছি মুখস্ত হওয়া সেই মুখ, থুতনির সেই তিল, হাতে ধরা চেনা মোবাইল সেটটি। মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে। আচমকা শহরটা যেন ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো! রাস্তার দুপাশের বিল্ডিংগুলো দোলকের মতোন দোল খাচ্ছে। রিখটার স্কেলের পারা কতোটুকু উঠেছে ! শহরটা কি আর টিকে থাকবে, কিংবা আমি !!
(ঈষৎ সম্পাদিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭