somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধূমপানে বিষপান, পরিত্যাগ করুন

২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ধুমপানে বিষপান "-এ বাক্যটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিতো। ধূমপান বিষপানের সমতুল্য -এ কথাটি জেনেও
আমরা অনেকেই এখনও ধূমপান করে যাচ্ছি। যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে নিজের দেহের, পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের, এমনকি গোটা বিশ্বের।কাজেই যেসব বদ অভ্যাস এখনই ত্যাগ করা উচিত,তার মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান।
"বিড়ি খাবি খা, মারা যাবি যা"-এ কথাটি শুনলে অনেকেই হাসতে দেখা যায়।
আসলে কিন্তু তা অত্যন্ত সঠিক ও খাঁটি কথা।বিড়ি বা সিগারেটের কুফল সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষনার ফলাফলের দিকে একটু
নজর দিলেই ওই কথাটার বাস্তবতা ফুটে ওঠে।এটি ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।বিড়ি বা সিগারেটের ধোঁয়ায় চার হাজার রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থ থাকে।একারনে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ সহ অন্তত ২৫ ধরনের রোগের সঙ্গে ধূমপান কোন না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী তামাকমুক্ত দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।মানুষকে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য।এ লক্ষ্যে প্রতিবছর এ সংক্রান্ত
শ্লোগান ঠিক করা হয়।এ বছরের শ্লোগানের মূল কথা হলো -"বিড়ি- সিগারেট তথা তামাকের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।আর তা সম্ভব হলেই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।"
আমরাও আশা করছি প্রতিটি দেশ এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে আরোও বেশি যত্নশীল হবে।ধূমপান মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি তথা গোটা মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে,বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দেড়'শ কোটি মানুষ ধূমপান
করে।এরমধ্যে ৮০ শতাংশেরই বসবাস উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।ধূমপায়ীদের গড় আয়ু অধূমপায়ীদের গড় আয়ুর চেয়ে ২০ বছর
কম।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়,ধূমপানের কারনে নানা জটিল রোগ দেখা যায়। অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুর
একটি বড় কারন হলো এটি।এর কারনে প্রতিবছর পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
এতসব অকাট্য প্রমাণ থাকার পরেও অনেকেই ধূমপান ত্যাগ করেনা।অনেকেই মনে করে ধূমপান ত্যাগ করা তার পক্ষে সম্ভব হবেনা।
আসলে এমন ধারনা ঠিক নয়।আসুন ধূমপান ত্যাগের পদক্ষেপ নেই দেখবেন আপনিও অন্যদের মতো সফল হয়েছেন।
ধূমপান জাতীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। বিড়ি ও সিগারেটের কোম্পানিগুলো যে পরিমান কর দেয় সরকারকে তার চেয়ে
কয়েক গুন অর্থ সরকারকে খরচ করতে হয় ধূমপানের কারনে সৃষ্ট নানা রোগের চিকিৎসা করার জন্য।বিড়ি-সিগারেট কেনার অর্থ হচ্ছে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বিষ কিনে খাওয়া। বিড়ি সিগারেটের ব্যবসা যেহেতু লাভ অনেক বেশি সে কারনে বড় বড় কোম্পানিগুলো ধুমপায়ীর
সংখ্যা বাড়াতে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কোম্পানি প্রতিবছর ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য একহাজার কোটি ডলার ব্যয় করেন। অবশ্য গত কয়েক দশক ধরে উন্নত দেশগুলো ধূমপান নিয়ন্ত্রনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং ধুমপান নিয়ন্ত্রনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।আমাদের দেশেও আইন প্রচলন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাই দেশকে বাচাঁতে হলে দ্রুত এই বিষয়ে কঠোর আইনের ব্যবস্থা নিয়ে বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে।আর খেয়াল রাখতে হবে আইনের রক্ষকই যেনো আইনের ভক্ষক না হয়।
ধুমপান পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিদিন কোটি কোটি সিগারেটের ধোঁয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সিগারেটের কাঁচামাল তামাকের চাষও পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।তামাক গাছ মাটির এমন কিছু উপাদানকে নষ্ট করছে যা অন্যান্য ফসল
ফলানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।এছাড়া সিগারেটের ধোঁয়া শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের জন্য স্বাস্থ্য হানিকর নয়,তা তার আশেপাশের লোকজনের জন্যও মারাত্নক হুমকি। যেসব শিশুর বাবা মা সিগারেট খান তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত রোগাক্রান্ত হয় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে। এছাড়া ধূমপায়ী মায়েদের সন্তানের ওজন জন্মের সময় স্বাভাবিকের থেকে কম বা বেশি থাকে।অনেকসময় শিশু অটিস্টিক হয়ে জন্মগ্রহন করে।কাজেই সন্তানকে এসবের থেকে দুরে রাখতে হবে। নিজে ধূমপান ত্যাগ করুন আর সন্তানদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন। কাজেই নিজেদের স্বার্থেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং যারা এখনও ধূমপানে আসক্ত হয়নি তারা যাতে আর আসক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশ ও সমাজকে সচেতন করে তুলতে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে হবে।
গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।ধূমপানমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আমরা নিজেরা যারা ধূমপান করছি তাদের আগে ধুমপান ত্যাগ করতে হবে।ধুমপান ত্যাগ করা কঠিন কিছু নয়।



আপনার পক্ষে ধুমপান ছাড়া অসম্ভব হলে আপনি একটি পানীয়ের মধ্যমে আপনার ফুসফুস সুস্থ রাখতে পারবেন। পানীয়টি ঘরেই তৈরি করতে পারেন।
যা যা লাগবেঃ
১ কিলোগ্রাম পেঁয়াজ, ১ টি ছোট আদার টুকরা,১ লিটার পানি, ৪০০ গ্রাম মধু, ২ চা চামচ হলুদ।


যেভাবে তৈরি করবেন ও খাবেনঃ

১/ প্রথমে পানিতে মধু দিয়ে জ্বাল দিন।

২/এবার এতে পেঁয়াজ কুচি,আদা কুচি,হলুদ গুড়ো দিয়ে নিন।

৩/যখন এটি বলক আসবে তখন চুলা কমিয়ে দিন।

৪/তরলটি ঘন অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত জ্বালদিতে থাকুন এবং মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে রাখুন।


দিনে দুইবার এটি খাবেন।সকালে খালি পেটে দুই টেবিল চামচ এবং রাতের খাবারের আধাঘণ্টা পর দুই টেবিল চামচ খাবেন। ধুমপান ছেড়ে দেওয়া সুস্থ থাকার সবচেয়ে সহজ এবং ভালো উপায়। যদি একান্তই ত্যাগ করতে না পারেন তাহলে এই পানীয়টি পান করুন।




এছাড়াও শরীরে নিকোটিনের পরিমান কমানোর জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করুনঃ


১/প্রচুর পানি পান করুন। ধুমপানের কারনে শরীরে যে ডিহাড্রেশন হয় তা মোকাবেলায় আর নিকোটিন দুর করতে পানিই কার্যকর ভূমিকা।

২/কমলালেবু বা তার শরবত পান করুন।কারন এতে যে ভিটামিন 'সি' আছে তা নিকোটিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৩/পালংশাক নিকোটিন হ্রাসে কার্যকরী একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর ফলিক এসিড যা নিকোটিন দুর করে। গাজরের রস ও সমান
ভূমিকা পালন করে। গাজরের রস শ্বাসনালীর থেকে নিকোটিন অনেকটাই কমিয়ে আনে।


ধুমপায়ীদের শরীরের তাপমাত্রা অধূমপায়ীদের তুলনায় একটু বেশি থাকে। ধুমপান ত্যাগের ২০ মিনিটের মধ্যেই আপনি
লক্ষ করবেন আপনার তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসা শুরু করেছে। ২০ মিনিটের মধ্যে আপনার রক্তের কার্বন মনোক্সাইড নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের মাত্রা অর্ধেক নেমে আসে।

২৪ ঘন্টার মধ্যে বিরত থাকলে হৃদরোগ হবার ঝুঁকি কমায়। ১৫ দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়ে
যাবে। ১ বছরের মধ্যে হৃদরোগ হবার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।ধুমপান ত্যাগের ১০ বছর পরে মস্তিষ্কে স্ট্রোক, মুত্রথলি, কিডনি, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে।

১৫ বছর পর আপনি এসব থেকে ঝুঁকি মুক্ত হয়ে সম্পুর্ন সুস্থ্য মানুষের পর্যায়ে চলে আসবেন।


তাই আপনি যদি এখনও ব্যাপক ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তা থেকে সরে আসুন এবং পুরোপুরি ঝুঁকিবিহীন স্বাভাবিক জীবনে চলে আসুন।
এই স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবনে যে কয়দিন বাঁচবেন সে কয়দিন আপনি আপনার পরিবার, সন্তান, আত্নীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের কথা ভাবুন আর দেখুন জীবনটা কত সুন্দর। এমন জীবন ছেড়ে কখনো যেতে ইচ্ছে হবেনা। এজন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট।
তাই আজ থেকেই ধুমপান ত্যাগ করুন ও অন্যরা যেনো আসক্ত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন ও ধূমপানমুক্ত থাকুন।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×