somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়সার ফাঁদ

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্বিতীয় পর্বের জন্য ক্লিক করুন।

চেয়ারম্যান স্কুল ত্যাগ করার সময় মজনু ফকিরের সাথে দেখা। চেয়ারম্যানকে দেখেই মজনু ফকির জোরে হাক ছাড়ে আমি হলাম গোরস্তানের তাজা শুকুন, সব মাকড়সাকে একসাথে শেষ কইরা দিমু। চেয়ারম্যান আর গেদু সাহেবের মাকড়সার ফাঁদে আটকা পড়ে মজনু ফকির সহায় সম্পত্তি হারিয়ে আজ মাঝারে মাঝারে ঘুরে বেড়ায়। মাস্টারের দান করা জমির উপর মা মরা একমাত্র মেয়ে ময়নাকে নিয়ে ঘর করে থাকে মজনু ফকির। তার বুকে এখন শুধু প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে চেয়ারম্যানকে দেখলে মাকড়সার ফাঁদ বলে থুঁ মারে। প্রথম প্রথম চেয়ারম্যান তার কথায় প্রতিবাদ করতো। এখন প্রতিবাদ করে নিজের বাকি মান সম্মান হারাতে চায় না। তাছাড়া চেয়ারম্যান নিজেও জানে তার এবং গেদুর তৈরি মাকড়সার ফাঁদে সে দ্বিতীয় শিকার। মাস্টারের সাথে চেয়ারম্যানের প্যাচাল দেইখ্যা মজনু ফকির কয়- ঐ হারামজাদা মাকড়সার লগে কী এত প্যাচাল?
মাস্টার : না, আইজকাল মাকড়সাগুলোর উৎপাত খুবই বাইড়া গেছে। মনে কয় মাছ কাটার বটি দিয়া ওগো কল্লাটা পালাই দি। হারাদিন কই কই মাঝারে মাঝারে ঘুইরা বেড়াও? ময়নাডা হারাদিন একলা একলা কান্দে। মা মরা মাইয়া, যাও তাড়াতাড়ি বাড়ী যাও।

মজনু ফকির: ঐ মাইয়াডার লাইগাইতো কিছু কইরতে পারি না। না অইলে কবেই ওই মাকড়সাগুলারে শেষ কইরা দিয়া দেশান্তরী অইতাম।

মাস্টার: মজনু ভাই, ধৈর্য ধর। দিন আমাগো একদিন আইবোই। এখন বাতাসের গলায় যদি দড়ি দিতে যাও, তবে সেটা উইড়া যাইবো। আর দড়ির কনো খোঁজ পাইবা না। মাকড়সাগুলারে যদি ধরতে যাও, সেটা এখন পিছলাইয়া পালাইবো। সময় অইলে দেখবা, লেংড়া হাতি নিজেই হের খাদায় পড়ছে। ওগোরে এখন শুধু জালটা বানাইতে দাও। চল বাড়ীর দিকে চল।




চেয়ারম্যানের মাইয়ার আকিকায় বড় মাকড়সার মাঝে উপস্থিত ছিলেন গিয়াস উদ্দিন গেদু ওরফে গেদু চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী। সহযোগী মাকড়সার মাঝে ছিলেন ডুগডুগি মুন্সি, গেদুর চামচাসহ চেয়ারম্যানের পা চাটা কিছু গ্রামবাসী। স্কুলের মাস্টার হিসেবে ছিলেন একাব্বর মাস্টার একাব্বর মাস্টারের সাথে মজনু ফকির। খাওয়া শেষে গেদু সাহেব বলে : ডুগডুগি মুন্সি, কেমন খাইলা?
ডুগডুগি : জ্বি জনাব, আইজ একটু বেশি খাইয়া ফেলাইছি। খাশির গোস্তের হালুয়াটা খুব ফাইন অইছে।

গেদু সাহেব : আমিও বেশি খাইতে পারি নাই। শরীরটা ভালো না। কয়দিন ঘুমেও আবল তাবল দেখতাছি। ভাবছি সিঙ্গাপুর গিয়া হোল বডি চেকআপ করাইবো। ঘুমের মধ্যে কিসব আবল তাবল খোয়াব দেখি। আচ্ছা ডুগডুগি তুমি রাইতের বেলায় কোন খোয়াব দেখো নাকি?

ডুগডুগি : জ্বি জনাব। আমি গত রাইতে একটা খোয়াব দেখলাম, আমি শুধু খের খাইতাছি।

গেদু : পোলাও না, মাংস না, দেখলা কি না খালি খের? আমি একি স্বপ্ন বার বার দেখতাছি। গত রাইতে দেখলাম, আমি একটা মাকড়সার জালের মধ্যে বইসা আছি। আর হে জালে আটকা পড়ছে- মজনু ফকির, একাব্বর মাষ্টার, আর তুমি। এর মোজেজাটা কী বুঝতে পারলাম না। তুমি বোঝ কিছু?

ডুগডুগি : জনাব, আপনার স্বপ্নটা জিলাফির লাহান পেছানো। আমিতো আপনার উপকার ছাড়া কোন ক্ষতি করি নাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে চিন্তা ফিকিরও নাই। আমি কেমনে আপ্নের জালে আটকাইলাম, বুঝলাম না।


চেয়ারম্যান গেদু সাহেব-এর উদ্দেশ্য করে বলে, আপনি দয়া করে আমার মেয়ের আকিকায় আইছেন, চাইরটা ডাইল-ভাত খাইছেন, খুব খুশি অইলাম। আর গেরামের মুরব্বিরা- আইজ একটা খুশির দিনে, আপ্নাগো লগে একজনকে পরিচয় করাইয়া দিতেছি। তিনি আমাগো এলাকার কৃতীসন্তান, বিশিষ্ট রাজনিতীবিদ, সমাজ সেবক, জনাব গিয়াস উদ্দিন গেদু সাহেব। যার নাম আপ্নেরা হাজার বার শুনছেন, মাগার দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। কারন তিনি পরিবার পরিজন নিয়া ঢাকায় থাকেন।

ডুগডুগি: কথায় আছে- আল্লায় দিলে কি না অয়। গেন্দা সাহেব, থুক্কু, গেদু সাহেব কত মান্যগণ্য মানুষ আইজ, দেশের মন্ত্রি মিনিষ্টারলগে দোস্তি। বড় ভালো লাগে, যখন ভাবি ওনি আমাদেরই লোক।

গেদু:আসসালামুআলাইকুম, প্রিয় গ্রামবাসী, আমি তোমাদেরই লোক, এই মোর পরিচয় হোক।ছোট বেলায় আপ্নেরা আমারে গ্যান্দা নামেই ডাকিতেন। পরে বড় হইয়া ভাইবা দেখলাম এই গ্যান্দা নামের মধ্যে কেমন যেন দুর্গন্ধ দুর্গন্ধ ভাব রইয়াছে। তাই নাম পরিবর্তন করে রাখিয়াছি, গেদু চৌধুরী। যাইহোক, গ্রামের টান- বড় টান। এই টানেই আজ এখানে।

ডুগডুগি : মাসআল্লাহ্, মাসআল্লাহ্।

গেদু : তবে ডুগডুগি মুন্সি একটা কথা ঠিকিই বলেছেন। দেশের মন্ত্রি গভর্নরের লগে আমার দোস্তি আছে। এই দোস্তি সে দোস্তি না। ইহা হইতাছে টেকার দোস্তি। মন্ত্রি গর্ভনর বানাইতে যে টাকা ইনবেষ্ট করি, তার শতভাগ উসুল করিয়া লই। যা শিক্ষিত লোকের ভাষায়- মোষ্ট প্রোফিটেবল ডিগ্নিফাইং বিজনেস। সরকারী দলের নেতাগুলোকে টেকা দিয়া কিনি। আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করিয়া বিরোধী দলের পিছনেও ইনবেষ্ট করি। আমি শায়েস্তা খাঁন, মোনায়েম খাঁন, সবুর খাঁন, ভুট্ট খাঁনসহ বাংলাদেশের সব খাঁই খাঁই পার্টিকে চাঁদা দিই। সবার দিলের নেক মকসুদ পূর্ণ করি। আমার টেকায় বহুত টাউট বাটপার মানুষ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু আমার দুঃখ দেশের জন্য এত কিছু করিলাম কিন্তু আমার নিজের গ্রামের জন্য কিছুই করিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গ্রামের লোকজনকে মানুষ বানানোর প্রজেক্ট নিয়া আমার বিজনেসকে ডিজসেন্টাইজড করিবো। আপনারা সবাই মানুষ অইবার প্রস্তুতি নেন।

চেয়ারম্যান: মারহাবা মারহাবা, গেদু সাহেব জিন্দাবাদ।

গেদু : বহু দিন সরকারের বাহিরে থাকিয়া, দেশের খেদমত করিয়াছি। এবার সরকারের ভিতরে ঢুকিয়া দেশের খেদমত করার মজা নিতে চাই। আর ভিতরে ঢুকিতে হইলে প্রয়োজন-ইলেকশন।আশা করি বুঝিয়াছেন- আমার আগমনের উদ্দেশ্য।

মজনু:না, আপনার বক্তব্য কিছুই বুঝি নাই।
গেদু : (মাস্টারকে) আপনি বুঝিয়াছেন?
মাস্টার : জ্বী কিছুটা।
গেদু : (চেয়ারম্যানকে) আপনি বুঝিয়াছেন?
চেয়ারম্যান: জ্বি ১০০ ভাগ বুঝিয়াছি।
গেদু : তাহা অইলে ডুগডুগি মুন্সি- হিসাবটা কি দঁড়াইলো?
ডুগডুগি : জ্বি জনাব, হিসাব অইলো গিয়া, (সবাইকে) উহাদিগকে মানুষ বানানো যাইবে।আর (মজনু) এই বস্তুকে মানুষ বানানো যাইবে না।
গেদু: যাইহোক, সময় সংক্ষিপ্ত, ঢাকায় যাইতে হইবে। ফকল্যান্ডের ফাষ্ট লেডি ঢাকায় আসিয়াছেন, তাই রাষ্ট্রপতি ভবনে কাইল বিরানি দাওয়াত রহিয়াছে। তবে মাঝের মধ্যে আপনাদের আসিয়া দেখিয়া যাইবো। তাহা হইলে আইজ বিদায় নিই|
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×