somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রেমে পড়ার কাহিনী। পর্ব-৪। লাবনী যেভাবে জড়িয়ে গেল আমার সাথে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন কথা হবে না। ডাইরেক্ট লিখা শুরু করলাম।

বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছি। উদ্দেশ্য গফরগাঁও যাব।

কেন যাবোঃ আমার এক আত্মীয়ার (বড় বোনের ভাসুরের মেয়ে, নওশীন) কাছে প্রথম কম্পিউটারটি সেল করেছিলাম। সেটি নাকি কোন শব্দ করে না, ভালো মানের ছবি দেখাতে পারে না, ডিসপ্লে কাঁপা-কাপি করে। ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ভাগ্নী আমার তো পারলে কেঁদে দেয় এমন অবস্থা। বলল মামা, কি যে করেছি বুঝতে পারতেছি না। আব্বা, আম্মা জানলে আমার খবর আছে। আমি তাকে বললাম, তুমি তোমার আব্বা-আম্মাকে জানতে দিও না। আমি আগামীকাল তোমাদের এখানে এসে ঠিক করে দিয়ে যাবো।

আগের দিন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা (৩য়-২০০৭) দিয়েছি। তাই পরের দিন ফুরফুরে মেজাজে সকাল ১০.৩০এ স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাই। টিকিট কাউন্টারে গেলাম টিকিট কেনার জন্য। কাউন্টার ম্যান জানায় বলাকায় কোন সিট খালি নাই, কিন্তু দাঁড়ায়ে গেলে তিনি টিকিট দিতে পারবেন। অগত্যা কোন উপায় না দেখে একটা খাড়াইন্না টিকিট কিনলাম। বললাম, ভাই আপনাদের বলাকা এখানে কখন পৌঁছুবে একটু যদি বলতেন। তিনি বললেন, এখনও কমলাপুর থেকে ছাড়ে নাই। আপনি প্লাটফর্মে গিয়ে ওয়েট করুন। (কাউন্টার ম্যান তো আমার সাথে ভালো ব্যবহার ই করলো) প্লাটফর্মে বসার মতো কোন জায়গা খালি নেই, উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা পুরো প্লাটফর্ম ইজারা নিয়েছে। তারপর ফুটওভার ব্রিজে ওঠে দাঁড়িয়ে রেল লাইন বহে সমান্তরাল দেখছি। সময় তো আর কাটে না। এমন সময় একটা ট্রেন এসে থামলো গাজীপুরের দিক থেকে, কমলাপুর যাবে বলে। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি ট্রেনটা। ট্রেন আবার মনোযোগ দিয়ে দেখার কি আছে? আছে রে ভাই আছে। অনেক কিছু দেখার আছে ট্রেনে। একটা ট্রেন যেন একটা অজগর; গায়ে তার কি সুন্দর রঙ। পিল পিল করে চলে যায় সুদুর পানে খট-খটা-খট খট-খটা-খট শব্দ করে। যাত্রীদের কেউ নামছে, কেউ উঠছে। এমন সময় আমার চোখ ভরে গেল হালকা আকাশী রঙে। হ্যাঁ পুরো দুচোখ ভরেই দেখছি হালকা আকাশি রঙ। এক পা, দুপা করে আকাশী রঙ নেমে আসল ট্রেন থেকে। তারপর লক্ষ্য করলাম তার হাতে ছোট একটা প্রেসিডেন্ট লাগেজ এবং পিছনে ৩০-৩৫ বছরের একজন পুরুষ লোক আর একজন মহিলা যাকে তাদের মা বলে ধরা যায়। পরে জেনেছিলাম সে এসেছিলো নরসিংদী থেকে।
ট্রেনটা থেমেছিলো ২নং স্টেশনে। প্লাটফর্ম ধরে সে হেটে আসছে আর আমি তাকিয়ে আছি তার পানে। জলজ্যান্ত আকাশী জামা পরা পরী চোখের সামনে রেখে কি কেউ আর লোহা-লক্করের ট্রেন দেখে!! আমিও পরী না দেখে পারলাম না। তারা তিনজন ২নং প্লাটফর্ম থেকে ফুটওভার ব্রিজ পেরিয়ে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল ১ নং প্ল্যাটফর্মে। গিয়ে পুরুষ লোকটা কিভাবে যেন একটা বসার বেঞ্চি ম্যানেজ করে ফেলেছে। সেখানে মেয়েটি বসেছে ডান পাশে, মাতৃস্থানীয় মহিলা বামপাশে মাঝখানে একটা ব্যাগেজ আর পুরুষ লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। বড় ভাইয়ের সামনে ছোট বোনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো সৎসাহস বা দৃষ্টটা তখনো অর্জন করতে না পারলেও চুপি চুপি দেখছিলাম। তখন সবাই নোকিয়ার ১১০০, ১১১০, বা ২৬০০ মডেলের মোবাইল ব্যবহার করতো। মেয়েটিকে দেখলাম তার নোকিয়া ১১১০ ফোন দিয়ে কার সাথে কথা বলল। তারপর ঢাকা থেকে একটা আন্তঃনগর ট্রেন আসল ১১ টার দিকে। এখন ট্রেনটার অবস্থান আমি ও তাদের মাঝা-মাঝি। ট্রেনটার জন্য আমি তাদের দেখতে পারছি না। একটু পরে ট্রেনটা চলে গেল; দেখি সেই বেঞ্চিতে মেয়েটি একা বসে আছে এবং তার সাথে বাকি দুই জন নেই, মাঝখানে ব্যাগেজটাও নেই।
আমি আর একটু ভালো করে লক্ষ্য করে বাউলামী করতে করতে ফোনে কথা বলছি ভাব করে তার পাশে খালি জায়গার বসে পড়েছি। তারপর হাতে টিকিটটা বের করে পড়ছি কি লিখেছে টিকেটে। এবার সে আমাকে দেখল। আমি ও তার দিকে তাকালাম সৎ সাহস নিয়ে। সে সহজ, স্বাভাবিক, সাধারন ভাবেই দেখল আমাকে। তবে বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম তালে হাতুড়ি পেটা হচ্ছিল। শালার এমন একটা মেয়ে সামনে এক্কেবারে প্রেম করার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু কিছু বলার আগেই পা-হাটু কাঁপা-কাঁপি। কতজনেই তো কতভাবে প্রেম করে, কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউ লঞ্চে, কেউ স্কুল-কলেজে। কতজন মোবাইল টিপতে টিপতে প্রেমে পড়ে, আবার টিপতে টিপতে ই শেষ। আমার সাথে আর কারও কিছু হলো না। ৫ফিট সাত ইঞ্চি লম্বা ৬২ কেজি ওজন, মাথা ভর্তি কালো চুল, মায়া মায়া চেহারা নিয়ে কিছুই করতে পারলাম না বলে নিজেকে নিজেই গালি দেই শালা।
তারপর কিছু বলতে না পেরে উঠে গেলাম টিকিট অফিসের দিকে। গিয়ে ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস করলাম। জবাব পেলাম ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়েছে ১০ মিনিট আগে। পিছনে ঘুরে আসব এমন সময় দেখি সে আমার পিছনে লাইনে দাঁড়িয়েছে মনে হয় টিকিট কিনবে। আমিও কৌতুহল নিয়ে একটু সরে দাঁড়ালাম। সেও বলাকার টিকিট কিনল। আমি আবার এসে সেই বেঞ্চিতে বসলাম। একটুপর দেখি সেও এসে বসেছে তার আগের জায়গায়। এখানে বলে রাখি, এখন প্লাটফর্ম একে বারে ফাঁকা। সব যাত্রী আগের ট্রেনটা খেয়ে ফেলেছে। তারপর সাহস করে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম - "আপনি কোথায় যাবেন?"
ময়মনসিংহ। আপনি?
গফরগাঁও। (আর কোন কথা খুজে পাচ্ছি না।) আপনার বাসা বুঝি ময়মনসিংহ?
না। আমার বাসা নরসিংদীতে। ময়মনসিংহে পড়াশোনা করি।
ওহ্। (যাক বাবা বাঁচা গেল!! কথা বলে, সহজ আছে। আর বাইরের মেয়ে)। কোথায় পড়াশোনা করেন? বাকৃবি না আনন্দমোহনে?
নাহ। আমি মুমিনুন্নিসায় ইসলামের ইতিহাসে অনার্স পড়ছি। আপনি কি করেন?
আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন নিজেকে যাচাই করছি।
বোঝলাম না-
মানে কামলা দেব, জায়গা খুঁজছি।
(ফিক করে হেঁসে দিয়ে) হি হি হি। আপনি বেশ মজা করে কথা বলেন। গফরগাঁও কি আপনার বাড়ী?
না। ভালুকা। গফরগাঁয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছি একটা কাজে। আমরা তাহলে একই ট্রেনে যাচ্ছি।
হ্যাঁ। চলুন ওই সামনের দিকে যাই। ওখান থেকে ট্রেনে উঠব।
কেন, এখানেই বসি না। কথা বলছি ভালো লাগছে তো। আর ট্রেন তো এসে এখানেই থামবে।
তা থামবে। কিন্তু এখানে এই যে এত লোক দেখছেন, (এতোক্ষনে আবার অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে) এদের সাথে হুড়োহুড়ি করে আমি উঠতে পারবো না। সামনের দিকে লোক কম থাকে। ওখানে মাঝে মাঝে সিটও খালি থাকে।
আপনার টিকিটে তো সিট নেই। তাহলে আপনি সিট পেলে বসবেন কি করে। যার সিট সে এসে উঠিয়ে দেবে না।
আপনি মনে হয় ট্রেনে ভ্রমন খুব কম করেন। কেউ যদি এসে দেখে যে আমি তার সিটে বসে আছি তাহলে সেই লোকই দাড়িয়ে থাকে মনে হয় আমি মেয়ে বলেই। আর আমি সেই সুবিধাটা নেই।

(আমি মনে মনে ভাবছি, এই মেয়ের লেঙ্গুর হয়ে যাবো কি না? শেষমেষ একটা মেয়ের পিছনে পথ চলব?!?! কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার বড় আপা বলে দিয়েছিলেন "বলদা, একটা কথা মনে রাখবি। কোনদিন কোন মেয়ের পিছনে ঘুরবি না, সামনে ঘুরবি যাতে মেয়ে তোর পিছনে ঘুরে; আমার সেকি লইজ্জা লাগছিলো তখন!!)
এরই মধ্যে ট্রেন এসে গেছে। সে একটু ত্বড়িৎ গতিতে সামেনর দিকে তার ট্রলিটা টেনে নিয়ে চলছে। আর আমি ভাবছি যাবো কি যাবো না। তারপর আমার সামনেই যে কামরা সেটাতে উঠলাম। একটু পর ট্রেন ছেড়ে দিলো। পিছনে ফেলে আসলাম সেই প্লাটফর্ম, সেই বেঞ্চি, সেই ওভারব্রিজ। ট্রেন চলছে খট-খটা-খট, ঘট-ঘটা-ঘট। মানুষ যেন বলাকায় তাদের ঘরবাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। যাত্রীদের এক অষ্টমাংশই হকার।

আগামী পর্বে লিখব ট্রেনে কি হয়েছিলো এবং তারপরের কিছু চৌম্বক অংশ। সবাই ভালো থাকবেন। বেশি করে বাংলা বই পড়বেন।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×