দুনিয়ার এমন কোন দেশ নাই যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হয় না। আর এসব কিছু ঘটে চলার পথে কিছু ভয়ানক ভয়ানক সুন্দর যায়গায়। এমনি কিছু ভয়াবহতম সুন্দর পথ ঘাট নিয়ের আজকের ব্লগীয় আয়োজন।
রোড টু দ্যা ডেড হাইওয়ে
নাম্বার ওয়ানঃ
প্রথমেই পরিচয় করিয়ে দেই ফ্রান্সের প্যাসেজ ডি গুইসের সাথে। আটলান্টিক সাগরের বুকে চার কিঃ মিঃ দীর্ঘ এই পথ দিনে দুবার সাগরের নিচে চলে যায়। শুধু তাই নয়, ডুবে যাবার পরে পথে যে সামুদ্রিক পিচ্ছিল শেওলা সে পথে রেখে যায় তা হয়ে উঠে এক নিষ্টুর মৃত্যুর ফাদ।
নাম্বার টুঃ
লস্কর-আল-হুরগাদা রোড, মিসরের শুষ্ক মরুবুকে সোজা সাপ্টা রোড। ভাবছেন এত নিরীহ একটা রোড ডেঞ্জারাস রোডের তালিকার দুই নাম্বারে কেন? আরে ভায়া, অবাক হবেন না। এই রোডে রাতের বেলা আপনাকে গাড়ি চালাতে হবে আলো নিভিয়ে। আলো জ্বালিয়েছেন তো মরেছেন। পথে ডাকাত আপনার সব ছিনিয়ে নিবেই সাথে পিটুনি ফ্রী। জান নিয়ে যদি বেচে ফিরেন তাইলে তো আরেক প্যাড়া। না খেয়েদেয়ে হাটুন ১০০-২০০ মাইল আর পথে ঘাটে তো আতিথেয়তা দেবার জন্য আফ্রিকান মাম্বা আর কোবরা রয়েছেই। তাই এটার নাম দেওয়া হয়েছে রোড টু হেল। কি নামের সার্থকতা আছে তো মশাই নাকি?
নাম্বার থ্রী
যাকগে আসুন তিন নম্বুরটা দেখি। এটা দেখলেই মনে হবে আহা অপরুপা, সরুপাড় রাস্তা। ইচ্ছে হবেই বাইক কিংবা কার ছুটিয়ে দিগন্ত ছুঁয়ে ফেলতে।
ফুরফুরে গলায় গান গাইছেন--
আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব ----
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে।
তারপর দিলেন একটু স্পীডটা বাড়িয়ে। যেই আপনি এমনটি করেছেন আপনি ভবলীলা ত্যাগ করেছেন মশাই ৩০০০ ফিট নিচের পাথুরিয়া জমিনে। প্রতিটি প্যাঁচে প্রতি বছর কয়েকশত মানুষ এভাবেই চলে যায় না ফেরার দেশে। এমনি কুহেলিকাময় চীনের এই তিয়ান মিন সান বিগ গেট রোড।
নাম্বার ফোর
এই পথ যদি না শেষ হয়---
তবে কেমন হবে তুমি বলতো--
জী হ্যা, সত্যি পথ শেষ হবে না মশাই, এ যে প্রায় ৯০ মাইল দীর্ঘ অস্ট্রেলিয়ার কিলারখ্যাত আয়ার হাইওয়ে। পথে কোন টার্ন নেই, নেই কোন স্পিডব্রেকার, আহা!! কিছুই নেই। জী হ্যা রোড ডিভাইডিং ব্লক ও নেই। পথে চলার সময় শুধু একটা জিনিস মাথায় ঘুরবে। গতি গতি আর গতি। গতি তুলে মনে হবে সামনে পথে হয়ত কয়েকটা ক্যাংগারু আসতে পারে, তাতে কি, তুল ১৪০ কিমি। ব্যাস, পপাতধরনীতল। অপজিট পাশে থেকে আসা একই গতির গাড়ির সাথে বুম!! বুম!! বুম!!
নাম্বার ফাইভ
যোযি লা, নামটা বেশ অদ্ভুতুড়ে নাম। পথটা কিন্তু তার নামের সাথে সমানে মিলে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় বার হাজার ফুট উপরে পশ্চিম হিমালয়ান মাউন্টেইন রেঞ্জের পাথুরে কঠিনখাড়ি কেটে ঢাল বানিয়ে এই রাস্তা তৈরী করা হয়। কাশ্মীর হতে লাদাখ যাবার গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি এতই ভয়াবহ যে শীতকালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাড়া পাথুরিয়া খাঁড়ি, পিচ্ছিল ও সরু রাস্তা যেন এক নিশ্চিত মৃত্যুকূপ।
বিদেশের এই রাস্তাঘাটগুলো এতটা ঝুঁকিপূর্ন হওয়ার পরেও আমাদের দেশের মত হররোজ এত এত মানুষ মারা যায় না। পত্রিকা খুললেই দেখি, বাস দুর্ঘটনা, ট্রেন দুর্ঘটনা ইত্যাদি,ইত্যাদি। দুর্ঘটনার কারন গুলা আমরা সবাই জানি কিন্তু এড়িয়ে যাই। ফলে পথে ঘাটে অহরহ দুর্ঘটনা হয় এবং শুধু এই কারনে প্রতি বছর আমাদের জিডিপির শতকরা দুই ভাগ ক্ষতি হয়।
আসুন, পথে ঘাটে চলার পথে আমরা সাবধান হই সব সময়।
চাই নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ জীবন।
ছবিঃ গুগল মামা
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৪২