'টেলিফোনটা কে করেছিল ফেলুদা ?’ প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারলাম যে বোকামি করেছি, কারণ যোগব্যায়াম করার সময় ফেলুদা কথা বলে না। এক্সারসাইজ ছেড়ে ফেলুদা এ-জিনিসটা সবে মাস ছয়েক হল ধরেছে। সকালে আধঘণ্টা ধরে নানারকম আসন করে সে। এমনকী, কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে মাথা নীচের দিকে আর পা উপর দিকে শূন্যে তুলে শীর্ষআসন পর্যন্ত। -- তোপসে ফেলুদার খুড়তুতো ভাই এভাবেই ফেলুদা গল্পের বর্ণনা দিয়ে যায়। ফেলুদার প্রতিটি কর্মে সে প্রখর নজরদারি করে। এই তোপসের বর্ননায় সাসপেন্স থ্রিলার প্রিয় পাঠকের জন্য ফেলুদা এক কম্পলিট মিল বৈকি। ছয়ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার প্রদোষ মিত্র (মিত্তির) একে একে কতই না অপরাধের নকশা ভেদ করে পাঠকের রোমাঞ্চপ্রিয় মনে বয়ে দিলেন নির্মল বিনোদন তার ইয়াত্তা নেই। এই কাজ করতে গিয়ে ফেলুদা তার বেরেটা পিস্তলের নলে বারুদের ঝাটকার থেকে ক্ষুরধার বুদ্ধির ঝলকানি বেশি দেখিয়েছেন, কোন সন্দেহ নেই। শার্লক হোমসকে বাংলার ঠগবাজদের হাতে ছেড়ে দিলে কি হত সেদিকে যাচ্ছিনে আজ তবে বলে রাখি বাংলার গোয়েন্দাগিরিতে ফেলুদাই শেষ কথা। শার্লকের মত অদ্ভুত কারিকুরি কিংবা বোমকেশ বক্সির মত ঢিসুম ঢাসুম না জানলেও ফেলুদার ফ্যাক্ট বুকে ফেইল কেস কথাটি নেই। ফেলুদা সিরিজ নিয়ে আত্নবিশ্বাস বা গবেষণা যাই বলতে চান বলতে পারেন। তাই বলে অন্য ডিটেক্টিভ চরিত্রগুলোকে ছোট করছি না। নিজের পাঠ্যানুভব জানালাম মাত্র। এই সিরিজের ব্যতিক্রমী লেখক চরিত্র লালমোহন গাংগুলী ওরফে জটায়ুর চরিত্রায়ন, অন্য ডিটেক্টিভ সিরিজ থেকে বেশি রঙ ছড়াতে সাহায্য করেছে। আর সত্যজিৎ রায়ের "ফেলুদা" চরিত্রের বিপরীত চরিত্রগুলো সহজ ভাষায় ভিলেন গুলো অত্যন্ত ধড়িবাজি এটা সবাই জানে। পদে পদে জাল বিছিয়ে ঘায়েল করতে তাদের জুড়ি কই? এক মগন লালের খপ্পরে পড়লেই পিত্তিনাশ, আরো কত কত যে কালপ্রিট রয়েছে তার ইয়াত্তা কই? ফেলুদা এবার পরেছেন তেমনি এক অশরীরী শেয়াল দেবতা আনুবিসের খপ্পরে! সামলাও!
যাকগে আসল কথায় আসি, কোলকাতার রোলান্ড রোডের জনাব নীলকান্ত স্যানাল এক বিপদে পড়েছেন। বাসায় থাকেন ভাগ্নে সহ।এর মধ্যে কে জানি তার বাসায় বেনামে মিসরীয় হায়ারোগ্লাফিক লেখায় চিঠি পাঠাচ্ছেন। ব্যাপারটা হল জনাব একটি অকশন থেকে চড়া দামে একটি মূর্তি কিনেন। মূর্তিটি শেয়াল রাজা আনুবিসের। মিসরের মূর্তি। তারপর থেকেই এই উৎপাত। তাই ফেলুদাকে তলব। সন্দেহ নিলামে মূর্তি কেনার সময় ঠুকোঠুকি হওয়া প্রতুল মিত্রের দিকে। তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত আইনজীবী। যাকগে লটারি পেয়ে লাল হয়ে ওঠা নীলকান্ত বাবুর দামি আনুবিস পরের দিনই হারিয়ে যায়। রহস্য জমে ওঠে। প্রতুল মিত্রের দিকে সন্দেহের চোখ আরো বড় হয়ে ওঠে। কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে ফেলুদা কখনই লজিকের বাইরে কাজ করেন না। এবারো করছেন না। রহস্যের পিছে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া ফেলু মিত্তির এত সহজ কেস হলে তা হাতেই নিতেন না। তাই বিস্তারিত বুঝতে লাভলক স্ট্রিটে প্রতুল মিত্রের বাসায় ফেলুদার হানা পড়ে। বাসায় রঙ করার কাজ চলছিল। ফেলুদা গেলেন ডিসগুইজড হয়ে। একে বারে ষাট বছরের বুড়োর মত। বেচারা আইনজীবীর আর কি দোষ ব্যাস ফেলুদার হাতে পড়ে সব তথ্য দিয়ে দিলেন। তবে আসল বেশে গেলেন পরদিন। আনুবিস চুরির কথা শুনেই বুড়ো চুরুটের ধোয়া মুখে বিষম খেলো। কিন্তু মজার বিষয় হল প্রতুল বাবুর বাসায় জেরা হবার পরের দিনই তার আরেক মিশরের মূর্তি যা আগে কেনা ছিল চুরিয়ে গেল। দোষ গেল আগের রাতে মূর্তি দেখতে আসা বুড়ো ওরফে ফেলু মিত্তিরের ঘাড়ে। মাথা চুলকে চুরির কোন ক্লু নেই বলেই তপসের ধারনা। জটায়ু বাবু ক্রমশ ঢোক গিলছেন। প্রতুল বাবুর কাজের লোকের কাছে একটা তথ্য পাওয়া গেল। চুরির সময় রাস্তায় এক শিশু ভজন গাইছিল। আর জানালায় খানিকটা কাচা রঙ চটা। আর চোরের ঘুষি যে কর্মচারী খেয়েছে সে সারারাত পেটের ব্যাথায় ককিয়েছে। এই সামান্য মোটিভ নিয়ে দু দুটো মূর্তি, হাজার বছরের পুরোনো মূর্তি শেয়াল রাজার রহস্য উৎঘাটন করতে ফেলুদা পারবেন কি? ফোনে হুমকি পাওয়া ফেলুদার তোপসেই বা কি করবে? স্যানালের বাড়ির দেওয়ালে কাচা রঙের এক হাতের ছাপ এই পুরো ঘটনাকে আরো বিভ্রান্ত করে তুলেছে! খটকা আর খটকা! এই ব্রাউন কালারের পেইন্ট দেখেই ফেলুদা তোপসেকে বললেন-
‘পেন্ট হতে পারে।’
‘কোথাকার পেন্ট ?’
‘কোথাকার পেন্ট…কোথাকার… ?
হঠাৎ মনে পড়ে গেল।
প্রতুলবাবুর ঘরের দরজার রং!
‘এগ্জ্যাক্টলি সেদিন তোরও শার্টের বাঁদিকের আস্তিনে লেগে গিয়েছিল। এখনও গিয়ে দেখতে পারিস লেগে আছে।’
‘কিন্তু’—আমার মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছিল, ‘–যার হাতের ছাপ, সেই কি প্রতুলবাবুর ঘরে ঢুকেছিল ?’
‘হতেও পারে। এখন বল—ছবি দেখে কী বুঝছিস।’
আমি অনেক ভেবেও নতুন কিছু বোঝার কথা বলতে পারলাম না।
ফেলুদা বলল, ‘তুই পারলে আশ্চর্য হতাম। শুধু আশ্চর্য হতাম না—শক পেতাম। কারণ তা হলে বলতে হত তোর আর আমার বুদ্ধিতে কোনও তফাত নেই।’
‘তোমার বুদ্ধিতে কী বলছে?’
বলছে যে এটা একটা সাংঘাতিক কেস। ভয়াবহ ব্যাপার। আনুবিস যেরকম ভয়ঙ্কর—এই রহস্যটাও তেমনি ভয়ঙ্কর।
"
এই রহস্য বেড়া ভাঙতে চাইলে পড়ে আসতে পারেন এই সুনিপুণ থ্রিলার গোয়েন্দা কাহিনী। ইউটিউবে মুভিও রয়েছে। দেখতে শেয়াল দেবতা রহস্য লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন। ভুলেও ছেড়ে ছেড়ে দেখবেন না। দেখলে আনুবিসের গদাম ঘাড়ে পড়বে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫