somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ - ৪ - শেয়াল দেবতা রহস্য

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'টেলিফোনটা কে করেছিল ফেলুদা ?’ প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারলাম যে বোকামি করেছি, কারণ যোগব্যায়াম করার সময় ফেলুদা কথা বলে না। এক্সারসাইজ ছেড়ে ফেলুদা এ-জিনিসটা সবে মাস ছয়েক হল ধরেছে। সকালে আধঘণ্টা ধরে নানারকম আসন করে সে। এমনকী, কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে মাথা নীচের দিকে আর পা উপর দিকে শূন্যে তুলে শীর্ষআসন পর্যন্ত। -- তোপসে ফেলুদার খুড়তুতো ভাই এভাবেই ফেলুদা গল্পের বর্ণনা দিয়ে যায়। ফেলুদার প্রতিটি কর্মে সে প্রখর নজরদারি করে। এই তোপসের বর্ননায় সাসপেন্স থ্রিলার প্রিয় পাঠকের জন্য ফেলুদা এক কম্পলিট মিল বৈকি। ছয়ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার প্রদোষ মিত্র (মিত্তির) একে একে কতই না অপরাধের নকশা ভেদ করে পাঠকের রোমাঞ্চপ্রিয় মনে বয়ে দিলেন নির্মল বিনোদন তার ইয়াত্তা নেই। এই কাজ করতে গিয়ে ফেলুদা তার বেরেটা পিস্তলের নলে বারুদের ঝাটকার থেকে ক্ষুরধার বুদ্ধির ঝলকানি বেশি দেখিয়েছেন, কোন সন্দেহ নেই। শার্লক হোমসকে বাংলার ঠগবাজদের হাতে ছেড়ে দিলে কি হত সেদিকে যাচ্ছিনে আজ তবে বলে রাখি বাংলার গোয়েন্দাগিরিতে ফেলুদাই শেষ কথা। শার্লকের মত অদ্ভুত কারিকুরি কিংবা বোমকেশ বক্সির মত ঢিসুম ঢাসুম না জানলেও ফেলুদার ফ্যাক্ট বুকে ফেইল কেস কথাটি নেই। ফেলুদা সিরিজ নিয়ে আত্নবিশ্বাস বা গবেষণা যাই বলতে চান বলতে পারেন। তাই বলে অন্য ডিটেক্টিভ চরিত্রগুলোকে ছোট করছি না। নিজের পাঠ্যানুভব জানালাম মাত্র। এই সিরিজের ব্যতিক্রমী লেখক চরিত্র লালমোহন গাংগুলী ওরফে জটায়ুর চরিত্রায়ন, অন্য ডিটেক্টিভ সিরিজ থেকে বেশি রঙ ছড়াতে সাহায্য করেছে। আর সত্যজিৎ রায়ের "ফেলুদা" চরিত্রের বিপরীত চরিত্রগুলো সহজ ভাষায় ভিলেন গুলো অত্যন্ত ধড়িবাজি এটা সবাই জানে। পদে পদে জাল বিছিয়ে ঘায়েল করতে তাদের জুড়ি কই? এক মগন লালের খপ্পরে পড়লেই পিত্তিনাশ, আরো কত কত যে কালপ্রিট রয়েছে তার ইয়াত্তা কই? ফেলুদা এবার পরেছেন তেমনি এক অশরীরী শেয়াল দেবতা আনুবিসের খপ্পরে! সামলাও!


যাকগে আসল কথায় আসি, কোলকাতার রোলান্ড রোডের জনাব নীলকান্ত স্যানাল এক বিপদে পড়েছেন। বাসায় থাকেন ভাগ্নে সহ।এর মধ্যে কে জানি তার বাসায় বেনামে মিসরীয় হায়ারোগ্লাফিক লেখায় চিঠি পাঠাচ্ছেন। ব্যাপারটা হল জনাব একটি অকশন থেকে চড়া দামে একটি মূর্তি কিনেন। মূর্তিটি শেয়াল রাজা আনুবিসের। মিসরের মূর্তি। তারপর থেকেই এই উৎপাত। তাই ফেলুদাকে তলব। সন্দেহ নিলামে মূর্তি কেনার সময় ঠুকোঠুকি হওয়া প্রতুল মিত্রের দিকে। তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত আইনজীবী। যাকগে লটারি পেয়ে লাল হয়ে ওঠা নীলকান্ত বাবুর দামি আনুবিস পরের দিনই হারিয়ে যায়। রহস্য জমে ওঠে। প্রতুল মিত্রের দিকে সন্দেহের চোখ আরো বড় হয়ে ওঠে। কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে ফেলুদা কখনই লজিকের বাইরে কাজ করেন না। এবারো করছেন না। রহস্যের পিছে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া ফেলু মিত্তির এত সহজ কেস হলে তা হাতেই নিতেন না। তাই বিস্তারিত বুঝতে লাভলক স্ট্রিটে প্রতুল মিত্রের বাসায় ফেলুদার হানা পড়ে। বাসায় রঙ করার কাজ চলছিল। ফেলুদা গেলেন ডিসগুইজড হয়ে। একে বারে ষাট বছরের বুড়োর মত। বেচারা আইনজীবীর আর কি দোষ ব্যাস ফেলুদার হাতে পড়ে সব তথ্য দিয়ে দিলেন। তবে আসল বেশে গেলেন পরদিন। আনুবিস চুরির কথা শুনেই বুড়ো চুরুটের ধোয়া মুখে বিষম খেলো। কিন্তু মজার বিষয় হল প্রতুল বাবুর বাসায় জেরা হবার পরের দিনই তার আরেক মিশরের মূর্তি যা আগে কেনা ছিল চুরিয়ে গেল। দোষ গেল আগের রাতে মূর্তি দেখতে আসা বুড়ো ওরফে ফেলু মিত্তিরের ঘাড়ে। মাথা চুলকে চুরির কোন ক্লু নেই বলেই তপসের ধারনা। জটায়ু বাবু ক্রমশ ঢোক গিলছেন। প্রতুল বাবুর কাজের লোকের কাছে একটা তথ্য পাওয়া গেল। চুরির সময় রাস্তায় এক শিশু ভজন গাইছিল। আর জানালায় খানিকটা কাচা রঙ চটা। আর চোরের ঘুষি যে কর্মচারী খেয়েছে সে সারারাত পেটের ব্যাথায় ককিয়েছে। এই সামান্য মোটিভ নিয়ে দু দুটো মূর্তি, হাজার বছরের পুরোনো মূর্তি শেয়াল রাজার রহস্য উৎঘাটন করতে ফেলুদা পারবেন কি? ফোনে হুমকি পাওয়া ফেলুদার তোপসেই বা কি করবে? স্যানালের বাড়ির দেওয়ালে কাচা রঙের এক হাতের ছাপ এই পুরো ঘটনাকে আরো বিভ্রান্ত করে তুলেছে! খটকা আর খটকা! এই ব্রাউন কালারের পেইন্ট দেখেই ফেলুদা তোপসেকে বললেন-



‘পেন্ট হতে পারে।’
‘কোথাকার পেন্ট ?’
‘কোথাকার পেন্ট…কোথাকার… ?
হঠাৎ মনে পড়ে গেল।
প্রতুলবাবুর ঘরের দরজার রং!
‘এগ্জ্যাক্টলি সেদিন তোরও শার্টের বাঁদিকের আস্তিনে লেগে গিয়েছিল। এখনও গিয়ে দেখতে পারিস লেগে আছে।’
‘কিন্তু’—আমার মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছিল, ‘–যার হাতের ছাপ, সেই কি প্রতুলবাবুর ঘরে ঢুকেছিল ?’
‘হতেও পারে। এখন বল—ছবি দেখে কী বুঝছিস।’
আমি অনেক ভেবেও নতুন কিছু বোঝার কথা বলতে পারলাম না।
ফেলুদা বলল, ‘তুই পারলে আশ্চর্য হতাম। শুধু আশ্চর্য হতাম না—শক পেতাম। কারণ তা হলে বলতে হত তোর আর আমার বুদ্ধিতে কোনও তফাত নেই।’
‘তোমার বুদ্ধিতে কী বলছে?’
বলছে যে এটা একটা সাংঘাতিক কেস। ভয়াবহ ব্যাপার। আনুবিস যেরকম ভয়ঙ্কর—এই রহস্যটাও তেমনি ভয়ঙ্কর।

"

এই রহস্য বেড়া ভাঙতে চাইলে পড়ে আসতে পারেন এই সুনিপুণ থ্রিলার গোয়েন্দা কাহিনী। ইউটিউবে মুভিও রয়েছে। দেখতে শেয়াল দেবতা রহস্য লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন। ভুলেও ছেড়ে ছেড়ে দেখবেন না। দেখলে আনুবিসের গদাম ঘাড়ে পড়বে :P

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×