somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সজীব ওয়াজেদ জয়, একজন ডিজিটাল স্বপ্নদ্রষ্টার মহাকাশ যাত্রা।

১২ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় এখন ঢাকায়। আইটি সংক্রান্ত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ভাষন দিচ্ছেন এবং দাবী করছেন বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানানোর সরকারী কর্মসূচীর প্রায় সবটাই ওনার নিজের। দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এর পক্ষে সাফাই গাইলেন। এক কথায় শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে উচ্চাভিলাসী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এতদিন জেনে এসেছি সন্তানরাই মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ও বেশ চমকপ্রদ। মা বাস্তবায়ন করছে সন্তানের স্বপ্ন, শুনতে অনেকটা রূপকথার মত শোনায়। এমন সন্তান নিয়ে শুধু মা কেন চাইলে গোটা জাতিই গর্ব করতে পারে। তারেক ও ককো জিয়ার পরিণতি হতে শিক্ষা নিয়েছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব জয় বললেন আরও সাহসী কথা, ‘আমার আছে শিক্ষা এবং আমি বঙ্গবন্ধুর নাতি, আমাদের চুরির দরকার হয়না’। নতুন প্রজন্মের একজন শিক্ষিত যুবকের মুখে এমন খোলামেলা কথা আমাদের উৎসাহিত করে এবং রাজনীতি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে প্রেরণা যোগায়। যে কোন বিবেচনায় ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি করতে পারেন এই প্রবাসী। চাঁদেও নাকি কলংক থাকে যা খালি চোখে দেখা যায়না। বড় মাপের শক্তিশালী দূরবীন ব্যবহার করলে এর কিছুটা নমুনা দেখা যায়। ক্ষমতার রাজনীতি বাংলাদেশে কতটা পূতময় ও গন্ধযুক্ত তার কিছুটা নমুনা পাওয়া যাচ্ছে হালে প্রকাশ পাওয়া তারেক ও ককো জিয়ার অতীত ইতিহাস হতে। পাঠকদের কি মনে আছে ১/১১ উত্তর খালেদা জিয়ার দাবির কথা? ‘ওরা শহীদ জিয়ার সন্তান, ওরা দুর্নীতি করতে পারেনা‘। তারেক আর ককো সহ জিয়া পরিবারের দুর্নীতি দেখতে এখান আর দুরবীনের প্রয়োজন হয়না, খবরের কাগজ ঘাটলেই ডায়েরিয়ার মত বেরিয়ে আসে এদের কালো ইতিহাস। ঐতিহাসিক বাস্তবতায় তারেক আর ককো এখন দেশছাড়া আর ক্ষমতার সোনালী জুতায় পা রেখে জয় ওয়াজেদ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। চাঁদের অন্যপিঠ দেখতে চাইলে আসুন খুব ছোট মাপের একটা দুরবীন হাতে নেই এবং দেখার চেষ্টা করি ওয়াজেদীয় কাহিনীর উলটো পিঠ।
সাময়িকভাবে থমকে গেলেও ডিজিটাল কর্মসূচীর অন্যতম প্রকল্প ৫০,০০০ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর প্রকল্প সহসাই নতুন শক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে অন্য কোথাও নয়, বিতর্কিত অড়িয়াল বিলেই বাস্তবায়িত হবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন। যারা এই প্রকল্পের বিরোধীতা করেছিল তাদের সবার কোমর ভাঙ্গার ডিজিটাল প্রকল্পও নাকি হাতে নেয়া হয়েছে। ছেলে স্বপ্ন দেখছে এক রাজ্যের আর তা চলে যাবে অন্য রাজ্যে, এমন ’অনৈতিক’ কাজ হজম করার মত মা নন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবল ফাঁকা বুলি নয়, এরও প্রাইস ট্যাগ থাকে। ৫০,০০০ কোটি টাকার বিমান বন্দরে কার কত প্রাইস ট্যাগ তা সময়ই প্রমান করবে, যেমনটা করছে তারেক জিয়ার বেলায়। এই বিশাল প্রকল্পের আড়ালে আরও একটা প্রকল্প বেড়ে উঠছে যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে এর সময় হয়নি। অনেকে হয়ত প্রকল্পের ভাগ্য নিয়েও সন্দিহান হয়ে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রকল্প এগিয়ে চলছে এবং ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করা হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকা। বলছিলাম দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু প্রকল্পের কথা, ১০,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের কথা। এটাও জয় ওয়াজেদের দেখা ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ। স্বপ্নের ঘোড়া কতদূর এগিয়েছে তা সরজমিনে দেখার জন্যেই নাকি এ যাত্রায় ঢাকা আগমন।

স্যাটেলাইট সংক্রান্ত ডিজিটাল প্রকল্পের আসল মূল্য কত তার খসড়া রূপরেখা এখন পর্যন্ত দাঁড় করানো হয়নি। শোনা যায় স্বপ্নের শেষটা এখন পর্যন্ত দেখা হয়নি, তাই এ বিলম্ব। তবে যা এগিয়ে চলছে তা হল এর কারিগরী পরামর্শদাতা নিয়োগ। সর্বসাকুল্যে এ কাজে ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ইতিমধ্যে এতদসংক্রান্ত বিডও জমা হয়ে গেছে। এ জাতীয় যে কোন বিডের মত এ কাজকেও ভাগ করা হয়েছে দুটো বিভাগে, টেকনিক্যাল ও ফাইন্যানসিয়াল। সোজা বাংলায়, ট্যাকনিক্যালি যারা কোয়ালিফাই করবে কেবল তাদের ফাইন্যান্সিয়াল অফার গুলোই বিবেচনায় আনা হবে। কানাডা, আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া সহ বেশ কটা দেশের কোম্পানী অংশ নেয়া বিড প্রসেসে, এবং এদের মধ্য হতে ছয়টা কোম্পানিকে মার্কিং সিস্টেমে শর্ট লিস্ট করে নেয় বিটিআরসি। উল্লেখ্য, বিডের চাহিদা মোতাবেক প্রতিটা কোম্পানীর সাথে জড়িত করা হয়ছে স্থানীয় এজেন্ট। কোন সমস্যা ছাড়াই বিড প্রসেস হু হু করে এগিয়ে যায়। যারা কাছ হতে এ কাজ মনিটর করছিলেন তারা ভাবতে শুরু করেন জয় ওয়াজেদের স্বপ্ন আকাশে উড়তে বোধহয় আর দেরী নেই। তথ্য লিকেজে জানা যায় মার্কিন এক কোম্পানী সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে বিড দৌড়ে অনেকটা সামনে এগিয়ে আছে এবং কাজ পাওয়া হতে মাত্র কয়েক হাত দূরে।

কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টা যেদিন ঢাকায় পা রাখলেন সেদিন হতে প্রকল্প উলটো দিকে হাটা শুরু করে দেয়। সামিট গ্রুপ বলে বাংলাদেশে এক গ্রুপ আছে। বলা হয় সরকারের জনৈক মন্ত্রীর ভাই এই গ্রুপের মালিক। শেয়ার বাজার ম্যানিপুলেশন সহ বাংলাদেশে এমন কোন কাজ নেই যা এই গ্রুপ করছে না। এদের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্যে অনেক সময় অন্যদের বিড পর্যন্ত গায়েব করে দেয়া হচ্ছে। তো এই সামিট গ্রুপও জয় ওয়াজদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা নিয়ে মার্কিন কোম্পানী স্পেইস পার্টনারশীপ ইন্টারন্যাশনালের (সংক্ষেপে এসপিআই) সাথে গড়ে তোলে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব। কিন্তু হায়, বিড খোলার পর দেয়া যায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে এই গ্রুপ। ঠিক এমন একটা জটিল মুহূর্তে বিড রঙ্গমঞ্চের রূপালী পর্দায় আবির্ভুত হন খোদ স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সামনে তুলে ধরেন স্বপ্নের নতুন অধ্যায়। এবং এ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে চলে আসে এসপিআই এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট সামিট গ্রুপের নাম। উনি স্বপ্নে দেখলেন আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উড়ছে সামিট গ্রুপের পাখায় ভর করে। মৌখিক আদেশের পর চিঠি গেল এসপিআই হতে। চিঠিতে তুলে ধরা হল কেন সামিট গ্রুপ এই কাজ পাবে। বিড প্রক্রিয়ার মৌলিক ধারা লংঘন করে নিজেদের আধিপত্য প্রকাশ করল জোরালো ভাবে (যে আধিপত্য ইভ্যালুয়েশন প্রসেসে টেকেনি)। চেয়ারম্যান সহ কমিশনের বাকি সবার মাথায় হাত, কারণ সামিট গ্রুপকে কাজ পাইয়ে দিতে গেলে আশ্রয় নিতে হবে শত শত মিথ্যার। ক্ষমতার পালাবদলের ডুগডুগি যতটা কাছ হতে বাজছে তাতে সবাই ভীত এবং সন্ত্রস্ত। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হয়ত আকাশে কোনদিনই উড়বে না। কিন্তু এ ফাঁকে রাষ্ট্রের খাজাঞ্জিখানা হতে সামিট নামক মুসাফিররা উদর ঠিকই পূর্ণ করে নেবে। বদহজমের পাপে সাজা হবে কমিশনের অক্ষম কর্মকর্তাদের, যারা জাতির দৌহিত্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছিল অনন্যোপায়, অসহায়।

যাদের জানা নেই তাদেরকে বলছি, সামিট নামক গ্রুপের আসল স্রষ্টা খোদ সজীব ওয়াজেদ জয়। কারও সন্দেহ থাকলে বিড প্রসেসে অংশ নিয়ে দেখতে পারেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর ভাইকে বলির পাঠা বানিয়ে এই স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলাদেশকে বানিয়েছেন সহস্র কোটি টাকার নাদুস নুদুস গিনিপিগ । উনার সামনে আসতে বাধা, কারণ উনি শিক্ষিত, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর নাতি, জাতির দৌহিত্র।

গোপন সূত্রে পাওয়া একটা ডকুমেন্টের কপি দিলাম। এই সেই চিঠি যা বিড প্রসেসের মৌলিক ধারা লংঘন করে জমা দেয়া হয়েছে কমিশনের কাছে। এই চিঠির স্বপ্নদ্রষ্টাও সজীব ওয়াজেদ জয় নিজে। যাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে কিছুদিন ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করব। কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তারেক আর ককো জিয়াকে যেমন ছাড়েনি এই ডিজিটাল স্বপ্নভ্রষ্টাকে ছাড়বে তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

ডকুমেন্ট পিডিএফ হতে ডকুমেন্ট অথবা অন্য কোন ফরমাটে কনভার্ট করতে হবে। একটু সময় নিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:২২
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×