somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মজার কিছু টুকরো গল্প-৬ (আরব ডায়েরি-৮৫)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রিয়েল লাইফ কৌতুকের চেয়ে আনন্দময় আর কিছু হতে পারে না। আরো কিছু মজার গল্প নিয়ে হাজির হলাম।

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব

১/ সুধা সন্তান সম্ভাবা। ক্যাম্পাসে এ সংবাদে সবাই খুশী। “কামলা” নামের সৌদি একজন শিক্ষিকা সুধাকে দোয়া ও অভিনন্দন জানাল। যাবার বেলায় বলে গেল ওর নাম রেখ –“কামলা”।
সুধা’র মুখ মলিন হয়ে গেল। শাকিলাকে এসে জানাল, “আপু দেখেন, আমার সন্তানের নাম নাকি “কামলা” রাখতে হবে। “কামলা” নাম রাখলে দেশে মান/সন্মান কিছু থাকবে?”
সাধেই কি বলে ‘এক দেশের বুলি, আরেক দেশের গালি’? “কামলা” মানে হচ্ছে Perfect ।

২/ দীবা ও মোশতাক ভাইয়ের সপ্তাহ দুয়েক আগে ছেলে সন্তান হয়েছে। মোশতাক ভাই শখ করে ছেলের নাম রেখেছেন- মাহভির আহমেদ। বাসায় ফেরার পথে কষ্ট ও আক্ষেপের সুরে বললেন, “দেখা যাবে দেশে সবাই ওকে ‘মহাবীর’ বলে ডাকছে।”
আমি বললাম -প্রথমে ডাকবে মহাবীর রুস্তম। তারপর শুধু রুস্তম।
মোশতাক ভাই কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না।

৩/ আমাদের শফিক ভাই মজার মানুষ। সুযোগ পেলেই তার ভাঙ্গাচোরা আরবি ঝালিয়ে নেন। দেখা গেল আমরা সবাই মিলে কথা বলছি, উনি আরবি, বাংলা ও ইংরেজির মিশেলে বিচিত্র ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করছেন। এই সব ক্ষেত্রে আদিল ভাই সিরিয়াস হয়ে যান, “শফিক, এখন আরবি টা একটু প্রাকটিস না করলে হয় না?”

তারপরও সময় সু্যোগ বুঝে শফিক ভাইয়ের আরবি বলার প্রাকটিস অব্যাহত থাকে। একরাতে আমি, শফিক ভাই, উসামা ও আরো কয়েকজন মিলে উসামাদের কম্পাউন্ডে আড্ডা দিচ্ছি। রাত ২ টার মত বাজে। মিশরি দারোয়ান কম্পাউন্ডের দরজা বন্ধ করতে আসল। শফিক ভাই দেখলেন এটাই আরবি প্রাকটিসের মোক্ষম সময়, উৎফুল্লের সাথে বললেন-“ শোয়ে বাব open” (কিছুক্ষণ দরজা open)।
মিশরি এ ধরনের আরবি শুনে হা করে তাকিয়ে রইল।

৪/ রাফসানের ১ বছর হয়ে গেছে। দির্ঘদেহী উসামা বেজায় খুশী। যাক ছাওয়ালটা বড় হচ্ছে, তাকে দিয়ে শরীর টেপানো যাবে। কিন্তু রাফসান হাটতে শেখার সাথে সাথে উসামা’র শরীর টেপানোর খায়েশ কমতে থাকল। রাফসান কিছুতেই বিছানায় থাকেনা। সারাদিন বল, লাঠি নিয়ে দৌড়ে বেড়ায়। একদিন দেখা গেল সে বালতির পানিতে মোবাইল ফোন চুবাচ্ছে। উসামার উপলব্ধি- এই ছেলেকে লইয়া আমি কি করিব?


বাবা/ছেলের ফুটবল খেলা

৫/ শফিক ভাইয়ের মেয়ের নাম “নামিরা”। আমরা তাই প্রায়ই শফিক ভাইকে “আবু নামিরা” (নামিরা’র বাবা) বলে ডাকি। আরবিতে বেশ মিউজিকাল শোনায়। শফিক ভাইয়েরও বোধ করি ভালো লাগে, কখনো মানা করেননি।

৬/ শাকিলা speaking test নিচ্ছে। এক মেয়েকে তার মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মেয়েটি বলে –My mother face circle. সে বুঝাতে চেয়েছে তার মায়ের মুখমন্ডল গোলাকার।

৭/ এক্সাম হলে শাকিলা দেখল এক মেয়ে নকল করছে। টিস্যুতে কিছু একটা লিখে নিয়ে এসেছে, তা দেখে লেখার চেষ্টা করছে। শাকিলা যেই না মেয়েটির হাত ধরতে গেল, অমনি সে টিস্যুটি গিলে ফেলল। শাকিলা ও আরেকজন পরিদর্শক অবাক হয়ে গেল। মেয়েটি টিস্যু খেয়ে দেয়ে বেশ স্বাভাবিকভাবেই পানি খেতে চাইল। প্রমাণ নেই তাই তাকে শাস্তি দেয়া যায়নি।

৮/ মেয়ে নামিরা বাবার কাছেই অনেকটা সময় থাকে। ইশরাতের অভিযোগ শফিক ভাই তার মেয়েকে এই বিদেশ বিভূইয়ে বাংলা ভাষা শেখাচ্ছে না। যদিও মেয়ের বয়স ১ বছর হয়নি। কিন্তু আগে থেকেই তিনি কেন ট্রাই করছেন না? শাফিক ভাইয়ের উপর বেশ খানিকটা চোটপাট হয়ে গেল।

চোটপাটের যাতনা সইতে না পেরে শফিক ভাই মেয়েকে বাংলা ভাষা শেখাতে শুরু করলেন। ১ সপ্তাহ ধরে দেখা গেল নামিরাকে শুধু বলছেন- “খাবা? কী খাবা? ......... খাবা? কী খাবা?”

৯/ “মজবুত” একটি আরবি শব্দ। মানে অনেকটা বাংলা শব্দের মতোই।
-তুমি কি বিকালে আমার সাথে দেখা করবে?
- - হ্যাঁ, আমি আসব।
- মজবুত? (একদম ঠিক তো? – অনেকটা এরকম)
তো এখানে মজবুত শব্দটা এত ব্যবহৃত হয় যে, সাঈদ একটা adverb বানিয়ে ফেলল-মজবুতলি।
- এই কাজটা মজবুতলি করা চাই ... ব্লা ব্লা

১০/ আদিল ভাই বিভিন্ন আড্ডায় হাস্যরস করেন, কৌতুক বলেন। কিন্তু তিনি নিজে প্রায়ই কৌতুক হজম করতে পারেন না। দেখা গেল উনার উদ্দেশ্যে কেউ মজার কথা বলল – উনি হঠাৎ করেই সিরিয়াস হয়ে গেছেন। পরিবেশটা হয়ে যায় থমথমে। পাশ থেকে ভাবী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিল ভাইকে আবার তা খোলাসা করে দেন। আদিল ভাই শান্ত হন, কিন্তু আড্ডায় আগের সেই গতিময়তা আর থাকে না। আমার প্রথম বছরে আদিল ভাইকে দেখেই বেশ কিছু কৌতুক মুখস্ত করেছিলাম শুধুমাত্র ওনার মতো আড্ডা মাতিয়ে রাখাবার জন্য। একেই বোধয় irony বলে।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৬
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×