somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মজার কিছু টুকরো গল্প-৪ (আরব ডায়েরি-৬৭)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

১/ মাত্র ১ সপ্তাহ হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছি। গাড়ীও কিনে ফেললাম। গাড়ী কেনার ৪/৫ দিনের মাথায় এক রাতে উসামা এসে হাজির। সে পাকা ড্রাইভার, এমনভাবে গাড়ী চালায় মনে হয় যেন চুলায় আয়েশের সাথে ভাত রান্না করছে। ওদিকে আমার কনফিডেন্সের অভাব, হাত তখনও নড়বড় করে, রাতে ড্রাইভ করার প্রশ্নই উঠেনা। সে রাতে উসামা অসম্ভব প্রস্তাবটি করে বসল, ‘ভাই চলেন আল-রায়া হোটেল থেকে ঘুরে আসি, সেখানে রিয়াদ থেকে আমাদের এ্যাম্বাসির লোকজন এসেছে তাদেরকে সঙ্গ দিয়ে আসি।’

প্রস্তাবটি শুনেই আমার বুক ধড়ফড় করা শুরু করল- বলে কি? আমাকে নির্ঘাৎ মারতে চায়। আবহা-খামিস রোডটি তখন আমার চোখে ভয়ংকর রোড। রাতের বেলা সৌদিদের বেপরোয়া গাড়ী চালানোর কথা সবারই জানা।

উসামার সাথে সাথে আযম ভাইও ভরসা দিল, ‘কোন সমাস্যা হবেনা।’ ঠিক হলো আমার গাড়ীর সামনে উসামা’র গাড়ী থাকবে, আর পেছনে থাকবে আযম ভাই। তারা আমাকে টহল দিয়ে নিয়ে যাবে। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এবার আর রক্ষা নাই।

দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে রোডে উঠলাম। সাথে জহির ভাইকে নিয়েছি। কিন্তু ওনাকে দেখে ভীত মনে হলো না, মনে হচ্ছে আমার বেকায়দা অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছেন। দাঁত কেলিয়ে কি সব গল্প বলে যাচ্ছেন, আমার সেসব শোনার সময় কোথায়? আমি শক্ত হয়ে গাড়ী চালাচ্ছি, পাশ দিয়ে গাড়ীগুলো শা শা করে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম উসামা আমার সামনে নাই, এমনকি পেছনে আযম ভাইকেও দেখা যাচ্ছে না। আমার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ধুঁকতে ধুঁকতে আল-রায়া হোটেলের সামনে পৌছলাম।

উসামা আগেই পৌছে গেছে, আযম ভাইয়ের তখনো দেখা নেই। উসামা হাসতে হাসতে বলল, ‘ভাই, আপনার একটা পরীক্ষা নিয়ে ফেললাম। সাহস নিশ্চয়ই বেড়ে গেছে?’ আমি কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললাম, ‘তাতো অবশ্যই, তাতো অবশ্যই।’ এই বিপদে ফেলার জন্য মনে মনে উসামার মুন্ডুপাত করলাম।

সবার সাথে সাক্ষাত শেষে ফেরবার পালা। আবার ভয় জাকিয়ে বসল। কিন্তু এবার ড্রাইভ করতে তেমন বেগ পেতে হলো না। বাসায় যখন পৌছলাম- একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করলাম, উসামার নেয়া প্র্যাক্টিকাল টেস্টা মন্দ ছিল না।

২/ কচি ভাই তনুমা ক্যাম্পাসে আছেন। একদিন তিনি ২ টা ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মনিটর ডিভাইস কিনে দিতে বললেন। আমি অনলাই মার্কেট থেকে ২টা ডিভাইস কিনে দিলাম। ডিভাইস দুটি যথা সময়ে আমার কাছে পৌছে গেল। চায়নার তৈরি জিনিষ। আমি চেক করে দেখলাম রিডিং ঠিক মতো আসেনা। আমার কলিগ বলল, এই রিডিং দেখলে যে কারো ব্লাড প্রেশার এমনিতেই বেড়ে যাবে।

একদিন মোশাতাক ভাইয়ের সাথে কচি ভাইয়ের দেখা। কচি ভাই হন্তদন্ত হয়ে কোথাও যাচ্ছেন।
মোশাতাক ভাই- “কোথায় যাচ্ছেন?”
কচি ভাই- “হাসপাতাল যাচ্ছি। ব্লাড প্রেশারটা হঠাৎই বেড়ে গেছে।”

৩/ মামুন আমাদের মাঝে সবচেয়ে ছোট। সবাই তাকে বেশ পছন্দ করে। আজ এর বাসায় দাওয়াত, তো কাল ওর বাসায়। সে নিজেও বেশ হিসাবি। অবস্থা এমন যে শেষ কবে নিজের পয়সায় খেয়েছে, সে তা ভুলেই গেছে। একদিন সকালে দুঃখের সাথে আবিষ্কার করল – আজ নাস্তার কোন দাওয়াত নেই। মনের দুঃখে সে ১ রিয়াল দিয়ে রুটি কিনল। বাসায় ঢুকার সিড়িতে সাইফুল ভাইয়ের সাথে দেখা, ‘আরে মামুন তুমি রুটি দিয়ে নাস্তা করবা? আমার বাসায় নাস্তা করো’ মামুন যতটা না খুশী হল, তার চেয়ে বেশী দুঃখ পেল। সাইফুল ভাইয়ের সাথে আরেকটু আগে কেন দেখা হলো না? ১ রিয়াল বৃথাই নষ্ট হল।

৪/ এক রাতে মামুনের দাওয়াত পড়ল ৩টা। মামুন হায় হায় করে উঠলো। ৩টা দাওয়াত কেন ৩ বেলায় পড়ল না। আমি তাকে বুদ্ধি দিলাম গুগুল ক্যালেন্ডারে একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক খোলার জন্য। সবাই তার এ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক দেখে দাওয়াত দিতে পারবে।

৫/ মামুন একদিন আধা কেজি ঢেড়স কিনে এনেছে। ঢেড়স কেটে রান্নার আয়োজন করতে করতেই একজনের বাসায় খাবার ডাক পড়ল। সেই ঢেড়স রান্না করতে তার সপ্তাহখানেক দেরী হয়েছিল।

৬/ শফিক ভাই নতুন একটি শব্দের উদ্ভাবন ঘটালেন। “উজিরে খামাখা”। এর মানে হচ্ছে -এমন একজন মন্ত্রী যার কোন কাজ কর্ম নেই। দেখা গেল আমাদের দেশে এমন একজন মন্ত্রী ছিলেন- দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। যার বড় বড় কথা বলা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না।

৭/ সৌদিরা গাড়ী কিনবে, বাড়ী বানাবে অথবা মোবাইল ফোন কিনবে- ব্যাংক থেকে লোন নেয়া চাই। আর অপেক্ষা করবে রাজা কখন লোন মওকুফ করে দেয়। শাহরিয়ার ভাইয়ের ভাষায়-‘এ জাতি হচ্ছে লোনে লোনে লুলায়িত একটা জাতি।’

৮/ উসামা আর হাবিব স্যার মার্কেটে গেছেন গরুর মাংস কেনার জন্য। স্যার উসামাকে বললেন, ‘কসাইকে বল চর্বি কম দিতে। চর্বি ইংরেজি যেন কি?’
কসাই বলল, ‘স্যার, Fat’
উসামা আর হাবিব স্যার মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন- সৌদিগুলাকে পড়াতে পড়াতে দেখি আমাদেরই বারোটা বেজে গেছে।

৯/ নাসির ভাই paragraph লিখতে দিলেন- “Football”।
ছাত্র লিখেছে, ‘I football, my father football, brother football. কুল্লু Family football (পুরা ফ্যামিলি ফুটবল)’

১০/একদিন দেখলাম আমার সৌদি কলিগ অফিসে ঝিমাচ্ছে।
সে বলল, “Today I’m busy”
- তুমি তো ঝিমাচ্ছ।
- কাল রাতে ফুটবল খেলা দেখেছি। Today I’m busy

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×