
গ্রীক দার্শনিক প্লোটো, অ্যারিস্টটল, ফার্সি এজমালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর ফিলোসফির একটি শাখা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এরিস্টটল পোয়েটিকস লিখেছেন আর বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার দেখা নয়া চীন ও কারাগারের রোজনামচা।
ফ্রাঁসোয়া - নোয়েল ব্যাবুফ, ফিলিপ বোনার্তি ও অগাষ্ট ব্লাঙ্কিদের মত তাত্ত্বিকগণ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন।আবু যার আল - গিফারি ইসলামী সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখতে পারলে স্টালিনের মতো একটা বিপ্লবের জন্ম দিয়ে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা দোষের হবে কেন? বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশ ফ্রান্স , ইতালি অথবা মধ্যপ্রাচ্য নয় , বাংলাদেশ হচ্ছে হাজার হাজার বছর পলি জমে গড়ে উঠা বাঙালি সভ্যতার একটি ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন দেশ।সেই দেশের ধনী ও গরীব সবার জন্য একটি সাম্যর ভিত্তিতে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে বঙ্গবন্ধু কি অপরাধ করেছিলেন যে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো ?
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল পুঁজিবাদী আমেরিকা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক জনপ্রিয় রাজনীতিবীদ দের জন্য
আমেরিকা ছিল একটা অদৃশ্য আতঙ্ক।এতো কিছুকে অগ্রাহ্য করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র চীন আজ উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে, আরেক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভিয়েতনাম দিন দিন উন্নতি করছে , সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবাও সেক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের বাকশাল কায়েম হলে বাংলাদেশ আজ হতো পৃথিবীর উন্নত একটি আদর্শিক রাষ্ট্র।
ভৌগলিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ভারতের সাথে ৪২০০ কিলোমিটার সীমান্ত ও মায়ানমারের সাথে ২৮১ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে। বাংলাদেশের পাশেই একটি বৃহৎ হিন্দু রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী বৌদ্ধ রাষ্ট্র। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে তা বঙ্গবন্ধু আজ থেকে কয়েক দশক আগেই বুঝতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র হলো একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সংবিধান হলো গণতন্ত্রের ভিত্তি , তাই এর ক্ষতি হলে গণতন্ত্রও দূর্বল হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু চীন ও আমেরিকার সমাজতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কানাডার মতো সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে মানুষের ছয়টি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের উপর তিনি জোর দিয়েছিলেন।১৯৭০ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও তিনি ১৯৭৩ সালে আবার গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় সবচেয়ে আগ্রহী ছিলেন সুইজারল্যান্ড এর মতো একটি দেশ গড়ে তুলতে।আজন্ম দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে রাজনীতিতে এসেছিলেন রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।।
পুজিবাদের আগ্রাসন যাতে না আসে- সেজন্য বঙ্গবন্ধু সংবিধানে সমাজতন্ত্র যোগ করেছিলেন। বাঙালির প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস যদি আমরা না পড়ি তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বুঝা সম্ভব হবেনা।সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের জন্য সাম্যতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ একটি আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছিলেন বঙ্গবন্ধু। এজন্য পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠীর জন্য নিজের প্রায় পুরো জীবন কারাগারে কাটিয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের বিনির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু।।এই স্বপ্নকে সত্য করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশ করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বাকশাল পদ্ধতি চালু করেন।এই পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশের সকল দলকে এক করে জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিজের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক - শ্রমিক আওয়ামীলীগ ( বাকশাল ) গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু এই দেশে কৃষক ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু কাজ করেছেন। এজন্য এই দেশে এখনও কৃষক ও শ্রমিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন সবচেয়ে প্রিয় নেতা।।১৯৭৫ সালের ১৯ জুন দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ' জেলে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে তিনি ভেবেছেন।১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের সেই দেশ গড়ার দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতা।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব আখ্যা দিয়ে বলেন ,
" আমরা শোষিতের গণতন্ত্র চাই।যারা রাতের অন্ধকারে পয়সা লুট করে , যারা বড় অর্থশালী লোক, যারা বিদেশীদের পয়সা ভোট কেনার জন্য দেয় , তাদের গণতন্ত্র নয় - শোষিতের গণতন্ত্র।" এইদেশে শোষিত ছিল কৃষক ও শ্রমিক। তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্যই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ বাকশাল করেছেন।
১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি সংসদে বাকশাল প্রবর্তন করার একদিন পর ২৬ শে জানুয়ারি ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী করে বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৭ সদস্যর একটি মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন।এক মাস পর ১৯৭৫ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক বাকশাল গঠন করেন।এই জাতীয় সরকার গঠনের জন্য তিনি শুধু অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বিলুপ্ত করেননি, নিজ দল আওয়ামীলীগকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন। এমন সাম্যর ভিত্তিতে যিনি চিন্তা করেন তাকে আপনি স্বৈরশাসক ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কিভাবে বলবেন?
১৯৭৫ সালের ৩ রা এপ্রিল পাটের গুদামে আগুন ও বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের ১৫ দিনের মধ্যে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ১৬ ই এপ্রিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠনের অধ্যাদেশ জারি করেন এবং ১৮ ই এপ্রিল ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি করেন , তাতে ৫৫ হাজার কিউসেক পানির মধ্যে বাংলাদেশকে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি ও ভারতকে মাত্র ১১ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার সফল চুক্তি করেন।।১১ ই মে আড়াই হাজার নলকুপ বিদ্যুতায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।১৯ শে মে বাংলাদেশ ও গণচীনের মধ্যকার সর্বপ্রথম বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।৩ রা জুন ৬০ টি মহকুমাকে জেলায় পরিণত করার ঘোষণা দেন।২৮ শে জুন বাংলাদেশ টেলিগ্রাম ও টেলিফোন বোর্ড গঠন করেন।১৬ ই জুলাই ৬১ জন গভর্ণরের তালিকা প্রকাশ করেন , যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ রাজনীতিবীদ ও উচ্চ পদস্থ আমলাদের বাকশাল নামক জাতীয় সরকারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু বাকশালের মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল , বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ নিয়ে একসাথে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি জাসদের গণবাহিনীর প্রধান সিরাজুল আলম খানকেও বাসায় ডেকে বাকশালে যোগ দিতে বলেছেন। সর্বহারা দলের নেতা সিরাজ শিকদারকেও জেল থেকে মুক্ত হয়ে এসে বাকশালে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।আসম আব্দুর রব ও মেজর জলিলকেও তিনি বাকশালে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান পর্যন্ত বাকশালের সদস্য হতে আবেদন করেছিলেন।
শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলকে তিনি বাকশালের বাইরে রেখেছিলেন। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক বাংলা , বাংলাদেশ টাইমস এসব পত্রিকা রেখে ভূইফুড় পত্রিকাগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন । বঙ্গবন্ধু সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছিলেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি প্রোপাগান্ডা। বঙ্গবন্ধু সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছেন এটাও একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা।১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানরা হত্যা করলে জাসদ খন্দকার মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে এবং এজন্য খন্দকার মোশতাকের সরকার জাসদের কয়েকশো নেতাকর্মী হত্যা করে। ৩ রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা ক্যূ করলে জাসদ ৭ ই নভেম্বর পাল্টা সিপাহী জনতা অভূত্থান করে। বঙ্গবন্ধু জাসদকে নিষিদ্ধ করেননি। জাসদের নেতা সিরাজুল আলম খানকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান পাঁচ বছরের জেল দেন।অথচ বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় জাসদের সাথে এত বিরোধ থাকলেও বঙ্গবন্ধু সিরাজুল আলম খানকে একদিনের জন্যও গ্রেফতার করেননি। কর্ণেল তাহেরকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে জিয়া, বঙ্গবন্ধু নন। মেজর জলিলকে কারাগারে পাঠিয়েছে জিয়া , বঙ্গবন্ধু নন। জাসদের ৭ ই নভেম্বর সিপাহী জনতা বিপ্লবকে ছিনতাই করেছে জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু নন। বঙ্গবন্ধু কখনোই চায়নার মতো অতিরিক্ত দমন পীড়নের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো চাননি। এজন্য জিয়া সরকার ওয়াশিংটন পোস্টের মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিপশুলজ এর ' দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলুশন বইটি বাজেয়াপ্ত করেছিল।কারণ এই বইয়ের দুটো অধ্যায় " তাহের'স লাস্ট টেস্টামেন্ট ও দ্বিতীয় অংশটি ছিল ' মার্ডার অব শেখ মুজিব '। এই বইটির বাংলা অনুবাদ করেছিলেন কর্নেল তাহের সংসদ। ইতিহাসের অনেক নির্মম সত্য জানতে পারবেন এই গবেষণা থেকে।।
একদিকে আমেরিকার ফুড পলিটিক্স এর শিকার ৭৪ এর কৃত্রিম দূর্ভিক্ষ, জাসদ ও গণবাহিনীর লুট ও আরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতেই বঙ্গবন্ধু বাকশাল করেছিলেন।১৯৭৫ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম হওয়ার কথা। আমরা কি বাকশাল কেমন ছিল তা দেখার জন্য বঙ্গবন্ধুকে সময় দিয়েছিলাম। ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে রাজনীতিতে আবির্ভাব হয় খলনায়ক জিয়াউর রহমানের। বিচারপতি সায়েমের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে বলেন, আজ থেকে আমিই রাষ্ট্রপতি!
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তথাকথিত ৭ ই নভেম্বরের জাসদের সিপাহী জনতা বিপ্লবকে ছিনতাই করে গদি দখল করে ক্ষমতালোভী জিয়াউর রহমান তাঁর বন্দুকের নল দিয়ে সংবাদপত্র ও মিডিয়া ব্যাবহার করে বাকশাল ও বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করে দেওয়া জিয়ার সেই মন্তব্য ছিল-
" I WILL MAKE POLITICS DIFFICULT FOR
THE ALL BANGLADESH POLITICIAN"
"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



