
অতীতের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম যা বলা হয়নি, ঠিক সেই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি এখানে সবচেয়ে জোরালো। পুরনো প্রাসাদের পর্দার আড়ালে যে অপূর্ণ গল্পগুলো লুকিয়ে থাকে, সেইরকম কিছু অদৃশ্য বাক্য, অভিযোগ এখানে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ায়। যে কথাগুলো কেউ একসময় ভালো অর্থে বলেছিল, হয়তো কোমলতার সঙ্গে বলেছিল সেগুলো এখন পুরনো সোনালি ফ্রেমে আটকে থাকা আধা মুছে যাওয়া ছবির মতো আছে, দেখার কেউ নেই, অতীত এমনই আমাদের।
বহু বছর জমে থাকা আক্ষেপের মতো বাতাসে ভাসছিল এমন এক ভার যেন দেয়ালের প্রতিটি চিহ্ন অভিযোগ আর আক্ষেপে তৈরি। কারও না বলা বাক্যগুলো এখন কল্পনায় অস্ত্রের মতো ঝুলে থেকে চমকায় মাথার ভেতরে, সেইসব শব্দের কান্না, যেগুলো কেউ উচ্চারণ করেনি, এমনভাবে ভারী হয়ে আছে যেনো শ্বাস নেয়ার মতো জায়গাটুকুও অনেক কম।
আমি ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা নীরবতা যেনো আসবাবপত্র। ভারী, পুরনো, অটল। মানুষ অনেক সময় ভাবে নীরব থাকাই মঙ্গল। কিন্তু এই জীবনে আমি বুঝলাম, নীরবতা হলো সবচেয়ে ধারালো ব্যথার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকার নাম। নীরবতার ভিতরে যেসব সত্য থাকে, সেগুলো কোনোদিন উচ্চারিত সত্যের চেয়েও বেশি কড়া, তীক্ষ্ণ, রক্তমাখা।
হৃদয়ের গভীরে যেতে যেতে চোখে পড়ল সেখানে দেয়ালের গায়ে অসংখ্য আঘাতের দাগ। ভুল বোঝাবুঝির তীর; যা বহুবার এসে বিঁধেছে। এখন সেগুলো মরচে ধরা পেরেকের মতো; যা আর কেউ খুলে ফেলতে পারবে না। জীবনে যতবার উচ্চারণ করা হয়েছে ভুল শব্দ, যতবার বলা হয়েছে ভুল ব্যাখ্যা, সবগুলো দুঃখ যেন মোমবাতির আলোয় সামনে এসে দাঁড়ায়। সত্যটা পরিষ্কার গভীর; একবার উচ্চারিত কথা কখনো ফিরিয়ে নেয়া যায় না।
আমি চেয়ারে বসে পড়লাম। জানালার পর্দা নামিয়ে দিলাম মনের পর্দাও যেন একটু নামিয়ে নিতে পারি। সংগে বহু ব্যথা লুকিয়ে নিয়ে, নিজের শক্তি নিয়ে, নিজের নিঃসঙ্গতা নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



