somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাগ অতঃপর ভালসাবা

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু'ঘন্টা যাবত বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কিছুতেই চোখে ঘুম আসছে না। আসবেই কিভাবে? প্রতিদিন রিয়াকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুমই আসে না সেখানে ওকে ছাড়া ঘুম না আসারই কথা। কোলবালিশটা থাকলে নাহয় একটা রাত ওটা দিয়ে চালিয়ে নিতাম। কিন্তু বিয়ের পরদিন থেকে ওরটা মুখ আজ পর্যন্ত দেখি নি। কখন যে রিয়া ওটাকে গুম করে ফেলল টেরই পাইনি। বেচার বিয়ের আগে আমার কত অত্যাচারই না সহ্য করেছে। কিন্তু রিয়া এসেই ওটাকে ডিভোর্স লেটার ধরিয়ে দিল! ধুর এভাবে আর কতক্ষণ পায়চারী করা যায়? আমি খুব ভাল করেই জানি আজকে রাতে রিয়াও ঘুমাতে পারবে না। আমি যতক্ষণ ওকে জড়িয়ে না ধরি ততক্ষণ ওর ঘুমই আসে না। কখনোই না!
.
রিয়াদের বাসাটা আমাদের বাসা থেকে বেশি দূর না হলেও হেটে গেলে ঘন্টা খানেকের পথ। তবে মোটরবাইকে যেতে বিশ মিনিট সময় লাগে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত বারোটার উপরে বাজে। এখন যদি ওদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপি আর রিয়া যদি দরজা খুলে আমাকে দেখে তাহলে ও আমার উপর রেগে থাকতে পারবে না। নিশ্চই না।
মোটরবাইকটা বের করিছি এমন সময় আম্মু এসে বলল
-রাফাত, এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস?
-আম্মু রিয়াদের বাসায় যাচ্ছি। রাতে ফিরব না তুমি শুয়ে পড়।
-আচ্ছা দেখে শুনে যাস।
-ওকে বাই।
.
সমস্যা হয়েছে কি আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেড়ি করে ফেলেছিলাম। অফিসে জরুরি মিটিং আছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠতেই দেড়ি করে ফেললাম মেজাজটা এমনিতেই খারাপ তারউপর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি এখন নাস্তা রেডি হয় নি। রিয়ার উপর খুব রাগ হল। ওকে ইচ্ছামত বকে বাসা থেকে বেড় হয়ে আসলাম। আসার সময় সময় লক্ষ্য করলাম ওর চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। বাহিরে এসে দেখি ভুলে টাইটাও পরিনি আজ। প্রতিদিন আসার সময় রিয়া টাইটা বেঁধে দিত কিন্তু আজকে আর সময় পেলাম কোথায়?
অফিসে দেরি করে এসে বসের ঝাড়িও কম খেলাম না। রিয়ার উপর রাগটা আরো বেড়ে গেল। একটু সকালে ডেকে দিলে কি এমন হত?
দুপুরে লাঞ্চ করার সময় রিয়ার ফোন আসল প্রতিদিনই আসে কিন্তু কি মনে করে আজ কথা বললাম না। ঝামেলাটা তখনই বেধে যাবে ভাবি নি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। কলিংবেল চাপতেই মা দরজা খুলে দিল। চেহারাতে একটা গম্ভীর ভাব। বুঝতে বাকি রইল না কিছু যেন ঠিক নেই। প্রতিদিন রিয়াই দরজা খুলে দেয় তাহলে আজকে কোথায়? সব জায়গায় খুজলাম এমনকি ছাদেও পেলাম না। পরে মা জানাল রিয়া নাকি ওর বাবার বাড়িতে চলে গেছে আর যাওয়ার সময় মাকে বলে গেছে আমি যেন ওকে আনতে না যাই।
মেয়েদের এই একটাই সমস্যা। কিছুএকটা বললেই বাবার বাড়ি দৌড় লাগানো। আরে বাবার বাড়ির এতই যদি টান থাকে তাহলে বিয়ে করার দরকার কি? থেকে গেলেই পারতে!
.
রিয়াদের বাসার সামনে যখন পৌছলাম তখন রাত একটা বেজে গেছে। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাব ঠিক তখনই দেখলাম গেটে তালা ঝুলানো। এখন কি করি? ভেবেছিলাম কি আর হল কি? শালা দাড়োয়ানটাকেও আশেপাশে কোথাও দেখছি না। মনে হচ্ছে না খুজে পাব। বেটা ফাজিল একটা। থাপরানো দরকার! উপায় না দেখে রিয়াকে ফোন দিলাম। সাথে সাথেই রিসিভ হল, মনে হয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিল। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ..
-রিয়া!
-হুম বল!
একটু রাগ দেখিয়ে বলল। রেগে আছে বুঝতে বাকি নেই।
-এখন কি রেগে আছ?
-রেগে থাকব না ত কি করব। তুমি আমাকে একটুও ভালবাস না।
-বাসি ত, অনেক ভালবাসি আমার টিয়াপাখিকে।
-হুম হইছে, এখন ঢং করতে হবে না যদি ভালই বাসতে তাহলে আমার সাথে এমন করতে না। আর এত রাতে কেন এসেছ তুমি? তোমাকে না আসত নিষেধ করেছি। আসলে কেন?
একটু অবাক হলাম! আমি যে এসেছি এটা রিয়ার জানার কথা না। তাহলে ও জানল কিভাবে?
-তুমি জানলে কিভাবে আমি এসেছি।
-শুধু জানি না। দেখছিও। আর তোমার বডবডির যা আওয়াজ এমনিতেই পুরো এলাকার লোক সজাগ হয়ে গেছে।
-আরে কি বল, আমাকে দেখছ? তাহলে কোথায় তুমি?
-উপরে তাকাও।
আমি উপরে তাকালাম। ছাদের এক কোনে একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে তবে ভাল করে লক্ষ না করলে দেখা সম্ভব নয়। মোবাইলের স্ক্রীনের আলো জ্বলছে। সেই আলোতে রিয়ার অভিমানী মুখটা চিনতে একটুও সময় লাগল না। এই শীতের রাতে কি করছে ও।
-এত রাতে ছাদে কি কর তুমি? ঠান্ডা লেগে যাবে। নিচে নাম এখনি। আর তোমাদের গেটের দাড়োয়ান কোথায় ওকে দেখতে পারছি না।
-না, নামব না, ঠান্ডা লাগলে কার কি? কেউ আমাকে আর
ভালবাসে না। আমি কারো কথা শুনব না। আমি জানতাম তুমি আসবে তাই গেটের চাবি রেখে দাড়োয়ানকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। যাতে তুমি বাসায় আসতে না পার।
ঊফ কোথায় যাই এই মেয়েকে নিয়ে। কেন যে আজ রাগ দেখাতে গেলাম। এখন এই শীতের রাতে সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি।
-এই ঠান্ডা লাগছে অনেক। খুলে দাও না প্লিজ। সরি বললাম আর কখনো করব না, প্রমিস!!
-[নিরবতা]
-আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে আসতে হবে না। আমিই চলে যাচ্ছি।
একটু রাগ দেখিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম। উপরে তাকালাম দেখি রিয়া ছাদে নেই। তারমানে এখানে আসছে। কিছুক্ষণ পর গেটের তালা খোলার আওয়াজ পেলাম। রিয়া এসেই আমাকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করল।
-এই তুমি রাগ দেখালে কেন? তোমাকে এখন কি করতে ইচ্ছে করছে জান?
-কি করতে ইচ্ছে করছে শুনি?
-তোমার মাথায় ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে।
হঠাৎ করেই রিয়া হেসে ফেলল। নিঝুম রাতে ওর হাসি চারদিকে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। আমি অপলক দৃষ্টিতে রিয়ার সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুতেই চোখ সরাতে পারছি না।
-এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আগে কি দেখনি আমাকে?
-হুম, একদিন না দেখেই মনে হচ্ছে কতদিন দেখি না। তাই চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না।
রিয়া যেন একটু লজ্জা পেল। আর বলল..
-যাহহ দুষ্টো একটা, ভেতরে এস ঠান্ডা লেগে যাবে।
.
ঠিক তখনই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। ওর সাথে যখন প্রেম করতাম তখন রিয়া আমাকে গভীর রাতে ফোন দিয়ে ডেকে আনত। রাতের বেলা বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমারা একসাথে হাটতে বেরুতাম। আমিও ঐ সময়টা মিস করতাম না। কারণ প্রিয় মানুষটির সাথে হাতে হাতে রেখে নিরিবিলি রাস্তায় হাটতে কার না ভাল লাগে। ওকে বললাম।
-এই রিয়া চল না আজকে রাতটা আমরা আগের মত হেটে পার করে দিই। অনেক দিন তোমার হাত ধরে হাটি না।
কথাটা শুনে রিয়া এমনভাবে আমার দিকে তাকাল! আর এমন একটা ভাব ধরল মনে হয় আমি ভুল কিছু বলে ফেলেছি।
-মাথা ঠিক আছে তোমার এই শীতের রাতে হাটতে বেরুবে? একদম না, বাবা এখন জেগে আছে। জানতে পারলে কি ভাববে?
-কিছু ভাবে না। তুমি চলত? আজই হাটব আর কখনো বলব না। প্লিজ আস না!
.
রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভাবল। তবে আর কিছু বলল না। আমার হাত ধরে পিচঢালা রাস্তায় নেমে পড়ল। একটা সময় লক্ষ করলাম ও আর রেগে নেই। হাটতে হাটতে সারাদিনের জমানো না বলা কথা গুলো বলতে শুরু করে দিল। আমার সেদিকে খেয়াল নেই আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। সোডিয়াম লাইটের আলোয় ওর মায়াবী মুখটা আরো বেশি মায়াবী লাগছে। একটা বিষয় ভাবতেই অবাক লাগে! এই রিয়াই আমার সাথে রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছে আর এখন কি আদুরে গলায় আমার সাথে কথা বলছে। যেন আমাদের মাঝে কিছুই হয় নি। তবে মাঝে মাঝে এরকম রাগ অভিমান না হলে একজনের প্রতি আরেকজনের ভালবাসা বুঝা যায় না। সত্যিই না!
রাত বেড়েই চলছে। আমরা হেটে চলছি জনমানব শুণ্য কোন এক রাস্তায়। মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি দ্রুত গতিতে আমাদের ক্রস করে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু এটুকুই মনে হচ্ছে এই পথ যদি শেষ না হত!

.
লেখক: রাফাত সাগর
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×