হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন বুঝতে পারেন পরাজয় নিশ্চিত তখন বার্লিনের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন বলে এতদিন যা জেনে এসেছি, তাহলে তা মিথ্যে? এমনকি হিটলারের যৌথবাহিনীর কাছে ধরা দেবেন না বলে সায়ানাইড খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউন- এটাও মিথ্যে???
যখন সবাই ভেবেছে তারা মৃত, তখন এই যুগল ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে! এমন পিলে চমকে দেওয়ার মতো খবরটার দাবী করেন আবেল বাস্তি নামের একজন ইতিহাসবিদ। হিটলারের নির্বাসন নিয়ে তার বইয়ে লিখেছেন “Hitler in Exile” (“El exilio de Hitler”)-এর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে আর্জেন্টিনায়। সেখানেই রয়েছে বিস্ফোরক অনেক তথ্য।
‘হিটলার কিছুতেই সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ধরা দেবেন না, পালিয়ে যাবেন- এই মর্মে চুক্তি হয়েছিল আমেরিকার সাথে। একই ব্যাপার প্রযোজ্য ছিল কয়েকজন বিজ্ঞানী, আর্মি এবং গুপ্তচরদের জন্যও। রাশিয়ারস্পুটনিক নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথা বলেছেন।
ব্রিটেনের বিখ্যাত নিউজপোর্টাল হাফিংটন পোস্ট এই ইতিহাসবিদকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, সেই বাংকার থেকে সুড়ঙ্গপথে গোপনে হিটলার পৌঁছে যান টেম্পেলহফ বিমানবন্দরে। সেখানে তার জন্য আগেই প্রস্তুত করা ছিল একটি হেলিকপ্টার। সেটিতে চড়ে তিনি যান স্পেনে। তারপর সেখান থেকে হিটলার ক্যানারী আইল্যান্ডে পৌঁছান, সেখান থেকে একটি সাবমেরিন তাকে নিয়ে যায় আর্জেন্টিনায়। প্রায় এক যুগ ধরে আর্জেন্টিনায় থাকার পর প্যারাগুয়েতে যান হিটলার। প্যারাগুয়েতে তখন ক্ষমতায় ছিলেন প্রেসিডেন্ট আলফ্রেডো স্ট্রোয়েসনার, যার ছিল জার্মান শেকড়! বাস্তির মতে, প্যারাগুয়েতে হিটলার মারা যান ১৯৭১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি।
বাস্তি তার বইয়ে প্রাসঙ্গিক এফবিআইয়ের নথিপত্রও লিপিবদ্ধ করেছেন বেশ কয়েকটি। যেমন একটিতে লেখা আছে, ‘আর্জেন্টিনা যে হিটলারের গন্তব্যে পরিণত হয়েছিল, এই ব্যাপারে আর্জেন্টিনা বরাবরই নিশ্চুপ ছিল। হয় হিটলার বার্লিন থেকে আর্জেন্টিনার ৭৩৭৫ মাইল দূরত্ব আকাশপথে পাড়ি দিয়েছিলেন, যেটা বানানোই হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে, কিংবা একটি বিশেষ সাবমেরিনের একজন যাত্রী হয়ে।’
এদিকে সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা বব বিয়ারও বলছেন একই কথা। এই জানুয়ারিতেই History চ্যানেলের একটি সিরিজ প্রচারিত হয় ‘Hunting Hitler’ নামে। বিয়ার এবং তার টিম ৭০০ পৃষ্ঠার একটি গোপন নথিপত্র নিয়ে এনালাইসিস করেন, যেখান থেকে একটি উদ্ধৃতি উদ্ধৃত করেছিলেন, ‘জার্মানিতে আমেরিকান আর্মি হিটলারের দেহাবশেষ চিহ্নিত করতে পারেনি, এমনকি কোনো নিশ্চিত তথ্য পায়নি যে হিটলার মারা গেছেন।’ স্পুটনিক নিউজ লিখেছে, বিয়ারের টিম এই নথিপত্রের উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালিয়ে বাংকার থেকে টেম্পেলহফ বিমানবন্দর পর্যন্ত টানেলের সন্ধান পেয়েছে!
এছাড়া হিস্টরি চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘হান্টিং হিটলার’-এ দাবি করা হয়, হিটলার আত্মহত্যা করেছেন এমন কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদকদের ধারণা, হিটলার আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়ে বিমানে পালিয়ে যেতে পারেন। যৌথ বাহিনী জার্মানি দখলের প্রাক্কালে অনেক বিমান বার্লিন ছেড়ে যায়। এমনই কোনো বিমানে হিটলারের মালপত্র পার করে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া কিছু নথির তথ্য অনুযায়ী, হিটলারের মৃতদেহও পাওয়া যায়নি।
হিটলারের মৃত্যু নিয়ে বরাবরই ধোঁয়াশা ছিল আন্তর্জাতিক মহলে। রাশিয়া ২০০০ সালে হিটলারের আত্মহত্যার প্রমাণস্বরূপ গুলিবিদ্ধ যে করোটি মস্কোতে জনসমক্ষে প্রদর্শন করে, আমেরিকান গবেষকরা সেটির ডিএনএ পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন এটি একজন অজ্ঞাতনামা মহিলার, হিটলারের নয়!
আর ইভা ব্রাউনের শেষ পরিণতি? বাস্তি জানাচ্ছেন, ইভা ব্রাউন বেঁচে ছিলেন আরও অনেক দিন। হিটলারের মৃত্যুর পর প্যারাগুয়ে থেকে আর্জেন্টিনায় চলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ইভা ব্রাউনের বয়স ৯০ বছর হওয়ার পর তার গতিবিধি হারিয়ে ফেলেন বাস্তি!
সংগ্রহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২২