somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভেদ সমাচার

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনারা সমরেশ বসু'র প্রজাপতি উপন্যাসটি পড়েছেন?
উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হয়েছিল আপত্তিকর বিবরণের দায়ে। মামলা মোকদ্দমার পর বইটি পরে আবার মুক্তি পায়। যুক্তিতে সমরেশ বসু বলেছিলেন, রাস্তার পাশে আবর্জনা জমে থাকার ছবি যদি কোন সাংবাদিক পত্রিকায় প্রচার করে, তবে দায়ী কাকে করা হবে? যে সাংবাদিক ছবিটি প্রচার করে সবার চোখ খুলে দিল তাকে, না যথাযথ কর্তৃপক্ষকে??
লেখকের এই এক দায়িত্ব, এই এক মূল্যবোধ।
লেখক তার লেখনী দিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলে, চেতনাকে তাড়িত করে, বিবেককে আলোড়িত করে, এ-ই লেখকের সার্থকতা।
বাংলাদেশে এখন যতগুলো মানুষ আছে, তারচেয়ে বোধকরি ফেইসবুক লেখকের সংখ্যা বেশি। স্ট্যাটাস আপলোড দিয়ে এখন সবাই লেখক। কারো লেখক হয়ে ওঠাতে আমি দোষ দেখি না, তবে লেখকের দায়িত্ব কজনে বোঝে?
এই দায়িত্ব প্রসঙ্গে আরেকটু দৃষ্টান্ত দিয়ে নিই, সমরেশ বসুকে সবাই না চিনলেও সমরেশ মজুমদারকে কমবেশি সকলেই চেনেন, এবং সমরেশ মজুমদার মানেই সবার আগে যে বইটি চকচক করে ওঠে, সেটি সাতকাহন। সাতকাহন প্রথম খণ্ডেই যদি সমাপ্ত হত, তবে সেটি হত অনন্য নিখুঁত একটি উপন্যাস। তবে সাতকাহন দ্বিতীয় খণ্ড লিখে সমরেশ মজুমদার উপন্যাসটির প্রথম অংশের চমতকারিত্বকেও খর্ব করেছেন।
কিভাবে করেছেন বলছি, দীপাবলিকে দেখান হয়েছে একজন এগিয়ে যাওয়া স্বাধীনচেতা নারীর আদর্শ হিসেবে, খুবই আশাব্যঞ্জক, খুবই প্রসংশার্হ। কিন্তু অলোকের সঙ্গে দীপার ডিভোর্স যদি মুক্তমননের পরিচায়ক হয় তবে সেই মুক্তমননকে আমি নিন্দা জানাই। সংসারে মতপার্থক্য, পছন্দ অপছন্দের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সব দম্পতিরই আছে, স্বাধীন চেতনার নামে, নিজের মতামতকে বড় করে দেখার নামে, আপোষহীনতার নামে একটি সংসারকে ভেঙে দিয়ে কোন বিরাট বাহাদুরির পরিচয় হতে পারে না! বাস্তবতা অনেক দুর্বিসহ হতেই পারে, কিন্তু একজন লেখকের হাতে যখন এদের নিয়তি নির্ধারণের ক্ষমতা ছিলই, তবে কেন সে লেখক এই সমস্যাগুলোকে সমাধান করে দিয়ে সংসারটাকে সুন্দর কিভাবে করা যায় সেই ছবিটি এঁকে দিয়ে বাংলার আর দশটা দম্পতির কোন্দলের একটা সুষ্ঠু সমাধান কেন করে দিলেন না??? বিভেদ করে দিয়ে কোন স্বাধীন চেতনার মঙ্গলবার্তাটা প্রচারিত হল শুনি??

ফেইসবুক লেখক সমাজ আজ দুইভাগে বিভক্ত, একদল মৌলবাদী, অপরদল মুক্তমনা। আমি বলি, এঁরা কেই সঠিক নয়। মৌলবাদীদের কথা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন, তারা বাতিল, বয়কট, নিক্ষিপ্ত। মুক্তমননের দৌরাত্ম্য নিয়ে বলার আছে।
বরং দ্বিমত হও- এটাই বোধকরি মুক্তমননের অমোঘ সংজ্ঞা। দ্বিমতটা কিসে? কোথায়? সূর্য পূর্বদিকে ওঠে বললেও সেখানে দ্বিমত করতে হবে? বলতে হবে, না, ঠিক পূর্ব দিকে নয়, উত্তর পূর্ব কোণাকুণি ওঠে? এই বাহেজের নামই কি মুক্তমনন?

যে খোলা চোখে, নিরপেক্ষ বিবেচনায় ভাল আর মন্দ, সত্য আর অসত্যকে নিশ্চিত করে দেখতে পায়, সে-ই মুক্তমনা! কেবল সবকিছুর জাতগুষ্ঠি উদ্ধার করে বিদ্রোহ করলেই মুক্তমনা হয় না! একজন মুক্তমনা মানুষ সত্য আর অসত্যকে অবশ্যই পৃথক করে দেখাবেন, ভালো আর মন্দকে নির্ণয় করবেন এবং কেবল প্রতিবাদ করার নামে কেবল উস্কে দিয়েই যদি চুপ মেরে গিয়ে খেলা দেখতে বসে যান, তবে তিনি জাতির অনিষ্টকারী বই আর কিছুই নন। প্রতিবাদ নয় শুধু, সমাধানের পথও আপনাকে প্রস্তাব করে দেখাতে হবে। যদি সমাধান খোঁজার চেষ্টা আপনার না থাকে, তবে আপনাকে একটা কথাই কড়াকড়ি করে বলার আছে, অপপ্রচার বন্ধ করুন, কলম ছেড়ে দিন।
ফেইসবুকের পোস্টগুলোতে আমি কেবল বিভেদই পেয়েছি, মুসলিমরা জঙ্গী বলে একপক্ষ মুহাম্মদকে বিবিধ উপমায় জঘন্যভাবে অপমান করছে, হিন্দুরা প্রাণহীন নগ্ন মূর্তির পূজারক বলে অপরপক্ষ তাদের গালিগালাজ করে যাচ্ছে, হুজুগে পাবলিক সেসবে বাহবা দিয়ে যাচ্ছে সোৎসাহে!
সম্প্রীতির কথা কেউ বলে না কেন?????
এই জাতীয় উস্কানির ফলে সৃষ্ট বিভেদের দায়ে এইসব লেখককে কেন অভিযুক্ত করা হবে না??
কেবল উস্কে দিয়েই বাহবা উপার্জনের এই প্রবৃত্তিকে আমি ধিক্কার জানাই।

মুক্তমননের আরেকটি বড় দিক হিসেবে আমরা দেখতে পাই নারীবাদিতা!

আমি চিৎকার করে প্রশ্ন করতে চাই, নারীবাদিতা আবার কী জিনিস????? নারী আবার বাদিতা! নারী মানেই তো দুর্বল হিসেবে দেখা হয়ে আসছে, এবং নারীবাদিতা বলতে গিয়েই আপনারা নারীত্বকে আবারও দুর্বল হিসেবে সাব্যস্ত করে দিচ্ছেন!! বলতে হয় বলুন মানবতাবাদিতা! নারী নয়, কেবল নারী নয়, বলুন মানুষ। এবার মানবতাবাদিতার কথা বলতে গিয়ে আপনি নারী নামক মানব সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলুন, তাদের দুর্দশা দুরবস্থার কথা তুলে ধরুন আমি সেটাকে সাধুবাদ জানাব। মানব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক ছিল এবং এখনও অনেক ক্ষেত্রে আছে, সেটা কেন? একমাত্র নারী দুর্বল বলে। নারীকে সবল করার কথা বলুন, সেটাই হবে প্রকৃত হিতৈষণা। আমি দাম্পত্য সমাচার লেখার কথা বলেছিলাম, সেখানে কেবল এই বিষয়টি নিয়েই আরো বিস্তারিত বলব, এখন শুধু এটুকু বলি, পুরুষ নারীকে নির্যাতন করার সুযোগ পাচ্ছে নারী তার সমকক্ষ হয়ে উঠছে না বলেই। এই সমকক্ষতা দৈহিক বলের সমকক্ষতা নয়, এটা ব্যক্তিত্বের সমকক্ষতা। ব্যক্তিত্ব যদি দৃঢ় হয়, তবে নারী উপার্জন করুক আর নাই করুক, পুরুষ তার সংসারে এবং সমাজেও নারীকে সমীহ করতে বাধ্য হবে।
নারীবাদিতার নামে আমরা কেবল বিভেদটাই তুলে ধরার চিত্র দেখতে পাচ্ছি সব জায়গায়! নারীবাদীদের হাহাকার স্বরূপ দেখা যায় সমাজের সর্বত্রই পুরুষ খল, পুরুষ ব্যভিচারী পুরুষ দুশ্চরিত্র, পুরুষ শোষণকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন?? কেবল খুঁজে খুঁজে এই দৃষ্টান্তগুলোই কেন? নারী আর পুরুষের সম্পর্কের অসংখ্য ভালো দিকই তো আছে, সেগুলো কেন বলা হয় না?? সেই পুরুষটার কথা কেন একবারও বলা হয় না, যে বৌয়ের জন্যে একটা শাড়ী কেনার জন্য আরো দুই ঘণ্টা রিকশায় বেশি প্যাডেল মারে?? সেই স্বামীটার কথা কেন বলা হয় না, যে অভিমানী স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য শ্বশুরবাড়ীতে গিয়ে পা ধরাধরি করে???

কুকুরে মানুষ কামড়ালে সেটা নিউজ হয় না, কারণ সেটা স্বাভাবিক; অথচ মানুষে কুকুর কামড়ালেই সেটা নিউজ হয়, কারণ সেটা অস্বাভাবিক। দেশের কোটি সংসারের নিরানব্বই লক্ষ পুরুষ স্ত্রীকে বুকে মাথায় করে রেখে সুখে জীবন যাপন করলে সেটা নিয়ে কোন প্রশংসা হয় না, কেবল এক লক্ষ পুরুষের স্ত্রীর প্রতি নির্যাতনকেই আলোকিত করে দেখান হয় যদি তবে সেটাও একধরণের উস্কানিই। আমার কথার মানে এটাও নয় যে, এই এক লক্ষ নির্যাতনকারী পুরুষকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত বা এটাকে হিসাবে না ধরা উচিত। নির্যাতন করলে তার বিচার আছে, বিচার হতেও হবে, কিন্তু কেবল বিদ্বেষটাকেই কেন প্রচার করা হবে????

নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষের শিশ্নের সমূল কর্তন করার চেয়ে, পুরুষকে ঝাঁটাপেটা করে বয়কট করার শ্লোগান না দেখিয়ে কিভাবে নারী পুরুষের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো যায়, নারী আর পুরুষের সুন্দর সম্পর্কের দৃষ্টান্তগুলো কেমন হতে পারে সেই আশার বাণীটা কেন প্রচারিত হয় না?????
সবখানে এরকম বিভেদটাই কেবল কেন প্রোজ্জ্বলিত করা হচ্ছে???
নারীর ওড়না, নারীর ছলনা, হেন তেন নিয়েই বা কেন রসাত্মক প্রচারণা করা হবে???
ইতিবাচক প্রচারণা কেন নয়??

আপনারা স্ট্যাটাস পোস্টের নামে লাইক কামানোর জন্য এসব উস্কানি কখন বন্ধ করবেন?? খুঁচিয় খুঁচিয়ে কোন্দল বাঁধানোতে বাহবার কিছু নেই, সমস্যা তুলে ধরে তার সমধানের ব্যবস্থা দেখাতে পারলেই সেটা প্রকৃত সমাজ সংস্কার! বরং দ্বিমত হও মতবাদে যারা বিশ্বাসী, তারা কখনই সমাজের উপকার করছে না, তারা কেবলই সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করছে, একতাকে দ্বিমতের চক্রান্তে দ্বিখণ্ডিত করছে।

বরং একমত করুন, ঐক্যমত্যের আহ্বান করুন, সবাইকে এক সুন্দর শুদ্ধতার মঞ্চে তুলে আনতে চেষ্টা করুন, সেটাই হবে প্রকৃত মুক্তচেতনা, প্রকৃত সমাজ হিতৈষণা!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×