somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলা এবং আমাঞ্জার ফেইসবুকীয় গ্যাঁজানি

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইমেলা লইয়া চুড়ান্ত আলোচনা আজ হইতে বছর পাঁচেক আগেই লিখিয়া ছুড়িয়াছি ফেইসবুকের নিউজফিডারে! পরিস্থিতি তখনও যাহা ছিল, এখনও তাহাই! অতএব, একই কথা বারংবার বলা বাতুলতা বলিয়া বোধপূর্বক আর কিছুই বলিতেছি না৷
কিন্তু ইহাতেও বিপত্তির উদ্রেক হইতেছে, যেহেতু লিখিতেছি না, সেহেতু নিউজফিডেও দর্শিত হইতেছি না, মানুষের স্মরণ হইতেও বাষ্পায়িত হইতেছি! বেশিরভাগই মরিবার পরেই অমর হয়, তবে আমি আমার কোন পোস্টের কারণে কস্মিনকালেও কোথাও স্মৃত হইবো কি না তাহায় বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহ আছে!

যাউজ্ঞা, বইমেলা লইয়া আমি প্রতি বৎসর একখানি ক্যাসেট বাজাইতে থাকি, তাহা আপনারা জানেন, "এবারের বইমেলায় একটা বইয়ের নাম বলুন, যা আগামী পাঁচবছর পরও মানুষ মনে রাখবে!"
তেমন বই কোন বছরই কেহ দেখাইতে পারে নাই৷ আমি বুঝিতে পারি, অনেক লেখকই আমাকে আমার এই বক্তব্যের কারণে জব্বরীয় ভাষায় অবন্ধু করিয়া গোল্লায় গমন করিয়াছে, কারণ লেখকমাত্রেই তাহার লেখার সমালোচনা সহ্য করিতে পারে না— সে বাজারি লেখকই হউক, আর টিকটিক লেখকই হউক!

অতিরিক্ত ক্যাচালে যাইবো না, কথা অল্পতেই শেষ করিতেছি৷ বর্তমান নবম দশম শ্রেণীর বইতে পালামৌ নামক একটি ভ্রমণকাহিনী দেখিতে পাইবেন! পালামৌ লিখিয়াছেন সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! তাঁহার নাম খুব অল্প লোকেই শুনিয়া থাকিবেন, আর তাঁহার কোন লেখা পড়িয়া থাকিবেন এমন লোকের সংখ্যা আঙুলেই গণনা করা যাইবে, কড়ায় গুণিতে হইবে না! সঞ্জীবচন্দ্রের পরিচয় দিতে গেলে তিনি যে মহান ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড় ভাই তাহা বলিতে হয়, নইলে কেহ চিনিতে চাহে না!

আপনারা সঞ্জীবকে না চিনিলেও "বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে!" —এই লাইন পাঠ করেন নাই এমন শিক্ষিত মানুষ পাওয়া অসম্ভব! জ্বি, এই প্রবাদ বাক্যটির সৃষ্টিকর্তা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! পালামৌ ভ্রমণকাহিনীটি যদি পাঠ করেন, তাহা হইলে ওই পাঠের সারমর্ম তেমন কিছুই পাইবেন না৷ একজন লোক কোল সাঁওতালদের এলাকায় ঘুরিতে গিয়াছে, সুঠামদেহী আদিবাসী যুবাদের নাচ দেখিয়াছে— এই পর্যন্তই! অন্তত নবম দশম শ্রেণীর পাঠ্যতে এইটুকুই আছে! খুবই সাদামাটা কাহিনী! তাহলে কেন এই সাদামাটা কাহিনীটাকেই পাঠ্য হিসেবে গৃহীত হইল??

কারণ, ওই কাহিনীর একেকটি লাইন, বলার ভঙ্গিতে লেখকের জ্ঞানের যে রশ্মিবিচ্ছুরণ, লেখকের যে প্রজ্ঞা! বরাকর নদীর তীরে গাড়ি থামিলে কুলিদের কতগুলো বালক বালিকা আসিয়া দুইটা পয়সা ভিক্ষার জন্য ঘিরিয়া ধরিল, সেখানে দুই বৎসর বয়সী একটি শিশুও আসিয়া হাত পাতিয়াছে, যে পয়সার মর্মও বোঝে না, ভিক্ষার উদ্দেশ্যও বোঝে না, সে শুধু অনুকরণে হাত পাতিতে শিখিয়াছে! অর্থাৎ একটি শিশু তাহার জন্মলব্ধ পরিবেশ হইতে তাহার শ্রেণীবোধে দীক্ষিত হইয়া গিয়াছে, সে অধম, সে গোলাম, সে নীচুজাত ভিক্ষুক— এই অন্তঃকরণ তাহার তৈরি হইয়া গিয়াছে! এই অংশটুকু হইতেই বুঝিতে পারা যায়, লেখকের দর্শন কতটা গভীর, দেখিবার চক্ষু কতটা অন্তর্ভেদী! লেখক ইহার পরে কথায় কথায় বলিলেন, সাহসের সংজ্ঞা! তিনি বলিলেন, "যে বিপদ বুঝে না, সেই সাহসী৷" অর্থাৎ আমরা কোন কাজ সাময়িক ক্রোধ বা ঝোঁকবশত করিয়া ফেলিলে তখন আমাদের সাহসী বলা যায়, কিন্তু আমরা যদি কাজটি করিবার আগে ইহার প্রতিফল কী কী হইতে পারে, তাহা ভাবিতে যাই, তখন আমাদের আচরণ আর উদ্ধত ক্ষিপ্র থাকিবে না, বরংচ আমাদের প্রতিক্রিয়া শান্ত হইবে! এই যে মানব মননের এরূপ আন্ত-রসায়ন কজনে এভাবে ভাবিয়া দেখে?? উনি কোল সম্প্রদায়ের লোকদের দেখিয়া বলিয়াছেন, ইহাদের কলিকাতায় বা অন্য শহরে দেখিলে খুবই বেমানান বিদঘুটে চেহারার ঠেকে, অথচ এই জঙ্গলে ইহাদের এতটুকুও বেমানান লাগিতেছে না, বরং অপূর্ব সুন্দর লাগিতেছে! এই প্রসঙ্গেই তিনি প্রবাদটি সৃষ্টি করিলেন— বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে!

তাই বলিতেছি, বক্তা ভালো হইলে গল্প পানসে হইলেও তাহা শ্রুতিমধুর হয়! পালামৌ কোন চমৎকার গল্প নহে, অথচ লেখকের বলিবার ঢং এবং লেখকের বক্তব্য পাঠ করিতে গেলে আপনি যে কথায় কথায় চমৎকার দর্শনবোধ বা জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হইবার সুযোগ লাভ করিবেন, তাহাই আপনাকে ওই লেখকের অনুরক্ত করিয়া তুলিবে! একেকটি লেখা সার্থক হয় যখন তাহা হৃদয় স্পর্শ করে, কিংবা প্রবাদপ্রতিম হইয়া উঠে!

অতএব, ওহে বর্তমান মূর্তিমান লেখক, পালামৌ পাঠ করিয়া কিংবা পইড়া আসেন! আপনার সময় অপেক্ষা দেড়শো দুইশো বছর আগে একেকজন ব্যক্তি যাহা লিখিয়াছেন, আপনি এত বছর পরে আরো বেশি জ্ঞান ও বোধের জগতে ভূমিষ্ট হইয়াও তাঁহাদেরকে অতিক্রম করা তো দূর, তাঁহাদের পদধূলিযোগ্যও হইয়া উঠিতে পারেন নাই! আপনার লেখায় কোন বোধটা আছে, যাহা পাঠককে নাড়া দিবে??? কোন দাগ কাটার মত দৃষ্টান্ত আছে যাহা পাঠককে উঠিতে বসিতে জীবনের বিভিন্ন সময়ে ইয়াদ দিলাইবে?? পাঠকের আকূলতার কোন কোণাটা ধরে আপনি টান দেবার ক্ষমতা রাখেন বা চেষ্টা করিয়াছেন আপনার লেখায়?? ফেইসবুক মারাকোটিং আর খাতিরের লোক ধরিয়া আনিয়া চক্ষুলজ্জাবশত বই কিনাইয়া ফটো খিচাইয়া নিজেকে সার্থক লেখক হিসেবে কল্পনা করিয়া চরমপুলক বোধটা দরজা বন্ধ করিয়া লোটার সম্মুখে কিংবা কম্বলের অভ্যন্তরে সারিতে থাকুন, যাঁহারা অল্প বিস্তর সাহিত্য বোঝেন, আপনারা রোজ রোজ তাহাদের বমনাগতির কারণ হইতেছেন! আইছে আমার কল্লাজয়ী লেখক!!

আর টিকুটক ফাঠক বা সেলফি পাঠকের কথা নিয়া কিছুই বলিব না, কারণ আমারও দুই চাইরটা লাইক পাইবার দরকার আছে, নচেৎ এহজীবনে কী করিয়া দুইটা ভাত খাইবো??
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×