পবিত্র মাহে রমজান। প্রতি মুসলমানদের কাঙ্খিত একটা মাস। প্রতি বছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুযোগ তৈরি করার জন্য এ মাস আসে। তবে বর্তমানে আমরা হয়তো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের তাৎপর্য ভূলে গিয়ে অন্য কিছু পাওয়ার চেষ্টা করছি।
আত্মসংযম এর মাস মাহে রমজান। কিন্তু আমরা সংযম কোথায় করছি। প্রতিদিন ইফতারিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে কি সংযম পালন করছি। না ইফতার পার্টির নামে ২-৩‘শ লোক (যাদের নিজেদের টাকা ইফতার করার সামর্থ আছে বা সমাজের প্রভাবশালী লোক) খাইয়ে সংযম পালন করছি।
এখন একটি ঘটনা আপনাদের বলব, যা হয়তো অনেকের সাথে মিলতেও পারে। অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো ইফতার সামগ্রি বিক্রির দোকান। প্রতিদিনের মত একজন ব্যচলরের যা ইফতার কিনতে হয় তা কিনতে গেলাম। নামকরা রেষ্টোরেন্ট বা ফাষ্টফুডের দোকানগুলোর থেকে সাধারণত কম টাকায় এসব দোকানে ইফতার পাওয়া যায়। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। সবাই যার যার সামর্থ অনুযায় ইফতার ক্রয় করছেন। দোকানের পাশে দাড়িয়ে একটা বৃদ্ধ মহিলাকে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমার কৌতুহল জাগে যে তিনি দাড়িয়ে কি করছেন। কাপড়-চোপড় দেখে মন হলনা তিনি বিখারী বা অসহায় কেউ। কৌতুহল মেটানোর জন্য কাছে গিয়ে জিগ্যস করলাম তার কিছু লাগবে কিনা? বৃদ্ধ মহিলা সারাদিন রোজা রাখার ফলে কথা বলতে পারছিলেন না। আমি আবার জিগ্যেস করায় খুব ধীরে ও নরম গলায় আমাকে বললেন তিনি ইফতার কিনতে এসেছেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকে দেখতে লাগলাম আর ভাবলাম হয়তো বৃদ্ধার কেউ নেই তাই তিনি ইফতার কিনতে এসেছেন। তারপরও তার কাছে জানতে চাইলাম পরিবারে অন্য কেউ আছেন কি না। একটু সময় থেমে বললেন পরিবারে তার সবই আছে। তবে তারা সবাই আজ ইফতার পার্টিতে গেছে। বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে চলতে অসুবিধা হবে বলে তার ছেলে হাতে ৫০০ টাকা গুজিয়ে দিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পার্টিতে।
শুধু বৃদ্ধ বাবা-মা’কে রেখে ইফতার পার্টিতে যাওয়া নয়, সমাজে ছিন্নমূল বা অসহায়দের সামন্য ইফতার করানোর মানষিকতা হারিয়ে বসেছে মানুষেরা। একজন দিনমজুরের সংসারে ৫ জনের ইফতার আয়োজন করা খুবই কষ্টের। কিন্তু একজন উচ্চবিত্ত লোক প্রতিদিন ৫ টা পরিবারকে ইফতার করানোর আর্থিক সক্ষমতা রাখে।
অনেক দোকানদার একটুও চিন্তা করেন না যে ‘ আমার দোকানের পাশে ছেড়া কাপড়ের এই ছেলেটা কেন দাড়িয়েছে। পকেটে টাকা থাকলে তো এসেই কিনে নিয়ে যেতে পারতো।
আল্লাহ বিত্তশালীদের যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন এ জন্য যে গরীব মানুষেরা যাকাতের সম্পদের মাধ্যমে নিজেদের ভগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে। কিন্তু এসব কই।
বড় বাপেরে পোলও খায় আর নান্নার বিরিয়ানী দিয়ে ইফতার করলে কি আপনার সংযম পরিপূর্ণ হবে। নাকি আপনি ঐতিহ্য পালনের জন্য এসব করছেন। বা আপনার প্রতিবেশী নান্না নিয়ে এসেছে বলে আপনারও তা নিয়ে আসতে হবে।
যদি এসব আপনি ঐতিহ্য মনে করেন তাহলে গরীব মিসকিনদের ইফতারে আপনার সঙ্গী করুন। আপনার বাবা মা’কে বাসায় রেখে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ইফতার পার্টিতে না গিয়ে বা হাজার হাজার টাকা খরচ বিত্তশালীদের নিয়ে ইফতার পার্টি না করে গরীদেরকে ইফতার করান। সেহরীর জন্য তাদের সাহায্য করুন। কারন নান্না বা বড় বাপের পোলাও যাদি একশ বছরের ঐতিহ্য হয় তাহলে গরীবদের সাহায্য করা ১৪০০ বছরের ঐতিহ্য। প্রাচীন ঐতিহ্যকেই আমরা ঐতিহ্য বলব। [img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/aahmednur/aahmednur-1435340333-fa0495b_xlarge.jpg
Written By
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৪৬