প্রতিধ্বনির শুরু
বেবি ডল, হট ড্যান্স আর ডি জ়ে আগডুম বাগডুম (নাম খেয়াল নাই) এসব হিন্দী রিমিক্সে বাংলাদেশ সয়লাব তখন। কয়েকজন ছিল, যাদের আবার এসব ভালো লাগে না। তারা শুনত সনু নিগাম আর কুমার শানু। ভালো, খুব ভালো। আমার দোস্ত আর বড় ভাইদের এই অবস্থা যাচ্ছে। মনিপুর স্কুলে পড়তাম তখন। ক্লাস ৮ বোধহয়। নতুন এসেছি এখানে। তেমন কোন বন্ধু নাই। কারও সাথে খাপ খাওয়াতে পারছিনা, এমনিতেও কারও সাথে তখন পর্যন্ত কোন দিন তেমন একটা পারিনি। যাই হোক, আমি তখন অর্থহীন আর মাইলস শুনি।
আমার ছিল ৪ টা স্পীকার আর ২ টা উফার। পাশের বাসা থেকে যখন হিন্দি রিমিক্স ছাড়ত, আমি ছাড়তাম অর্থহীনের সুমন। সারাটা দিন গানশুনতাম তখন। আর সারাটা রাতও। আমার গানের গলা নাই, এই নিয়ে আমার এখনো দুঃখ। সারাদিন জোরে জোরে আওয়াজ। নিজেদের বাসা বলে এটা নিয়ে তেমন সমস্যা হয় নি। ৩ টা স্পীকার রুমে রেখে একটা বারান্দা দিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে দিতাম। এইটা নিয়ে কত কম্পলেইন। হা হা হা। মনে হত এলাকাবাসীকে গান শুনিয়ে সমাজের একটা উপকারই ত করছি। কিন্তু, অশিক্ষিত চোর এই উন্নত সমাজ সেবাটা মেনে নিতে পারল না। কে যেন তার কেঁটে স্পীকারটা চুরি করে নিয়ে গেল।
আবার, গানের কথায় আসি। ব্লাক নতুন আসল। আমার অল্প কিছু বন্ধু যারা আছে, তাদের এ ব্যাপারে কোনই ধারণা নাই। তারা তখন ‘কাঁটা লাগা’ য় মজেছে। ব্লাক নিয়া আমার মনে মনে ফালাফালির শেষ নাই। আবারও মনে হত একা আমি। ইংরেজীও শুনতাম। sevage garden, richard marz, michel bolton, backstreet boyz, n-sync, alisson crauss, scorpion, sting সহ আরও কিছু মেলডি টাইপ। সবার কথা মনেও নাই।
এতক্ষণ পর্যন্ত তো ঠিকই ছিল, সমস্যা হল যখন মন মেটালের দিকে ঘুরে যায়। সারাদিন মজে থাকতাম। শুধুই থ্রাশ মেটাল। আর কিছু নাই দুনিয়ায়। slipknot, bullet for my valentine, pod, iron maiden, grave hunter, metallica, children of bottom আরও হাজার হাজার। linkin park ত ছিলই।
অতদিনে অর্ণবের ‘চাইনা ভাবিস’ মুখস্ত। তাহসানের ‘কথোপকথন’ বের হল। এত দিনে আমার আশে পাশের পোলাপানের দৃষ্টিটা বোধহয় একটু ঘুরলো। এবার তারা বাংলার দিকে তাকালো।
স্বপ্নচূড়ার মধ্য দিয়ে দেশের অনেক আন্ডার গ্রাউন্ড ব্যন্ড তখন বের হচ্ছে। আমি আবার এই দিকে এসে পড়েছি। মেটাল আর আন্ডার গ্রাউন্ড।
হইল এক ঝামেলা। এক গ্রুপ বের হল। এরা বাংলা শুনেনা কিন্তু মেটাল শুনে, সাথে হিন্দী । আরেক দল বের হল, এরা মেটাল শুনে না, শুনে বাংলা সাথে হিন্দী। আমি এখন যাই কোথায় !! কারও সাথে এখনও মিলতে পারতেছিনা। সবার সাথেই চলি, কিন্তু অর্ধেকটা সময়ই চুপ মেরে থাকতে হয়।
এ কথা অবশ্যি অনস্বীকার্য যে, মানুষ যে যে গান শুনে তা জেনেই নির্দ্বিধায় তার মন মানসিকতাকে একটা ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। একটা নির্দিষ্ট যুগে এই তালিকাটা একেক রকম হবে।
ভাবতাম, এমন কি কোন ব্যান্ড থাকবে, যা সবাইকেই রুচি আর মন মানসিকতার উর্ধ্বে তুলে দিবে, যাদের গান সবাইকে মাতিয়ে তুলবেই। মানে, দ্যা আলটিমেট ব্যান্ড, যা যে কোন কিছুর উপরে।
ক্লাস নাইনে উঠে গেছি আমি। ২০০৪ সাল বোধহয়। কিভাবে যেন, হাতের কাছে একটা অন্যরকম গান চলে আসে। কোথাথেকে একটা mp3 পেয়েছিলাম যেন। একটা গান পাই এক new folder এ । track 4। এই একটাই গান পেয়েছিলাম ওই ফোল্ডারে।
অবাক হয়ে যাই। শুধু শুনি আর শুনি। বার বার। এমন অদ্ভুত আর এমন শক্তিশালী সুর আমার মাথা খারাপ করে দেয়। পাগলের মত খুঁজতে থাকি আমি এর আর্টিস্ট কে। নাহ পাইনি তখন। পরিচিত কেউ শোনেনি। আমার খেয়াল আছে, একবার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার রাতে সারাটা রাত এই গানটাই শুনেছি। পড়িনি কিছু। সেই সময়ে আমার কিশোর মনকে এই গান এতটাই নাড়া দেয়।
অনেক খুঁজতে থাকি। কিন্তু নাম না জানা আর ব্যান্ডের নাম না জানলে একটা গান কার, সেটা কী খঁজে পাওয়া সম্ভব ?
চলবে…………
[অনেক পরে আমি এই ব্যান্ড কে খুঁজে পাই। এই ব্যান্ডকে নিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই লিখব লিখব ভাবছিলাম। এই পর্বটা ব্লগার রাশেদ ভাই কে উতসর্গ করলাম।]
পরের পর্বের জন্য Click This Link
[শেষে এসে যেন শুরুর একটা অপ্রাসঙ্গিক ভূমিকা না দিলেই নয়। আমাকে প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় বাসে ব্যয় করতে হয়। আমার সময়ের কতটুকু দাম আমি জানি না, তবে ঐ সময়ে আমার আসলে কিছু করার থাকেনা। বিভিন্ন বিষয়ে টুকটাক কিছু ভাবি। কখনো যদি কিছু লেখার মত দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা এই সিরিজে লিখে থাকি, লেখার ইচ্ছা রাখি।]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




