somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্মাদনার যোগজীকরণ – ০০২

০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের জন্য Click This Link


অগোচরের স্বপ্ন


হার্ড ডিস্কের সমস্যার কারণে সেটা ফরম্যাট করতে হয়। আমার এত প্রিয় track 4 হারিয়ে যায়। সেই গানটা খুঁজেছি অনেক দিন। কিন্তু, একটা গান এতো ভীড়ে কী খুঁজে পাওয়া এতই সহজ ? আমি হাল ছেড়ে দেই।



একটা বছর বোধহয় এভাবেই কেটে যায়। এর মাঝে আমি evanescence, avril lagegne, blues, MLTR, richi blackmoore, Vanessa mae, trisha yearwood সহ শুনে ফেলেছি আরও অনেক কিছু। এরা বেশিরভাগই বাঘা বাঘা, নিজেদের তুলনা শুধু নিজেরাই। বেশি ভাল গান শুনলে এই এক সমস্যা, সাধারণ অন্য কোন গান আর ভাল লাগেনা। আর, সবসময় খুব আলাদা ধাঁচের গানও পাওয়া যায় না। কোন গান মোটামুটি মানে ভাল হলেই, সবাই যেমন নেচে উঠত, আমার কাছে সেটা তখন কেমন যেন পানসে লাগত। কাউকে ছোট করছি না, তবুও মনে মনে যেন ওই track 4 কে খুঁজতাম অনেকবার।



কিন্তু, আফসোস গানটা ছিল এমনই, যে আমি জানিওনা ওটা ইংরেজী গানই কী না। কীভাবে আর খুঁজে পাব !
এভাবে একদিন, আমার এক সিনিয়ার কাজিন (প্রায় ২০ বছরের বড় ও) এর কাছ থেকে ওর পুরোনো একটা write করা সিডি আনি। সেখানে একটা গান পাই। track 2 । আমি আবারও ডুবে গেলাম। দ্বিতীয়বারও যে মানুষ প্রেমে পড়তে পারে, সেটা আমি সেদিন থেকেই উপলব্ধি করি। আসাধারণের চেয়েও যেন বেশি কিছু। বাঘাদের গান শুনে আগে ভাবতাম এটুকু ত অসাধারণ, এটুকু দারুণ, কিন্তু, এই গানটা শুনে এসব ভাবার আর কোন অবকাশ পাইনি । নিজের ভীড়ে আমি নিজেই নিখোঁজ হয়ে জেতাম। অদ্ভুত এক অনুভূতি সারাটা দিন জুড়ে আমাকে ঘিরে রাখত। দৌড়ে গেলাম ওই কাজিনের কাছে। ভাইয়া, এটা কার গান ?





নাহ, এবারও উত্তর পাইনি। অনেক আগে ভাইয়া সিডিটা আনছিল, শুনে দেখেনি। কোনটা কার গান জানে না। কার থেকে কবে আনছে, তাও বলতে পারেনা। আমি বিমূড়। জগত টাই তখন আমার কাছে এমন। সারাটা দিন যেই ছেলে গান নিয়ে থাকে, তার জন্য এসব তো অনেক বড় কিছু। তার ত তেমন কোন বন্ধুও ছিল না (খুব ভাল কিন্তু অল্প কিছু বন্ধু ছিল। সংখ্যায় খুব কম।)।
আমি জানতাম, এই গানের মালিক কেও খুঁজে পাব না।






কলেজে উঠব এবার। মানে, কীই বিশাল একটা ব্যাপার না যেন। a+ পাওয়ার সুবাদে বেশির ভাগ কলেজেই সরাসরি ভর্তি হবার সুযোগ। ভাবলাম, সবখান থেকেই ফর্ম আনব। পরে দেখা যাবে, কোথায় আমার জায়গা হবে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে এসে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এসে আমার মাথা ঘুরে যায়। এত সুন্দর কলেজ দেখে আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে সরাসরি ভর্তি হয়ে যাই (লাইনে আমার সামনে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিল, তার সৌন্দর্য আমাকে কতটুকু যে প্রভাবিত করেছিল, সে কথা উহ্য থাকুক।)।




ঢাকা শহরে থেকে আমি কালবৈশাখীতে আম কুড়িয়ে খেয়েছি, ভ্যাপসা দুপুরে গাছের কাঁঠাল পেড়ে খেয়েছি, ঝুম বর্ষায় কাঁচা পেয়ারা খাওয়া নিয়ে লাফালাফি করেছি (ক্যন্টিনে যত খুশি সস খাওয়া যেত, কিন্তু লবণ ছিল না। ফার্স্টফুডের সাথে কেউ লবণ নেয় না বলেই বোধহয়। এতে কী ? আমরা সস দিয়েই পেয়ারা খেতাম। পরে পেটের ব্যাথায় কতটুকু ভুগেছি, সেই কথাটাও আজকে বরং উহ্যই থাকুক।) ঢাকা শহরে থেকে কয়টা ছেলে এসব মজা করতে পারে আমার জানা নেই। আমাদের কোন স্যার কখনো মারেন নি, আর্মিদের কলেজ হলেও নিয়ম-কানুন শুধু পরিষ্কার জামা, শু আর ছোট চুলেই সীমাবদ্ধ ছিল। লাইব্রেরির জন্য আলাদা বিল্ডিং আর গাছতলার নিচে ছেলে মেয়ে, সবারই আড্ডা। এই অসাধারণ কলেজ জীবনে গানের খোঁজাখুজিটা আপাতত মুলতবি ছিল।




তাই বলে, গান শোনাটা কিন্তু থেমে থাকে নি। সেসময় শুনতাম বাংলা। আমি গর্বিত, আমি মুগ্ধ, আমি ভক্ত। নতুন করে শুনতাম সুমন (অর্থহীন), শিরোনামহীন, arbovirus, icons, raaga, yaatri, stentoriyan, tahsan, nemesis, myth, ornob সহ আরও অনেকের গান। এখানে কারও ব্যাপারেই বোধহয় আলাদা করে বলার কিছু নেই। সবাই একেকটা নক্ষত্র। তবে, আমি বিশেষ দুটি ব্যন্ডের কথা আলাদা ভাবে বলতে চাই। icons আর raaga । শেষেরটা সবারই ভালো লাগবে, তা আমি নিশ্চিত। কিন্তু, প্রথমটা শুধু আমার মত কিছু গান পাগলের জন্য। এদের প্রতিটা গানের লিরিক্স অত্যন্ত দুর্বোধ্য। যখন বুঝি, দারুণ লাগে।কার সাথে কেমন জমবে, কে আমার মত, কার সাথে বন্ধুত্ব করলে ভালো লাগবে এসব তখনো ঠিক করতাম আমি মানুষের গানের রুচি দেখে। icons এর গান আমি অনেককেই দিয়েছি, বলতাম শুনে বল কেমন লাগলো। এরপরেই মনে হত, বুঝে যেতাম ওর আর আমার কতটুকু জমবে। এতই ভক্ত ছিলাম এই ব্যন্ডের।





অতদিনে, মিউজিক সফটওয়্যারের উপর বেশ দখল নিয়ে ফেলেছি। মোটামুটি বেশ কয়েকটা গান বন্ধুদের দিয়ে গাইয়ে কম্পোজ করে ছড়ায়া দিছিলাম। নিজেদের নাম ১০ বার করে বলেছি বোধহয়। এখন, শুনলেই হাসি পায়। ভয়েসে অটো টিউনার ব্যবহার করার বিপক্ষে আমি সবসময়েই। কিন্তু, অনেকেই গানের সাথে কম্পিউটার ব্যবহারেরও বিপক্ষে। ব্যাপারটা আমি বুঝি না। একটা নোট চাপলে একটাই তো নোট টিউন হবে, কিন্তু অনেকে মনে করে, কম্পিউটারই নাকি গান বানিয়ে দেয়। শুনে অবাক হই। যাই হোক, হাবিব আর ফুয়াদ তখন একদম নতুন হিট। মাত্র আসল।ফুয়াদের গান অবশ্য আগেও পেয়েছিলাম। কী যেন একটা ব্যন্ড ছিল ওর। ‘আগুন্তক’ সিরিজে ওই ব্যান্ডের একটা গান ছিল। খেয়াল আছে। যাই হোক, ওদের আগেই আমি সফটওয়ার ব্যবহার করতেম বলেই বোধহয় নতুনত্বের জন্য বন্ধুদের কাছে মোটামুটি হিট হয়ে গিয়েছিলাম। এখনও মাঝে মাঝে মনে হয়, স্কুলে সবার কাছে বোকা টাইপ কিছু একটা ছিলাম। আর কলেজে এসে আমিই সবচেয়ে বড় গ্রুপ বানাই এমনকী তার লিডও দেই। সে আরেক ইতিহাস, ওই দিকটাও আজকে বরং উহ্য থাকুক ।





সেকেন্ড ইয়ারে উঠব। লেখা পড়ার চাপ অনেক। এর মাঝে গান শোনা কমে গেছে, আর বাংলা ছাড়া তখন কিছুই শোনা হত না।
হঠাত করেই একটা গান হাতে এসে পড়ে । চমকে উঠি। মনে হতে থাকে এ রকম গানের ধারার সাথে তো আমি পরিচিত । শুনেছি কী ভাবে যেন আগেই।
সব কিছু বাদ দিয়ে, পাগলের মত এই গানটাকে ট্রেস করতে থাকি। অবশেষে, এই গানের সূত্র ধরেই track4 , track 2 এর মালিকের খোঁজ পাই।




চলবে…………




[শেষে এসে যেন শুরুর একটা অপ্রাসঙ্গিক ভূমিকা না দিলেই নয়। আমাকে প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় বাসে ব্যয় করতে হয়। আমার সময়ের কতটুকু দাম আমি জানি না, তবে ঐ সময়ে আমার আসলে কিছু করার থাকেনা। বিভিন্ন বিষয়ে টুকটাক কিছু ভাবি। কখনো যদি কিছু লেখার মত দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা এই সিরিজে লিখে থাকি, লেখার ইচ্ছা রাখি।]




পরের পর্বের জন্য Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×