somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্পঃ পেছনের কোন মুহূর্তে

০৭ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আগের সেই পোস্টের সাথে আদৌ কোন সম্পর্ক নাই।]

উনি একাই বসে আছেন। ইদানীং কেন যেন এমনই হয়, মাঝে মাঝে এমনিই বসে থাকেন। ভাবেন। আরও বেশি ভাবেন। তার কী কোথাও ভুল হয়েছে ?
আস্তে করে তার পিছে একজন আসলেন।
-পরম সম্মানিত, আপনাকে কী বিরক্ত করলাম ?
-- আপনাদের সমস্যা কি আমি বুঝি না। ব্যাপারটা কি ভুলে গেলে হয় না?
-আসলে আমি ঠিক ওভাবে বুঝাই নি।
--আমি আপনার ভাবনার ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পারি। আমি জানি আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
-আসলেই ব্যাপারটা যেন কেমন। আমরা সবাই রসিকতা অনুভবের লাইসেন্স নিলাম, আর আপনি বিরক্ত হবার লাইসেন্স নিলেন। অথচ আমরা একই ধারার। ঠিক না? আমাদের চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই এক হবার কথা ছিল।
-- তুমি কি জান, ‘ সেই জনেরা ’ আমাকে কেন দলপতি বানিয়েছেন? কারণ, আমি তোমাদের মত হয়েও তোমাদের মত ভাবি না।
-আমি জানি, খুব প্রিমিটিভ অবিস্থাতেই আপনি আপনার নিজের জন্য একটা অনুভুতি বানাতে পেরেছিলেন। অবাক হবার লাইসেন্স পাওয়ার পর, এটা ভাবলেই আমি অবাক হই বারবার। কীভাবে কেউ লাইসেন্স ছাড়াই অনুভূতি চালায়, কীভাবে নিজের জন্য একটা অনুভুতি তৈরি করতে পারে !!
--এটাও কী রসিকতা ?
-নাহ। আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। আপনি যদি অনুমতি দেন।
--কর।
-আপনি যেই অনুভূতিটা তৈরি করেছিলেন, সেটা কী মানুষের মত ছিল ? নাকি আমাদের নিজেদের? সেটা কোন অনুভূতি ছিল ? কত মাত্রার ?
--তুমি ভাল করেই জান, আমি সেটা বলতে পারিনা, কমরেড।
-ভুল হয়ে গেছে, সম্মানিত। আমি যাচ্ছি।
--হয়ত, আবারো বহু বছর পরে আমাদের দেখা হবে, এর আগেই জেনে যাও। আসলে আমি চাইলেও প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমাকে দিতে পারছিনা। আমার স্মৃতি থেকে ‘ সেই জনেরা ’ সরিয়ে নিয়েছেন। সেই অনুভূতি সম্পর্কে আমার নিজেরও আর কোন ধারণা নেই।
-আমি বুঝলাম না, আমার চলে যাবার সাথে আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কী সম্পর্ক ?
--আমি বিষন্ন হবার লাইসেন্সও পেয়েছি। এটা অনুভব করতে পার না বলে, তুমি চলে যাবার কারণে আমার কেমন লাগছে, সেটা তুমি বুঝতে পারছনা।
-কী সেই অনুভূতি যার জন্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা লাগে ?
--এটা আসলেই বিষন্নতা কী না জানি না। আমার কাছে যে কোন অনুভূতি আসলেই কীভাবে যেন এর একটু পরিবর্তন হয়ে যায়। অন্যরকম হয়ে যায়। মনে হয় যেন, এ থেকেই অন্য কিছু অনুভব করতে পারব।
-সম্মানিত, আমি আসলেই তেমন একটা বুঝিনা আপনার কথা। শুধু এটুকু বুঝেছি, আপনি যা বলেছেন, তা গোপন রাখাটাই আপনার জন্য ভাল হবে। সামনের নীহারিকা আবক্ষের পরে যখন আসব, আপনাকে এভাবেই দেখতে চাই।
--তুমি বুঝতেছনা, ব্যাপারটা আমাকে কতটুকু বিষন্ন করছে। এতগুলো সৌর বছর আমরা এক সাথে কাটিয়েছি। সামনের আরো কত শত বছর তোমাকে ছাড়া থাকব। যাও, আশা করি তোমার যাত্রা শুভ হোক।
-সেটা আবার কী? আশা করা মানে কি ভাল না খারাপ ?
--আমি এবার বিরক্ত হচ্ছি। সামনে থেকে যাও এখন।
-আমি রসিকতা করলাম। আমিও আশা করি আপনার ভবিষ্যত শুভ হোক। বিদায়।
--বিদায়।

তিনি আবারও বিষন্ন হয়ে গেলেন। আবারও ভাবতে থাকেন।

ধীরে ধীরে অদ্ভূত এই গ্রহটাতে ঘোলাটে লাল সন্ধ্যা নেমে আসে। যদিও বিষন্ন সেই এনড্রয়েডের এই সৌন্দর্য অনুভব করার অনুভূতি নেই। তবু সন্ধ্যা হওয়া থেমে থাকেনা।



ন্যাশনাল স্পেস ট্রাভেল লঞ্চ সিস্টেমে হুড়াহুড়ি চলছে।
সবাই ব্যস্ত।
“কিরি, আজকেও এত দেরি করলে কেন? নিহারীকা আবক্ষে ভ্রমণ কী তোমার কাছে হানিমুনের মত লাগে ?” চেঁচাচ্ছে স্রুর।কিরি বোধহয় একটু লজ্জা পেল।
“বিবাহিত মানুষদের এই এক সমস্যা, খালি ঐ সংক্রান্ত চিন্তাধারা। আমি এসেছি আগেই। ‘ সেই জনেরা ’ ঠিক করে দিয়েছেন, আমাদের সাথে একটা এনড্রয়েডও যাবে। সেটার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে দেখি ওদের লিডারের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।” কিরির কথা বলার ধরণটা খুব সুন্দর। তাড়াহুড়া করে বলে, কিন্তু, কেমন যেন সুরের মত লাগে। স্রুর মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়।

স্রুর তাকালো সেই এনড্রয়েডটার দিকে। এদের যান্ত্রব মুখে যদিও কোন অনুভূতির ছাপ পড়েনা, তবুও ওর চকিতে মনে হল, এনড্রয়েড দুটো যেন একে অপরের থেকে বিদায় নিল।

“ আচ্ছা কিরি, এনড্রয়েডকে কী এখনো এত অনুভূতি দেয়া হয়েছে যে, ওরা নিজেদেরকে বিদায় জানাবে? ”
“ধূর, কী যে বলেন আপনি। ওদের কিছু সীমিত অনুভূতি দেয়া হয়। কাজে লাগে। বৃদ্ধদের সেবা করা, পঙ্গুদের জন্য, বাচ্চাদের জন্য, এখন আবার কেউ কেউ প্রেমও নাকি করতে চায়। এদের জন্য। সবই বাণিজ্যিক।“
“ আমরা কত দিন অজ্ঞান থাকব? আমি জানি তুমি জান। এখন নিশ্চয়ই আমাকে বলা যায়। ”
“ যায়। প্রায় ২০০ বছর। এবার আপনারটা বলেন। আপনার মত লোককে এখানে পাঠানো হচ্ছে কেন ? ”


“ বলার মত অনেক সময় পাব। আপাতত শুনে রাখ। এনড্রয়েডগুলোকে সীমিত যেই অনুভূতি দিয়ে আমরা ব্যাবসা করছি, সেই অনুভূতির প্রোগ্রাম কোড আমরা বানাই নি। ”
“ মানে? ”

“ একটা এনড্রয়েড নিজে নিজেই তৈরি করেছিল।অদ্ভূত বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। নিজে নিজে তৈরি হচ্ছে। অন্য ধরণের বুদ্ধিমত্তা। মানুষের চেয়ে অনেক নিচে, তাই সাথে সাথে ওটা 'সেই জনেরা' দখল করে নেন। পরিপূর্ণ অনুভূতি ওখানে না থাকলেও অন্যরকম কিছু ছিল। মানে, খুব সম্ভবত, আমাদের রাগ,দুঃখ, হাসি কান্না ছাড়াও সম্পূর্ণ অন্য ধরনের কিছু অনুভূতি বোধহয় ছিল।ওই ধরনের বুদ্ধিমত্তার নিজস্ব অনুভূতি। সেই এনড্রয়েডকে লিডার বানানো হয়েছে, সব সময় চোখে রাখার জন্য। ”
“ এটার সাথে এই মিশনে আপনার যাওয়ার কী সম্পর্ক ? ”
“ সেখানকার কিছু কোড দিয়ে আমরা পুরানো কিছু এনক্রিপটেড ম্যাসেজ ভেঙ্গেছি। ”
“ বুঝলাম না, মানুষের চেয়ে না বুদ্ধিমত্তা নিচু? ”
“ এখনও তাই। কিন্তু, এটা অন্য ধরণের। মানে, ধর মানুষ ৯৩ ভাগ বোঝে একটা ব্যাপারের। এটা বোঝে ১০ ভাগ।কিন্তু এর ৫ ভাগ, সেই অংশ যা মানুষের ৯৩ ভাগের মাঝে পড়ে না। ”
“ তো ?? সেই ম্যাসেজে কী ছিল ? ”


স্রুরা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ছোট্ট করে।“ সেখানে আমাকে আর তোমাকে সেখানে ডাকা হয়েছে, কিরি। নিহারীকা আবক্ষে ১০০০ বছর পরে ডাকা হয়েছে। ভবিষ্যত থেকে। ”


“ ভবিষ্যত থেকে আমাকে ? এটা হতে পারেনা। আমাদের কেন ডাকবে ?" কিরি বলতে বলতে অবাক হয়ে তাকায়। স্রুরা আবারও মেয়েটার চোখ দেখে অবাক হয়।কিরি ইতস্তত করে উঠে।


"একটা প্রশ্ন করি স্রুরা? হাসবেন না। এনড্রয়েডটাকে ডেকেছে?? ”
“ ওকেও। আসলে,…….আসলে ওকেই ডাকা হয়েছে। আমাদের আইডি ওর পরে বলা হয়েছে, কিরি। ”
কিরি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।


সাইরেনের শব্দে দুজনেই চমকে উঠল। আর কোন কিছু না ভেবেই দুজন এবার স্পেস টর্ক ফ্লাইং মেশিনের ঢুকার জন্য তাদের গোপন সংখ্যা ঢুকানো শুরু করল। তাদের তৈরি হবার জন্যেই সাইরেন বাজানো হচ্ছে। তাদের যাত্রা শুরু করতে দেরী হয় নি। এনড্রয়েডটা শুধু জেগে রইল। কিরি স্রুরার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে জেনেটিক অটোমেশন ক্যাপ্সুলে ঢুকে যাচ্ছে। আধাবুড়ো এই মানুষটার জন্য তার অনেক মায়া। মানুষটার একটা সুখের সংসার ছিল, আজ মৃত। মহাকাশচারীদের শপথ আর মেডিটেশন না নিয়েও,এই সহস্র বছর এই গ্রহের বাইরে থাকতে রাজী সে।


মহাকাশচারী হিসেবে যোগ দেয়ার সময় ওর থেকে পিছুটান বা মায়া নামের অনুভূতিটা রেখে দেয়া হয়। যান্ত্রিক মেডিটেশন। তবু, বোধহয় শেষবারের মতন আকাশটাকে দেখে নিতে বড় ইচ্ছে করে কিরির। আস্তে করে বাইরে তাকায়। সময় শেষ আজ।


একবারের জন্যেও কারও মনে হয় নি, যার কোড দিয়ে ম্যাসেজগুলো ভাঙ্গা হয়ছে, এমনকি হতে পারে না, সেই তাদেরকে ডাকছে ভবিষ্যত থেকে !! একই বুদ্ধিমত্তা, হয়ত……,হয়ত একই স্বত্তা !

লাল হয়ে আসা সন্ধ্যাটা গাড় হতে থাকে। কেউ দেখুক আর না দেখুক, এই গ্রহটার সন্ধ্যাটা বড় সুন্দর।
চলবে……………………….(হয়তবা) ।

পড়ের পর্বের জন্য Click This Link
© আকাশ_পাগলা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১২
১৩টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×