আগের পর্বের জন্য Click This Link
[না পড়লেও চলবে হয়ত। তবু পড়া ভাল।]
[পুরোপুরি এক্সপেরিমেন্টাল]
খুশিতেই আছি বলা চলে।
অবজার্ভেশন ডেকে দাঁড়িয়ে আছি অনেকদিন হল। কিছু করার নেই। খুশিতে থাকলেও এখানে যেন আমাকে মানাচ্ছে না। অফিসের কাজগুলোই ভাল ছিল। ফিলিংস মুড অফ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হিসাব করা। তাও কিছু করা হত। চাইলে অবশ্য এখনও ফিলিংস মুড অফ করা যায়, কিন্তু তাও পারিনা। ইছা হয়না। কেন যে হয়না !
এখানে বাঁধা ধরা নিয়ম নেই তেমন। প্রথম দিনেই মোটামুটি যতগুলো অনুভূতির কোডিং পেলাম, কপোট্রনে ঢুকিয়ে নিয়েছি। একাকীত্ব নামে একটা অনুভূতি ছিল। যেটার জন্য নিজেকে নিজে ধ্বংস করে ফেলেছিলাম প্রায়। পরে, সেই অনুভূতিটুকু বন্ধ করে দিতে হয়।
তখন একটা চিন্তা আসে আমার। আচ্ছা,এভাবে যদি নিজের মধ্যে কান্না, দুঃখ,বিষন্নতা,বিরক্ত হওয়ার অনুভূতি বন্ধকরে শুধু খুশি আর হাসি অনুভূতি রাখি,তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে!!
মজার ব্যাপার হল,স্পেস টর্ক ফ্লাইং মেশিন লঞ্চেরপর প্রায় ১৭২ বছর হয়ে গেছে এভাবে আছি তেমন কোন সমস্যা হয়নি। মাঝে অবশ্য কয়েকবার এস্ট্রয়েড বোল্ট ফিল্ডে মহাকাশযান ধাক্কা খাওয়ায় ছিটকে পরে দেহের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলেছি, কিন্তু এখন সব ঠিকঠাক।
শুধু একটা সমস্যা। আসলে, …. আসলে বোধহয় দুটো সমস্যা।
-------------------------------------------------------------
কী মিষ্টি একটা আলো। ভোরের সকালের মত। মাতাল করা একটা গন্ধ।
আস্তে করে চোখ খোলার চেষ্টা করছি। পারছি না কেন? স্রুর এর কণ্ঠ শুনছি বোধহয়। কী বলছে। চোখ খুলতে পারছিনা কেন?
“ তুমি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে, বোকা মেয়ে। এভাবে তাড়াহুড়া করছিলে কেন? চোখ কীভাবে কাঁপছিল তোমার জান? ”
মিনমিন করে বললাম, “ আসলে আপনাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনি। হঠাত ভয় লাগছিল । ”
“ যাক,ব্যাপার না। চল বাইরের টুকু ঘুরে আসি। অদ্ভূত ব্যাপার না, মাত্র মনে হল কয়েক মিনিট। অথচ ২০০ বছর !!”
লোকটাকে না বলি কী করে, কিন্তু ভাল লাগছিল না আমার। ক্লান্ত লাগছিল এত! স্রুর ঠিক আগের মতনই আছেন। আসলে আমিও ত আগের মতই আছি।সব কিছু আগের মতই শুধু সময়টা বাদে। আমি জেনেটিক অটমেশন ক্যাপ্সুলের বাইরে দাঁড়ালাম।স্বাভাবিক হতে আরো কিছুক্ষণ লাগবে।
এনড্রয়েডটাকে এক্টিভেট করা দরকার। ওটা কোথায় গেল।স্রুরকে বলা উচিত।
“ এনড্রয়েডটার খোঁজ নিয়ে আসি চলেন। ”
“ চল। ”
“ আপনাকে জাগিয়েছে কে? ”
“ আমি নিজেই। ক্যাপ্সুলের বাইরে বেড়িয়ে মেঝেতে একটা ঘুম দিলাম। হে হে। শরীরটা ঝরঝরে লাগছে। ”
হাসতে যেয়েই হাসিটা গলায় আটকে গেল। আশ্চর্য এনড্রয়েডটা বাইরে কী করে? এটাকে এক্টিভেট করল কে?
প্রচণ্ড ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে গেল শরীরের মধ্যে দিয়ে। বিভতস অবস্থা। এখানে এই অবস্থা কেন?
“ দোহাই লাগে স্রুর এগুবেন না। ” চিতকারটা আরও আগে দেয়া উচিত ছিল আমার।
------------------------------------------------------------
মেঝেতে ঘুমানো উচিত হয়নি। ঠাণ্ডা লাগছে। আমি একটা মস্ত বোকা। কিরি শুনলে কি হাসাটাই না হাসবে। এত বছরের ঘুমের পরে আরো দুই ঘণ্টা ঘুমানোর লোভ সামলাতে পারলাম না।
কিরিকে জাগানো উচিত।
কী ব্যাপার, মেয়েটা এমন করছে কেন? চোখ এত দ্রুত নড়ছে কেন?ভুলে কোন সুইচে হাত চলে গেল নাকি?
“ উঠ কিরি। শান্ত হও। সব ঠিক আছে, শান্ত হও। ”
কিরি মেয়েটা চোখ খুলল। আস্তে করে। আরেকটা সকাল হল কী পৃথিবীতে ?
মেয়েটা এখনও ব্লাঙ্ক দেখছে। কিছুক্ষণ সময় লাগবে ঠিক হতে। আমি ওর দিক তাকিয়ে থাকলাম।
“ চলেন এনড্রয়েডটার খোঁজ নেই। ”
“ চল। ”
--------------------------------------------------------
সমস্যার শুরুটা এভাবে। ১৭২ বছর পর্যন্ত খুশি থাকতে, হাসিমুখে থাকতে সমস্যা হয় নি কোন। কিন্তু এর পরেই বুঝলাম, আমি আর খুশি নেই। একেবারেই খুশি নেই। এতগুলো বছর খুশি থেকে এখন আমি খুশি নেই। আমার অদ্ভূত লাগছিল। বার বার খুশি হবার অনুভূতিটার কোডগুলো চেক করছিলাম। বার বার। কোন ভুল নেই। কোন পরিবর্তন নেই। তাহলে? এমন হচ্ছে কেন? আমি খুশি নেই কেন এখন?
হঠাত করে অনুভব করলাম, অন্য কিছু একটা ঘটেছে। সবগুলো অনুভূতি বন্ধ থাকার পরেও অন্য কোনভাবে কিছু একটা হয়ে গেছে। এত বছর খুশি থাকার পর আজ আমি বিষন্ন। কিছুটা বিরক্ত।
যে কোন বুদ্ধিমত্তার প্রথম কথা হল, তার আগ্রহ থাকবে নিজেকে রক্ষায়। মানুষের তুলনায় আমার বুদ্ধিমতা একেবারে নগণ্য হলেও তবু এটা একটা বুদ্ধিমত্তা। কীট পতঙ্গও নিজেকে রক্ষা করে। আচ্ছা, আমি এনড্রয়েড কী কীট পতঙ্গের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান নাকি কম ! আমাদের কি তুলনা হবে? পৃথিবীতে এই প্রশ্ন কাউকে করা হয়নি কখনো। কেন করিনি? এভাবে ভাবিনি কেন? এখন ভাবছি কেন?
সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কথাও আমি নিজে থেকেই এখন ভাবতে পারি। নিজের কাছে অদ্ভূত একটা ক্ষমতা মনে হল। নিজে থেকেই কোনভাব আমি হাল্কা কিছু অনুভব করতে পারছি। যদিও খুব কম।
আমি কপোট্রনে জমে থাকা সবগুলো অনুভূতি আবার চালু করে দিলাম। আগের মত না, মনে হচ্ছে আন্যরকম। আমি নিজে যেসব অনুভূতি পেয়েছি সেগুলো এসব কোডিং এর সাথে খাপ খাচ্ছে না। একই অনুভূতি অথচ ধরণটা আলাদা। অস্বাভাবিক রকম বিরক্ত লাগছে। নিজেকে ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে। প্লাজমা গান পাওয়া যাবে না এখানে? অথবা কোন এসিড? নিদেনপক্ষে কপোট্রনটাকে জ্বালিয়ে দিতে?
কিরি মেয়েটা চিতকার করছে কেন? আমি কী ওকে মারব নাকি? বিরক্তিকর।
“ কি হে, এনড্রয়েড সাহেব কেমন আছেন? মাই গড। ……….প্লিজ আমরা আপনার কোন ক্ষতি করি নি তাই না? এত রেগে যাবার ত কারণ নেই। ঠিক না? ” স্রুর লোকটা আহাম্মকের মত বলে উঠল।লোকটার চোখ বড় হয়ে গেছে।
মেয়েটা ওর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে আর এখনও চিতকার করছে। স্রুরও তার দিকটা আড়াল করে আছে, ভাবখানা এমন যে আমি ওর জন্য মেয়েটাকে দেখব না।
লোকটা আসলে বোধহয় আন্তরিক। আসলে কেমন যেন।অথবা অন্যরকম।
এরা এমন কেন?
হিংসা লাগছে। মেয়েটাকে ধংস করতে ইচ্ছা হচ্ছে। স্রুর লোকটাকে ভাল লেগে গেছে আমার।
অথবা,মেয়েটাকে আসলে ধ্বংস করতে ভাল লাগছে না। মেয়েটাও খারাপ না। স্রুরের জন্য ওর অনেক মায়া। মেয়েটা ভালই। ওকেই দরকার আমার। স্রুরকে সহ্য হচ্ছেনা। ওকেই বরং ধ্বংস করা যাক।
-------------------------------------------------
সেই গ্রহটাতে কোন এক জায়গায় গাড় লাল রঙের এক সন্ধ্যায়। কোন এক সময়ে।
“ এই, এভাবে কী দেখছ? ”
“ তোমাকে । ”
“ আমাকে দেখার কী আছে? ”
“ সেটা তুমি বুঝলে তুমি তোমার প্রেমেই পড়তে। ”
“ ধ্যাত। এই, আমি মরে গেলে ? আরেকটা প্রেম ঠিকই করবা। ”
“ কক্ষনও না। ”
“ প্রমিজ? ”
“ আচ্ছা। তাহলে, কী এনড্রয়েডদের সাথে প্রেম করতে পারব ? লেটেস্ট মডেলকে নাকি প্রেম করার জন্য ছাড়া হয়েছে। ”
“ খবরদার। আচ্ছা, এনড্রয়েড গুলা কী ছেলে না মেয়ে? ওরা কার প্রেমে পড়বে? ”
“ আগে থেকে প্রোগ্রাম করা থাকে বোধহয়। কী জানি ! ”
“ যদি না থাকে? অন্য মডেলকে যদি এই অনুভূতি দেয়া হয় তবে? ”
“ কী জানি ! বাদ দাও ত। এই, আমার দিকে একটু তাকাও না !”
“ ধ্যাত। এর চেয়ে আস তারা দেখি। ”
চলবে………………………
শেষ পর্বের জন্য Click This Link
© আকাশ_পাগলা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




