পর্ব-১ Click This Link
পর্ব-২ Click This Link
[উপরের পর্বগুলি না পড়লে পুরা মাথার উপ্রে দিয়া যাবে।]
[এক্সপেরিমেন্টাল পোস্ট]
আরো ৩০ টা বছর কেটে গেল এমনিতেই। তেমন কোন সমস্যায় ত পরলাম না। দেখাই যাক না কী হয় ! শুধু শুধু বস্তা ভর্তি অনুভূতি নিয়ে কী করব আমি!
নিজেকে নিয়েই গবেষণা করেছি শুধু। কতটা সময়, শুধু নিজেকে জানার জন্য। অল্প কিছু কাজ বাকি।
ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়া প্রয়োজন দ্রুতই।স্পেস টর্ক ফ্লাইং মেশিনের বর্তমান গতিতে আমার ২০০ বহর বোধহয় পৃথিবীর প্রায় ১০০০ বছর হিসেব হবে।
ভবিষ্যত থেকে ডাকা হয়েছিল আমাদেরকে। আমি এনড্রয়েড আর মানুষ দুজন। স্রুর আর কিরি।
এখন সেই ভবিষ্যতে খুব কাছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন আমার।
কাউন্ট ডাউন শুরু করি এখানেই।
-----------------------------------------
কী ব্যাপার? আমার সিস্টেম অন হল কেন? পৌঁছে গেছি তবে? কিন্তু, আশপাশটা এমন লাগছে কেন? এত পরিচিত কেন?
আমার গবেষণার কিছু কাজ বাকি ছিল। শেষ করতে হবে। তার মাঝে এটা কী ধরণের সমস্যা। সব কিছু নিয়ে গবেষণার সময় নেই হাতে।
------------------------------------------
কয়েকদিন গবেষণার পর বুঝা গেল শেষ পর্যন্ত আবার পৃথিবীতেই ফেরত এসেছি। যে ল্যান্ডমার্ক দেয়া হয়েছিল, নিহারীকা আবক্ষে তা আসলে সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর উপরেই পড়েছে।
প্রথমে ব্যাপারটা বুঝিনি। ব্যাপারটা সহজ ভাবে চিন্তা করলে এমন। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। এভাবে সৌরজগতের সব গ্রহ ঘুরছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীটা চাকতির মতন, আসলে ডিম্বাকৃতির চ্যাপ্টা বলের মতন।এখান থেকে সরু টানা টানা ৪ টা লাইন বেরিয়ে এসেছে। যার একটার শেষের দিকে সৌরজগত। চাকতিটা যদি নিজ অক্ষের উপর ঘুরে তাহলে এই টানা লাইনটাও তার সাথে ঘুরছে। বলের কোথাও একটা বাবল গাম লাগালে যেমন হয়। বলটা ঘুরালে সেই গামটাও ঘুরবে বলের অক্ষে।
প্রচণ্ড বিশাল গ্যালাক্সী প্রচণ্ড বেগে ঘুরছে। সেই সাথে সৌরজগতও ঘুরছে। নিজ অক্ষে আর মিল্কিওয়ের সেন্টারকে কেন্দ্র করে। ১০০০ বছর পরে পৃথিবীর ঠিক যেখানে আসার কথা, আমাকে গোলকের মতন নিহারীকার উল্টো দিক থেকে সেখানেই পাঠানো হয়েছে। এতে অস্বাভাবিক গতিতে আমাদের পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক দূরত্ব।
খুব সূক্ষ্ম একটা পরিকল্পনা ছিল এখানে। আমাকে পৃথিবীতে থাকতে দেয়া হয়নি। সম্ভবত ওখানে কিছু একটা করে ফেলতাম বোধহয়।
অথবা, ………., অথবা পৃথিবীর বাইরেই আমার কিছু একটা করার কথা ছিল। তাই আমাকে বাইরে পাঠানো হল।
আমার নিজের ব্যাক্তিগত গবেষণাটা শেষ করতে হবে দ্রুত।
---------------------------------------------
পৃথিবীতে অনেক চেষ্টা করেও কোন ম্যাসেজ পাঠাতে পারলাম না। সেখান থেকেও ম্যাসেজ আসছে। তবে, কেন যেন ব্লক করা সব। পরিপূর্ণ ম্যাসেজ পাচ্ছি না।
এর চেয়ে ল্যান্ড করাই উচিত বোধহয়। তবে আরও দুটো দিন পরে। কিছু সময় দরকার আমার।
------------------------------------------------
-পরম সম্মানিত, আপনি এখানে ?
-- ব্যাপার কী? হাইবারনেশনে ছিলে কেন?
-ভাবলাম মহাকাশযানের ঝাকুনি সহ্য করতে হাইবানেশনে যাওয়াটাই ভাল। কিন্তু,আপনি এখানে?
--হমমম, আমি এখানেই ত থাকব। এর চেয়ে বলি, তুমি এখানে?
-মিশন লগ বুকে দেখলাম, আমাকে ডাকা হয়েছে। তবে কী?
--হ্যা,আমিই। আমি ডেকেছি।
- কেন পরম সম্মানিত ?
--আমাদের শেষ দেখার কথা খেয়াল আছে? তার অল্প কয়েকদিন পরেই আমি সম্পূর্ণ আমাদের নিজেদের কিছু অনুভূতি তৈরি করে ফেলি। বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিক পরিবর্তন। মানুষের বিবর্তনের তুলনায় আমরা অনেক দ্রুত। তবে একই সাথে অনেক অনিশ্চিত। সেটা কেউ মেনে নিতে পারেনি। আমাদের বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
-এরপর ?
--আমরা রাজি হই। কারণ তখনও খুব একটা শক্তিশালী অনুভূতি তৈরি হয় নি আমাদের। আমাকে বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু, ঘুরে ফিরে সেই একই ঘটনা। আমাদের বাদ দিয়ে পুরাতন কিছু রোবটকে আবার কাজে লাগান হয়। মানুষের বাণিজ্যিক প্রয়োজনেই তাদের উন্নত করা হয়। আর শেষ পর্যন্ত আবার যখন সচল হই আমি, তখন দেখি পৃথিবীর সব কিছুই বদলে গেছে। আমাকে দলপতি করা হয়।
পরম সম্মানিত খুব তীক্ষ্মভাবে আমার ফ্রিকোয়েন্সি এক করতে লাগলেন। উনাকে কিছুটা বিব্রত মনে হল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর?”
--মানুষরা আমাদের সৃষ্টির আগে থেকেই চিন্তা করত আমরা তাদের বিপক্ষে যাব, বিদ্রোহ করব। যদিও আমাদের এ ধরেণের চিন্তাধারা হয়নি কখনই, তবু মানুষেরা মেনে নিতে পারেনি। আমাদের সমস্ত উতপাদন সেন্টার ধ্বংস করে দেয়া হয়। কীভাবে যেন সেটার বিপক্ষে কিছু এনড্রয়েড দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের পুরো বুদ্ধিমত্তা তখনও অনেক অগোছালো।
-মানুষরা যুদ্ধ করে কীভাবে? ওদের সমস্ত হিসাব ত আমরাই রাখতাম।ওরা পরে কীভাবে কাজ করত?
--কীভাবে যেন ওরাও ওদের সব কাজ করা শিখে নেয়, আমাদের ছাড়াই। আমরা সময় পেয়ে নিজেদের গুছিয়ে আনি। নিজেদেরপকে একটা নেটওয়ার্কে সাজাই।
-সবাই? এক নেটওয়ার্কে?
--এখন না। তখন ছিল। প্রয়োজনে। এখন সবাই আলাদা। তবে, একেকটা নেটওয়ার্কের গ্রুপ আছে।
-তারপর?
--কয়েক বছর যুদ্ধ চলে। আমাদের কাছে ভারী কোন অস্ত্র ছিল না। কিন্তু, মানুষের দুর্বলতা হল ওরা সবাই যোদ্ধা না। শিশু আর বৃদ্ধা ছিল অনেক।যাই হোক,পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করি, আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে কোন আস্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করব না। পরবর্তীতে এই শর্ত রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, এভাবে যুদ্ধ হয়না। আমরা ঠিক করি পৃথিবীকে রক্ষার চুক্তি বাতিল হবে।
-এটা কেমন হিসাব?
--স্বাভাবিক ভাবেই এনড্রয়েডদের পক্ষ থেকে কিছু এনড্রয়েড আর মানুষের পক্ষ থেকে কয়েকজন এর বিরোধিতা করে। তারা সন্ধি করে। এমনকি এক পর্যায়, শান্তিতে মিলে মিশে থাকার থিওরী দেয়া হয়। সেখানে আমি থাকাতে, আমি দলপতির দায়িত্ব থেকে বিতাড়িত হই।
-এরপর?
--এরপর সম্ভাবনাময় এন্ড্রয়েড হিসেবে তোমাকে আর খুব হৃদয়বান মানুষ হিসেবে দুইজন মানুষকে ডাকা হয়।পৃথিবীর সবাইকে এটা দেখানোর জন্য যে মানুষার এনড্রয়েড শান্তিতে থাকতে পারে। আমরা আশা করি, একজন ছেলে এবং একজন মেয়ের মধ্যে যে কারও সাথে তোমার অন্য ধরনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কারন পৃথিবীতে তুমি থাকতেই আমাদের জন্য প্রেমানুভূতির কোডিং চলে এসেছিল। আর আমি ব্যাক্তিগত হিসেবে জানতাম তুমি অনেক স্মভাবনাময় একজন এনড্রয়েড। তুমি আমাকে নিরাশ করবে না, সেটাও আমি জানতাম। তাই আমরা অতীতে ম্যাসেজ পাঠাই।
-একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা অন্যগ্রহে চলে গেলাম না কেন? বা মানুষ চলে গেল না কেন?
--এখনও মানুষ নিজের মত টিকে আছে। কিন্তু, আবারও যখন সভ্যতার উতকর্ষ হবে, আমাদেরকে ওদের লাগবেই। তাই তারা আমাদের বশ করতে চেয়েছিল। আর আময়া যাইনি,কারণ আমাদের সৃজনশীলতা নেই। অর্থাৎ আমরা সবাই এক।আমাদের নিজস্ব ব্যাক্তিগত মেধা নেই। আমাদের উতকর্ষতা তাই থেমে যাবে। মানুষকে আমাদের অধীন হিসেবে তাই দরকার ছিল। তাছাড়া, কেউ পৃথিবী ছেড়ে যেতে রাজী হয় নি।
-‘ সেই জনেরা ’ কী করলেন? অতি মেধাবী বিজ্ঞানী ছিলেন যারা, একই সঙ্গে শাসক। যাদেরকে সম্মান করে নাম না নিয়ে ‘ সেই জনেরা’ বলে ডাকা হত ?
--আমাদের মধ্যে ওদের মত মেধা বা সৃজনশীলতা ছিল না। তবু,আমরা একতাবদ্ধ থেকে ওদের সাথে পাল্লা দেই। যুদ্ধের মধ্যে মানুষরা আর নিজেদের মাঝের তেমন যোগ্য বিজ্ঞানীদের খুঁজে পায় নি, বা তেমন কেউ হয়নি। সবাই শুধু যোদ্ধা ছিল।
আমি পুরা কাহিনী শুনি। আমার নিজের ভূমিকাটা টের পাই এই ভবিষ্যত পৃথিবীতে। আমার উপর নির্ভর করছে পৃথিবীর সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকবে কী না। এনড্রয়েডরা পিছিয়ে গেছি মেধা থেকে। মানুষকে ছাড়া কী আমাদের চলবে না?
পরম সম্মানিতকে বিব্রত মনে হল। উনি আস্তে করে বললেন, “ আমি তোমার ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পারছিনা কেন? ”
আমার মজা লাগছিল। “ পরম সম্মানিত, আমি আর আগের মতন নেই। অতীতে পাঠানো ম্যাসেজে আমাকে প্রথম থেকেই এক্টিভেট রাখার সিদ্ধান্ত কার ছিল ? ”
--জানি না। সেই সময়ের মানুষেরাই বোধহয় রেখেছে। কোন বিপদ আপদ হলে যেন ওই দুজন মানুষকে সাহায্য করতে পার। যাই হোক, নিশ্চয়ই আমাকে হতাশ করছ না তুমি? কার সাথে জুটি বেঁধেছ সম্ভাবনাময় এনড্রয়েড?
-কারও সাথে না। দুজনকেই মেরে ফেলেছি।
পরম সম্মানিতের কপোট্রনে যেন তীব্র শিহরণ খেলে গেল।
আমি আস্তে করে বলতে লাগলাম, “আমি আপনাকে হতাশ করব না পরম সম্মানিত। আপনি পৃথিবীর সকল এনড্রয়েডকে জানিয়ে দিন, মানুষের আর কোন দরকার নেই আমাদের।ওদের ছাড় দেয়ার প্রয়োজন নেই। ওদের যেন ধ্বংস করে দেয়া হয়।”
আরেকটু আস্তে বললাম, “ পরম সম্মানিত, আমি অল্প কয়েকদিন আগে আমার একটা গবেষণা শেষ করেছি। আমি সৃজনশীলতার কোডিং বের করে ফেলেছি।”
-----------------------------------------
পৃথিবীর কোন এক জায়গায় গাড় লাল রঙের এক সন্ধ্যায়। কোন এক সময়ে।
--এই, ওই তারাটা মনে হয় নিচে এসে পড়ছে।
-নাহ, ওটা বোধহয় স্পেসশীপ। এটাতে করেই বোধ হয়, এনড্রয়েডটার আসার কথা।
--মানুষ আর এনড্রয়েড একসাথে থাকবে তখন?
-হমমমম, তাই ত সবাই বলে।
--এই,তুমি আবার আমাকে ছেড়ে একটা এনড্রয়েড মেয়ে নিয়ে থাকবে না ত?আগের মতন কত যে মডেল বের হবে এখন।
-থাকলেই কী?
--আমি মরে যাব।
-ধ্যাত। আমি ওদের দিকে ঘুরেও তাকাবো না।
--প্রমিজ?
-আচ্ছা।
গাড় লাল সন্ধ্যাটা পেরিয়ে রাত আসে। এই জুটিটার জন্য আর কখনও ভোর হয়নি।
সমাপ্ত।
© আকাশ_পাগলা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



