প্রচণ্ড দুঃখবোধ থেকে কথাগুলো লিখছি। বাংলা ব্লগ তার যৌবন হারিয়েছে অনেক আগেই। কিছু ব্লগ ইতোমধ্যেই বিস্মৃতির গর্ভে বিলীন হয়েছে। যে ব্লগগুলো এখনো টিকে আছে সে গুলোর অবস্থাও মোটামুটি সঙ্গিন। বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরাতন ও সবচেয়ে বড় ব্লগ কমুনিটি হিসেবে সামু ব্লগ এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠক ও লেখক ধরে রেখেছে। সামুর প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই আমরা আজও সামুকে আঁকড়ে আছি।
আমরা বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি। এ ভাষায় হাসি-কাঁদি। এ ভাষায় নিজেদের আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই ব্লগে যৎসামান্য লেখালেখির চেষ্টা করি। কিন্তু ইদানীং ব্লগে এসব কী দেখতে পাচ্ছি? প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক একবার কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, একটি জাতিকে চেনা যায় তাদের লাইব্রেরীতে এবং বাজারে গিয়ে। অর্থাৎ তারা কী পড়ে এবং কী খায় এ দু'টি বিষয়ই অন্য জাতির নিকট তাদের সভ্যতা এবং রুচিবোধকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমার ধারণামতে, সামু ব্লগের সদস্যরা দেশের উচ্চশিক্ষিত এবং বিদগ্ধ জ্ঞানী অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সামু ব্লগে আমরা কী পড়ছি?
বিগত কয়েকদিনে ব্লগে অসভ্যতা, বিকৃতি, গালাগালি সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, বেশিরভাগ নোংরামিপূর্ণ কমেন্ট গুলো দিনের পর দিন বহাল তবিয়তে প্রদর্শিত হচ্ছে!
ইদানীং ব্লগে কিছু হাইব্রীড নিকের আবির্ভাব ঘটেছে। এদের আচরণ দেখে মনে হয় এরা পায়খানার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অথবা এদের জন্মপ্রক্রিয়ায় শুকর বা কুকুর জাতীয় প্রাণীর অবদান রয়েছে। এদের বাজে কমেন্টের ব্যাপারে ব্লগের মডুদের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তা আমার মর্মপীড়াকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোন রুচিবান, ভদ্রলোকের পক্ষে ব্লগে আসা সম্ভব না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, ব্লগে আর আসবনা। তারপরও এসেছি কারণ, এই দুর্বৃত্তেরা সংখ্যায় নগণ্য। এরা পুরান পাপী। চাইলে এদের ভদ্র নিকও প্রকাশ করে দেয়া সম্ভব। সুতরাং এদেরকে প্রতিরোধ করাই সঙ্গত।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্লগে আদৌ কোন মডারেশন প্যানেল আছে কি না সে প্রশ্ন উত্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। পাশাপাশি ব্লগাররাও এর দায় এড়াতে পারেন না। যেসব ব্লগারের পোস্টে নোংরামী করা হচ্ছে তারা চাইলেই সেসব কমেন্ট এক ক্লিকে মুছে ফেলতে পারেন অথচ বমি উদ্রেককারী ঐসব কমেন্ট তারা না মুছে যথাস্থানে রেখে দিচ্ছেন। তারাও সুরুচির পরিচয় দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় আমরা ব্লগ কর্তৃপক্ষকে ভাবলেশহীন দেখতে চাইনা। তাদের পক্ষে যদি সুস্থ ব্লগিং চর্চার পরিবেশ রক্ষা করা এতটাই কঠিন হয়ে থাকে তবে তারা ব্লগকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিলেই পারেন। ব্লগে পায়খানার ছবি আর চটি প্রকাশিত দেখার চেয়ে সেটাই বরং উত্তম হবে।
ব্লগ কর্তৃপক্ষের জন্য এসব নিয়ন্ত্রণ করা কি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে? ব্লগ কর্তৃপক্ষ নিচের প্রস্তাবগুলো ভেবে দেখতে পারেন-
১। নতুন ব্লগ খুলেই কমেন্ট করার সুযোগ বন্ধ করা হোক। কমপক্ষে পাঁচটি মৌলিক লেখা প্রথম পাতায় প্রকাশিত হওয়ার পর কমেন্টের সুযোগ দিতে হবে।
২। যেসব দুর্বৃত্তরা ব্লগে নোংরামি ছড়াচ্ছে তাদের আইপি ট্রেস করে আইসিটি আইনের আওতায় তাদেরকে অভিযুক্ত করা হোক।
৩। কোন পোস্ট বা কমেন্ট সম্পর্কে অভিযোগ দ্রুত আমলে নেয়া হোক। বর্তমানে অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এ জাতীয় অশালীন একটি কমেন্ট সেই নিক ব্যান হওয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত।
৪। ব্লগের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ফোন নাম্বার অন্তর্ভুক্ত করা হোক। বর্তমানে প্রত্যেকটি ফোন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশনকৃত। সুতরাং কেউ অশালীন আচরণ করে রেহাই পাবেনা।
সর্বোপরি আমরা সুস্থ পরিবেশে ব্লগিং করতে চাই। সামু ব্লগ গুটিকয়েক দুর্বৃত্তের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে এটা আমরা দেখতে চাই না। পাশাপাশি ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ থাকবে পোস্টে এ জাতীয় কমেন্ট সাথে সাথে মুছে ফেলার।
আশাকরি সব ব্লগারই এ ব্যাপারে একমত হবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামতের অপেক্ষায়।