somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালঃ ভুল পথের কান্ডারী-২

০৯ ই মে, ২০১২ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এ লেখাটি কেবল তাদের জন্য যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করছি।

১ম পর্বের লিংকঃ
View this link



জাফর ইকবাল।

কোন কোন গোষ্ঠী তাঁকে এমনভাবে উপস্থাপনা বা ব্যবহার করে যেন তিনি এ দেশের বিবেক। হুমায়ূন আহমেদ যেমন মাঝে মাঝে নিজেকে আস্তিক বলে জাহির করেছেন, এই লোকটি নিজেকে আস্তিক বলা তো দূরের কথা, সজ্ঞানে কোনদিন আল্লাহর নামটি কোন লেখায় লিখেছেন কিনা সন্দেহ আছে। এ জাতির দুর্ভাগ্য যে, এমন একজন মানুষ আজ আমাদের কোমলমতি অনেক শিশু কিংবা কিশোরের মন মগজ দখল করে ফেলেছেন।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এ লোকটির কালো থাবা পড়ে তা এক ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। একটা সময় ছিলো যখন ‘ইসলামিয়াত’ নামের সাবজেক্টটিতে অন্তত কুরআনের কিছু আয়াত বা কিছু হাদীস পড়ানো হতো, যা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় পড়ার ফলে সামান্য কিছু ইসলামী জ্ঞান আমরা হয়তো পেতে পারতাম। কিন্তু আজ ধর্ম বিবর্জিত এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ইসলামী জ্ঞানে মুর্খ এক বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরী হতে যাচ্ছে।

এখন যেমন কোন লোক মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজন কোন হুজুরের কাছে গিয়ে ‘কি করতে হবে, এখন মাসয়ালা কি, কত কদম পায়ে হেঁটে লাশ কবরে রাখতে হবে’ জাতীয় অপ্রয়োজনীয় ও অথর্ব প্রশ্ন করে, আর নিজেদের দীনকে বিক্রী করে পয়সা কামানোর জন্য ওঁত পেতে থাকা এক শ্রেণীর আলেমও “এভাবে করাটাই উত্তম...” জাতীয় ধোঁয়াশাচ্ছন্ন কথা বলে আল্লাহ ও রাসুলের সাথে সম্পর্কহীন কোন মাসয়ালা প্রদান করে, ঠিক তেমনি এ শিক্ষা ব্যবস্থা এমন এক প্রজন্ম বের করে আনতে যাচ্ছে, যারা এখনকার চেয়েও অধিক জাহিলিয়াতে পরিপূর্ণ থাকবে।

ইসলামী জ্ঞানের কিছু স্তর আছে। তিন বছর বয়সী একটি বাচ্চা যেমন জানে যে আগুন হলো গরম আর বরফ হলো ঠান্ডা, তেমনি মুসলিম মাত্রেরই এ জ্ঞানটা রাখা আবশ্যক যে, কোন কাজটি আমার জন্য অপরিহার্য এবং কোন কাজটি করলে আমার জন্য জাহান্নামের আগুন নিশ্চিত। আল্লাহ যদি কোন মানুষকে কেবল এজন্যই জান্নাতে দেবেন যে তার একটি ইসলামী নাম আছে বা সে মুসলিম ঘরে জন্মেছে, তাহলে আমাদের পাশের প্রতিবেশী অমুসলিম ভাইটি তো আল্লাহর কাছে গিয়ে বলবে, “আল্লাহ, আপনিই তো আমাকে ওই ঘরে পাঠিয়েছেন, আমি তো নিজে যাইনি। শুধু কি এই জন্যই আমাকে আজ জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে অমুককে জান্নাতে দেবেন, যে সারা জীবন আমার মতই কাটিয়েছে?” আমাদের জানা উচিৎ শ্রেষ্ঠতম বিচারক এবং ইনসাফকারী আল্লাহ কখনওই এমনটি করবেন না।

আজ আমরা দুর্ভাগা এ মুসলিম জাতি জানিইনা যে শির্ক কি, কুফর বলতে কি বোঝায় বা বিদয়াত কি। আমরা হয়ত জানিই না যে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন শির্কের অপরাধ তিনি কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তা করলে অবধারিত জাহান্নাম। আমরা জানি না যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে কবরের ‘অলীর” কাছে চাওয়া শির্ক, আল্লাহকে বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কাছে কিছু মানত করা শির্ক কিংবা প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজে নিজের রাশিফল দেখে তা বিশ্বাস করা শির্ক। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন “দীনের ভেতর প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার হলো বিদয়াত, প্রত্যেক বিদয়াত হলো পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার গন্তব্য হবে জাহান্নাম”। আমরা হয়ত জানি না যে, যে মিলাদের সময় আরো জোরে চিৎকার করে আমরা বেশী নেকীর আশা করছি- তা একটি বিদয়াত, মিলাদুন্নবী-আখেরী চাহা সোম্বা-শবে মিরাজ ইত্যাদি নামের যেসব দিন আমরা ভক্তি সহ পালন করে যাচ্ছি সেগুলো একেকটি বিদয়াত, মৃত ব্যক্তির খাটিয়া কাঁধে নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটা বা দশ কদম পর পর কাঁধ পরিবর্তন করা সবই বিদয়াত। এ কাজগুলো করলে পূণ্য বা নেকী তো দূরের কথা, নিশ্চিত পথভ্রষ্টতায় পড়ে আগুনের দিকেই যেতে হবে-যেহেতু রাসুল সাঃ তাই বলেছেন এবং তিনি কখনও মিথ্যা বললেননি।

সব মানুষই যেমন জানে আগুনে হাত দেয়া যাবে না এবং এর জন্য কাউকে ‘ফায়ার এক্সপার্ট’ হতে হয়না, তেমনি ইসলামের এই মৌলিক জ্ঞানগুলো সকল মুসলিমেরই জানা আবশ্যক ছিলো এবং এ জানাটা শুধুমাত্র আলেম সমাজের কাজ নয়। ‘ফায়ার এক্সপার্ট’ আমরা তাকে বলতে পারি যিনি জানেন কত ডিগ্রী তাপ সহ্য করার ক্ষমতা কোন বস্তুটি রাখে অথবা যিনি আগুন বিষয়ক এরকম প্রায় সকল সূক্ষ্ম জ্ঞানই রাখেন। তেমনি আলেম হচ্ছেন তিনি, যিনি হবেন ইসলামের উপর বিশেষজ্ঞ।

আজ আমাদের দুর্ভাগ্য যে আবশ্যিক ইসলামী জ্ঞান বিবর্জিত এই শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে এবং এক শ্রেণীর আলেমদের ধর্ম ব্যবসার কারণে আমাদের সন্তানেরা ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ এক অথর্ব শ্রেণীতে পরিণত হচ্ছে। বন্ধুত্বের শ্লোগান তুলে আজ কৈশরে নারী-পুরুষে অবাধ মেলামেশার ভয়াবহ ব্যাপারটিকে স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে। ‘ডিজুস দুনিয়ার’ নতুন প্রজন্ম আজ রাতের পর রাত নতুন নতুন মেয়ে বন্ধুর সাথে অশ্লীল আলাপে মত্ত থাকছে। ফ্লার্ট, গার্লফ্রেন্ড, ক্যারিয়ার ইত্যাদির ভীড়ে আজ তারা ভুলেই গেছে যে এ পৃথিবীতে তাদের একটি নির্দিষ্ট মিশনেই তাদের প্রতিপালক আল্লাহ পাঠিয়েছেন। আজ এদের যদি বলা হয় দশ জন ফিল্ম স্টারের নাম বলতে, এরা পারবে গড় গড় করে তা বলে দিতে। যদি বলা হয়- দশ জন ক্রিকেটারের নাম বলো, এরা তার চেয়ে দ্বিগুন বলে দিতে পারবে। অথচ এদের যদি বলা হয় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দশ জন সাহাবীর নাম বলো, এদের অধিকাংশই নিশ্চিত তা পারবে না। আর এভাবেই সফল হয়েছেন জাফর ইকবাল এবং তার সহচরেরা।

আমি আগেই বলে নিয়েছি আমার এ লেখাটি হলো তাদের জন্য যারা আজ নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করছি। আমরা যদি নিজেদের তা-ই ভাবি, তাহলে আমাদের জেনে রাখতে হবে যে, ইসলাম হলো সকল জাতীয়তার উর্ধ্বে। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “মুমিনরা হলো একটি দেহের মতো। এর একটি অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো শরীর জ্বর অনুভব করে” (মুসলিম)। রসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনকালেই মদীনার আনসার এবং মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে মুনাফিকদের গোপন ইন্ধনে একবার যুদ্ধংদেহী অবস্থা হয়েছিল। তিনি খবর পেয়ে এদের সবাইকে এক করে বসিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, তাদের সবার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। সহীহ বুখারীতে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা হাদীস হিসাবে এসেছে। রাসুল সাঃ কে আল্লাহ যখন পাঠিয়েছিলেন, তখন গোত্রতা আর জাতীয়তার ভয়ংকরতম পরিস্থিতি বিরাজ করছিল আরব উপদ্বীপে। নিজ জাতি বা গোত্রের কেউ খুন করলেও সে জাতি বা গোত্রের সকলে তার পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত ছিলো। ইসলাম এসে তুলে ফেলেছিল এই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের শেকড়। বিপরীতে মুসলিম জাতি এমন এক নজির স্থাপন করেছিলো, যেখানে অমুসলিমরা পর্যন্ত নিজেদের দেশ ছেড়ে ইসলামী ভূমিতে মাইগ্রেশন করে বা দেশান্তরিত হয়ে আসত এবং এখানেই নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্ম পালন করতো কেবলমাত্র জিজিয়া করের বিনিময়ে।

বিখ্যাত সাহাবী আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ’র নেতৃত্বে মুসলিমরা বাইজেন্টাইন রোমান বাহিনীর কাছ থেকে দামেস্ক বিজয় করেছিল। বছর দুয়েক পর পরাজিত রোমান বাহিনী বিরাট ফৌজ নিয়ে তা উদ্ধার করতে এসেছিলো। শহর রক্ষার মত যথেষ্ট লোকবল ও রসদ না থাকায় মুসলিম বাহিনী স্থানীয় খৃস্টানদের হাতে নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দামেস্ক ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলো। শহর ত্যাগ করার পূর্বে মুসলিম বাহিনী সকল লোকদের ডেকে এতদিনি পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে নেয়া সকল জিজিয়া কর চুলচেরা হিসাব করে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। এমনিতেই এতদিন ধরে ইসলামের পক্ষপাতহীন অনন্য ইনসাফ এবং ন্যায়বিচার দেখে দামেস্কবাসী খৃস্টানরা বিমোহিত ছিলো, কিন্ত জিজিয়া ফেরত দেবার অভূতপূর্ব এ ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলো। তারা যখন এ ব্যাপারে মুসলিম দলপতিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের কাছ থেকে আমরা জিজিয়া নিয়েছিলাম তোমাদের নিরাপত্তা দেবার শর্তে। আজ যখন আমরা তা পারছি না, তখন এটা রাখার কোন অধিকার আল্লাহ আমাদের দেননি”। আল্লাহু আকবার। এই হলো ইসলামের সৌন্দর্য।

আফসোস, আজ ইসলামের এসকল ইতিহাস বলার কেউ নেই। অথচ হাজার হাজার মসজিদে বুজুর্গ আর অলীদের নামে বানোয়াট সব কাহিনীর পসরা ইসলামের নামে সাজিয়ে বসানো হয়েছে।

দুঃখিত, প্রসঙ্গ থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছি। বলছিলাম জাতীয়তার বিপক্ষে ও মুসলিমদের ঐক্য ও সহমর্মিতা বিষয়ে। মুক্তিযুদ্ধ এদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭১ সালে দুর্বৃত্ত পাকিস্তানী শাসক আর তাদের অনুগত হানাদার সেনাবাহিনী এদেশের নিরীহ জনগনের উপর যে অত্যাচার করেছে তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, আর তাদের সাথেও ইসলামের সম্পর্ক নেই, যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে স্যেকুলার পাকিস্তানী সেই সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছে। সাদ্দাম হোসেনের মতো প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধী শাসক কুয়েত দখল করার পর যদি ইসলামের দোহাই দিতো, আর তাকে সমর্থনের জন্য একদল কুয়েতী যদি ইসলামের নাম দিয়ে তাকে সমর্থন করতো, তাহলে অবস্থাটা দাঁড়াতো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পাক সেনাবাহিনী আর এদেশে তাদের সমর্থকদের মতো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং তাঁর মনোনীত দীন ইসলামের সাথে সে যুগের সেই বাহিনীর কোন সম্পর্ক ছিলোনা, তারা পরিচালিতও হতো স্যেকুলার আইন দিয়ে। তবে সে সেনাবাহিনী এবং শাসক দলের বাইরে পাকিস্তানের সাধারণ জনগনণকে যদি আমরা একইভাবে মূল্যায়ন করি, তাহলে তা হবে অন্যায় এবং বে-ইনসাফ। জাফর ইকবাল এবং তাঁর মতো কতিপয় লোক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মনে এমন এক ধারণা তৈরী করে ফেলেছেন, যেন আজকের যারা পাকিস্তানের তরুন-যাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মও হয়নি, তাদেরও আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। আজ আমরা ভুলেই গেছি এরাও আমাদেরই মতো মুসলিম এবং এদের সুখ-দুঃখে এদেরই মতো ব্যথিত হবার জন্যই রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের আদেশ করেছেন। জাফর ইকবালরা আজ শুধু পাকিস্তানীদেরই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে ইসলামকেও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এর বিপক্ষে নিজেদের জয়ী হিসাবে দেখাতে চাইছেন।

জাফর ইকবাল এবং তাঁরই মতো কয়েকজন আজ মানবতার ধারক সেজে বসে আছে, অথচ ইরাকে হাজারো শিশুকে যখন ক্লাস্টার বোমায় ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়া হয়, সেখানকার লক্ষ শিশু তাদের বাবার পথ চেয়ে বিনিদ্র রাতে কেঁদে কেঁদে মা’কে বাবা কবে আসবে বলে জানতে চায়; যখন আফগানিস্তানে বিয়ের আসরে বোমা মেরে একই সাথে শত লোককে মেরে ফেলা হয়; যখন কাশ্মীর-চেচনিয়া-বসনিয়ায় বাবা-মা’র সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে গ্যাং রেপ করা হয় তখন এদের কলম ও কন্ঠ নিশ্চুপ থাকে। কারণ-এরা হলো মুসলিম। দেখুন আল্লাহ কিভাবে এদের স্বরূপ স্পষ্ট করে দিচ্ছেন-

“যখন তাদের বলে হয়, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা, তখন তারা বলে-‘আমরাই তো শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। প্রকৃতপক্ষে এরাই হলো বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, যদিও তারা নিজেরা তা অনুধাবন করতে পারে না”। (সুরা বাক্বারাঃ ১১)



ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় আড়াই শত কিলোমিটার। দ্রুতগামী বাস এবং জ্যাম মুক্ত রাস্তায় এ পথটুকু পাড়ি দিতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব প্রায় বিশ হাজার কিলোমিটার। সুপারসনিক বিমানে (যা শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে চলে) তা পাড়ি দিতেও প্রায় এক দিন ও এক রাত্রি লেগে যায়।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি কিলোমিটার।

সূর্য পৃথিবীর চেয়ে কত বড়? এতটাই বড় যে, ১৩ লক্ষ পৃথিবীকে অনায়সে সুর্যের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। শুধু তাই নয়, সৌর পৃষ্ঠ থেকে প্রতিনিয়ত যে বলয় তৈরী হয় তাতে হাজার হাজার পৃথিবী ঢুকিয়ে দেয়া যাবে এবং তাপে এর সবই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

সূর্যের চেয়ে বড় কি কিছু আছে?

হ্যাঁ, মহাবিশ্বের অগণিত রহস্যময় বস্তু আছে যারা সূর্যের চেয়ে অনেক বড় আর তার একটি হলো গ্যালাক্সি। সূর্য হলো একটি তারা। আর এর ছেয়ে ছোট, এর সমান বা এর চেয়ে হাজার হাজার গুন বড় এরকম ৪০ হাজার কোটি তারা নিয়ে গঠিত এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি, যার ভেতর আমাদের সুর্য আমাদের এই সৌরজগতকে সাথে নিয়ে অবস্থান করছে এবং যা কিনা আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মানুষ কর্তৃক আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিগুলোর ভেতর একটি মাঝারী আকারের গ্যলাক্সি।

আমরা যে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে আছি, তার বিশালত্ব কি আমরা বুঝতে পারছি? আসুন দেখা যাক।

আলো বা লাইট প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা তিন লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করা যাক। আমরা যদি আলোর গতিতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা করি, তাহলে ০.০৬ সেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের একশ ভাগের ছয় সেকেন্ড সময়ে আমরা পৌছে যাব। এমনকি যদি আমরা আলোর গতিতে সুর্যের দিকে রওয়ানা করি, তাহলে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে আট মিনিট। আর আমরা যদি আলোর গতিতে আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত যেতে চাই তাহলে কত সময় লাগবে? ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর। আল্লাহু আকবার।

অবিশ্বাস্য বিশাল এ গ্যলাক্সির মতো কত গ্যালাক্সি সৃষ্টি জগতে আছে? অধিকাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেছেন এর সংখ্যা জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, আর কেউ কেউ বলেছেন এর সংখ্যা কয়েক হাজার বিলিয়ন হতে পারে আবার বেশীও হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত মানুষ কেবল ১০ হাজার গ্যালাক্সি আবিষ্কার করতে পেরেছে।

পবিত্র কুরআনে একটি সুরা আছে- সুরা বুরুজ, এর অর্থ ‘প্রকান্ড তারা’ করা হলেও অনেক স্কলার মত দিয়েছেন এখানে আল্লাহ গ্যালাক্সির কথা বলেছেন। আল্লাহ এ সুরাতে আকাশ মন্ডলীর সাথে ‘বুরুজ’ শব্দটি উল্লেখ করে এর নামে শপথ করেছেন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের অজ্ঞ আরব সমাজে পৃথিবীর আকাশের বাইরে বড় একটা চাঁদ কিংবা ছোট ছোট সব তারা ছাড়া আর কিছু থাকতে পারে বলে ধারণা করা যখন অসম্ভব ছিলো, তখন আল্লাহ এই গ্যালাক্সি জগতের কথা বলেছিলেন। সংশয়বাদীদের সংশয়-সন্দেহ এতে বেড়ে গিয়েছিল, তবে রাসুলুল্লহ সাঃ এর সকল সাহাবা সংশয়হীন চিত্তে তখনকার প্রেক্ষিতে অবাস্তব এ কথাটি সামি’ঈনা ওয়া আতা’না (আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম) বলে মেনে নিয়েছিলেন।

পবিত্র কুরআন এবং একাধিক সহীহ হাদিসে এসেছে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টি জগতকে তাঁর ডান হাত দিয়ে ধরবেন। আমরা কি ধারণা করতে পারছি আল্লাহর বিশালত্বের সম্পর্কে? আমরা কি বুঝতে পারছি না যে, আমরা ছুটে চলেছি এক অনন্ত মহাসত্যের দিকে? আমরা কি এখনও তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে এই একটিমাত্র জীবন শেষ করে দেব?

আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আল্লাহ আমাদের তাদের পথটিতে পরিচালিত করুন, যাদের ওপর তিনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথ থেকে আমাদের আশ্রয় দিন, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।

আমীন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×