ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী সংস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাত্রলীগের বেয়াড়া ক্যাডাররা তরুণীদের নিয়ে পাশবিক উন্মত্ততার আর একটি কলঙ্কজনক ইতিহাস তৈরি করে আবারও প্রমাণ করলো যে, দেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-রীতি তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর আগেও ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও ছাত্রী নিবাসে ছাত্রীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের নানা রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা শুধু সভ্য সমাজেই অকল্পনীয় নয়। মধ্যযুগীয় আদিম সমাজও আধুনিক সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত রাজনৈতিক ক্যাডারদের এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ডে লজ্জা পাবে। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মফস্বল শহরের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এমনকি স্কুলে পর্যন্ত ছাত্রীরা তাদের সম্ভ্রম ও জীবন নিয়ে শঙ্কিত। কিছু দিন আগে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি অভিভাবিকা, ছাত্রীসহ সবার ওপর নির্যাতনের তান্ডব চালায়। ঢাকার ইডন কলেজের ছাত্রলীগের মহিলা নেত্রীরা সহপাঠী ছাত্রীদের দিয়ে দেহব্যবসা করানোর মতো অপরাধ কর্মেরও ইতিহাস তৈরি করেছে। অসহায় ছাত্রীদের চাপের মুখে এবং প্রলোভন দেখিয়ে শাসক দলের রাজনৈতিক গডফাদারদের মনোরঞ্জনে বাধ্য করছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, যারা ছাত্রী নির্যাতনের এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে, তারা প্রতিকারের বদলে পেয়েছে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ এবং পরিশেষে কলেজ থেকেও বহিষ্কারাদেশ। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিপীড়কদের পক্ষ নিয়েছে। সরকার বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে। দেখা যাচ্ছে, সরকারের প্রশ্রয়, পুলিশের প্রোটেকশন এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আস্কারায় ছাত্রলীগ নামের ভয়ঙ্কর গুন্ডাবাহিনী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যের সাথে নারী নির্যাতনের বেপরোয়া দানব হয়ে উঠেছে। নির্যাতিতা নারীদের কান্না গুমরে মরছে। কোথাও কোন প্রতিকার নেই। অবস্থা এমন যে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে সকল শিক্ষার্থীর ছাত্রলীগের চাঁদাবাজদের ভর্তি বাণিজ্যের চাঁদা পরিশোধ করতে হবে এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের পড়তে হলে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ভোগের উপাচার হতে হবে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ছাত্রলীগ নেতার প্রকাশ্যে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন স্মরণকালের এক পাশবিক ইতিহাস তৈরি করে গোটা জাতির ধিক্কার কুড়িয়েছে কিন্তু দেশবাসী হতবাক হয়ে দেখলো যে, ঐ ঘৃণ্য ধর্ষককে দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের হাতে তুলে দিয়ে বিবেকের দায় থেকে মুক্ত হবার বদলে শেখ হাসিনার বদান্যতায় তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। সুতরাং ছাত্রলীগের বর্তমান ক্যাডাররা তাদের পূর্বসূরি সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নারী নির্যাতনের রেকর্ড সৃষ্টি করে একইভাবে দলের হাইকমান্ডের কাছে পুরস্কার প্রত্যাশা করছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোন ক্যাডারই এ পর্যন্ত নারী নির্যাতনের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি, তাদের কারও কোমরে দড়ি বা হাতে হাতকড়াও পড়েনি। তারা নারী নির্যাতনসহ সব ধরনের অনৈতিক ও অবৈধ কাজের লাইসেন্স পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সমবেত তরুণী-যুবতীদের নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি সরকারের আস্কারারই ফলশ্রুতি।
ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তপনা, বেপরোয়া সন্ত্রাস এবং নজিরবিহীন নারী নির্যাতনের অনুমোদন দিয়ে সরকার বিরোধী দল ও মত নিবর্তনের লাঠিয়াল বাহিনীকে উদ্দীপ্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। এটা সরকারের রাজনীতির অংশ। সুতরাং আইনের কাছে এই অনাচারের কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক ও সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এ বিষয়ের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এবং নানা ইস্যুতে অতি সোচ্চার সুশীল সমাজ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের অব্যাহত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি উচ্চারণেরও সাহস দেখাতে পারছে না। এসব চরিত্রহীন ভাড়াটে বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবসায়ীরা ষড়যন্ত্র করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে বলে তাদের বিরুদ্ধে তাদের মুখে কোন প্রতিবাদের ভাষা নেই। এসব বর্ণচোরা মানবতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধেও সম্মিলিত প্রতিরোধের আওয়াজ তোলা আজ সময়ের দাবি।
-একটি পত্রিকা থেকে