somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব তাবলীগ জামাতের গৌরব-দূর্গের পতনঃ শিক্ষনীয় বিষয়াবলী (পর্ব-১ঃ যোগ্যতর ব্যক্তিদের লোপ)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, যে কোন ধর্মীয় বা কোন দল/জামাত কোন যোগ্য ব্যক্তির পরশে উন্নতির শীর্ষে ওঠে, তেমনি একই জামাত অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্ত্বের কারনে হোচট খায়। কাদেরীয়া, চিশতীয়া ইত্যাদি তরীকার প্রথম দিককার পীরগণ যেমন সঠিক, শুদ্ধ দ্বীন ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক ছিলেন, তেমনি এসব সিলসিলার মসনদে অযোগ্য ব্যক্তির আগমনে বিদাত ও শিরকের আবির্ভাব ঘটে। পরে বিভিন্ন বুযুর্গ ও ওলামায়ে কেরাম এ সিলসিলাগুলিকে বিভিন্ন সময় বেদাতমুক্ত করেছেন। সাধারন ভক্ত অনুসারীরা এসব বুঝতে পারে কমই। এজন্য দেখা যায়, সাধারন মানুষ দ্বীনের বিকৃতি সাধনকারী হয়ে থাকে আর আলেমগণ উদ্ধারকারী হয়ে থাকেন।
আসুন, সে আলোকে অতি সংক্ষেপে তাবলীগ জামাতের পথ-পরিক্রমা দেখে নেইঃ

মাওলানা ইলিয়াস রঃ
তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা হয় এনার হাত ধরেই। এই মহান ব্যক্তির ইখলাস, নিষ্ঠা, ত্যাগ, কোরবানী ও আবেগের কারনে তাবলীগের কাজ মকবুল হয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্বীকৃতি পায়। ওলামারা এ কাজের দেখভাল করেন, ফলে সকল ফেতনা থেকে মুক্ত থাকে। [বিস্তারিত জানতে পড়ুন- মাওলানা ইলিয়াস ও তার দ্বীনী দাওয়াত, লেখকঃ আবুল হাসান আলী নদভী রঃ]

মাওলানা ইউসুফ রঃ
ইলিয়াস রঃ এর মৃত্যুর পরে, পাক-ভারতের বিশিষ্ট মুরুব্বি ও ওলামাদের (শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রঃ, আব্দুল কাদের রায়পুরী রঃ প্রমুখ) পরামর্শে এ কাজের হাল ধরতে তাবলিগী জামাতের আমীর নিযুক্ত হন ইলিয়াস রঃ এর পুত্র মাওলানা ইউসুফ রঃ। এনার ত্যাগ, চেষ্টা ও যোগ্যতার কারনে অতি অল্প সময়েই তাবলীগী জামাত উন্নতির শীর্ষে পৌছায় ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়।

মাওলানা এনামুল হাসান রঃ
মাওলানা ইউসুফ রঃ এর মৃত্যুর পরে, বিশ্বের ধর্মীয় মুরুব্বি শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রঃ এর তত্ত্বাবধানে বিশ্ব তাবলীগের আমির হোন মাওলানা এনামুল হাসান রঃ। ইলমী, দাওয়াতী ও আধ্যাত্মিকতায় এক দিকপাল ছিলেন ইনি। সুদীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় তাবলীগী জামাতের রাহবারী করেন। এনার সময়কালেই তাবলীগ সকল বাধা পরিয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে পৌছে যায়। তবে ৯০ দশকের মধ্যভাগে, হযরতজী রঃ এর ইন্তিকালের আগে আগে তাবলীগ জামাতে কিছু সমস্যা দেখা যায়; তা হোল- নন-আলেম ও দুনিয়াদার তাবলীগী কর্মীরা তাবলীগী জামাতের বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে যায় এবং প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এতে কিছু সমস্যা-ও দেখা যায়। বিশেষত, যাদের দ্বীনী বেসিক জ্ঞান ও যোগ্যতা নেই, তারা দ্বীনী মেহনতের আমীর হতে থাকলে উম্মতের অনেক বিপদ আসতে পারে। এবম্বিধ চিন্তাভাবনায়, উনি সকল তাবলীগী দায়িত্তশীলদের নিয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত দিয়ে যান, তাবলীগী কাজের যে কোন মহলে এখন থেকে একক আমীর কেউ থাকবে না, শুরা (কমিটি) করে চালাতে হবে।

মাওলানা এনামুল হাসান রঃ এর পরবর্তী অবস্থাঃ
হযরতজী রঃ এর পরামর্শক্রমে ওনার এন্তেকালের পরে, কেন্দ্রীয় মার্কায নেযামুদ্দিনে তিন জনের শুরা করা হয়- মাওলানা এহতেশামুল হাসান রঃ, যোবায়রুল হাসান রঃ ও মাওলানা সাআদ সাহেব। এই তিন সদস্যের শুরা বিশব্যাপী দাওয়াতের কাজের প্রতিনিধিত্ত্ব করতে থাকেন। এনাদের মধ্যে মাওলানা এহতেশামুল হাসান রঃ ১৯৯৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন। এরপর থেকে ২ সদস্যের শুরা কাজ চালাতে থাকেন। এ দু জনের মধ্যে মাওলানা যোবায়রুল হাসান রঃ বছর ৩/৪ আগে এন্তেকাল করেন। রইলেন শুধু মাওলানা সাআদ সাহেব। এই মাওলানা সাদ, ইলিয়াস রঃ এর নাতি মাওলানা হারুন রঃ এর পুত্র। মূলত এরপর থেকেই বর্তমান সংকট ঘনীভূত হতে শুরু করে।

তাবলীগের কাজ কি শুরাভিত্তিক চলবে, নাকি একক আমীরের অধীনে চলবেঃ
উক্ত শুরার একমাত্র সদস্য মাওলানা সাআদ জীবিত থাকায় প্রশ্ন উঠতে থাকে, তাবলীগের কাজ কিসের/কার অধীনে চলবে? শুরা, নাকি আমীর? আমীর হলে কে হবে? এই সংশয় ও দ্বন্দ্ব অদ্যাবধি বিদ্যমান। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবাই একমত হতে পারে নি। তবে, শেষ ও ৩য় আমীর হযরতজী এনামুল হাসান রঃ এর পরামর্শ মোতাবেক পৃথিবীর বেশিরভাগ তাবলীগী আলেম ও কর্মীরা মনে করে, বর্তমান ফেতনা-ফাসাদের জমানায় শুরা পদ্ধতিতেই তাবলীগের কাজ চালানো উত্তম।

আলমী (বিশ্ব) শুরা গঠনঃ
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, বিশ্বের প্রায় সকল মুরুব্বি, প্রবীন ওলামায়ে কেরাম ও পুরনো কর্মীরা মিলে মাশোয়ারা করে ১৩ সদস্যের একটা শুরা গঠন করেন। এর মধ্যে মাওলনা সাদসহ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ আছেন। ভারতের মাওলানা আহমদ লাট দাঃ বাঃ ও ইব্রাহীম দেওলা দাঃবা:-ও এই শুরার সদস্য আছেন। মাওলানা আহমদ লাট দাঃ বাঃ একজন প্রবীন আলেম ও তাবলীগের দীর্ঘদিনের কর্মী, ইনি আবুল হাসাল আলী নদভী রঃ এর খলিফা। তেমনি ইব্রাহীম দেওলা দাঃবা: একজন প্রবীন আলেম ও তাবলীগের দীর্ঘদিনের কর্মী ও সাআদ সাহেবের স্বয়ং ওস্তাদ। এ কমিটির (শুরা) মধ্যে বাংলাদেশের কাকরাইলের মাওলানা যোবায়ের সাহেব সহ তিনজন আছেন। আরো আছেন পাকিস্তানের ভাই আব্দুল ওয়াহাবসহ অনেকে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের তাবলীগ জামাত এই গ্রহনযোগ্য আলমী শুরা-কে স্বাগত জানিয়েছে।

মাওলানা সাদের এমারত (একক আমীরত্ত্ব) দাবিঃ
ওদিকে, ভারতের নেযামুদ্দনের সদস্য, মাওলানা সাদ একাই ঐ আলমী শুরাকে প্রত্যাখ্যান করেন ও নিজেকে একক আমীর দাবী করে, নিজের সন্তান ও কিছু অনুসারী নিয়ে নিজে আলাদা একটা শুরা গঠন করেন, যার ‘আমীরে ফায়সাল’ (চূড়ান্ত আমীর)হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এখান থেকে বিশ তাবলীগে নতুন দুই ধারা চালু হয় ও নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আলমী শুরার অধীন তাবলীগী সাথিরা ও বিশ্বের বিভিন্ন মার্কায মাওলানা সাদের আমীরত্ত্ব-কে প্রত্যাখান করেন। তবে মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীরা অল্প হলেও অদ্যবধি একক আমীরের (আমীর-মাওলানা সাআদ) দাবিতেই অটল আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×