somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গ্রামের জামালিবু আর ‘জোবরা’ গ্রামের সেই সুফিয়া - নিয়তি একই

২২ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সারা দেশে হাজার হাজার বিদেশী এনজিও সাহায্যের নামে শুধু সুদি ব্যবসাই করছে না, এদেশের সাধারণ গরীব জনসাধারণকে আরো গরীব করছে। ব্যতিক্রম হিসেবে উচ্চপদস্হ কিছু সুবিধাভোগীর কথা বাদ দিলে এনজিওগুলোর সাথে জড়িত মাঠ পর্যায়ের হাজার হাজার কর্মীর বেশিরভাগের জীবনের একটি বড় সময় এনজিওতে কাজ করার পরেও আর্থিক অবস্হার কোন বড় ধরণের উন্নতি ঘটেনি। আর লাখ লাখ সাধারণ মানুষ যারা ঋণ নিয়েছে তারা ঋণের টাকাতো দূরের কথা উচ্চ হারের সুদ শোধ করতে গিয়ে দিশেহারা। কেউবা অন্য আরেকটি এনজিও থেকে আবার সুদে টাকা নিয়েছে, কেউবা গ্রামের অবস্হা সম্পন্ন মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে এনজিও ঋণের সুদ শোধ করেছে। আর মূল ঋণ শোধ দিতে না পারায় এনজিও গুলো অনেকের ঘরের চাল, বসতভিটা পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধা ঋণগ্রহীতাকে না পেয়ে অশীতিপর বৃদ্ধকে ধরে নিয়ে গাছের সাথে উল্টো করে বেঁধে হত্যা করেছে।

ছোট বেলায় দেখেছি গ্রামের গরীব জামালিবু প্রায়ই মায়ের কাছে আসতো কিস্তির টাকা শোধের জন্য টাকা চাইতে। কয়েকবার ধার নেয়ার পরে সেগুলো ফেরত না দেওয়াই মা অনেক সময় দিতে না চাইলে, জামালিবুর কষ্টের মুখটি দেখতে আমার ভাল লাগতো না। তখন এনজিও-ঋণ এতসব বুঝতাম না। এখন জানি না সেই জামালিবু কেমন আছেন। অসুস্হ পাগল স্বামী মারা গিয়েছেন আমি গ্রামে থাকতেই। এনজিও থেকে ঋণ নিলেও স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারেননি।

জামালিবুর মতো এমনি অনেক হতভাগ্য আছেন। সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি, আজকের আমাদের সময়ের(ধন্যবাদ আমাদের সময়কে এমন সাহসী সংবাদের জন্য) একটি রিপোর্ট পড়ে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড· মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য হিসেবে সারাবিশ্বে তুলে ধরা হয় চট্টগ্রামের ‘জোবরা’ গ্রামের সুফিয়াকে। প্রচার করা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুফিয়া স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সুফিয়া মারা গেলে তার কবর দেয়া হয় চাঁদা তুলে! সারা জীবন এনজিওর চাঁদায় (ঋণ) উন্নতি না হওয়ায়, মরার পরে মানুষের চাঁদায় কবর!


আমাদের সময় রিপোর্টটি করেছে সাপ্তাহিক ২০০০-এর চলতি সংখ্যার ‘সুফিয়ার কবর চাঁদার টাকায়/ইউনূসের হাতে নোবেল’ লেখা থেকে। এর মূল অংশ পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরছি।


"প্রকৃতপক্ষে এই সুফিয়া খাতুন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যান ১৯৯৮ সালে। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তার দাফনের ব্যবস্থা করে। সুফিয়ার পঞ্চাশোর্ধ্ব অসুস্থ দুই মেয়ে হালিমা ও নূর নাহারের এখন দিন কাটে অর্ধাহারে, অনাহারে। তবে অনেক অনুরোধের পর ড· ইউনূস তাদের একটি রিকশা দিয়েছেন।

১৯৭৪ সালে ‘জোবরা’ গ্রামের সিকদারপাড়ার অভাবী নারী সুফিয়া খাতুনের হাতে ঋণ হিসাবে প্রথম ২০ টাকা তুলে দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক ড· মুহাম্মদ ইউনূস। বেশি ঋণের আশ্বাস পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করেন সুফিয়া। নতুন করে ঋণ পান পাঁচশ টাকা। একসঙ্গে এত টাকা পাওয়ার আনন্দে সুফিয়া সেদিন তা সারা গ্রামে জানিয়ে দেন। এর অল্পদিনের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় চলে আসে পুরো জোবরা গ্রাম। জোবরার ঘরে ঘরে তখন নগদ টাকার উৎসব। কিন্তু সেই আনন্দ মিলিয়ে যেতে বেশিদিন লাগেনি। সুদে-আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, এলাকা ছেড়েছেন রহিমা ও সায়েরা খাতুনসহ অনেকেই।

আজও জোবরা গ্রামের মানুষদের আক্ষেপ- স্বাবলম্বী করার নামে ড· ইউনূসের ‘ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প’ তাদের গরিব থেকে আরো গরিব করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে তারা ‘আশা’র দ্বারস্থ হয়েছেন। আশার টাকা শোধ করতে আবার দ্বারস্থ হয়েছে ‘ব্র্যাক’-এর কাছে।

জোবরা গ্রামের অধিবাসী সাথী উদয় কুসুম বড়-য়া বলেন, ঋণ-বাণিজ্যের মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষকে দারিদ্র্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার কারণে ড· ইউনূসের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

এদিকে উন্নয়ন মডেল সুফিয়ার পরিবারে এখন প্রকট দারিদ্র্যের চিহ্ন। মাথা গোঁজার কুঁড়েঘরটি ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়। গত বর্ষায় তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এখনই যদি ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে এই বর্ষায়ও তাদের ভিজতে হবে। সুফিয়ার পরিবার অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির যেখানে এমনই দশা সেখানে ড· ইউনূস প্রচার করছেন আমাদের নাকি পাকা বাড়ি আছে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী রুকুনুজ্জামান বলেন, অনেকদিন ধরে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় সুফিয়ার বাড়ির পাশের দোতলা বাড়িটি সুফিয়ার বাড়ি বলে দেখানো হচ্ছে। গ্রামবাসীর মতো ওই দোতলা বাড়ির মালিক দুবাই প্রবাসী জেবল হোসেনও এতে চরম ক্ষুব্ধ। গ্রামবাসীদের তিনি জানিয়েছেন বাড়ি নিয়ে প্রতারণার দায়ে ড· ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
"



পরিশেষে, এসব এনজিওর অনেকে এদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীগুলোর মতো এরা দেশের ক্ষমতা দখল করে বিদেশী প্রভুর আজ্ঞাবহ হয়ে দেশ শাসন করতে চায়। উল্লেখ্য, প্রশিকার প্রধান কাজী ফারুক ২০০৪ সালে বহুল প্রচারিত জলিলের ২৯এপ্রিল ট্রাম্প কার্ডের অন্যতম রূপকার। হাজার জাজার প্রশিকা কর্মীকে ঢাকায় এনে সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি গত নির্বাচনের আগে নতুন দল সৃষ্টি করে নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করেন। তাই তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসের কথা অনেকেরই জানা। সম্প্রতি স্বেচ্ছাচারী ও দূর্নীতির কারণে প্রশিকার কর্মীরা ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছে।

ইউকে ভিত্তিক আরেকটি এনজিও 'গ্রীন ক্রিসেন্ট' বিদেশী টাকায় এদেশে অস্ত্র ও জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করছে। সম্প্রতি এর প্রধান অফিস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পরে সংস্হাটির প্রধান কর্মকর্তা ব্রিটিশ নাগরিকসহ কয়েকজন ধরা পড়ে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এব্যাপারে সরকার ও মিডিয়া এখন একেবারে নিশ্চুপ। এসব সন্ত্রাসী-দূর্নীতিবাজদের আদৌ কোন বিচার হবে, নাকি পর্দার আড়ালে মুক্তি দিয়ে আগের কাজে সুযোগ দিবে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসই বলতে পারে।

জনগন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কম নয়। এখন সময় এসেছে, আসুন এনজিও রূপি নব্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।।

ছবিসূত্র: ফটোসার্চডটকম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:৪৭
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×