শেষ দেখা নাটক টা ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে লিখেছিলাম । বেশি ভালো না হওয়ায় পোস্ট করিনি। আজকে কেন জানি পোস্ট করতে ইচ্ছে হলো ।তাই করে দিচ্ছি । :p কেউ নাটক বানাবেন ? না বানালেও যাদের পক্ষে সম্ভব পুরোটা পড়ে আমার ভুল গুলো দেখিয়ে দিলে খুশি হবো ।
শেষ দেখা
প্রথম দৃশ্য
চরিত্র (তুবা , রণ )
(নিজ নিজ রূম থেকে ফোনে কথা হচ্ছে )(ঝগড়া তুমুল পর্যায়ে ছিল এমন ভাব নিয়ে ন্যচারালি এক্টিং করতে হবে । সাউন্ড অনেক লাউড হবে)
তুবা| চুপ
রণ| তুই চুপ ।
তুবা| আর কখনো ফোন দিবি না ।
রণ|এক্সকিউস মি তুই ফোন দিসিলি!
তুবা| রাখ
রণ| তুই রাখ :@
তুবা | আর জীবনেও তোকে ফোন দিবো না এটাই শেষ কথা ।
ফোন কেটে যায় দুইজনই নিজ নিজ খাটে মোবাইল টা ছুড়ে ফেলে ...
তার ৫ মিনিট পর মোবাইল নিয়ে আবার ফোন করে তুবা ।
তুবা | এই শুনো (যেন কোন ঝগড়াই হয় নি )
রণ| বলো
তুবা | আমার বিয়ের আগে শেষ দেখা করতে চাই তোমার সাথে ।
রণ | আমি কোন দেখা টেখা করতে চাইনা তোমার সাথে । আর ভুলেও যদি কখনো দেখা হয় তবে আমাকে চেন না এমন ভাব করবা । আমিও তোমাকে চিনি না।
তুবা | কেন ?
রণ | কেন মানে কি ? তুমি না অন্যের বউ হবা ?
তুবা | তো কি হইসে ? আমরা কি ফ্রেন্ড না ?
রণ| না ফ্রেন্ড না।
তুবা| দেখো এভাবে কথা বলতেসো কেন ?
রণ | কিভাবে কথা বলতেসি ?
তুবা| আমার বিয়ের খবরে তোমাকে এমন আপসেট মনে হচ্ছো কেন ? তুমি তো কখনই বলো নাই তোমার মনের কথা ।আমি যখন আগে বার বার তোমাকে ভালবাসি বলতাম তুমি তো এড়িয়ে যেতে ।
রণ |বলার কি আছে ? সব কিছু কি বলতে হবে নাকি ? ভালো হইসে এড়িয়ে গেসিলাম! নাহলে এখন কত কষ্ট পেতে হতো!
তুবা| কষ্ট তাহলে পাচ্ছো না এখন?
রণ| না পাচ্ছি না ।আমি কোন দেখা করবো না ।রাখি ।
কোন জবাব না শুনেই ফোন কেটে দেয় রণ ।
তুবা এরপর তার ওয়াশ্রুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দেয় জোড়ে , যাতে তার কান্নার শব্দ কেউ শুনতে না পারে । আর রণ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় তার মুখ বেয়েও চোখ থেকে আসা পানি পরতে থাকে ।
দ্বিতীয় দৃশ্য
ফ্ল্যাশ ব্যাক
(দুই বছর আগের কথা) (মোবাইলে টেক্সটিংফেইসবুকে চ্যাটিং)
তুবা | এই তোমাকে আজকে ফুল হাতা শার্টে ভালোই লাগতেসিলো
রণ| হুম । আজকে এতো চুপ চাপ ছিলা কেন রিক্সায় ?
তুবা| এমনি... এই শুনো তোমাকে একটা কথা বলতে চাই ।
রণ| বলো
তুবা| আমার মনে হয় আমার তোমার উপর ফিলিংশ আছে
রণ| স্বাভাবিক !একটা ফ্রেন্ড আর আরেকটা ফ্রেন্ড এর মাঝে তো ফিলিংশ থাকবেই ! তাই না?
তুবা| দেখো ন্যাকামী করবা না।তুমি ঠিকই বুঝসো আমি কোন ধরনের ফিলিংশ এর কথা বলছি
রণ|আজীব ! :p আসলেই বুঝি নাই ।
তুবা | তুমি আমার সাথে আর কথা বলবা না। :@
রণ | দেখো তুবা। তোমাকে বুঝতে হবে। আমাদের সমাজ সেইম এইজ রিলেশনশীপ মেনে নেয় না। তো্মার বাবা মা ও মেনে নিবে না।
তুবা | এতো কিছু বুঝি না। তুমি খালি বলো তোমার কি আমার প্রতি কোন ফিলিংশ আছে কিনা ?
রণ| এই খাওয়া দাওয়া করসো ? আমি আসতেসি কিছু ক্ষন পর ।
এভাবে রণ আসতে আসতে অবহেলা শুরু করে তুবার উপর।তুবা ও ধরে নেই যে রণ ওকে কখনোই ভালবাসে নি। তাই সাধারন ফ্রেন্ড দের মতই চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক। এরই মাঝে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ তে ভর্তি হয় তুবা আর রণ ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ।
তৃতীয় দৃশ্য
দুই বছর পর আজকের ফোনালাপের এক সপ্তাহ আগের ঘটনা ।
চরিত্র (তুবা ও তুবার মা )
মা| কিরে কি করছিস মা ?
তুবা|কিছু না আম্মু ( ডায়েরী লেখা বন্ধ করে )
মা| আচ্ছা তোর কি কোন পছন্দ আছে ?
তুবা| (একটু চুপ করে ) না তো আম্মু , কেন ?
মা| এই ছবিটা দেখ তো। ছেলে ভালো usa তে থাকে। তোর মেঝ খালার বড় ননদের ছেলে ।
তুবা| কিন্তু আম্মু আমার তো এখনো পড়ালেখাই শেষ হলো না।
মা| বাকী পড়া লেখা বিয়ের পর করিস। ছেলে টা কেমন ?
তুবা| ছবিতে কি আর বুঝা যায়! ভালোও না খারাপ ও না।
মা| যাই হোক আমি তাহলে তোর বাবাকে বলছি তুই রাজী।
তুবা| কিছু না বলে মুখ বাঁকা করে মাথা টা বা কাধের দিকে হালকা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে ।
চতুর্থ দৃশ্য
রণ কিছু না শুনে ফোন কেটে দেওয়ার এক ঘন্টা পরে নিজেই ফোন দেয় তুবাকে ।
তুবা| কি ?
রণ| ভেব দেখলাম শেষ দেখা টা করা যায় ।
তুবা| না থাক না কেন আবার! হাহ
রণ| আচ্ছা থাক তাহলে । রাখি ।
তুবা| এই শুনো ! একটুতেই রেগে যাও কেন ? দেখাটা করা আমার জন্য জরুরি।তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিলো ।
রণ| আমার লাগবেনা কিছু ।
তুবা| আমার যে দিতেই হবে । (তুবা তার লেখা ডায়েরীটা রণকে দিতে চেয়েছিল যাতে তার সব অনুভূতি আর কষ্টের কথা লেখা আছে)
রণ| কি দিবা ?
তুবা| দিলেই দেখবা (মুখে রহস্যের হাসি ফুটে উঠে তুবার)
এরপর একটা জায়গা আর সময় ঠিক করা হয় (পরিচালক তার ইচ্ছা মতো একটা জায়গা আর সময় ঠিক করবে ।)
পঞ্চম দৃশ্য
ঠিক করা সময়ের আধা ঘন্টা আগেই জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হয় রণ। মনে মনে অনেক কিছুই ভাবতে থাকে কি দিতে পারে তুবা! আবার ভাবে হয়তো তুবার বিয়ের কথা টা মিথ্যা তার সাথে দেখা করার জন্যই হয়তো এমন নাটক সাজিয়েছে!এটা ভেবে তার ভালো লাগতে থাকে । সে ঠিক করে ঢাকা ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে এবার এয়ার ফোর্সে ভর্তির এক্সাম দিবে। ডিফেন্স হেকে তাড়াতাড়ি ইস্টাব্লিশড হওয়া যায় । টিকা মাত্রই সে তুবাকে প্রপোজ করবে।
অন্যদিকে রিক্সায় ভাবতে থাকে তুবা।যদি রণ একবার তাকে ভালবাসি বলতো!যাই হোক তাকে শেষ বারে মত একটা বিশাল hug দিবে সে এটা ভেবেই তার মুখে হাসি আর চোখে পানি চলে আসে ।
এমন সময় তার ব্যগটা ছিনতাই হয় যেখানে সে তার ডায়েরী আর মোবাইল টা রেখেছিল।বেশি সাহসী হওয়ার চেষ্টা করেছিল তাই রিক্সাওয়ালা কে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে তারা। লোকজন পরে এসে হাস্পাতালে নিয়ে যায় রিক্সাওয়ালাকে । রিক্সাতে বসেই কাঁদতে থাকে তুবা ।লোকজনের ভিড় জমে যায় তাকে দেখতে থাকে সবাই কেউ কেউ হেসেও দেয়।এভাবে এক ঘন্টার মত পাড় হয়ে যায় ।
অন্যদিকে অনেক ক্ষন অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে রণ ফোন করে তুবাকে । ফোন বন্ধ দেখায় আরো বিরক্ত হয়ে নিজের ফোনটাও বন্ধ করে দেয় সে।আর তখনি ফোন ফ্যক্স এর দোকান থেকে রণ নাম্বারে ফোন দেয় তুবা। ফোন বন্ধ পেয়ে সে ভাবে রণ হয়তো আসেই নি। তবুও সে আরেকটা রিক্সা নিয়ে ঐ স্থানে যায় রণ কে দেখার আশায়। কিন্তু রণ এর কিছুক্ষন আগেই মন খারাপ করে চলে যায় ঐ স্থান থেকে।
এভাবে তাদের শেষ দেখা টা হয় না। রণ মনে মনে বলতে থাকে তুবা নামের কাউকে সে চিনে না। তার চোখের পানি চলে আসে। রাস্তায় সবাই কি ভাব বে! এটা ভেবে চোখে কিছু পরেছে এমন অভিনয় করতে থাকে সে।
অন্যদিকে বাসায় গিয়ে রাগে রণ কে ফেইসবুকে ব্লক করে দেয় তুবা । দুই পক্ষ থেকে অনেক অশ্রু বয়ে যায়।
শেষ দৃশ্য
৪ বছর পরের ঘটনা। রণ তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে শপিং এ এসেছে । এমন সময় বাচ্চা কোলে একটা মেয়েকে দোকানদারের সাথে দাম নিয়ে ঝগড়া করতে দেখে। মেয়েটি আর কেউ না তুবা।
তুবা| (রণ কে দেখে ঝগড়ার মাঝখানে চুপ হয়ে যায়।) কেমন আছো!
রণ| আমাকে বলছেন ? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।(ঠিকই চিনেছে কিন্তু তার রাগ এখনো কমেনি )
তুবা| না আপনাকে বলছিনা ।স্যরি আমি অন্য কেউ ভেবে ছিলাম। (রেগে যায় তুবাও আর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতে থাকে রণ এর গার্লফ্রেন্ড এর দিকে । রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো তার।এমন সময় তার কোলের বাচ্চা টা কান্নাকাটি শুরু করে । রেগে গিয়ে ধমক দেয় বাচ্চা টাকে এবং কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় বাচ্চার।)
রণ| চলো আমরা অন্য কোথাও যায় ।
রনোর গার্লফ্রেন্ড | তুমি চেনো আপুটা কে ?
রণ| নাহ (বলতে গিয়ে মুখ বন্ধ হয়ে আসে রণর বুকের মাধ্যে হঠাত ভার অনূভব করতে থাকে সে।এই ভার সেই সব একই বয়সী যুবক যুবতীর চোখের পানি আর রাত জাগা কষ্টের ভার যাদের সম্পর্কের সমাপ্তি টা পরস্পরকে এমন ভুলে যাওয়ার অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ঘটে থাকে । )
(সমাপ্ত)