এক মুরগীকে কতবার জবাই দেয়া যায় ?
জবাই নম্বর ওয়ান:
যারা ফিক্সড বেতনে চাকরি করেন। বাৎসরিক ইনকাম ১৮০,০০০ বা সরকার নির্ধারিত একটা এমাউন্ট পার হইলেই তাদেরকে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করতে হয়।
জবাই নম্বর টু :
এই ফিক্সড বেতনধারীরা যা কিছু কিনবে তার উপর ১৫% হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয়। এই প্রদানকৃত ভ্যাটের উপর কোন কর রেয়াত নেই।
জবাই নম্বর থ্রি :
এই ফিক্সড বেতনধারীরা ব্যাংকে টাকা রেখে যদি জাতীয় অগ্রগতিতে অংশ গ্রহণ করতে চায় তাহলে তাদের কাছে থেকে কেটে নেয়া হয় এক্সাইজ ডিউটি। ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জরিমানা হিসেবে ব্যাংক চার্জ। এরপর তারা যে লাভটুকু পায় তার উপর আবার ১৫% হারে সরকারকে দিয়ে দিতে হয়। বলাবাহুল্য, এই ১৫% এর উপরও কোন কর রেয়াত নেই।
জবাই মুক্ত জীবন: এক.
কেউ যদি ব্যবসা করে তাইলে সে অনায়াসেই ন্যূনতম কর মানে ২০০০ টাকা দিয়া বছর পার করতে পারে। শুধু তার ইনকাম দেখাইতে হবে কম। নিজে না পারলে টাকায় ট্যাক্স উকিল পাওয়া যায় তারাই কাজটা করে দেয়। বছরে বিশ ত্রিশ লাখ টাকা লাভ হয় এমন ব্যবসায়িকেও দেখেছি মাত্র ২০০০ টাকা কর দিতে।
জবাইমুক্ত জীবন : দুই.
বড় ব্যবসা হলে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে। আরো কিছু ভগি জগি আছে যেগুলা উকিলরা সুন্দর পারে। লাখ লাখ টাকার ট্যাক্সরে তারা হাজারের অংকে নামাইয়া আনে।
জবাইমুক্ত জীবন: তিন.
ভ্যাট ফাঁকি দেয়া এখনও দারুণ লাভের ব্যাপার। ভ্যাটের টাকা পাবলিক থেকে আদায় করে সেটা ব্যবসায়ীরা নিজেদের কাছে রেখে দেয়। সরকারি কর্মচারীদের কিছু পরিমান ঘুস দিলেই কম্ম সাবাড়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট মেশিন বসানো হলেও অনেক কেনা বেচাই ওই মেশিনের বাইরে তারা অনায়াসেই করতে পারে। অর্থাৎ প্রপার মনিটরিং তো নাই-ই আছে ট্যাক্স কর্মকর্তাদের ঘুস বাণিজ্য।
জবাইমুক্ত জীবন : চার.
টাকা পয়সা হাতে থাকলে তা বৈধ চ্যানেল মানে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে না রাখলেই হইল। কেউ ওই টাকার উপর কোন কর ধার্য করবে না। বরং মাঝে মাঝে তাদের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করা হয়, বাবারে বড় বিপদে পড়ছি এইবার কিছু টাকা সাদা কর।
লেসন ফর অর্থমন্ত্রীজ
এক.
ভ্যাটের উপর কর রেয়াতের ব্যবস্থা করুন। অন্তত: ২০% কর রেয়াতের ব্যবস্থা করুন। যারা কর দেবার মত পর্যায়ে নেই তাদেরকে ২০% ক্যাশ ব্যাক করুন। তাহলেই দেখবেন ১০০% ভ্যাট আদায় হবে। কোন ধরনের ফাঁকিবাজী ব্যবসায়ীরা করতে পারবে না।
দুই.
প্রত্যেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসুন। নতুন যারা লাইসেন্স নিবে কিংবা পুরানো লাইসেন্সধারীদের নবায়নের সময় একটি করে আইডি কার্ড প্রদান করুন। সকল ধরনের কেনাকাটায় এই কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুন। তাদের সকল আর্থিক লেনদেন সেন্ট্রাল সার্ভারে জমা হবে। এর উপর ভিত্তি করে তাদের বাৎসরিক কর নির্ধারণ করুন।
তিন.
শুধু বৃহৎ কর প্রদানকারীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা না কইরা রেন্ডম স্যাম্পলিং এর মাধ্যমে আম জনতাকেও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। প্রথম যারা কর দিচ্ছে তাদের মধ্য থেকে কিছু এবং ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পর্যায়ের থেকে কিছু লোককে প্রতি বছর পুরস্কৃত করুন। এতে সব পর্যায়ের লোকই কর দিতে উৎসাহিত হবে।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : লেখক একজন গজায়মান অর্থনীতিবিদ তার কথার সাথে সবার একমত হবার দরকার নেই। ভিন্নমত থাকলে মন্তব্য জানাইতে পারেন। আপনার বাজেট ভাবনা জাইনা আমরাও একটু উপকৃত হই)