somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ-জনগন, রাব্বী কিংবা গনমাধ্যমের গল্প.....।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আম জনতার উপর পুলিশী উৎপীড়ন আর নিপীড়নে গল্পগুলোর সূত্রপাত আজকের ‘রাব্বী’ নির্যাতনের ঘটনার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় নি। এর শেকড় গ্রোথিত রয়েছে ব্রিটিশ শাসন আমলে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ যখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে তুলছিল ঠিক সে সময় ব্রিটিশ শাসকরা তথাকথিত আইন শৃংখলা রক্ষার নিমিত্ত্বে তথা জন-আন্দোলন দমনের নিমিত্ত্বে এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ১৮৬১ সালে ‘পুলিশ আইনে’র মাধ্যমে একটি পুলিশ বাহিনী গঠন করে ফেলে। আর এই পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমেই পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার জনগনের উপর দমন নিপীড়নের মাধ্যমে ১৯৪৭ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে সচেষ্ট হয়। দেশভাগ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান পুলিশের স্বাধীনতাকামী বাংলার জনগনের উপর অবিচার আর অত্যাচার-নির্যাতনের গল্প তো রীতিমত গায়ে শিহরন জাগানো যার শুরুটা হয়েছিল ৫২’র ভাষা আন্দোলনে নীরিহ জনতার উপর গুলি চালানোর মধ্য দিয়ে। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান পুলিশ চালিয়ে গিয়েছে তাদের গনহত্যা আর তাণ্ডবলীলা।
এরপর ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে স্বাধীন হল সোনার বাংলা। স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলার সকল কিছুতেই স্বাধীনতার ছোয়া লাগলেও পুলিশ বাহিনী-র পজিটিভ কোনই পরিবর্তন সাধন তো হলই না বরং পুলিশ থেকেই গেল জন-দমন আর নিপীড়নের আরেক নাম হিসেবে। এরপর কালের আবর্তে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করা শুরু হল সরকার এবং প্রভাবশালী দলীয় এজেন্ডা পূরনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে।

স্বাধীন বাংলাদেশে, আধুনিক কল্যাণমূলক সরকার ব্যবস্থায় পুলিশ আইনটি চলছে সে মান্ধাত্বার আমলের ১৮৬১ সালের ৫নং ব্রিটিশ পুলিশ আইন দ্বারাই যেটি পুলিশ আইন হিসেবে পাস হয়েছিল যেখানে পুলিশবাহিনীর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও কর্মপরিধি, অপরাধীর শাস্তির মাত্রা, পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা/ কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, পদচ্যুতি ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নিয়মাবলি, তদন্তের ধরন এবং অপরাধী অনুসন্ধান, সাধারণ ডায়েরি (জি.ডি), এজাহার বা প্রাথমিক অবহিতি (এফ.আই.আর), পুলিশবাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলা বিধান ও মোতায়েন, বিভিন্ন অফিসারের ক্ষমতা ও অধিক্ষেত্র প্রভৃতি বিষয় সংজ্ঞায়িত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এই আইনে কিঞ্চিত পরিবর্তন সাধন হলেও পজিটিভ কোন পরিবর্তন আজো সম্ভবপর হয়ে তো ওঠেইনি সেই সাথে জবাবদিহীতা, মনিটরিং কিংবা পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানগুলোও থেকেছে অনুপস্থিতি ।

‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ বলা হলেও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ পুলিশ জনগনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন কোন সম্পর্কে আজ অবধি যেতে তো পারেই নি বরং তারা বারেবারে প্রভু এবং শাসক হয়ে উঠবার চেষ্ঠায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে। জনমনে পুলিশ হয়ে উঠেছে হয়রানী, ভয় আর আতংকের নামে। আর এই হয়রানী, ভয় আর আতংক তৈরির পেছনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, মনিটরিং বিষয়গুলোর অনুপস্থিতির সাথে সাথে গনমাধ্যমগুলোর নিষ্ক্রিয়তা এবং একটা টাস্কফোর্সের অনুপস্থতি অধিকাংশেই দায়ী।
‘সময় টেলিভিশন’ এর প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান কর্মকর্তা জনাব ‘রাব্বীর’ মোহাম্মদ পুর থানার এস আই মাসুদ কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনায় সময় টেলিভিশন আজ বেশ সোচ্চার। এর আগে দু-একটা গন মাধ্যম সোচ্চার হবার সামান্য প্রয়াস চালালেও তারা চুপ হয়ে গিয়েছে অথচ পুরো বাংলাদেশে এমন একটা দিন নেই যে এই পুলিশের দ্বারা আম জনতা হয়রানীর শিকার হচ্ছে না। সাধারন মানুষ সাধারনত পুলিশ হতে দূরে থাকে, পুলিশকে এড়িয়ে চলে।


গণমাধ্যম হবার কথা ছিল জনগনের মাধ্যম। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের মত এই গণমাধ্যম গুলোও আজ কোন না কোন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। সময় টেলিভিশন আজ এক রাব্বীর জন্য সোচ্চার হয়েছে কিন্তু রাব্বীর পূর্বে হাজারো রাব্বীরা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে বারেবার, এমনকি নির্যাতনে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে তাদের। কেউ শোনে নাই তাদের কথা, কেউ কথা বলেনি তাদের পক্ষে।
বাস্তবিক, পুরো বাংলাদেশটা আজ চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নামক তত্ত্বের আওতায়। যার জোর আছে তার জন্য সত্যিই বাংলাদেশটা সারা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশটা আর যার নেই তার জন্য বাংলাদেশ আর এক জাহান্নামের নাম। রাব্বীর জন্য সময় টেলিভিশনের এহেন সাহসী উদ্দ্যেগ সত্যিই প্রসংশার দাবীদার তবে বাকী ‘রাব্বী’দের খবর নেবে কে?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×