somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নির্বাসন! পর্ব চার-অপ্রিয় ভাষণ

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্ব
সব রক্তের একই রং!



"জোইত্তা, মাত্র ৫ বছর বয়স তার; আনমনে খেলে বেড়াবার বয়স। হটাত করেই অনেক কিছু আর আগের মত নেই! দেয়ালের একটা নির্দিষ্ট দাগের দিকে নিস্পলক চেয়ে বলে গেল সে, 'It was bad; I saw blood". এরপরেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। আর কিছু বলতে পারেনি ধর্ষণের শিকার হওয়া এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি।" আমাদের ক্লাস নিতে এসে এই বাচ্চাটির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আমাদের ইন্সট্রাকটর। রাগে ক্ষোভে প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি শাস্তি দিয়েছেন শয়তানটাকে, সে নিস্পলক আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, আমি বুঝে নিলাম।
লাইবেরিয়াতে প্রতি মাসে গড়ে ১০০ জন ধর্ষণের শিকার হয়! এদের ৬০% এর বয়স ১৩ এর নিচে এবং সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, আপনজনের হাতেই ধর্ষিত হয় বেশীর ভাগ শিশু! ঘৃণায় আমার শরীর গুলিয়ে উঠল, এই এদের "শান্তি রক্ষায়" আমাকে কাজ করতে হবে? মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। দেশের কথা মনে পড়ছিল, নরপশুরা সব দেশেই আছে! নেট খুলে বসলাম কি কারণে এদের এই অবস্থা তা জানার জন্যে! পড়তে পড়তে আবিস্কার করলাম, আমাদের দেশের জন্যেও অপেক্ষা করছে একই দিন, অদুর কোন এক ভবিষ্যতে! মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, আমার এই লেখা থেকেও কেও শিক্ষা নেবে না। যা হবার তা হবেই, তবু জানা থাকলে, মিলিয়ে দেখা যাবে হয় তো!

১৮৪৭ সালে আমেরিকা থেকে মুক্তি প্রাপ্ত দাসেরা লাইবেরিয়াতে বসত গড়ে। কিন্তু ততদিনে তাদের আফ্রিকান শেকরে পচন ধরে গিয়েছিল, তাই তারা মনে প্রানে আমেরিকানই থেকে যায়। এদেরই বংশধররা একছত্র ভাবে শাসন করেছে ১৯৭১ পর্যন্ত।যেখানে লাইবেরিয়ার স্থানীয়দের কখনই শাসনযন্ত্রে বসতে দেয়া হয়নি। ১৯ তম প্রেসিডেন্ট , টুবম্যান লাইবেরিয়ার উন্নতির জনক, অবশ্য তিনিও স্থানীয়দের বাইরেই রেখেছিলেন। ১৯৭৮ এ ২০ তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম আর টলবার্ট ১০০ বছরে প্রথম বারের মত একটি বিরোধী দল গঠনের সুযোগ দেন। কিন্তু এই নিয়ে নিজের দলের ভেতরেই গড়ে উঠে অসন্তোষ। অবশেষে ১৯৮০ তে সার্জেন্ট স্যামুয়েল ডো, স্থানীয় বংশোদ্ভূত এক সৈনিক, টলবার্ট কে হত্যা করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে। এই একনায়ক শুরুতে বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিলেও ধিরে ধিরে তার রাষ্ট্র পরিচালনার অদক্ষতা প্রকাশ পেতে থাকে। তার ছত্রছায়ায় চলে রাষ্ট্রীয় মাস্তানি। বিরোধী দল উচ্ছেদ, খবরের কাগজ বন্ধ, হত্যা, গুম এগুলোর প্রকোপ বেড়ে যায়। ডো এর আগের সবাই আমেরিকাকে তোষামোদ করে চলত। ডো ভুল করে বসে আমেরিকার বিরাগভাজন হয়ে! অতঃপর ১৯৮৯ তে আমেরিকার জেলে ভেঙ্গে "পালিয়ে" আসা চার্লস টেইলর, যে কিনা ডো এর মন্ত্রি ছিল কোন এক কালে, শুরু করে গৃহযুদ্ধ। সাথে যোগ দেয় স্থানীয় আরও একজন, প্রিন্স জনসন এবং তার সমর্থকেরা। ডো কে মেরে এরপর নিজেদের ভেতর চলতে থাকে মারামারি। প্রান হারায় নিরীহ ২০০০০০ মানুষ। ধর্ষিত হয় অগণিত নারী। পশ্চিমা বিশ্ব এই যুদ্ধের নাম দেয়, The UNcivil war

যুদ্ধ চলে ১৯৯৬ পর্যন্ত। তারপর যা হয়, লোকদেখানো নির্বাচনে দেশের রাজা হয়ে বসেন চার্লস টেইলর।

আমেরিকার মদদ পুষ্ট হয়ে ভালই চলছিল দিন, কিন্তু লাইবেরিয়াবাসির ভাগ্যের কোন উন্নতি হল না। টেইলরের দলের লোকেরা ছিল পশুর মত, ধর্ষণ ছিল তার মানুষকে বশে রাখবার অস্ত্র। ছোট ছোট শিশুদের থেকে শুরু করে ঘরের বউ, কেউই রেহাই পেতনা তাদের হাত থেকে। নির্যাতনের মাত্রা সীমা ছাড়ালে আরেকটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৯৯ তে। লাইবেরিয়া ছেড়ে পালান মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র গিনি আর সিয়েরা লিওন। চার্লস মরিয়া হয়ে সিয়েরা লিওনের একটি গুপ্ত সংগঠনের সাথে হাত মেলায়, যেটা হয়ে দাড়ায় তার কাল। আমেরিকা আর ব্রিটেনের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে সে, যার ফলাফল চার্লসের জন্যে ভালো না হলেও, মুক্তি পায় লাইবেরিয়া। চার্লস পালিয়ে যায় নাইজেরিয়াতে। উল্লাসে মাতে লাইবেরিয়া বাসী। সময়টা ছিল ১৪ আগস্ট ২০০৩।

কিন্তু সতের বছরের যুদ্ধের ক্ষত কি সহজে ঠিক হয়! যে শিশু গুলর হাতে অস্ত্র উঠেছিল, তারা এখন টগবগে তরুন। টেইলর নেই, তাদের কোন কাজও নেই তাই! ধর্ষণ, খুন আর ডাকাতি তাদের রক্তে ঢুকে গিয়েছে। একটা জাতিতে পচন ধরিয়ে দিয়েছে যুদ্ধ!

পৃথিবীতে সাদা কাল, সবার দেহেই একই রক্ত বয়। সব রক্তেই মিশে আছে আদিম হিংস্রতা। শুধু শাসক আর শোষিত ছাড়া আর কোন বিভাজন নেই আমাদের। এই ধ্রুব সত্য মানতে কষ্ট হলেও, এটাই সত্যি।
আমার ভয় হয়, অনেক ভয় হয়, একটা UNcivil war হয়তো আমাদের জন্যেও অপেক্ষা করছে!

(মানুষের অন্ধকার দিক দেখতে আমার ভালো লাগে না, লিখে মজা পাইলাম না বেশি:|)

ছবি সুত্রঃ ইন্টারনেট।
চলবে.।.।.।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×