somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নির্বাসন- ফেরা-১

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরবানী ঈদের ঠিক আগের রাতে মনের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে চেপে বসেছিলাম বিমানে। এমনিতেই আমি খুব ঘরকুনো। আমাকে সন্ধ্যার পরে বাসার বাইরে বের করা বেশ কষ্ট সাধ্য কাজ। তবে মনের এই বিরোধিতার সম্পূর্ণ অন্য একটা কারণ ছিল। আমাদের তিন জনের কাছে আল্লাহ্‌ আরেকজনকে পাঠাবেন বলে ঠিক করেছেন। তার জন্মের মুহুর্তটি আমাকে পুরো জীবনের জন্যে হারাতে হবে। আমার কাছে এই কষ্টটিই তীব্র হয়ে উঠছিল প্রতি ক্ষণে। আসার পর থেকেই তাই চেষ্টা করছিলাম ছুটির জন্যে। জানতাম হবে না, ইউ এন তিন মাসের আগে ছুটি দেয় না। ২৪ ডিসেম্বর মোবাইলে যখন প্রথম কান্নার আওয়াজ পেলাম, সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল। একটা মুষ্টিবদ্ধ হাত, কল্পনায় দেখা, শব্দ গুলো যদি ছবি হত!

ছুটি পেলাম ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ। যাত্রা পথ লাইবেরিয়া-ঘানা-ইস্তানবুল-ঢাকা। ঘানা পর্যন্ত ইউ এন এর বিমানে যাবো। বোয়িং ৭৩৭। রাশিয়ান একটা এয়ার লাইনের বিমান। গুরি গুরি বৃষ্টির দিনে আমি আর সাব্বির স্যার শুরু করলাম আমাদের দেশে ফেরার অভিযান।

ঘানা (স্থানীয়রা উচ্চারণ করে গানা) দেশ টা আফ্রিকার অন্য দেশ গুলি থেকে আলাদা। সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে। সুন্দর বাড়িঘর আর রাস্তা ঘাট। আকাশ থেকে অনেকটা এইরকম দেখতে!



আকরা হচ্ছে গানার রাজধানী। গানার মুদ্রার নাম ছিডি (cedi)। ডলারের বিপরীতে ওদের ছিডির মুল্যমান হচ্ছে ১ দশমিক ৯। গানা বেশ খরুচে জায়গা। এই খানে আমাদের ৯ ঘণ্টার বিরতি। ট্যাক্সি ভাড়া অবশ্য খুব বেশি না। শহরের যেকোনো প্রান্তে ১২ ছিডি দিয়ে চলে যাওয়া যায়। বাড়ি ঘর গুলো ইউরোপিয়ান ধাঁচে তৈরি; টালির ছাদ। আবহাওয়া অনেকটা আমার দেশের মতই!

ট্যাক্সি ড্রাইভার আমদের হোটেলে নিয়ে গেল। আমরা শহরের ভেতরে একটা সস্তা হোটেলে উঠলাম। সস্তা মানে ২৫ ডলার আরকি! হোটেলের রুমে একটা টিভিতে আঞ্চলিক একটা নাটক হচ্ছে। সাব্বির স্যারকে দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে সেইটা দেখতেছেন। এদিকে পেটের ভেতরে মোচর দিচ্ছে।
-স্যার, খাইতে যাবেন না!
-দাড়া ব্যাটা, মজার নাটক হইতেসে!
-ভাষা বুঝেন?
-আরে বেটা ইংলিশ তো!
আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারলাম আসলে ওরা ইংলিশেই কথা বলছে! আফ্রিকানদের ইংলিশ অনেকটা আমাদের চট্টগ্রামের বাংলার মত আরকি! এই ইংলিশই ওদের অফিসিয়াল ভাষা।
-কাহিনী কি স্যার!
-আরে গ্রামের মোড়লের মেয়েরে নায়ক ভালবাসে, এইজন্যে কালো জাদু করে ওরে ভস্ম করে দিবে!
আমি ভাবলাম, আর কিছুক্ষনের মধ্যে খিদায় আমিই ভস্ম হয়ে যাবো।
আফ্রিকানরা এখনও কালো জাদুর উপরে বিশ্বাস রাখে। ওরা সিংহ ভয় না পেলেও ডাইনি বুড়ি বেশ ভয় পায়। ওদের সংস্কৃতির একটা অংশ জুড়ে কুসংস্কার। যেগুলোর বলি হয় বাচ্চা, তরুণী আর যুবতী মেয়েরা।
আমার তিন মাসের নির্বাসনের মাঝেই একটা বাচ্চার মৃতদেহ পাওয়া গিএছিল; ১০ মাস বয়সের। ইউ এন এর নাম দিয়েছে রিচুয়াল কিলিং, যেটার কোন বিচার হয় না!

আক্রা বিমানবন্দর টা বেশি একটা বড় নয়। তারপর আবার চলছে মেরামতির কাজ। ডিউটি ফ্রি শপে ঘোরাঘুরি করলাম কিছুক্ষণ কিছু কেনার ধান্দায়। টিনটিন ভর্তি এই র‍্যাক টা বেশ আকর্ষণ করছিল! তবে দাম দেখে আকর্ষণের গোঁড়ায় পানি ঢাললাম।



বাকি জিনিসেরও আকাশ ছোয়া দাম। কিছু মিছু কেনার আশা বাদ দিয়ে টার্কিশ এয়ারলাইনের ইস্তানবুল গামী বিমানের অপেক্ষায় নষ্ট এসির সামনে বসে ঘামতে থাকলাম। আক্রা থেকে আবিদজান হয়ে ইস্তানবুল। ইস্তানবুলে পৌছাব সকাল ৯ টায়। গানায় এই সময়ে বেশ একটা অস্বস্তিকর গরম পরে।
নিজে নিজেই গজর গজর করলাম, ইস, এত গরম! কখন যে প্লেনে ঢুকব! আল্লাহ্‌ বোধহয় ঠিক করলেন গরমের হাত থেকে এই বেচারাকে মুক্তি দেয়া হোক। তাই ইস্তানবুলে ৪ ডিগ্রী বৃষ্টি সমেত আমার জন্যে অপেক্ষায় রইল। প্লেনে চেপে বসার পর কাপ্তান সাহেব এই সুসংবাদটি আমাকে দিলেন। আমার পড়নে একটি ফুলফাতা সার্ট শুধু! বাকি জামা কাপড় সমেত ব্যাগটা ঢাকার আগে পাব না। ইস্তানবুলে ১২ ঘণ্টার বিরতি; ঠাণ্ডার ভয়ে আমার গরম লেগে গেল আবার!

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০০
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×