somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াক-১৩০: ফ্লাইং আই ফোন!!

০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইয়াক-১৩০ রাশিয়ানদের তৈরি এক অনন্য প্রশিক্ষণ বিমান। রাশিয়ানদের দাবী, বর্তমান পৃথিবীতে এই গোত্রের বিমানের মধ্যে এটিই সেরা। এর বাড়তি সুবিধা হল এর বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ বহন ক্ষমতা; যেটি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রেও সমান অবদান রাখতে সক্ষম। রাশিয়ান বিমান মানেই হচ্ছে অসাধারণ ডিজাইন আর মাত্রারিক্ত ইঞ্জিন শক্তি। কিন্তু ইয়াক-১৩০ এর সাথে যোগ করেছে সর্বাধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি। রাশিয়ানরা এঁকে আদর করে ডাকে "ফ্লাইং আই ফোন"। বিমানের নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত উড্ডয়ন ব্যবস্থা, যাকে ইংরেজিতে বলে ফ্লাই বাই ওয়্যার সিস্টেম।



সিম্পল এবং ফ্লেক্সিবল

বিমানটির প্রস্তুতির কাজ শুরু হয় ১৯৮০ সালে। লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্রশিক্ষণ বিমান বানানো যেটি দিয়ে আধুনিক এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ বিমানের প্রশক্ষন দেয়া যায়। কিন্তু মাঝপথে থেমে যায় কাজ; সোভিয়েত ইউনিয়নে তখন ভাঙ্গন ধরেছে। স্নায়ু যুদ্ধের শেষে রাশিয়া আর ইতালির যৌথ প্রযোজনায় আবার এই বিমান বানাবার কাজ শুরু হয়; রাশিয়ানদের তখন অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। ৫০/৫০ শেয়ারে কাজ হচ্ছিল, যেখানে চুক্তি অনুযায়ী ইতালির দায়িত্ব ছিল বিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার আর সেটিকে বিশ্ববাজারে বিক্রি করার। কিন্তু রাশিয়ানদের ডিজাইন হাতে পেয়ে যাবার পর ইতালিয়ানরা চোখ উল্টায়, চুক্তি ভঙ্গ করে নিজেরাই বানিয়ে ফেলে একটি প্রশিক্ষণ বিমান; এম-৩৪৬।আবার আঁটকে যায় বিমান তৈরির কাজ। ২০০০ সালের পড়ে এসে ইয়াকোলভ এর ডিজাইনার আর ইরকুট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আবার কাজ শুরু হয়। ২০০৫ এর পর থেকে রাশিয়ানরা এই বিমান বাজারে ছাড়ে।



রাশিয়ানরা এঁকে ফ্লাইং আই ফোন বলার কারণ হচ্ছে আই ফোনের মতই এর ব্যবহার খুব সহজ এবং এর কম্পিউটার আকাশে বৈমানিকের অনেক কাজ কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে বৈমানিকের "পাইলটিং" দক্ষতার অনেক কাজ বিমানের ফ্লাই বাই ওয়্যার করে দিতে সক্ষম। যার ফলে জঙ্গি বৈমানিক তার আসল মিশনের দিকে বেশী মনঃসংযোগ করতে পারে।

এই বিমানটির আরেকটি অনন্য ব্যপার হল এর কম্পিউটার কে আকাশেই রি প্রোগ্রামিং করা যায়। যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের তিনটি বিমানের প্রশিক্ষণের প্রোফাইল সেট করা যায়। কখনও এটি সু-৩০ হিসেবে, কখনও সু-২৭ হিসেবে বা কখনও এফ-১৬ এর মত উড্ডয়ন করা যাবে। এবং এখানেই শেষ নয়। যেহেতু এটি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম, ভবিষ্যৎ যেকোনো বিমানের প্রোফাইল এতে সেট করে বৈমানিক কে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব।

রাশিয়ান অনন্য ডিজাইনের কারনে এই বিমান অনেক কম গতিতে নাক উঁচু অবস্থায় সোজা চলতে পারে। আকাশে তখন এটিকে দেখতে একটি ফণা তোলা সাপের মতন দেখায়। বর্তমান সময়ে আর কোন প্রশিক্ষণ বিমানের পক্ষে এটি করা সম্ভব হয়নি।



অস্ত্রশস্ত্র

প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এর ঈর্ষনীয় গোলাবারুদ বহন করার ক্ষমতা এঁকে লাইট গ্রাউন্ড এটাক বিমানের মর্যাদা দিয়েছে। ৯ টি হার্ড পয়েন্টে এটি ৬৬০০ পাউন্ড ওজনের গোলাবারুদ বহনে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণ যোগ্য গাইডেড মিসাইল, টিভি গাইডেড বম্ব, বিশাল এস-২৫ রকেট, এবং আরও অনেক কম্বিনেশনের অস্ত্রশস্ত্র।



সবচাইতে ভাল খবর হচ্ছে, এই বিমান উড্ডয়ন খরচ আর ব্যবহার উপযোগিতার বিচারে অনেক এগিয়ে এর সমসাময়িকদের চেয়ে। এর জন্যে যেহেতু আলাদা করে কোন ইন্সটলেশন দরকার পরেনা তাই এটি সাধাসিধে যেকোন বিমানবন্দর আর রানওয়ে থেকে অপারেশন চালাতে সক্ষম।

বর্তমানে রাশিয়ান এয়ার ফোর্সের সকল বিমানের প্রশিক্ষনে ব্যবহার করা হচ্ছে এই ইয়াক-১৩০। এর ফলে প্রশিক্ষণের খরচ কমেছে তাদের, কিন্তু প্রশিক্ষণের মানের সাথে কোন বোঝাপড়া করতে হয় নি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনিতেও অতি শীঘ্রই যোগ হতে যাচ্ছে এই বিমানটি।



ইয়াক-১৩০ এর উপর নির্মিত একটি ভিডিও


(এটি কোন বিজ্ঞাপন পোস্ট নয়)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×