১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইসিয়ানা রাজ্য ক্রয় করে। লুইসিয়ানা রাজ্যের আয়তন ছিল ৮,২৮,০০০ বর্গ মাইল। নেপোলিয়ান ১৫ মিলিয়ন ডলারে লুইসিয়ানা বিক্রি করতে রাজি হয়। এই রাজ্য ক্রয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আয়তন দ্বিগুণ হয়ে যায়। লুইসিয়ানা রাজ্যের সীমানা ছিল পূর্বে মিসিসিপি নদী, পশ্চিমে রকি পর্বতমালা, দক্ষিণে মক্সিকো উপসাগর, এবং উত্তরে কানাডা। ফরাসিদের কাছ থেকে এই ভূখণ্ড কেনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে সীমানা বিস্তার সহজ হয়ে যায়। ১৮১২ সালে লুইসিয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের ১৮শ তম রাজ্য হিসাবে যুক্ত হয়।
লুইসিয়ানা ক্রয়ের পটভূমি
সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে ফ্রান্স মিসিসিপি নদীবিধৌত উপত্যকার সন্ধান পায়। তারা এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন ভাবে বসতি স্থাপন করতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্টের অধিকাংশ এলাকা ফ্রান্সের দখলে ছিল। অন্যকোনো ইউরোপিয়ান শক্তির দখলে এত এলাকা ছিলোনা।
১৭৬২ সালে ফরাসি এবং রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে যোদ্ধের (১৭৫৪-১৭৬৩) সময় ফরাসীরা মিসিসিপি নদীর পশ্চিমদিক অর্থাদ ফ্রেঞ্চ লুইসিয়ানা স্পেনের কাছে সমর্পন করতে বাধ্য হয় এবং ফরাসিদের দখলে থাকা উত্তর আমেরিকার অবশিষ্ট ভূখণ্ড ১৭৬৩ সালে গ্রেট ব্রিটেনের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।
ব্রিটিশ নৌবাহিনী স্পেনের মূল ভূখণ্ডের সাথে আমেরিকার নৌপথকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে আমেরিকাতে স্পেনের শক্তি খর্ব হয়ে যায়। ফরাসিদের কাছ থেকে লুইসিয়ানা দখল করলেও স্পেনের পক্ষে তিন দশক ধরে এর কোনো উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।
১৮০১ সালে স্পেন এক গোপন চুক্তির মাধ্যমে লুইসিয়ানা আবার ফরাসিদের কাছে ফেরত দেয়। এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। কারণ ওই সময়ে ওহিও নদী ও টেনেসি নদীর মধ্যবর্তী উপত্যকায় আমেরিকা পশ্চিমদিকে তার সীমানা বিস্তার করছিলো। ওই এলাকার বসতি স্থাপনকারীদের জন্য মিসিসিপি নদী ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। তা ছাড়া নিউ অরলিন্স বন্দর ছিলি কৌশলগত ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল যে, নেপোলিয়ান বোনাপার্টের (১৭৬৯-১৮২১) নেতৃত্বাধীন ফরাসি বাহিনী আবারো উজ্জীবিত হয়ে মিসিসিপি নদী এবং মক্সিকো উপসাগরে আধিপত্য বিস্তার করবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬) তার ফরাসী বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট লিভিংস্টোন (১৭৪৬-১৮১৩) কে নির্দেশ দেন ফরাসি মন্ত্রী চার্লস মাউরিস দে টেলিরেন্ড (১৭৫৪-১৮৩৮) এর সাথে নিউ অরলিন্স কেনার ব্যাপারে আলোচনা করতে।