আব্রাহাম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬শ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ১৮৬১ সালে। তার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচন আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পিছনে চূড়ান্ত কারণ বলে মনে করা হয়। কারণ লিংকন মনে করতেন, যে রাজ্যগুলিতে ইতোমধ্যে দাসপ্রথা প্রচলিত আছে সেখান থেকে তা বিলুপ্ত করার ক্ষমতা তার নেই। তবে ভবিষ্যতে নতুন কোনো রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলে, সে রাজ্যকে অবশ্যই দাস মুক্ত হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো এলাকায় দাসপ্রথা প্রচলন করা যাবে না। তার এই নীতির ফলাফল হবে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত রাজ্যের সংখ্যা দাস রাজ্য থেকে বেশী হয়ে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে ও ক্ষমতার প্রয়োগে মুক্ত রাজ্যগুলির শক্তি ও প্রভাব দাস রাজ্য থেকে বেশি হবে। নির্বাচনের পরপরই অর্থাৎ ১৮৬০ সালের ২০ ডিসেম্বর সাউথ ক্যারোলিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যায়। ১৮৬১ সালের শুরুতেই মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, এলাবামা, জর্জিয়া, লুইসিয়ানা এবং টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যায়। বেড়িয়ে যাওয়া রাজ্যগুলি ১৮৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী একত্রিত হয়ে কনফেডারেট স্টেটস অফ আমেরিকা নামে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে। জেফারসন ডেভিস এই কনফেডারেটের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন।
যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল। সাউথ ক্যারোলিনার চার্লস্টনে অবস্থিত সামটার দুর্গ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটা শক্ত ঘাঁটি। মেজর রবার্ট অ্যান্ডার্সন এই দুর্গের অধিপতি ছিলেন। ১২ এপ্রিল কনফেডারেট জেনারেল পিয়ের গুস্তাভ টউটেন্ট-বিওরিগার্ড যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দেশ দেন, যুক্তরাষ্ট্র যাতে অবিলম্বে দুর্গ তাদের দখলে ছেড়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এই নির্দেশ প্রত্যখ্যান করলে ওই দিনেই দক্ষিণাঞ্চলীয় গুলোন্দাজ বাহিনী দুর্গের উপর গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। পরের দিন সামটার দুর্গের পতন ঘটে, সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে। তবে তাদেরকে বন্দী না করে দুর্গ ছেড়ে উত্তরাঞ্চলে চলে যেতে দেয়া হয়। এই ঘটনার পরেই উভয় পক্ষ যুদ্ধের জন্য সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। সামটার দুর্গের পতনের পর, ১৮৬১ সাকের ৬ মে আরকানসাস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যায়। এর পরপরই টেনেসি এবং নর্থ ক্যারোলিনা বের হয়ে যায়।
এতগুলি রাজ্য বের হয়ে যাওয়ার পরও উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি জনসংখ্যা, সৈন্যসংখ্যা, অর্থনীতি সব দিক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে এগিয়ে ছিল। তাছাড়া উত্তরাঞ্চল ইতোমধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। শতকরা ৯০ ভাগ কলকারখানা উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ছিল। অপরদিকে দখনাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি তখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে মাত্র সাড়ে পঞ্চাশ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ এবং সাড়ে ত্রিশ লক্ষ দাস বসবাস করতো। তাছাড়াও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে চরম অনৈক্য বিরাজ করছিলো। দক্ষিণের প্রতিটা রাজ্য নিজেদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন মনে করতো, ফলে কনফেডারেশন তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।
এতকিছুর পর যুদ্ধের শুরুতে কনফেডারেশন অনেকগুলি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে উপর বিজয়ী হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৩