somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বউ আর আমার ফুটবল খেলাB-)

২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফুটবল খেলা আমার বউ এবং আমার দুজনের খুব পছন্দ। খেলাধূলাপ্রেমী মেয়ে আগে তেমন একটা দেখা যেত না। আজকাল মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে রেসলিং পর্যন্ত বুঝতে শিখেছে। অবস্থা এমন যে সুযোগ পেলে ঘরে – বাইরে খেলতে শুরু করে দেয়।:|


ভাল কথা। খেলাধূলায় আমার কোন না নাই, বরং মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহ। সমস্যা অন্যখানে। এবং গুরুতর সমস্যা। আগে জানলে বিয়েই করতাম না, ধুরো। বউ আমার কট্টর ব্রাজিল সমর্থক। আর আমি জন্ম থেকে আর্জেন্টিনা। এবার বাছাই পর্বে আমার করুন দশা দেখে বউ বলে, “আহারে আমার সোনা, বুকে আসো।” মেজাজ কেমন লাগে! X(


তারপর কোনরকমে চান্স পেয়ে গেলাম। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা না থাকলে কেমন হত ভাবলে আতংকে গা শিউরে ওঠে। যাক এখন মাথা ঠান্ডা।
এক রাতে আদর সোহাগের মধুর পর্যায়ে বউকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি ব্রাজিল করো কোন দুঃখে? ওদের বেশীরভাগ খেলোয়াড় দেখতে খুব বাজে।”:D

মেয়েদের আমি যতটুকু জানি, তারা দলের থেকে সুন্দর খেলোয়াড়দের প্রতি অধিক আকৃষ্ট থাকে। এই কারনে ইটালী, আর্জেন্টিনার মেয়েভক্ত তুলনামূলক ভাবে বেশী।
বউ আদর করে বলে, “দেখো চেহারা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নাই। তাইতো তোমার ঘর করি। আমার প্রিয় খেলোয়াড় রোনালদিনহো। তারে এবার ডুঙ্গা নেয় নাই দেখে খুব খারাপ লাগতেসে।”
বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে কষ্ট শেয়ার করতে চায়। আমার কেমন জানি অস্বস্তি লাগে। :||


রাতে ভাল ঘুম হয় না। সকালে অফিস যাবার আগে অভ্যেস মত একবার আয়নার সামনে দাঁড়াই। ভুত দেখার মত চমকে উঠি। দাঁত বের করে হাসছে রোনালদিনহো।:-*
মাথা থেকে দুশ্চিন্তা ঝেটিয়ে বিদায় করি। বিশ্বকাপে মেসি ছাড়া কেউ নাই, কেউ নাই। বউ এর আমার দলে আসতে সময় লাগবে না। আর মাত্র কয় দিন। মেসিডোনা শুরু হলো বলে।


সপ্তাহশেষের ছুটিতে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ী যাই। দুপুরের খানাপিনার পরে ড্রয়িংরুমে শ্বশুরমশাই গল্প শুরু করেন আমার সাথে। এই ভদ্রলোক কখনো বুঝতে চান না, আমি গল্প করতে আসছি আমার একমাত্র শ্যালিকার সাথে, উনার সাথে না। অযথা এই প্যাচাল সেই প্যাচাল শেষে আসল বিশ্বকাপ।

“বুঝলা বাবা, রোনালদোর চেয়ে বড় কোন প্লেয়ারই নাই। আহ, কি সব গোল। এখনো চোখে লেগে আছে।”
আমি জিজ্ঞেস করি, “কোন রোনালদো?”
চশমার ভেতর থেকে চোখ বড় বড় করে তিনি বললেন, “তুমি ব্রাজিলের সাপোর্টার না?”
মিষ্টি হেসে বলি, “জ্বী না বাবা, আমি আর্জেন্টাইন সমর্থক। আমার দেখা সেরা খেলোয়াড় মেসি। আপনি কি ব্রাজিল সাপোর্ট করেন?”
শ্বশুরমশাই আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না, রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। হাসিমুখে আমি দুইবোনের রুমের দিকে অগ্রসর হই।:)


আস্তে আস্তে বুঝলাম ঘটনা বিস্তারিত। বাপের ব্রাজিল্প্রেম মেয়েদের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। না বুঝে না শুনে এরা অন্ধকারে পতিত হয়েছে। এখন মেসি দুনিয়া উলটানো খেলা খেললেও তাদের মন ভরবে না। আর এখানেই শেষ নয়। শ্বশুরমশাই পুরোদমে এন্টি-আর্জেন্টিনা, সেই সাথে সাথে আমার বউ। আমি অবশ্য এন্টি-ব্রাজিল ছিলাম না। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ব্রাজিল সাপোর্টারদের কাছে পঁচানি খেতে খেতে মন বিষিয়ে গেছে। এখন ব্রাজিল দুচোক্ষে দেখতে পারি না। হায় খোদা, ব্রাজিলের মেয়ে জুটাইলা আমার কপালে! মন চায় আর্জেন্টিনা চলে যাই, সেখানের কোন এক রমনীকে বিবাহ করে সুখে শান্তিতে ফুটবল খেলি।;)


নাহ, এত সহজে ছেড়ে দিলে হবে না। বিগ ম্যাচে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে। দুর্দান্ত ট্যাকটিকস খাটাতে হবে। আমি কোন ছাড় দিব না। অফিস থেকে ফেরার পথে স্টান্ডার্ড মাপের একটা আর্জেন্টিনার পতাকা কিনে বাসায় ফিরি। বউ এর সাথে আহ্লাদ করার আগে, কোনকথা বলার আগে বারান্দার বাইরে পতাকা উড়িয়ে দেই। তারপর সন্ধ্যা শেষ হয়, রাত বাড়ে। বউ কোন কথা বলে না। আমি ফেইসবুক, ব্লগ আরো নানাবিধ দরকারী বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি। বউকে এত পাত্তা দেয়ার কি আছে? রাতে তো তাকে আমার কাছে আসতেই হবে।:P


সে পাশ ফিরে শুয়েছিল। আমি আলতো করে ফেরালাম। চাঁদের আলো পড়েছে অনিন্দ্য সুন্দর মুখটায়। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
- আমার ব্রাজিলের ফ্লাগ কই?
- ব্রাজিলের ফ্লাগ আমি কই পাবো, লক্ষ্মী! (আমার আহ্লাদ)
- শোনো, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? (বউ গম্ভীর)
- এটা তুমি কি বলো, জান!
- তাহলে তুমি অবশ্যই কালকে একটা ব্রাজিলের ফ্লাগ আর জার্সি কিনে নিয়ে আসবা। মনে থাকবে?
কোন উত্তর দেই না। এ অসম্ভব! আমার বারান্দায় উড়বে ব্রাজিলের পতাকা? তার আগে আমার মরণ ভাল।
“আচ্ছা লক্ষ্মী, ঠিক আছে।” ক্লোজ হবার চেষ্টা করি। ব্রাজিল ভুলিয়ে দিবো ভালোবাসা দিয়ে।
কিন্তু বউ সিরিয়াস। “তুমি আগে কিনে নিয়ে আসো। তার আগে চান্স নাই। গুড নাইট, সোনা।”
টেনশনে আমার মাথার চুল যে কয়টা অবশিষ্ট আছে টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। এখন আমি কি করবো? বউ আগে না ফুটবল আগে!/:)


যথাসময়ে বিশ্বকাপ শুরু হলো। দ্বিতীয় দিনেই আর্জেন্টিনার খেলা। জার্সি গায়ে দিয়ে রুচি চানাচুর মাখা মুড়ি নিয়ে বসে পড়ি, “কই আসো, খেলা শুরু হয়ে গেল জান।”
মেসি মাঠে নামার আগে আচমকা আমার মাথা ঘুড়ে গেল। কোন এক সহাস্য ব্রাজিলিয়ান দেবী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে, “আমাকে কেমন লাগছে?”
সত্যি বলতে কি, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে বউকে। ক্যাটকেটে হলুদ রঙের সবকিছু আমার দুচোখের বিষ। আজ সব এলোমেলো হয়ে গেল। আমি কিছু বলি না। চুপচাপ চেয়ে থাকি।
দেবী হাসে, “কি কিছু বলো না কেন? তুমি আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দিয়ে থাকবা আর আমি বসে বসে তোমাকে দেখবো তা হবে না।”
খেলা শুরু হয়। একটা গোল হয়ে যায়। আমার মনে বসে না সেদিকে। আমার তখন অন্য কিছু খেলতে খুব করে ইচ্ছে করে। :#>


ব্রাজিলের খেলা শুরু হলো রাতে। ভোরবেলা অফিস। আমার খালি ঘুম পায়। তবু বউকে রেখে তো ঘুমানো যাবে না। অগত্যা রাত জেগে ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা উপভোগ(!) করি। আমার জন্য চূড়ান্ত বোরিং। কারন এসময় সে থাকে মহা টেনশনে। তাই সম্পূর্ন টাচ ফ্রি থাকতে পছন্দ করে। /:)


প্রথমদিনের খেলা নিয়ে দুজন দুজনকে পঁচাই। আমরা নিজেরাও নিজেদের খেলায় তুষ্ট না। পঁচায়ে তেমন আরাম পাই না। উলটো সাউথ কোরিয়ার সাথে আর্জন্টিনার খেলা কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে শুরু করি। সব শংকা কাটায়া গোল, গোলের পর গোল। ছোট ভাইরে সাথে নিয়ে উল্লাস শুরু করি। বউ দেখি চুপচাপ বিশেষজ্ঞের মতন খেলা দেখতেছে। হঠাত একটা গোল দিয়ে দিল কোরিয়া। মেজাজ চরম খারাপ। ডিফেন্সের হাবলামি ভুলে গোল। এদিকে আমার বাসার মধ্যেই আমাদের কাজের ছেলে গোল গোল করে চিৎকার করতেসে।
- কিরে বেকুব, তুই লাফাস কেন?
- ভাইয়া, আমি আফামনির দলে।
বউ দেখি অন্যদিকে তাকায়া মুচকি হাসে। বুঝলাম সে চিল্লানোর জন্য লোক ভাড়া করে রাখসে। হায়রে, খেলা পারে না অথচ এদের টেকনিকের শেষ নাই।X((


ইতিমধ্যে বউ ঘোষনা দিয়ে দিয়েছে, আমার বাসায় দুইখানা পতাকা পাশাপাশি পতপত করে উড়লেও তার নাকি এটা শত্রুশিবির মনে হয়। সুতরাং ব্রাজিল ফাইনালে উঠলে সে নিজ গৃহে বসে ফাইনাল খেলা দেখবে। আর সেই সাথে আমাকে তাদের বাসায় খেলা উপভোগ করার নিমন্ত্রন।
আমি ও বলে দিয়েছি, “আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলে তোমাকে একটা স্পেশাল গিফট দিবো।”

কি দিবো এখনো অবশ্য ঠিক করি নাই, আগে বিশ্বকাপটা জিতে নেই। সময়ে দেখা যাবে।B-)

(কল্পিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:৫২
৬২টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×