১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিশেষ কায়দায় মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে তাঁকে ‘দরবেশ’ বানানোর চেষ্টায় যে ধারাবাহিক নাটক রচিত হয়েছিল, দীর্ঘ ৩২ বছর পর বেগম খালেদা জিয়া সেই নাটকের দ্বিতীয় পর্বের মহড়া শুরু করলেন নিজেকে ‘সৎ’ প্রমাণের অপচেষ্টা হিসেবে বাড়ী ভাড়া দিতে অপারগ প্রচার করার মধ্য দিয়ে। অথচ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, মানুষ যখন না খেয়ে মারা যাচ্ছিল, ঠিক সময়ে জেনারেল জিয়া ঢাকায় ১০ কাটা জমি কিনেছিলেন। পরে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর পরই এরশাদের মন্ত্রিসভা গুলশান এভিনূতে ১ বিঘার বেশী জমির উপর নির্মিত ১৯৬ প্লটে একটি বাড়ী বেগম খালেদা জিয়াকে নাম মাত্র মূল্যে (মাত্র ১ টাকায়) উপহার দিয়েছিলেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ বাড়ীটি বেগম জিয়া আমেরিকান টোব্যাকো কেম্পানীর এমডি’র কাছে মাসে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে আদালতের নির্দেশে বেগম জিয়া ব্যাংক থেকে মাসে আড়াই লক্ষ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এদিকে তাঁর ছেলেদের টিভি চ্যানেলসহ ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ওয়ান ইলেভেন-এর সময় তিনি ও তাঁর ছেলেদ্বয় প্রচুর কালো টাকা সাদা করেছে বলে এনবিআর এর কাছে সুনিদিষ্ট তথ্য রয়েছে। এছাড়া, ২০১০ সালে সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ী উচ্ছেদ হওয়ার সময় তাঁর অগণিত দামী আসবাবপত্র, স্বর্ণ ও হীরার অলংকার ও দামী শাড়ীসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির বাহারের চিত্র সবাই দেখেছে। তাঁর এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি নাকি টাকার অভাবে বাড়ী ভাড়া দিতে পারছেন না (!) আসলে প্রকৃত সত্যটি হচ্ছে, ‘‘বেগম জিয়া বর্তমানে যে বাড়ীটিতে ভাড়া আছেন বলে প্রচার করছেন সেই বাড়ীটির মালিক তাঁর দলেরই সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত মেজর (অবঃ) কামরুল ইসলাম, যিনি পুনরায় তার প্রিয়নেত্রীর আস্থাভাজন এবং সুনজর ও আশীর্বাদ পাওয়ার প্রচেষ্টায় তাঁর কাছ থেকে কোন ভাড়াই নিচ্ছেন না’’। ভাড়াবিহীন বাড়ীতে থেকে বেগম জিয়ার ভাড়া দিতে না পারার এ কেমন নাটক। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বলা হয়েছিল তিনি নাকি ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই রেখে যাননি। পরে দেখা গেল কোকো-১,২,৩ নামক বিলাস বহুল স্টিমার ও ডান্ডি ডায়িং নামক ইন্ডাস্ট্রিসহ আরো কত কিছু (!) বেগম খালেদা জিয়াও কি তাহলে জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে নিঃস্ব ও সম্পদহীন উল্লেখ করে অপপ্রচারের মাধ্যমে নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা প্রমাণ করতে চাইছেন ? এ যেন জিয়াকে নিয়ে রচিত সেই নাটকের দ্বিতীয় পর্বের, দ্বিতীয় অংক (!) যদি তাই হয়, তাহলে তাঁর ও তাঁর সন্তানদের উপার্জিত প্রকাশিত ও অপ্রকাশ্য এত টাকা তিনি কোথায় খরচ করেন ? বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তাঁর ব্যবহƒত প্রতিটি শাড়ীর প্রতি মিটারের মূল্য কমপক্ষে ৫০০ ইউএস ডলার অর্থ্যাৎ একটি শাড়ীর মূল্য প্রায় ০৫ লক্ষ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর এক সহচরীর মাধ্যমে জানা যায় যে, তাঁর সাজ-সজ্জা বাবদ প্রতি মাসে খরচ হয় কমপক্ষে ৩/৪ লক্ষ টাকা । তাহলে কি তিনি তাঁর আয়ের টাকা নিজের বেশ-বিলাসিতায় খরচ করে জনগণের কাছে ভাল মানুষ সাজতে চাচ্ছেন ? বেগম জিয়াকে মনে রাখতে হবে, ‘‘শীতের তীব্রতা আর বসন্তের কোকিলকে ইচ্ছে করলেই আড়াল কওে রাখা যায় না’’। তবে তিনি এসব প্রবাদ বাক্যের মর্মকথাই বা বুঝবেন কিভাবে ? তাঁর সারা জীবনতো দামী পোশাক-আশাক ও বেশ-ভূষতেই পার করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, তাঁর দুই ছেলেতো মাশাল্লাহ্ কুতুব আলী ডাক্তারের মত, যাদের কোন শিক্ষাগত ডিগ্রী নেই অথচ অসৎ উপার্জনের পদক আছে অনেক গুলো। এতদসত্ত্বেও, এরশাদ সরকার সে সময় তাঁর স্বভাবগুনে বেগম খালেদা জিয়ার মায়া কান্না দেখে বিগলিত হয়ে সরকারের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে গুলশানের জমিটি তাঁর দুই ছেলের পড়াশুনার খরচ হিসেবে তাকে উপঢৌকন দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ধারাবাহিক নাটকের দ্বিতীয় পর্বের ১ম অংকে হঠাৎ করে জিয়া পরিবারের মা-ছেলে কোথা থেকে জাদুকরী কায়দায় প্রকাশ করলেন জিয়া বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি (!) সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর সুযোগ্য ছেলে তারেক রহমানের নানামুখী উন্মাদনা দেখে জনগণের মনে প্রশ্ন জাগছে যে, এই ধারাবাহিক নাটকের শেষ পর্ব কোন নতুন চমকে আবার রচিত হবে ? আদৌ কি রচিত হবে, নাকি মা-ছেলের ইতিহাস বিকৃতি ও মায়াকান্না প্রচেষ্টার নাটক চলতেই থাকবে ? এসব সাজানো নাটক নয়, দেশের নতুন প্রজন্ম যে সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষেই অবস্থান নিবে-সে নিগুঢ় সত্যটি বেগম জিয়া ও তাঁর সুযোগ্য পুত্রের অন্তঃত এ সময়ে উপলদ্ধি করা উচিত। সার্বিক বিবেচনায় দেরীতে হলেও জিয়া পরিবারের পরিশুদ্ধি ঘটুক এবং তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এটাই প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০০