somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এর চরণের ধুলা লাভ!

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ,

পৃথিবী নামক গ্রহে আজ আপনার ৭৫ তম আগমন বার্ষিকী। এই গ্রহটিকে যাঁরা সত্যের আলোয় আলোকিত করেছেন তাদের মধ্যে আপনি একজন। পত্রের শুরুতে আপনার আগমন বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

আপনি ছিলেন আকাশের চাঁদের মত। আমি ছিলাম একজন বামন মানুষ। তাই বামন হয়ে আপনাকে স্পর্শ করার সাহস কখনোই পাইনি। আর আপনি যখন ঢাকা কলেজের শিক্ষক ছিলেন তখন আমার জন্মই হয়নি। তাই আপনার শ্রুতিমধুর ক্লাস করার অভিজ্ঞতা আমার কখনোই হয়নি। যখন কারো মুখে আপনার ক্লাসের অভিজ্ঞতা শুনতাম তখন মনযোগের সাথে সেই কথা শুনতাম আর একটা অতৃপ্তির ঢেকুর তুলতাম। আপনি হলেন আকাশের চাঁদ। আমার মত বামন হয়ত আপনার চরণের ধুলা কখনো হয়ত নিতে পারবে না। কিন্তু আপনি আমাদের শিখিয়েছেন- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি।

আপনার চরণের ধুলা নেবার স্বপ্ন আমার খুব ছিল। সেই স্বপ্ন পুরণ হয় ২০১১ সালে। আপনি শুধু চরণের ধুলা দিয়েই শান্ত হোননি আমাকে দিয়েছেন অনেক উৎসাহ ও সাহস। আপনার সেই সাহস পেয়ে এখনো সামনের চলার বন্ধুর পথ অতিক্রম করার সাহস পাচ্ছি।
আমি অজপাড়া গায়ের এক স্কুলে পড়েছি। সেখানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ি পৌঁছাত না। স্কুলে থাকতে আপনার আলোক বার্তা না পেলেও আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, স্কুল থাকতেই আমার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। প্রতিদিন রাতে কোন বই না পড়ে ঘুমালে আমার ঘুম আসত না। আমি গরীব ঘরের সন্তান। আমার এত সামর্থ্য ছিল না বই কেনার। এলাকার বড় ভাইদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে বই পড়তাম।

যখন কলেজে উঠলাম তখন আপনার কথা জানলাম। আপনার বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের কথা জানলাম। কলেজে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে আমার এক বন্ধু ছিল। সেই বন্ধু কথায় কথায় আপনার উদ্ধৃতি দিত। আর সে আপনার অনেক ভক্ত ছিল। তার মুখ থেকেই আপনার কথা জেনেছিলাম। তখন শুধু আফসোস হত যদি স্কুলে থাকাকালীন আপনার আলোর গাড়ির দেখা পেতাম তাহলে আমি আরও আলোকিত হতাম। কলেজে থাকতে আমি প্রথম আপনার আলোর গাড়ির সন্ধান পাই এবং সেই আলোর গাড়ির একজন সদস্য হই। আপনাকে কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। আমার এক সহপাঠী বলেছিল শুক্রবার বাংলামটরের আপনাদের কার্যালয়ে গেলে আপনার দেখা মিলবে। তখন আমার পৃথিবী ছিল ছোট। কুয়োর ব্যাঙ এর মত ছিলাম। সেই কুয়ো থেকে বের হয়ে আপনার কাছে যাওয়া ছিল আমার কাছে মাছ হয়ে ডাঙ্গায় উঠার মত। আপনার চরণের ধুলা নেবার ইচ্ছা থাকলেও সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। টেলিভিশনের পর্দায় আপনাকে যখন দেখতাম তখন এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকতাম। ২০১১ সালে আমি আপনার প্রথম চরণের ধুলা নেবার সুযোগ পাই। সেই গল্প আপনাকে একটু বলি। সেই ঘটনা আপনি হয়ত ভুলে গেছেন কিন্তু আমার পরিষ্কার মনে আছে।


২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে বামন হয়েও চাঁদের সাথে ঘর সংসার করার স্বপ্ন দেখা যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কাজ করতাম। এখন সবাই ভালো কাজ বলে তবে যখন শুরু করেছিলাম তখন সবাই টিটকারী করত। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে এবং বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া লোকছড়াগুলো সংগ্রহ করতাম। আমার এই লোকছড়া সংগ্রহ নিয়ে ২০১১ সালে চ্যানেল আইতে রিয়েলিটি শোতে অংশ নেবার সুযোগ পাই। হারিয়ে দাও ছাড়িয়ে যাও ভালো কাজে এই স্লোগানকে সামনে রেখে চ্যানেল আই শুরু করেছিল ‘ক্যাম্পাস হিরো’ নামে একটি রিয়েলিটি শো। এই অনুষ্ঠানে আপনি প্রধান বিচারক ছিলেন। যখন আমাদের ফাইনাল অনুষ্ঠান হয় তখন আপনি এসেছিলেন। আমি আপনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই। আমাদের সংগঠন লোরক থেকে প্রকাশিত সাময়িকী ‘মাচাঙ’ আপনার হাতে দিয়েছিলাম। আপনি সেই সাময়িকী দেখে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। আপনাকে বিভিন্ন মানুষের বঞ্চনার কথা বলেছিলাম। তখন আপনি সাহস দিয়ে বলেছিলেন- 'যারা বঞ্চনা বা টিটকারী করে তাদের মধ্যে কিছু নেই বা তারা কিছু করতে পারে না দেখে টিটকারী করে।' আপনি আমাকে আরও বলেছিলেন- 'দুঃসময়ে যারা টিকে থাকতে পারে সুসময়ে তারাই রাজত্ব করে।'

আমি আপনার সেদিন চরণের ধুলা নিয়েছিলাম। আপনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন এই বামনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। আপনি স্যার এই বামনের জন্য দোয়া করবেন- আপনি যে আলোর মশাল হাতে নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেই মশালের উত্তরাধিকারী যেন হতে পারি। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন- আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য হলেও যখনই শুনি কেউ পাঠাগার দিচ্ছে তার গ্রামে আমি তখন আমার সাধ্যমত বই দিয়ে এগিয়ে আসি অথবা বই সংগ্রহ করে দেই।

আপনার এই আগমন বার্ষিকীতে আমার একটাই প্রার্থণা- আপনি শতায়ু হোন। আমাদেরকে আরও দীর্ঘদিন আলোকিত করে যান।
ইতি
আপনার একজন ভক্ত
আলামিন মোহাম্মদ
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×