somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়ো-মেডিকেল পরীক্ষা বনাম পর্যটন শিল্প বিকাশে বানরের অবদান সম্ভাবনায় থাইল্যান্ডের বানর ভোজ উৎসবের উদাহরণ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত ১৯ শে নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সামুর পাতায় দেখা রাজবন বিহারের বান্দরগুলু দেখে বানরের বিষয়ে বেশ কৌতুহলী হয়ে পড়ি । পোস্ট এর ছবি, বিবরণ ও লিংকে থাকা অন্য পোস্টের বানরগুলিকেও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করি । খোলামেলা জায়গায় বানরদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা , চিত্তাকর্ষক অঙ্গভঙ্গী ও দর্শককে আনন্দ দেয়ার ক্ষমতা দেখে খুবই আনন্দ অনুভব করি । তবে অন্যত্র গবেষনা লেবে খাচায় বন্ধী অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের মারাত্বক ঝুকী পুর্ণ বায়ো –মেডিকেল পরীক্ষার কাজে বানরদেরকে ব্যবহারের কথাটি মনে বেজে উঠে । মনের ভিতর একটি অনুভুতি কাজ করতে থাকে ,এই প্রানোচ্ছল জীবগুলি যারা বিভিন্ন ধরনের মনোমুদ্ধকর আচরণ ও অঙ্গভঙ্গী দিয়ে মানুষকে দিতে পারে নির্মল বিনোদন, তারা কেন অনৈতিকভাবে এত নির্মম জীবনঘাতিমুলক ঝুকিপুর্ণ বায়ো-মেডিকেল গবেষনার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিবে জীবন। বানরের ছবি ও বিবরণ দেখে দেশের পর্যটন শিল্পে তাদের মুল্যবান অবদান রাখার সম্ভাবনা সস্পর্কে একটি অনুভুতি কাজ করতে থাকে দারুনভাবে । সে অনুভুতির প্রেক্ষিতে বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষা কর্ম বনাম পর্যটনে বানরের অবদান সম্ভাবনা বিষয়ে আমার অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পাওয়া কিছু বিষয়াবলীকে সামুর ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করার মানসেই এই পোস্ট । তাই লিখাটি শুরুর পুর্বে মুল্যবান তথ্য ও অনুভুতি জাগানিয়া বানরের মনোমুগ্ধকর ছবি দিয়ে এ বিষয়ে কৌতুহলী হতে সহায়তা করার জন্য পোস্টদাতা সুপ্রিয় সহ ব্লগারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।

বন্য প্রাণীর মধ্যে যে প্রজাতির প্রাণী আমরা সচরাচর বেশী দেখতে পাই তার মধ্যে বানর একটি। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমরা এই বানর প্রজাতিকে নানা ভাবে বিলুপ্তির দিকেই ঠেলে দিচ্ছি । কখনও উচুস্তরের বিজ্ঞানীরা তাদের ব্যবহার করছে বায়ো-মেডিকেল গবেষনার অজুহাতে, কখনো আবার দরিদ্র মানুষেরা তাদেরকে ব্যবহার করছে দৈনন্দিন জীবিকা অর্জনের নিমিত্তে ।

আমরা সকলেই জানি বানর, বান্দর বা বাঁদর এক প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। অনুমান করা হয় বানরের উৎপত্তি সুদূর ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে। মানুষের বিবর্তনে বানরকে নিয়ে ডারউউন এর আলোচনার দিকে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করছিনা বিধায় এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা হলোনা । তবে বানর বুদ্ধিমান জীব ; অধিকাংশ প্রজাতিই গাছে বাস করে। নিরামিষভোজী হলেও এদের বাসস্থান ও খাদ্যে পর্যাপ্ত বৈচিত্র্যতা আছে। পাইরেট পরিবারভুক্ত বানরের মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৬ প্রজাতির বানর। বানরের প্রজাতিগুলি হচ্ছে: রেসাস বানর, খাটোলেজি বানর, আসামি বানর, প্যারাইল্লা বা লম্বালেজী বানর, লজ্জাবতী বানর , মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান ।

বিভিন্ন প্রজাতির বানরের সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণ দিয়ে আমরা ফিরে যাব মুল আলোচনা পর্বে ।

রেসাস বানর

রেসাস বানর বা লাল বান্দর যার বৈজ্ঞানিক নাম Macaca mulatta । বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানরবিশেষ। এ প্রজাতির বানরটি আইইউসিএন লাল তালিকায় ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত । বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংখ্যায় এর বিস্তৃতি আছে এবং বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশও বিদ্যমান। এরা মানব বসতির কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে। লাল বান্দর জটিল মানসিক সক্ষমতার অধিকারী। বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে তারা নিজস্ব মানসিক রাজ্যে বিচরণ করতে সক্ষম। লাল বান্দর দ্বি-চারী প্রাণী হিসেবে বৃক্ষ এবং ভূমি - উভয় স্থানেই চলাচল করতে পারে। এরা মানুষের ন্যায় কিছুটা হাঁটতেও পারে। এরা প্রধানতঃ গাছের ফল খায়। এছাড়াও এদের খাদ্য তালিকায় বীজ, শিকড়, গাছের ছালও রয়েছে। গাছের পাতায় প্রাপ্ত শিশিরকণা ও বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করে। ঘাস ফড়িং, পিঁপড়াও এদের শিকারের অন্তর্ভুক্ত। লাল বান্দর কলহ প্রিয় জাতি। দলের প্রধান পুরুষ বানর অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মত খক খক শব্দ করে ডাকে। তীব্র চিৎকার ও দাঁত বের করে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দেয়।
ছবি-২/৩৩ : রেসাস বানর , বুদ্ধিতে প্রখর



খাটোলেজি বানর

খাটোলেজি বানর বা ছোটলেজী বানরের বৈজ্ঞানিক নাম Macaca arctoides । এটা দক্ষিণ এশিয়ার ম্যাকাকু গণের একটি বানর প্রজাতি। খাটোলেজি বানর আইইউসিএন লাল তালিকায় সংকটাপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত । বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত । খাটোলেজি বানর বিভিন্ন ধরনের বনে বাস করে এবং কদাচিৎ মানব বসতির ধারে থাকে।। মাঝে মাঝে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জুম ক্ষেতে দেখা যায়, তবে এরা গহীন বনে থাকতেই পছন্দ করে।
ছবি-৩/৩৩ : খাটোলেজি বানর , চোখের দৃস্টি বড় প্রখর



আসামি বানর

আসামি বানর বা আসাম বানর বৈজ্ঞানিক নাম Macaca assamensis । ভারতের আসাম রাজ্যে বেশী দেখা যায় বলে এদের নাম ‘আসামি’ । বাংলাদেশে সংরক্ষিত ।
ছবি৪/৩৩ : আসামি বানর , অস্তিত্ব নিয়ে বড়ই চিন্তিত



আসামি বানর পাতাঝরা বন ও চির সবুজ বনে বাস করে । বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা সাতছড়ি বনে এখনো এদের দেখা পাওয়া যায়। আসামি বানর দেখতে অনেকটা রিসাস বানরের মতো, তবে আকারে বড় কিন্তু পুরোপুরি জংলি প্রাণী। অনেকেই বলে থাকেন সুন্দরবনে আসামি বানর দেখা যায় । আসলে সুন্দরবনে রিসাস বানর ছাড়া আর কোনো ধরনের বানর নেই। আসামি বানর দেখতে রিসাস বানরের মতো হওয়ায় এমন বিভ্রান্তি। মুখের পশমের রং বাদামি ছাই রঙের। পুরুষগুলোর গালে দাড়ির মতো বড় লোম গজায়। বুকের পশম সাদাটে, বাকি দেহের রং মরচে বাদামি অথবা হালকা বাদামী । এর ওজন ১০ থেকে ১২ কেজির মত ।এরা পোকামাকড়, ফল, পাকুড়, তরিতরকারি খায়। কখনো খেতে হামলা চালায়। বনের পাশের গৃহস্থবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এরা লাজুক ও তটস্থ। হুলো বানর লেজ উঁচিয়ে চলে। বাংলাদেশে জঙ্গল সাফ হওয়ার মধ্য দিয়ে আসামি বানর নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। আসাম, নেপাল ও মিয়ানমারে কিছু কিছু নৃগোষ্ঠী আসামি বানর মেরে খেয়ে নেয়। এসব নৃগোষ্ঠীর বিশ্বাস আসামি বানরের দেহে ঔষধি গুণ আছে ।
কাঁকড়াভুক বানর

কাঁকড়াভুক বানর বা লম্বালেজি বানর, বৈজ্ঞানিক নাম Macaca fascicularis , এরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ম্যাকাকু গণের একটি বানর প্রজাতি।
ছবি-৫/৩৩ : কাঁকড়াভুক বানর, শিকারের আশায় বসে আছে চুপ করে ।


কাঁকড়াভুক বানর আইইউসিএন লাল তালিকায় বিপদগ্রস্ত নয় তবে বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত । বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত । কাঁকড়াভুক বানর নিম্ন অঞ্চলের বৃষ্টিপ্রধান বন, নদী ও উপকূলীয় এলাকার বন ও প্যারাবনসহ বিভিন্ন আবাসস্থলের ভূমি ও গাছে দেখা যায়। থাইল্যন্ডে বহুল সংখ্যায় দেখা যায় যা লিখাটির পরের অংশে দেখা যাবে ।

মুখপোড়া হনুমান

মুখপোড়া হনুমান বা লালচে হনুমান এর বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus pileatus । বাংলাদেশ নেপাল, ভূটান চীন , ভারতএবং মায়ানমারে ও এদের দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বন্প্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত ।
ছবি-৬/৩৩ : লাওয়াছড়া বনে মুখপোড়া হনুমান, গাছের ডালে বসে লেজ ঝোলায়



মুখপোড়া হনুমান হচ্ছে বৃক্ষচারী প্রাণি। চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, ঘুম, খেলাধুলা, বিশ্রাম, প্রজনন সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। মুখপোড়া হনুমানের খাদ্যের ৬০% হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের পাতা এরা বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গাছের গর্ত ও পাতায় জমে থাকা পানি দিয়ে জলপান ও গোসল করে। এরা খেলাধুলা ও লাফালাফি করতে অনেক পছন্দ করে। বাচ্চা বুকে নিয়ে মা সহজেই এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে পড়ে। অন্য কাউকে ভয় দেখাতে মুখে ভেংচি কাটে। বাংলাদেশে যে তিন প্রজাতির হনুমান পাওয়া যায় তার মধ্যে মুখপোড়া হনুমানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। টাঙ্গাইলের পাতাঝরা বন এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনে এদের দেখা যায়। তবে বন-জঙ্গল ধ্বংসের কারণে দিনে দিনে প্রাণিটি আশঙ্কাজনকহারে হারে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে এরা বিপন্ন বলে বিবেচিত ।

চশমাপরা হনুমান

চশমাপরা হনুমান আকারে অনেক ছোট। এদের দেহের তুলনায় লেজ বড় হয়ে থাকে। অন্য হনুমানের চেয়ে এরা লাজুক প্রকৃতির। দিনের বেলায় ঘন বনের ছায়াযুক্ত স্থানে বিচরণ করতে পছন্দ করে। সহজে এরা মাটিতে নামে না। এরা দল বেঁধে চলাফেরা করলেও সহসা এদের চোখে পড়ে না। দলে বাচ্চাসহ সাত-আটটি হনুমান থাকে একটি পুরুষ হনুমানের নেতৃত্বে। তবে দলে কোনো পুরুষ হনুমান দলপতি হবার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠলে বিদ্যমান পুরুষ দলনেতা অনেক সময় নেতৃত্ব বজায় রাখতে মা হনুমানকে দ্রুত ঋতুমতি করার জন্য বাচ্চাদের মেরে ফেলে। এই পরিকল্পনায় আগের দলপতির বংশ নাশের একটি পরিকল্পনাও থাকে এই হত্যাকান্ডে।
চশমাপরা হনুমান গাছের কচি পাতা, ফুল, ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। পানির চাহিদা মেটাতে এরা শিশির লেগে থাকা পাতা চাটে অথবা পানিবহুল লতাগুল্ম খায়। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী বন, বিশেষ করে লাউয়াছড়া রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি পাবলাখালি কাপ্তাইয়ের বনে চশমাপরা হনুমান দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের জঙ্গলগুলো ছোট আর ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চশমাপরা হনুমান আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
ছবি-৭/৩৩ : চশমাপরা হনুমান কতই না ভঙ্গী ধরে



লজ্জাবতী বানর

লজ্জাবতী বানরের বৈজ্ঞানিক না Nycticebus bengalensis । বাংলাদেশের বানরকুলে লজ্জাবতী বানরই আকারে সবচেয়ে ছোট । ২৬ থেকে ৩৮ সেমি, ওজন ১.৫ কেজি । লেজ খুব ছোট। হাত –পায়ে আঁকড়ে ধরার শক্তি বেশ ভাল । চোখ দেহের তুলনায় বড় বড় । ফল, কীটপতঙ্গ , পাখির ডিমও খায় । স্বভাবে লাজুক নিশাচর , বৃক্ষবাসী । নিজ এলাকা পেশাপ ছিটিয়ে সনাক্ত করে । বছরে একটি , কদাচিৎ দুটি বাচ্চা দেয় । বাচ্চা মা বা বাবার পেটের সাথে ঝুলে থাকে । বাংলাদেশের সিলেট , চিটাগাং পাহাড়ি বনে এরা আছে ।
ছবি -৮/৩৩ : লজ্জাবতী বানর বাচ্চা কুলে নিয়ে গাছের ডাল ধরে ঝুলে আছে



বানর নিয়ে দেশে দেশে বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষা

বানরের নিয়ে দেশে দেশে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীয় গবেষনা ও পরীক্ষন চলছেই । বানরের উপর ঔষদের প্রয়োগ ফলাফল যথা টক্সিসিটি টেস্টিং , ইসফেকসাস ডিজিস , HIV and hepatitis, নিউরো সার্জিকেল স্টাডিজ , রিপ্রডাকশন , জেনিটিক্স ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । শুধুমাত্র যুক্তরাস্টেই প্রতি বছর ৬৫০০০ বানরের উপর এ ধরনের ডাক্তারী পরীক্ষা চালানো হয় , ইউরোপিয় ইউনিয়নেও এ সংখ্যাটা প্রায় ৭০০০।
ছবি - ৯/ ৩৩ : মার্কিন যুক্তরাস্টের ন্যাশনাল ইনসটিটিউট অফ হেলথ এর গবেষকগন বানরের উপর ট্রেস ইফেক্ট নিয়ে স্টাডি করছেন



বানরের এই ধরনের জীবনঘাতি কিছু অনৈতিক অপ ব্যবহারের বিরোদ্ধে দুনিয়া জোড়ে প্রতিবাদও কিন্তু কম নয় । ওয়াশিংটন ভিত্তিক কুক্ষাত Shin Nippon Biomedical Laboratories (SNBL) এর একজন প্রত্যক্ষ দর্শী কর্মী যুক্ত রাজ্য ভিত্তিক বন্যপ্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠন PETA (People for the Ethical Treatment of Animals (PETA) এর কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন যে এই লেবরেটরীতে অনৈতিকভাবে বানরকে মাসের পর মাস খাচায় বন্দি করে রেখে বিভিন্ন ধরনের মরনঘাতি বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষন কর্ম পরিচালনা করে আসছে । ঐ কর্মী তার লিখিত অভিযোগ পত্রে জানান যে It force-feeds animals experimental chemicals to intentionally sicken and kill them and infects them with debilitating diseases. খাচায় বন্দী বানরেরা অসয্য যন্ত্রনায় কাতরায়, মুখ হা করে হৃদয় বিদারক ক্রন্দন করে । যদিও আমিরিকান ফেডারেল এনিমেল ওয়েলফেয়ার এক্ট অনুযায়ী বন্য প্রাণীদের উপরে কোন নির্যাতন এলাও করেনা তথাপি এই লেবরেটরী সে দিকে কর্ণপাত না করে বিধি ভেঙ্গে বানরকে নিয়ে মরনঘাতি পরিক্ষন অব্যাহতই রাখে । এই SNBL প্রতি বছর চীন , ইন্দোনেশিয়া , ইজরাইল ও কম্বোডিয়া হতে প্রায় ৩০০০ বানর বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষনের নিমিত্ত আমদানী করে । বিষয়টি চরম অনৈতিক বিবেচনায় PETA বিশ্ববাসীর প্রতি এই অনৈতিক কাজ বন্ধের জন্য সোচ্চার হতে আবেদন জানায় , তারা বিভিন্ন এয়ার লাইনসকেও পরিক্ষনের নিমিত্ত বানর পরিবহন না করার জন্য আবেদনময়ী প্রচারনা চালায় ।
ছবি ১০/৩৩ : বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষনের নিমিত্ত খাচায় বন্দী যন্ত্রনাকাতর বানরের করুন আর্তনাদ



তবে PETA এর প্রতিবাদী মুভমেন্টের প্রেক্ষিতে ডিসেম্বর ২০০৬ এ অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের এমিরিটাস প্রফেসর স্যার ডেভিড উইথরাল এর সভাপতিত্বে গঠিত একটি ইনকোয়ারী টিম তাদের গবেষনার উপসংহারে বলেছেন যে there is a strong scientific and moral case for using monkeys in some research. এই প্রেক্ষিতে সহজেই অনুমেয় হয় যে বানরদেরকে নিয়ে পরিক্ষনের বিপক্ষে যতই প্রতিবাদি কার্যক্রমই থাকুক না কেন তা অব্যাহতই থাকবে , একটা বিকল্প বের না হওয়া পর্যন্ত । তবে এটা যেন নৈতিকতার মাত্রাকে ছাড়িয়ে না যায় সে বিষয়টার দিকে সকলের খেয়াল রাখা একান্তই কাম্য ।

আমাদের বাংলাদেশও বানর নিয়ে গবেষনায় পিছিয়ে নেই ।২০০৬ সালে বাংলাদেশে বানর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী ড. মোস্তফা ফিরোজ ও কামরুল হাসান। আমাদের রেসাস বানরের জাত নিশ্চিত হওয়ায় পৃথিবীব্যাপি বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বানর থেকে মানুষের রোগ সংক্রমণ নিয়েও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা । আমাদের দেশে বিলুপ্তপ্রায় বানর-জাতীয় ছয়টি প্রজাতির মধ্যে রেসাস ম্যাকাকু একমাত্র বানর যার ডিএনএর গঠন মানুষের বেশ কাছাকাছি। এ জন্য সারা বিশ্বে বায়ো-মেডিক্যাল গবেষণার জন্য এই বানরের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা, কারণ এর গঠন সরল তথা হোমোজেনাস প্রকৃতির। এদেরকে মানুষের মত মুখ দিয়ে ঔষধ সেবন করানো যায় ।
ছবি-১১ /৩৩ : বায়ো- মেডিকেল পরীক্ষার নিমিত্ত বানরকে ঔষধ খাওয়ানোর দৃশ্য



পুরান ঢাকা, গাজীপুরের বরমী বাজার এলাকা , সিলেটের চাশনী পীরের মাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন থেকে রেসাস বানরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্য প্রাণী শাখায় একটি অত্যাধুনিক গবেষণাগারও স্থাপন করা হয়েছে। গবেষণার ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশ এমনকি ভারতের চেয়েও বাংলাদেশের রেসাস বানরের ডিএনএ ডাবল হ্যালিক্স গঠন হোমোজেনাস কাছাকাছি জাতের। অর্থাৎ আমাদের দেশের রেসাস বানরের ওপর বায়োমেডিক্যাল টেস্ট করলে অন্য যেকোনো দেশের রেসাস বানরের চেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ক্যাপটিভ ব্রিডিং সেন্টারে রেসাস বানরের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে বিভিন্ন ওষুধ, ভ্যাকসিন, রিপ্রোডাকটিভ ড্রাগ, অ্যান্টি ক্যান্সার কিংবা এইচআইভির পরীক্ষা করা যেতে পারে। সাধারণত ওষুধের কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের জন্য মানুষের আগে রেসাস বানরে পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের রেসাস বানরের ডিএনএর হোমোজেনিটি নিশ্চিত হওয়ার ফলে সারা বিশ্বে বায়োমেডিক্যাল গবেষণার জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। তবে এই সম্ভাবনাটুকু যেন অনৈতিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে না যায় তা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই রাখা প্রয়োজন ।

বানর থেকে মানুষে কোনো রোগ সংক্রমিত হচ্ছে কি না তা নিয়েও গবেষণা করছেন বাংলাদেশর বিজ্ঞানীরা । বাংলাদেশে একমাত্র রেসাস বানরই মানুষের বসতির আশপাশে বাস করে। পুরান ঢাকা, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, সাভারের ধামরাই, বরমী বাজার , মাদারীপুরের চরমুগুরিয়া, নারায়ণগঞ্জের বন্দর কিংবা সিলেটের চাশনী পীরের মাজারে গেলে দেখা মেলে এসব বানরের। লোকালয়ের বানর খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। এই খবরে সরকারী একটি প্রকল্প থেকে বানরদের খাবার সরবরাহ করা হয় ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। তবে খাবার সরবরাহে পরিকল্পনার অভাব ছিল। যথেচ্ছ খাবার দেওয়ার ফলে বানরের দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে। ফলে বানরের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যায়। তাই হঠাৎ যখন খাবার দেওয়া বন্ধ করা হয় তখন বানর মানুষে দ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। বানরগুলো শসা ও কলার ক্ষেত ধ্বংস করতে থাকে। জানালা দিয়ে খাবার চুরি করে, ভাতের হাঁড়ি নিয়েও দৌড় দেয় কখনো। বাধা দিলে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। বানরের কামড়, আঁচড় বা এঁটো খাবার খেলে বানর থেকে কোনো রোগ মানুষে সংক্রমণ হয় কি না তা নিয়ে দেশে চলছে গবেষণা। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার পাশাপাশি চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও। বানর আছে এমন লোকালয়ের আশপাশের স্কুলগুলোতে গিয়ে ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের বানর ও অন্যান্য বন্য প্রাণী সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্কুলে বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। বানর মানুষের শত্রু নয়, বন্ধু এ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা যায় । বানরকে বায়ো-মেডিকেল পরিক্ষনের বিপরীতে এদের প্রতি আরো অনেক বেশী নৈতিক ও মানবীয় আচরণের মাধ্যমে বানরদের জীবনকে মধুর ও আনন্দময়ী করে পরিবেশ , মানবজাতী দেশের অর্থনীতিতে এক মুল্যবান সম্পদে পরিনত করা যায় যদি তাদেরকে পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় যথোপযুক্ত উপায়ে ।

পর্যটন শিল্পে বানর

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। নতুন করে কৌশল ঠিক করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও শিল্প, সাহিত্য, কালচার ও প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্যও পর্যটকরা নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর-দূরান্তে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। পর্যটন শিল্পের উপাদান ও ক্ষেত্রগুলো দেশে ও বিদেশে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের অধিকতর বিকাশ ঘটানো সম্ভব । এ কাজটি সরকারী , বেসরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ে করা যায় ব্যপকভাবে । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আমাদের এই সামুরই একজন অতি জনপ্রিয় ব্লগার সাদামনের মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনীয় ও পর্যটক আকর্ষনীয় বিষয়াবলী নিয়ে পোস্ট দিয়ে চলেছেন অনবরত । অগনিত দেশী বিদেশীরা দেখছেন সেগুলি, অনেকেই গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সরজমিনে ভ্রমন করে সেগুলি দেখার জন্য । সাম্প্রতিককালে সামুতে দেয়া তাঁর পোস্ট রাজবন বিহারের বান্দরগুলো অগনিত পাঠকের সাথে আমারো নজর কারে , তাঁর ব্লগের ছবিগুলি দেখে অভিভুত হয়ে মনে হল বানরও হতে পারে দেশে পর্যটক আকর্ষনের একটি অন্যতম সহজ মাধ্যম । সে নিরিখেই অন্যান্যরা বানরকে দিয়ে পর্যটক আকর্ষনের জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তা করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ । প্রতিবেশী দেশ ভারত , মায়ানমার, ও কাছাকাছির দেশ থাইল্যন্ডে দেখা যায় বানর নিয়ে চলছে ইউনিক আয়োজন । এখানে এই পোস্টে পর্যটক আকর্ষনে সিলেটের বান্দর টিলার বানর ও থাইল্যন্ডের লুপবুরী প্রদেশের কাঁকরা বানর নিয়ে পর্যটন শিল্প বিকাশের আয়োজন সম্পর্কে করা হবে কিছুটা আলোকপাত ।

থাইল্যান্ডের উদাহরণটি টানার পুর্বে দেশের অবস্থানটি একটু দেখে নেয়া যাক সংক্ষেপে । সামুর পাতায় আসা বান্দরদের একটি ফটো পোস্ট দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন CLICK THIS LINK দেখাযাবে
নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার অন্তরগত রামপুর গ্রামে যাকে অনেকেই বানরের গ্রাম বলেও জানে , যেখানে শত শত বানর থাকে এবং তারা অনেক পর্যটকদের নজর কাড়ে , শুধু কি তাই, দর্শকগন সেখানকার বানরদেরকে নীজ হাতে খাদ্যোও করেন পরিবেশন।

অনুরূপভাবে সামুর একটি পোস্টে থাকা রাজবন বিহারের বান্দরগুলো দেখার জন্য CLICK THIS LINK
দেখা যাবে রাঙামাটি শহরের অদুরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহারে উন্মোক্ত জায়গায় বিচিত্র অনেক বানরের সমাহার । চিরিয়াখানার কৃত্রিম পরিবেশের বাইরে খোলা জায়গায় বানরদের বিচরণের অনেক সুন্দর সুন্দর মনমাতানো দৃশ্যও দেখা যায় সেখানে ।

বানরের টিলা সিলেট

সিলেট নগরের গোয়াইটুলা এলাকায় চাষনী পীর মাজারের আশপাশে টিলায় বাস করে প্রায় তিন শতাধিক বানর। বানরগুলি সেখানকার চাষনি পিড়ের মাঝারের কাছে গাছে গাছে চড়ে বেড়ায় ।
ছবি-১২/৩৩ : সিলেটে বানরের টিলায় গাছে গাছে বানর চড়ে বেড়ায় ।



বানরগুলোর প্রতি অন্যরকম একটা টান আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বানরগুলোকে পবিত্রতা ও মঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করেন অনেকে। তাই মাজারের বানরকে কষ্ট দিতে চান না কেউ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, এই টিলায় বানরগুলোর বসবাস সেই হযরত শাহজালাল (রহ.) এর সময় থেকে। যে টিলাজুড়ে বানরগুলোর বাস সে টিলাতেই শুয়ে আছেন সিলেট বিজয়ী বীর সাধক পুরুষ শাহজালালেরই সফরসঙ্গী হযরত চাষনি পীর (রহ.)। অনেকের ধারণা, চাষনি পীর হয়তো বিপন্ন কোনো বানরযুগলকে তার কাছাকাছি আশ্রয় দিয়েছিলেন । টিলাজুড়ে থাকা এখনকার হাজার হাজার বানর সে বানরগুলোরই বংশধর। কৃতজ্ঞতা জানাতে তারা রয়ে গেছে মাজারের পাশে। নইলে যান্ত্রিক কোলাহলের মাঝে কেন ছেড়ে যায় না তারা এ টিলা । নগর জীবনে ক্লান্ত অনেকেই বানরের লাফঝাঁপে একটু বিনোদন খুঁজে নিতে বেড়াতে আসেন এখানে। আবার পুণ্যাত্বদের সানি্নধ্যেরও সন্ধানে আসেন অনেকে। এক সাথে দ্বিবিধ বাসনা পুরনের সুযোগই যেন এখানে। স্থানীয়দের কাছে 'বানরের টিলা' নামে পরিচিত হলেও এর রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। হযরত শাহজালালের অন্যতম সঙ্গী একজন চাষনি পীর শুয়ে আছেন এখানেই। হজরত শাহজালালের সিলেট বিজয়ের অধ্যায়ে চাষনি পীর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বলা হয়ে থাকে হযরত শাহজালের আধ্যাতিকতার পরিচয় পেয়ে তার মামা ও মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবির তাঁকে হিন্দুস্তানের দিকে ধর্মপ্রচারের নির্দেশনা দেন। পথের দিশা পাইয়ে দিতে সে সময় তিনি হযরত শাহজালালের হাতে পবিত্র মক্কা শরিফের একমুঠো মাটি তুলে দিয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলেন এ মাটির সঙ্গে যেখানে বর্ণে-গন্ধে-স্বাদে যে স্থানের মাটি মিলবে সেখানেই তার গন্তব্য। সে মাটি নিয়ে ভারতবর্ষের পথে পা বাড়ান হযরত শাহজালাল।

অভিযাত্রা শুরুর সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১২ জন সফরসঙ্গী। এদের একজনের ওপর দায়িত্ব পড়ে মাটির তদারকি আর পথে পথে চেখে (চুষে) মাটি মিলিয়ে নেওয়ার। অনেক পথ, অনেক জনপদ পাড়ি দেওয়ার পর সিলেটের মাটির সাথে সঙ্গে আনা সিলেটের মাটি স্বাদে-গন্ধে-বর্ণে মিলে যায়। ধর্মপ্রচারে সিলেটে ঠিকানা গাড়েন হযরত শাহজালাল। মাটি চেটে চুষে পরীক্ষা করেছিলেন বলেই মাটি পরীক্ষাকারী সে সফরসঙ্গীই ইতিহাসে পরিচিতি পান চাষনি পীর হিসেবে। এ যদিও এ পরিচয়ের নামে আড়াল পড়ে গেছে তাঁর মূল পরিচয় তার পরেও তাঁর ও বানরের কারণে সেখানে পর্যটক আকর্ষনটাও বেড়ে গেছে অনেক গুনে ।

সিলেট নগরের ব্যস্ততার মাঝেও বিচলিত নয় বানরগুলো। গাছে গাছে দল বেঁধে ছোটাছুটি করছে তারা।মাঝেমধ্যে আশপাশের বাসার জানালা দিয়ে উঁকি মারছে। সুযোগ পেলে বাসার ভিতর থেকে পাউরুটি, কলা, ভাতের হাঁড়ি নিয়ে দেয় দৌড়। কোনো কিছুতেই ভয় নেই তাদের। নির্ভীক, বেপরোয়া তাদের চলাফেরা। বানরের এই বাঁদরামি গা সয়ে গেছে এলাকার মানুষের। তাই এই বাঁদরামির শাস্তি পেতে হয় না বানরগুলোকে। উল্টো মানুষের মমতায় তাদের ভাগ্যে জুটে খাবার। চৈত্রের দাবদাহে অতিষ্ঠ হয় প্রাণিকুলও, হাঁপিয়ে উঠে তারাও, তাই খরতাপে হাঁপিয়ে ওঠা বানরদেরকে স্থানীয়রা তরমুজও খাওয়ায় ।
ছবি - ১৩ / ৩৩ : খরতাপে হাঁপিয়ে ওঠা বানরদেরকে তরমুজ খাওয়াচ্ছেন স্থানীয় একজন নারী।


ছবি সুত্র : প্রথম আলো, ২০১৪

বানর দেখার জন্য অনেক দুর দুরান্ত হতে ঘটে লোক সমাগম । পর্যটকেরা সাধারণত বানর দেখতেই যান সেখানে ।

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাৎসরিক মাংকী বাঙকোয়েট ফেসটিভাল ( Annual Monkey Banquet Festival )

পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বানরদেরকে নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী মজার উৎসব উপভোগের জন্য চলুন একটু থাইল্যন্ড ঘুরে আসি । জায়গাটি থাই ল্যন্ডের লুপবুরী শহড় , যেখানে প্রতি বছর নভেম্বরে ‘’ মাংকি বাঙকোয়েট ফেসটিভাল ’’ অনুষ্ঠিত হয় । আর হা এটা সত্যই মানকি বাঙকোয়েট যেমনটি ছবিতে দেখা যায় । থাইল্যন্ডে পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য এই ব্যপক আয়োজন ।
ছবি -১৪/৩৬ : ২০০৪ সনে লুপবুরীতে প্রাচীন মন্দির প্রাঙ্গনে মাংকী বাঙকোয়েট উৎসবে বানরদের ফলাহার দৃশ্য



সেখানকার বানরদের জন্য এই বাঙকোয়েট উৎসব আয়োজন নিয়ে কিছু বলার আগে লুপবুরীর( Lopburi ) ইতিহাস সম্পর্কে ছোট্ট একটু বিবরণ দিয়ে শুরু করা যায় । লুপবুরী হচ্ছে থাইল্যন্ডের Lop Buri প্রদেশের রাজধানী যা থাই কেপিটেল ব্যংকক হতে ১৮০ কিলোমিটার (প্রায় ১১১ মাইল) দুরে উত্তর-পূর্ব অবস্থিত । বলা হয়ে থাকে এটা থাইল্যান্ডের একটি প্রাচীনতম বসতি যা প্রায় ১০০০ বছর পুর্বে ভারতের উত্তর পুর্ব অঞ্চল (যা এখন পাকিস্তানের অন্তর্গত) থেকে আগত রাজা Kalavarnadish কতৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । চতুর্দশ শতকে অযুদ্ধা রাজ্যত্ব প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে Lopburi সে রাজ্যের একটি শক্ত ঘাটিতে পরিনত হয় এবং ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজা নারাই দি গ্রটের রাজত্বকালে Lop Buri এর রাজধানীতে পরিনত হয় । রাজা নারাই বছরের আটমাসই লুপবুরীতে কাটাতেন ।

এই বানরগুলিকে ঐ প্রদেশের সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় , এরা দলবদ্ধ হয়ে সেখানে বসবাস করে । দলে তাদের বাচ্চা কাচ্চা সংগী সকলই থাকে, তবে দলে পুরুষের চেয়ে মেয়ে বানরই বেশী থাকে এবং মহিলা বানরই দলের বস বা সর্দারনীর ভুমিকা পালন করে ।
সেখানকার বানরেরা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সহবস্থান করে আসছে , তারা বানর নিয়ে মোটেও ভীত নয়, যদিও বানরেরা তাদের খাবার প্লেট থেকে স্যান্ডউইচ বা নুডল ছিনিয়ে নিয়ে যায় মাঝে মধ্যে । স্থানীয়রা একে কিছুটা বানরের উৎপাত হিসাবে মনে করলেও সেখানে এখন প্রায় ৩০০০ বানর রয়েছে শহড়ের উপকন্ঠে বানব বসতি জুরে । কিন্তু বানরেরা অনস্বীকার্যভাবে একটি ভাল আয়ের উৎস হিসাবে পরিগনিত হয়েছে পর্যটন বাণিজ্যে তাদের অবদান রেখে ।

যদিও থাইল্যান্ডের এই প্রদেশটিতে সিংহভাগ জনতাই বৌদ্ধ (থাই জনসংখ্যার প্রায় ৯৫% বৌদ্ধ ) কিন্তু সেখানেও বানর নিয়ে ধর্মীয় মুল্যবোধের একটি ইতিহাস আছে , যা প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসের মুলে গ্রতিথ । খৃস্টিয় দশম শতাব্দিতে খেমার সাম্রাজ্যকালে (Khmer Dynasty) অনেক হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল , এবং কেও যদি কাম্বোডিয়ার অ্যাংকর ওয়াট (Angkor Wat) পরিদর্শন করে থাকেন তাহলে অনুরূপ বেশ কিছু স্থাপত্য শৈলী দেখে তিনি চিনতে পারবেন । প্রায় ১৬১.৬ হেকটর জায়গা নিয়ে Angkor Wat পৃথিবীর বৃহত্তম হিন্দু ধর্মীয় মনুমেন্ট । আদিতে এটা খেমার সাম্রাজ্যের আমলে দেবতা বিঞ্চু স্বরণে খেমার রাজা সুর্যবর্মন-২ কতৃক নির্মিত হয়েছিল পরে ক্রমান্বয়ে তা শতকে বুদ্বিস্ট টেম্পলে পরিনত হয়
ছবি – ১৫/৩৩: খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতকে কম্বুডিয়ার Angkor Wat হিন্দু মন্দীর কমপ্লেক্স এর ছবি



Angkor Wat এর মত কিছু হিন্দু মন্দির সদৃশ স্থাপত্যশৈলীমন্ডিত মন্দির রয়েছে পুরাতন শহড় লুপবুরীতে যা পর্যটনের দর্শনীয় বিষয় হিসাবে আকর্ষনীয় করে তুলেছে । সেখানে বিশেষ করে এই স্থানের আশেপাশেই মাক্কাক তথা কাঁকড়া বানরেরা তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তুলেছে এবং মন্দিরের যেখানে সেখানে নির্ধিধায় আরোহন ও বিচরণ করে, ফলে ঐ জায়গায় তাদের ছবি তোলার চমৎকার সুযোগ রয়েছে ।
ছবি-১৬/৩৩ : মন্দিরের যেখানে সেখানে নির্ধিধায় বানরের আরোহন ও বিচরণ করে



লুপবুরী শহড় থেকে এই বানরেরা কেন বিতাড়িত হয়না এবং কেন তারা স্থানীয়দের প্রশ্রয় পায় এটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে হিন্দু ঋষি বাল্মীকি রচিত প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়নে । এই মহাকাব্যে দেখা যায় যে, হনুমান নামে মানুষের বৈশিষ্টধারী একটি বানরের বীরত্বপূর্ণ নববধূ সীতা উদ্ধার গল্প কাহিনী , যে দশমাথা দৈত্য রাবনের হাত হতে লংকা পুরীকে লন্ডভন্ড করে সীতা উদ্ধারে করেছিল সহায়তা ।
ছবি-১৭/ ৩৩ : মানবের বৈশিষ্টধারী বীর হনুমানের লংকাপুরী লন্ডভন্ড করে সীতাকে উদ্ধার অভিযান



এটা ধারনা করা হয় যে হনুমান সংস্লিস্ট বিশ্বাসটি লুপবুরীতে ভাল ভাবেই আজ প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বাস করা হয় যে লুপবুরীর মাক্কাকগুলি সেই হনুমানেরই রক্ত বইছে তাদের শরীরে অর্থাৎ তারা সেই হনুমানেরই সাক্ষাত বংশধর । এটা সত্য না মিথ্যা সে বিষয়টি তেমন বিবেচনায় না গিয়ে পর্যটন শিল্প বিকাশের উদ্যোগতারা এই হনুমান উপাক্ষানটিকে পর্যটকদের প্রলুব্ধ করে তোলার জন্য কাজে লাগিয়েছেন দারুনভাবে । যদিও লুপবুরীর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ধর্মীয় অনুশীলনের দিক দিয়ে হিন্দুধর্মের অনুসারী নন তবু তারা বানরের সতীনারী উদ্ধারের মানবিক গুনাবলিকে ধারন করেছেন তাদের বিশ্বাসের মুলে, ফলে বানরের উৎপাতকে তারা নেননি বিশেষ আমলে যদিও বানরেরা সুযোগ পেলেই পর্যটকদের মোবাইল ফোন ও ক্যেমেরা নেয় চুরী করে !!! , সংগত কারনে তাদের প্রতি কিছুটা রাগ ধরলেও স্থানীয় অভিবাসীদের মত বিদেশি পর্যটকেরা কিছুটা বিশন্ন মনে হলেও মেনে নেয় সহজে ।

এই ধর্মীয় বিশ্বাসটিকেই পুজী করে লুপবুরী শহড়ে বানরের বাফেট উৎসবের আয়োজনটি যথেস্ট ছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে । শহরবাসীর সঙ্গে প্রাচীন বানরপ্রিতীর সংযোগটির কারণেই বানরদের জন্য আয়োজিত বাৎসরিক ভোজ উৎসব আসলে একটি প্রশংসনীয় নতুন উদ্যোগ হিসাবে হয় বিবেচিত । এই উদ্যোগটি ঘুমকাতুর এই শহরে পর্যটক আকর্ষণে নজর কাড়ে , যার সঙ্গে স্থানীয় পর্যটন শিল্প সংস্লিস্ট ব্যবসায়ীদেরও ঘটে অপুর্ব সংযোগ । রাজধানী ব্যাংকক হতে আকাশ , সড়ক ও রেলপথে জায়গাটিতে যাওয়ার রয়েছে সহজ সুযোগ ।ফলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজলভ্য হওয়ায় সেখানে বানর ভোজের আয়োজনটাও সহজ হয়েছে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য । বিষয়টি আমাদের জন্যও বিশেষ বিবেচনার দাবী রাখে । কারণ সিলেটের বান্দর টিলার বানর গুলির সাথেও একটি ধর্মীয় অনুভুতি জড়িত রয়েছে , তাছাড়া রাজধানী ঢাকা হতে সড়ক , রেল ও আকাশ পথে সেখানে যাওয়ার সহজ ব্যবস্থাও আছে। এমনিতেই সিলেটকে বলা হয় পর্যটনের নগড় সেখানে বানরদেরকে নিয়ে বছরের কোন এক সময়ে বিশেষ কোন আয়োজন দিতে পারে বাড়তি আকর্ষণ ।

বানরের জন্য বাৎসরিক বাফেট উৎসব আয়োজনের পিছনের প্রতিভাধর ব্যক্তিটির নামটি নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন । এ জন্য Mr. Yongyuth Kitwattananusont কে তো ধন্যবাদ জানাতেই হয় তার এই উদ্ভাবনীমুলক এ কাজের জন্য । এই কাজের জন্য ১৯৮৯ সনে হোটেল ব্যবসায়ী Kitwattananusont কে TAT (Tourism Authority of Thailand ) থেকে সহায়তা ও স্পনসর করা হয়েছিল । এখন এই বানর ভোজের উৎসবটি প্রতিবছর নভেম্বর মাসে সেখানে বর্নাঢ্যভাবে উদযাপন করা হয় । বানরদের ভোজে শরীক হওয়ার জন্য দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এসে হাজির হন যা সেখানকার হোটেল ব্যবসাসহ পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলে কিছুদিনের জন্য । এর সুদুর প্রসারী ফলটাও থেকে যায় স্থানীয় এলাকায় ও জাতীয় অর্থনীতিতে বিবিধভাবে ।

এই মাংকী বাফেট ফেসটিভালটিকে দৃস্টি নন্দন ও আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য বছর থেকে বছরান্তে আয়োজনটাও হয় বিভিন্নভাবে। বানরের জন্য উদ্ভাবন করা হয় বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বানরের আগমন ঘটানো হয় দৃস্টি নন্দনভাবে যেমন ২০১৩ সনে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে বানরের বেসে অবতরন হয়েছিল প্যারাসুটের মাধ্যমে।
ছবি-১৮/৩৩ : থাইল্যান্ডের লুপবুরীতে মাংকী বাঙকোয়েট ফেসটিভালে বানর বেসে প্যারসুটে করে অবতরন



অন্যদিকে ২০১৩ সনে বানরের জন্য বাঙকোয়েট উৎসবে বানরদেরকে পরিবেসনের জন্য জন্য রাখা হয়েছিল ৪০০০ কেজি বিভিন্ন ধরনের ফল ও খাদ্য । বানরদের জন্য এই খাদ্য পরিবেসনে স্থানীয় শহড়বাসীরাও সাহয্য করেছেন খোলা মনে ।
ছবি -১৯/৩৩ : বানরদের জন্য মন্দীর প্রাঙ্গনে টেবিলে টেবিলে খাদ্য পরিবেসন।



বানরদের জন্য এই খাদ্য পরিবেসনে স্থানীয় শহড়বাসীরাও সাহয্য করেন খোলা মনে । কেও কেও অংশগ্রহন করেন বানরের ভোজের টেবিল ফুল ও ফল দিয়ে সাজানোতে
ছবি -২০/ ৩৩ : ফল ও ফুল দিয়া সাজানো খাবারের টেবিল দেখে বানর বেজায় খুশী



খাবারের টেবিলে থাকে প্রচুর পাকা কলা , আম. ড্রাগন ফল , আপেল , আনারস ও অন্যান্য অনেক ধরনের ট্রপিকেল ফল । কোন কোন ফল বড়ফের চাই দিয়ে থাকে মোরা সেগুলি খাওয়ার জন্য যেন বানরকে করতে হয় অপেক্ষা , সেই সুযোগে দর্শনার্থীরা বানরের ছবি তুলে নিতে পারে ভালমত ।

লম্বা অথবা গোলাকার বড় টেবিলে কাপড়ের উপরে ফল রাখা হয় সাজিয়ে । আবার মাঝে মাঝে গড়া হয় ফল দিয়ে সাজানো পাহাড় যেমনটি দেখানো হয়েছে প্রচ্ছদ চিত্রে ।
ছবি -২১ / ৩৩ : বানরেরা লাফালাফি করে উঠছে তাদের জন্য তৈরী ফল পাহাড়ের শীর্ষে



দিনের আলোতে বানরদের ক্যমেরা ও মোবাইল চুরী একটি কমন ব্যপার । সকলেই জানি বানর খুবই অনুকরন প্রিয় প্রাণী । দর্শনার্থীদেরকে মোবাইলে কথা বলতে ও ক্যমেরায় ছবি তুলতে দেখে তাদেরো মনে সখ জাগে , আর তাই সুযোগ পেলেই এ দুটো নেয় তারা তুলে, সে সাথে পার্স কিংবা ভেনেটি ব্যগ পেলে , তাও তারা নেয় হাতিয়ে । তাই বিষয়গুলি যদি এই বানরের তরে দর্শকের পক্ষ হতে দানের ভাবনা না হয়ে থাকে তবে এই সমস্ত বস্তুর প্রতি খেয়াল রাখার জন্য পর্যটকদেরকে সাবধান করে দেয়া হয় আগে ভাগে ।

ছবি -২২ /৩৩ : অনেক সময় বানরেরা হঠাৎ করে উঠে পড়ে দর্শকের কোলে পিঠে , সে সময়ে তারা কিছু চৌর্য কর্মও করে , হাতিয়ে নেয় তাদের মোবইল কিংবা ক্যমেরা ।



বানরেরা কি জানে শহড়বাসী তাদের ব্যাংক ব্যলান্স খালী করে খাদ্য এনেছে তাদের জন্যে ?!!! এটাওতো তারা জানেনা যে পর্যটকেরা তাদের ছবি তুলে ঘরে নিয়ে যাবে কিংবা ছাপাবে বেসবুকে বা টুইটারে, তারা শুধু এ টুকুই জানে বছরের এই দিনে তারা তাদের উদর পুর্তি করতে পারবে মাত্রার বেশী খাদ্যে । বানরেরা অবশ্য একটু বেশী খুশী হয় সেদিন অযত্নে রাখা পর্যটকদের মোবাইল কিংবা ক্যমেরা যদি কৌতুহল নিবারনার্থে তুলে নিতে পারে তাদের করে ( বানরেরা চোর এই অপবাদটা না দিলেই কি নয় ) । বানরেরা কি এই তুলে নেয়া মালকে সঞ্চিত করে রাখবে অন্যত্র !!!, নাকি তা তা দিয়ে তার বাচ্চাদের ছবি তুলবে ও ইস্টগ্রামে আপলোড করবে, বানরেরা কি তা জানে ?!!!
ছবি -২৩/৩৩ : মনে তো হয় ছবিটা কেমন কেমন লাগে , একটু হাসি হাসি থাকলে বোধ হয় ভালই হইত



এখন বানরের এই ভোজন উৎসব চলাকালীন কিছু কৌতুকময় দৃশ্য সাথে বানরদের নিজস্ব ভাবনার বিষয়গুলি দেখা যেতে পারে ।

ছবি -২৪/৩৩ : আমিই এই বিশাল ফল পাহাড়ের রাজা



ছবি -২৫/৩৩ : এত হৈ হুল্লোর করোনা শান্তিমতে দইটা খাইতে দাওনা বাছাধনেরা



ছবি -২৬/৩৩ : এরকম আয়োজন বছরে একবারই হয় , তাই কেও টেবিল হতে ফল চুরী করোনা , বানরেরা এটা পছন্দ করেনা ।



ছবি - ২৭ / ৩৩ : বানর হলে কি হবে আমিও আইসক্রিম খাইতে পারি



ছবি-২৮/৩৩ : কে বলেছে বানর কোকা কোলা খায়না , চিয়ার্স !!!



বানরেরা সমাজ বিরোধি চৌর্যকর্ম করলেও এটাকে তাদের ক্রিমিনাল কাজ হিসাবে দেখা হয়না । দেয়ালের কার্নিশ ধরে , লাইটপোস্টের তার ধরে হেটে , ধুম করে পথচারির উপর আছরে পরে , তাদের কাধে চেপে মাথার চুল টেনে ধরে , হঠাত করে কাধে চড়াও হয়ে উকুন বাছায় লেগে গিয়ে কতভাবেই না কৌতুকময় দৃশ্যের অবতারনা করে দর্শকদেরকে ছবি তোলা ও ও মুখরোচক কাহিনীর জন্ম দেয় ।
ছবি -২৯ / ৩৩ : বাচ্চা দুটার তামশা দেখে আর বাচিনা , ফল খাব না এদের সামলাব



ছবি - ৩০/৩৬ : লাফ দিয়ে তো টাসকি খাইলাম ,সত্যিই সুন্দর হয়েছে বানরের মুর্তী দুইটা !!!



ছবি -৩১ /৩৩ : বাহ! সাজানো ফলের মালা খাইতে যে ভালা লাগে !!!



ছবি -৩২/৩৩ : ২০০৫ সনে লুপবুরী মন্দির প্রাঙ্গনে বানরদের জন্য ভোজ উৎসবে দর্শকদের ভীর



বাঙকোয়েট ফেসটিভাল শেষ হওয়ার পরে পর্যটকগন কি করবে , কোথায় থাকবে , কি দেখবে , আরো দু এক দিন কোথায় থাকতে পারবে, বাজেট হোটেল কোথায় পাবে সে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে থাকে বিবিধ রকম আকর্ষনীয় বিজ্ঞাপন, স্পেশাল অফার , ডিসকাউন্ট বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা ও আকর্ষনীয় ঐতিহাসিক পর্যটন স্থানের বিবরন যথা Prang Khaek ( শিব মন্দীর ) San Phra Kan (কালা মন্দির ) প্রভৃতি এবং সে সমস্ত জায়গায় যাওয়ার সহজ উপায় , থাকে বিভিন্ন হসপিটালিটি সেকটর কোম্পানীর বিজ্ঞাপন যেমনটি নীচের ছবিতে দেখা যায় । এটাই মুলত এই বানর ফেসটিভাল উৎসবের মুল বানিজ্যিক লক্ষ্য ,যার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে বিকসিত করা হয় ।
ছবি - ৩৩/ ৩৩ : শেষ মিনিটের সবচেয়ে কমদামের অফার, সুযোগ আছে কিনা দেখে নিন , All roads lead to Hotel Hilton



থাইল্যন্ডের বানরদেরকে কেমন সুন্দরভাবে পর্যটন শিল্প বিকাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখলে বিস্ময়াভিভুত না হয়ে পারা যায়না । প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস , ঐতিহ্য , স্থাপত্যশৈলী , প্রাগৈতাহাসিক কাহিণী প্রভৃতির সংমিশ্রন ঘটিয়ে স্থানীয় অধিবাসী নর ও বানরকে সম্পৃক্ত করে ও একইসাথে পর্যটন শিল্প সংস্লিষ্ট ব্যবসায়ী , হসপিটালিটি সেকটরের নামী দামী পাঁচতারা হোটেল কোম্পানী যথা হিলটন , মেরিয়ট , পরিবহন কোম্পানী যথা থাই এয়ার ও অন্যান্যদেরকে উৎসবের পৃষ্টপোষকতা করার জন্য TAT (Tourism Authority of Thailand) যেভাবে সমন্বিত উপায়ে একত্রিত করে নীজ দেশে পর্যটন শীল্পের বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে তা আমাদের জন্য হতে পারে একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত । আমাদের সিলেটের বান্দর টিলার বানরগুলির সাথেও একটি ধর্মীয় আবেগ অনুভুতি জড়িত আছে । স্থানীয়সহ দেশের অপর অংশের অগনিত মানুষেরও রয়েছে সে সমস্ত বানরদের প্রতি সহানুভুতি ও দরদ । দেশে বন বাদারের পরিমান কমে যাওয়ায় ও বানরেরা মানুষের খাবারে ভাগ বসানোর কারনে অনেক জনপদেই বানরেরা হয়রানী ও নিগ্রহের শীকার হয়ে বিলুপ্তির পথে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু একটুখানী ভিন্নভাবে এই বানর বাহিনীকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড তথা পর্যটন শিল্পের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে তারা আপদ না হয়ে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য সহজেই হয়ে উঠবে অমুল্য সম্পদ । বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নিতে পারে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ।

ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ।

ছবি সুত্র : গুগল নেট
তথ্য সুত্র :
উইকিপিডয়া ( ২০১৬) : বানর, উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে ।
Groves, C. (২০০৫) Mammal Species of the World ( তৃতীয় সংস্করণ । Johns Hopkins University Press.
Das, J., Molur, S. & Bleisch, W. (2008). Trachypithecus pileatus , IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008.
জিয়া উদ্দিন আহমেদ ( ২০০৯) , বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী জ্ঞানকোষ , বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি , ঢাকা
টুরিজম অথরিটি অফ থাইল্যান্ড : মাংকী বাফেট ফেসটিভাল
http://www.tourismthailand.org/Events-and-Festivals/Search?lifestyle_id=&cat_id=7&subcat_id=&view=&start=&end=&keyword=Monkey+buffet+festival

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৪৮টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×