somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ চিঠি

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একজন অমানুষ হয়েও মানুষের গল্প বলি। গল্প লিখি না। আজ এক সাথে একজন মানুষ এবং অমানুষের গল্প বলছি.. শুনুন-

নিজের ভিতরে মানুষ যখন প্রচন্ড ভালোবাসা উপলব্ধি করে, তখন আক্ষরিক অর্থে হৃদয়টা কি গলে যায়? কষ্টের নদী হয়ে বয়ে যায়? অনুভূতির প্রগাড় অনুভবে নিজেকে ডুবিয়ে নিয়ে যায়?
রাসেল জানে না।

আকাশচুম্বী অট্টালিকার নিজের ফ্ল্যাটে বসে ভাবছিল রাসেল। আজ পাঁচ বছর ধরে পরবাসী। রাস্না চলে যাবার পর থেকেই…
ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল সে রাস্নাকে। সেই উদ্দাম দিনগুলোর কথা... কতটা পাগল ছিল ওর জন্য! ভাবলে আজও শিহরণ জাগে মনে। কিন্তু কিভাবে ধীরে ধীরে সব কিছু শেষ হয়ে গেল। অনুভূতিগুলো কর্কশ আর ধারালো হতে হতে এক সময়ে একেবারে ভোঁতা হয়ে গেল। হৃদয়ে রাস্নার জন্য যেটুকু ভালোলাগা ছিল, ধীরে ধীরে সেটা অন্য একজনের জন্য বেড়ে উঠতে লাগল।
যদিও রাসেল বুঝতে পারছিল, এটা ঠিক না... সে তলিয়ে যাচ্ছিল... অনৈতিক সম্পর্কের এক অন্তহীন গভীরতায়।

কিছু একটা বিধলো যেন রাসেলের হৃদয়ে।
জ্বালাময়ী... বোবা দম বন্ধ এক অনুভূতি... নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়া এক অনুভূতি।
টেবিলের উপর রাখা বাদামী রঙের ডায়েরিটার দিকে তাকায়।
কাছে যায়।
পুরনো ডায়েরিটা হাতে নিতেই পাঁচ বছর আগের এক শীতল রাত নেমে আসে দুবাই এর সেই সুউচ্চ ভবনটির ঐ ফ্ল্যাটটিতে।
রাস্নার শেষ দিনগুলোতে ওর জন্য লিখে যাওয়া কথাগুলো এখনো রয়ে গেছে। যদিও অন্য সব জিনিসের মত রাস্না এই ডায়েরিটাকেও পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
নিজের মত।
যেভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে অন্য জগতে চলে গেল।
পোড়া ডায়েরিটা থেকে যতটুকু অক্ষত রয়েছে, সেই বিবর্ণ পাতায় রয়ে গেছে রাস্নার অব্যক্ত কথামালা। এই পাঁচ বছরে কত হাজারবার যে রাসেল সেগুলোকে পড়েছে... চোখ দিয়ে... হৃদয় দিয়ে... নিজের ভিতর থেকে নিজেকে বের করে এনে সর্ব সত্ত্বা দিয়ে।

বিশাল ব্যালকনির সামনে দাঁড়ালে শহরটাকে দেখা যায়। বুর্জ আল খলিফা সগৌরবে আকাশ ফুঁড়ে নিজের অবস্থানকে জাহির করছে। সেদিকে তাকিয়ে নিজের ভিতরের নিচুতাকে আরো একবার অনুভব করে।
বসে।
ডায়েরির পাতা খোলে।
রাস্না ওর সামনে নিজেকে উন্মোচন করে... রাসেল সেই সময়ে হারিয়ে যায়...
... ... ...
৫ ডিসেম্বর, ২০১০
যাকে ভালোবাসো তাকে যেন পাও। আজকে থেকে বাইরে যাবার আগে আমার কাছ থেকে বিদায় নিও না। ঘরে ফিরে ও আমাকে খুঁজবে না। আমি তোমার জীবনে কোথাও নাই। কোনদিন আসবো ও না। আমাকে তোমার কিছু বলার ও দরকার নাই। সম্পর্কের শুরু থেকে সারা জীবন যত কষ্ট বুঝে না বুঝে দিয়েছি মাফ চাই। আমার আর সামর্থ্য নাই। আমাকে ছেড়ে দাও। কিছু লাগবে না। আল্লাহ আমাকে কোন দিন অভাবে রাখে নাই। ছেড়ে দাও, আল্লাহ আমার একটা ব্যবস্থা করবেন।

৭ ডিসেম্বর, ২০১০
বছরের পর বছর দিন রাত কষ্ট পাচ্ছি। তুমি কোনদিন আমার হবে না। কাড়াকাড়ি করতে আর ইচ্ছা করে না। আমাকে ছেড়ে দাও, প্লীজ! এতগুলি বছর ধরে নিজেকে কষ্ট দেয়া তোমার জরুরী ছিলো না। তবু যা কিছুই হয়ে থাক, বাকি জীবনটা নিজেকে নিয়ে বাঁচো। স্যাক্রিফাইস বাধ্যতামূলক না। তোমার সব স্যাক্রিফাইস এর জন্য আল্লাহ তোমাকে অফুরন্ত পুরস্কার দিক। বাকি জীবন শান্তিতে থাকো।

৮ ডিসেম্বর, ২০১০
তোমার বিছানা আমি থাকতে খালিই ছিলো সারা জীবন। আমি চলে গেলে কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত থাকবে। অন্তত তার স্বপ্ন থাকবে। নিজেকে অস্বীকার করে কাউকে সুখী করা যায় না। নিজেকে সুখী করো। আমাকে সান্ত্বনা দেবার দরকার নাই। তোমার কাছে আর কিছু আমার চাওয়ার নাই।

৯ ডিসেম্বর, ২০১০
মানুষের মন পঁচিশ বছর ধরে মিথ্যা কথা বলে না। এতগুলি বছর সারাক্ষণই আমি তোমার দিকে তাকানো ছিলাম। তোমার সব শব্দ, ভংগী, সিদ্ধান্ত সব কিছুতে আমার সমান মন ছিলো। কত কষ্ট নিয়ে চলো আমি জানি। অনেক বছর ধরে বলছি, যা চাও তা চাইবার সাহস করো। আমি থাকতে তোমার এই কষ্ট শেষ হবে না। শুধু শুধু আর নিজেকে কষ্ট দিও না। তোমাকে জানার ইচ্ছা ছিলো। জানলাম। কোন অভিযোগ নাই। আমাকে ভালোবাসো ভেবে ভুলে এতসব কান্ড করলাম। আজীবন সব জায়গায় একই ভুল ছিলো আমার।

১১ ডিসেম্বর, ২০১০
যে সমস্যার সমাধান আছে তা নিয়ে কষ্ট পাওয়া বোকামী। নিজের মানুষের কাছে যাও। উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ডাকলে কেউ না এসে থাকে না। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালো রাখুক।

১২ ডিসেম্বর, ২০১০
কেন কাউকে ক্ষনিকের জন্য ভালোবাসো? চিরকালের হবার সাহস নাই? ভালোবাসা কি খেলা? কাউকে কষ্ট দিয়ে আমার কাছে আসতে হবে না। আমাদের বোধ হয় সরাসরি কথা বলা দরকার। খারাপ লাগছে। অনেক কষ্ট, তবু আমি তোমার বন্ধু। ইনশা আল্লাহ জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তোমার ভালো চাইবো।

১৩ ডিসেম্বর, ২০১০
ঈদে বাড়ি গেলে আর আসবো না ইনশা আল্লাহ। আমরা একটা রাত জেগে কথা বলতে পারি? তুমি বলবে। আমি শুনবো। কতগুলি বছর ধরে তোমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি! আমার কাছে তোমার সুখ হয় নাই। কেউ তোমাকে সুখী করুক। তাকে কাছে পেয়েও রাখতে পারো নাই। সেই কষ্ট তোমার বুক ভরা! সেই শুন্যতার হাহাকার তোমার মনে! এত জোর করে তোমাকে দখল করে রাখতে আমার কষ্ট হয়। তোমাকে হারানোর পর তোমার শরীরে সব শুধু তোমার না থাকার চিহ্ন। আমার বোকামীর শাস্তি। আমার কথাগুলি তুমি সব বুঝ, না? ভুল আছে এই কথাগুলিতে?

১৪ ডিসেম্বর, ২০১০
তোমার জীবনটা নষ্ট করলাম! ভালোবেসে। এসেই আবার চলে যাবে? আজকের রাতটা আমার সাথে থাকো, প্লীজ। আমার কষ্টগুলি কমার জন্য...একটু সময় দাও! এই জীবনে পরের দিনটা পরের মুহুর্তটা কেউ জানে না। আজকের অনুরোধটা রাখো। কয়েকটা দিন শুধু আমার হয়ে থাকো। এতোগুলি বছর অপেক্ষা করলাম...আমার হবে না? কিছু না, শুধু সব কাজ বাদ দিয়ে আমার পাশে থাকো। এই বছরের শেষ দিনটি পর্যন্ত...প্লীজ!

১৬ ডিসেম্বর, ২০১০
তুমি এলে না... থাকলে না!
কেন এমন করলে?
আজ বিজয় দিবস! তোমাকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছি। তোমার জীবন থেকে নিজেকে ইরেজ করে দিয়ে যাচ্ছি।
খুব একবার কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তোমায়!

... .... ...
এর পরের পাতাগুলো অক্ষত ছিল না।
রাস্না নিজেকে সহ ওর বেডরুমের অন্য জিনিসগুলোকেও পুড়িয়ে দিয়েছিল।
অভিমান?
অতৃপ্তি?
তবে এসব কিছুর জন্য রাসেল নিজেই দায়ী ছিল।
একটা পোড়া ডায়েরি হাতে নিয়ে নিজের হৃদয়ের পুড়ে যাওয়া অনুভব করে করে এক মধ্যবয়স্ক বাস্তবেও পোড়া গন্ধ পায়। হৃদয় নিয়ে খেলেছিল সে নিজেই। তাই আজ তার নিজের হৃদয় পোড়া ঘ্রাণে সে নিজেই প্রতিটি মুহুর্ত এক অকল্পনীয় কষ্টে দিশেহারা হতে থাকে।
এ থেকে তার মুক্তি নেই... নিজেও সেটা ভালো করে জানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×