হাকীম আল-মীযান।
বাংলাদেশে যখন প্রথম মোবাইল নামলো তখন গ্রামীন ফোন কোম্পানী যথাসম্ভব: প্রতি মিনিট প্রায় ৭.০০ টাকা করে কাটতো। শুধু তাই না মিনিটের মাঝে কোন পালস ছিলো না। সবার জন্য মোবাইল কেনা ছিলো সাধ্যের বাইরে। বিভিন্ন ফোনের দোকান থেকে মোবাইলের মাধ্যমে কারো কাছে ফোন করতে গেলে ১০.০০ টাকা করে প্রতি মিনিটের জন্য গুনতে হতো। তখন অবশ্য একটা বিষয় ছিলো; মোবাইলে মানুষ প্রয়োজনীয় কথাগুলো অল্প সময়ের ভেতরে বলে ফেলার চেষ্টা করতো। অন্য দিকে মোবাইল সেটগুলো কিনতে গেলেও অনেক বেশি চড়া দামে কিনতে হতো। জানিনা; তারা কি বেশি লাভ রাখতো, নাকি পাইকারী ক্রয় মূল্য বেশি থাকার কারণে পাবলিককেও বেশি দিয়েই কিনতে হতো? ইদানিং তো সেটের দামও আশাব্যঞ্জক হারে কমে গেছে।
এরপর শোনা গেলো নতুন কোম্পানী নামছে; এর নাম নাকি একটেল। ওদের কলরেট নাকি কম। তাই অনেকে গ্রামীন বাদ দিয়ে একটেলের সীম কিনতে শুরু করলো। এরপর ক্রমে ক্রমে সিটিসেল, বাংলালিংক, ওয়ারিদ এবং টেলিটকও নামার ফলে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হলো। গ্রাহকগণকে কে কতো সুবিধা দিতে পারে! ব্যবসার ক্ষেত্রে এ বিষয়টা খারাপ কিছু নয়। গ্রাহকগণকে স্বল্প মূল্যে সেবা দিতে পারাটা ব্যবসার একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এ পর্যায়ে দিনে দিনে বিভিন্ন সুবিধা সৃষ্টি হলো: ১। সব ধরণের কলরেট নিচে নেমে আসলো। ২। পালস এর সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হলো। ৩। গ্রাহক সেবার মান উন্নত থেকে উন্নততর হতে লাগলো। পরবর্তী পর্যায়ে টুজির জাগায় আসলো থ্রিজি। থ্রিজি সীম দিয়ে এনড্রোয়েট সেটের মাধ্যমে এখন শুধু কথা নয় বরং ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত বাঙালি আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথার সাথে সাথে চলমান ছবি দেখার এক অনন্য দিক সৃষ্টি হলো।
প্রথম দিকে থ্রিজি এম,বি প্যাকের দাম একটু চড়া ছিলো বিধায় মডেম দিয়ে ইন্টারনেট চালানো ছিলো ব্রডব্যান্ড লাইনের তুলনায় অনেক বেশি। ইদানিং বিভিন্ন কোম্পানিগুলো আবারো নেমেছে কে কতো কম টাকায় বিভিন্ন রকমের এম,বি/জি,বি প্যাক দিতে পারে। মোবাইল কোম্পানীগুলোর একের সাথে অপরের এই দর প্রতিযোগিতার ফলে; আমরা সাধারণ নাগরিকগণ উপকৃতই হচ্ছি। তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটাই চাই যে; এ প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকুক। কলরেট ক্রমে ক্রমে নিচে নেমে আসুক। চলে আসুক আমাদের সাধ্যের অনুকূলে। এ কারণেই দেখা গেছে পরবর্তীতে গ্রামীন ফোন্ও অন্যান্য কোম্পানীর রেটের কাছাকাছি রেট সমন্বয় করেছে। অন্য দিকে এম,বি/জি,বি প্যাকের ক্ষেত্রে যদি গ্রাহকের ক্রয় মূল্য এবং প্যাকের সময় আরো বর্ধিত করা যায়- তবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষ ব্রডব্যান্ড লাইন দিয়ে ইন্টারনেট চালানো কমিয়ে দিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সীম ব্যবহার করে মডেম এর মাধ্যমে ইন্টারনেট চালাবে। পেশাগত ভাবে ব্যস্ত মানুষগুলো সাইবার ক্যাফেতে সময় নিয়ে বসে বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক, আর্থিক এবং মানসিক চাপ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবে।
এখন কথা হলো; পেছনে যা চলে গেছে- তাতো গেছেই। ও সব বলে আফসোস বাড়িয়ে কোনো লাভ নাই। যখন যেটা হবার তখন সেটাই হয়। এটাই বোধ হয় নিয়ম প্রকৃতির। এমতাবস্থায়; সর্ব প্রকার মোবাইল কল এবং ইন্টারনেট প্যাক যদি সাধারণ মানুষের আয়ত্বের ভেতরে থাকে তখন মোবাইল সীমের মাধ্যমে কথা বলা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কার্যক্রমে প্রাণের সঞ্চার হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমও এগিয়ে আসবে ইনশা-আল্লাহ।
• উপরোক্ত লেখায় কোন কিছু আমি কাউকে হেয় করার জন্য লেখি নাই। প্রথম দু’প্যারার তথ্যের সাথে বাস্তবে কিছু তারতম্য থাকলে তা জানাবেন। যেহেতু ১৯৯৮ সাল থেকে অদ্যাবধি মনের মাঝে থাকা বিষয়গুলো তুলে ধরতে চেয়েছি।
• আরেকটি বিষয় হলো; মোবাইল সীম ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বিভিন্ন আইনগত দিকগুলোও স্পষ্ট ভাবে জানা থাকা দরকার। হ্যাকারসহ বিভিন্ন প্রতারকদের আশ্বাসে নির্ভর করা থেকে নিজেকে সামলে রাখার প্রয়োজনে কম্পিউটার তথা ইন্টানেট সম্পর্কে ধারণা অর্জনে প্রশিক্ষণ থাকলে ভালো হয়। ইদানিং সরকারী অর্থায়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্রি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সুযোগ না থাকলে কিছু অর্থ খরচ করে হলেও শেখা ভালো। কারণ; বর্তমান যুগই ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল নির্ভর।
• ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে কিছু পর্ণ পেইজ চলে আসে বিধায়; ব্রাউজারে তথা যান্ত্রিক মাধ্যমের সফটওয়ারে এন্টি পর্ণ
ব্যবস্থা না থাকলে শিশু-কিশোরদের হাতে সরাসরি ছেড়ে না দেয়াই বোধ হয়; বুদ্ধিমানের কাজ। নতুবা তাদের ভবিষ্যত জীবন লাভের বদলে ক্ষতির দিকে চলে যাবার সম্ভাবনা কাজ করতে পারে।
• সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত ভাবে কামনা; এ সম্পর্কিত ভ্যাটকে আরো কিছু কমানো গেলে হয়তো আরেকটু উপকৃত হতাম। সাথে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি; দেরি করে হলেও সীম নিবন্ধনে সরাসরি জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের সাথে মিলায়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে সীম প্রদান কার্যকমকে। এতে করে মোবাইল ব্যবহার করে বিভিন্ন সমাজ বিরোধী কাজ বন্ধ করা ক্রমে ক্রমে অবশ্যই সম্ভব হবে।
• পুনরায় বলছি; আমার এ লেখার কোন ক্ষেত্রে ভুল তথ্য থাকলে এবং মনের অনিচ্ছা সত্বেও অবস্থার প্রেক্ষিতে উক্ত বিষয় সম্পর্কিত কিছু কথা পাঠক সমাজে তুলে ধরার কারণে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললে তা সহজ ভাবে মেনে নেবার মানসিকতা আমি ব্যক্তিগত ভাবে লালন করি বিধায় মেনে নিবো এবং খুশি হবো।
ধন্যবাদান্তে- হাকীম আল-মীযান।
লেখাটি লিখতে বসেছি: ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০. ৩০টায় শেষ করেছি ২২ ফেব্রুয়ারি ১২ টা ১ মিনিটে।
পোষ্ট করার জন্য বসেছি: ১২ টা ৫ মিনিটে। সম্পাদনা করেছি: ১২ টা ৩৫ পর্যন্ত।
পোষ্ট করলাম: ১২ টা ৪০ এ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪০