২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারী মুক্তি পাওয়া The Classic ছবিটি সাউথ কোরিয়ার। সে বছর হৈ চৈ ফেলে দেওয়া রোম্যান্টিক ঘরনার ছবিটির পরিচালক কাওয়াক জি-ইয়ং যিনি My Sassy Girl, Autumn Trip, Watercolor Painting in a Rainy Day এর মত ছবির পরিচালক এবং The Romantic President, My Girl and I এবং Daisy নামের ছবিগুলোর কাহিনীকার হিসেবে বিশ্ব জোড়া সমাদৃত।
১২৭ মিনিট ব্যাপ্তি ছবিটির কাহিনী দুটি অংশে ভাগ করা। একটি ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র জি-হিয়ের ভালবাসা, অন্যদিকে জি-হিয়ের মায়ের ভালবাসার অপ্রাপ্তির ফ্ল্যাশব্যাক।
ছবির কাহিনী আবর্তিত হয় জি-হিয়েকে ঘিরে যে কিনা বাসা পরিষ্কার করতে গিয়ে মায়ের একটা বাক্স পায় যেখানে অনেকগুলো চিঠি এবং একটি ডায়রিও থাকে। মায়ের ডায়রি পড়তে গিয়েই জি-হিয়ে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়।
জি-হিয়ের মা জু-হি তখন তরুণী, কোন এক গ্রীষ্মের ছুটিতে সে গ্রামে বেড়াতে আসে আর তখন তার পরিচয় হয় জুন-হার সাথে। দুইজনের বাস একই শহরে হলেও কেউ কাউকে আগে দেখেনি কিন্তু গ্রামে একসাথে ঘুরতে গিয়ে একজন আরেকজনের প্রেমে পড়ে যায়। ছুটি শেষে দুজনে শহরে ফিরে গিয়েও ভালবাসা চলতে থাকে। কিন্তু এদিকে জুন-হারের বেষ্ট ফ্রেন্ড টাই সোর সাথে পারিবারিক ভাবে পূর্বেই জু-হির বিয়ে ঠিক করা থাকে। কোনভাবে টাই সো জেনে যায় জুন-হার এবং জু-হির প্রেমের কথা। বন্ধুর ভালবাসাকে মূল্য দিতে গিয়ে টাই সো আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ জু-হিকে সেও ভালবেসে ফেলেছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়। পরবর্তীতে প্রেমকে বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জু-হি এবং জুন-হা। আর পড়াশুনা শেষ করে জুন-হা আর্মির মিশনে যায় ভিয়েতনামে। আর সেখানেই নিজের দৃষ্টি হারায় জুন-হা। কোরিয়ায় ফিরে আসার পর সে জু-হির সাথে দেখা করে এবং জানিয়ে দেয় যে সে বিয়ে করেছে। এ কথা শুনে কষ্টে পরে সে বিয়ে করে ফেলে টাই সোকে। বিয়ের পর জু-হি জানতে পারে যে জুন-হা আসলে বিয়ে করেনি যখন তাকে জানানো হয়েছিলো, টাই সোর সাথে বিয়ে হবার পর জুন হা বিয়ে করে। নিজের দৃষ্টিহীনতা এবং প্রেমিকার পারিবারিক চাপের কারণেই জুন-হা জু-হির থেকে দূরে সরে আসে। জু-হির বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় মারা যায় তার স্বামী টাই সো। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও আবার বিয়ে করার কথা ভাবে না জু-হি।
জু-হির মেয়ে জি-হিয়ে এবং জুন-হার ছেলে সাং-মিনের ভালবাসা নিয়েই এরপর এগোয় বর্তমানের কাহিনী। তবে সেই কাহিনি আর বলছি না। জি-হিয়ে এবং সাং-মিনের প্রেম কাহিনী জানতে দেখতে হবে The Classic মুভিটির শেষ অব্দি।
ছবির কাহিনী যে অসাধারণ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা বাহুল্য,ছবির কাহিনীকারও পরিচালক নিজেই।
ছবির দৃশ্যায়নও নজরকাড়ার মত। বিশেষ করে প্রকৃতি বৃষ্টি এবং গ্রামের দৃশ্যগুলো সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে ছবিতে। ভালো লেগেছে মিষ্টি প্রেমের দৃশ্যগুলোও। কানে স্বস্তি দিয়েছে অসাধারণ সঙ্গীতায়জন।
অভিনয়ের কথা বললে সবাইকেই ১০০ তে ১০০ দেওয়া যায় অনায়াসেই। তবে জি-হিয়ে এবং জু-হি মানে মা এবং মেয়ে উভয় চরিত্রে অভিনয় করা সন ইয়ে-জিনের অভিনয় চোখে পড়ার মত। জু-হি চরিত্রের চঞ্চলা আবার জি-হিয়ে চরিত্রের শান্ত মেয়ে দুইটা চরিত্রই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে অভিনেত্রী। এছাড়া জুন-হা চরিত্রের জো সুয়েং ও, সাং-মিন চরিত্রের জো ইং-সান, টাই-সো চরিত্রে অভিনয় করা লে কি-ও, এরা সবাই মন প্রান ঢেলে অভিনয় করেছে।
অনবদ্য অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রী সন ইয়ে-জিন সে বছর বেক্সাং আর্ট এ্যাওয়ার্ড, গ্র্যান্ড বেল এ্যাওয়ার্ড এবং ব্লু ড্রাগন ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড-এর আসরে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেয়। এছাড়াও সেরা সঙ্গীতায়জনের জন্য কোরিয়ান ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডের আসরে সেরা মিউজিক এ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় ছবিটি। ৯ম মস্কো আন্তর্জাতিক রোম্যান্টিক মুভি এ্যাওয়ার্ডে সেরা জুটির খেতাব জিতে নেয় দ্বৈত ভাবে সন ইয়ে-জিন এবং জো সুয়েং। হংকং ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডে সেরা এশিয়ান ছবির জন্য মনোনয়নও পায় এটি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০