somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ- নিয়তি

১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১২ আগস্ট সারা দেশে একযোগে ১০১ টি হলে মুক্তি পেল বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নিয়তি’। বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং ভারতের এসকে মুভিজের ব্যানারে নির্মিত ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাকির হোসেন রাজু। বাংলাদেশে আজ মুক্তি পেলেও ভারতে ছবিটি ১০ জুন মুক্তি পায়। রোম্যান্টিক অ্যাকশনধর্মী ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেফিন শুভ এবং জলি।

ছবির কাহিনী আবর্তিত হয় মিলাকে (জলি) ঘিরে যার বাবা চরম কৃপণ ধরণের মানুষ। যাবতীয় টাকা এবং গয়না সিন্দুকে ভরে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখে। মেয়েকে হাত খরচের টাকাও দেয় না। তাই মিলি বাধ্য হয়ে রাতের আঁধারে টাকা চুরি করে বাবা মায়ের রুম থেকে। কিন্তু অন্য এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধরা পড়ে যায় মিলি। কৃপণ বাবার উপর চরম বিরক্ত মিলি। এদিকে মিলির বাবা কৃপণ হলেও এলাকার মাস্তানদের ভয়ে তাদের ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা ঠিকই দিতে চায় প্রানের ভয়ে। যেহেতু মিলি বাবার কাছ থেকে টাকা পায় না সেহেতু ঠিক করে এলাকার মাস্তানের সাথে চুক্তি করে টাকা হাতিয়ে নিবে। কিন্তু মাস্তানের খোঁজ করতে গিয়ে দেখা হয়ে যায় শহরের অন্যতম নামকরা ব্যবসায়ী শুভ্র আহমেদের সাথে। মাস্তান অন্যান্য ধনী পরিবারের মত শুভ্রর পরিবারের কাছেও চাঁদা চায়। আর শুভ্র প্রতিবাদ হিসেবে মেরে শায়েস্তা করে মাস্তানদের। আর সেখানেই শুভ্রর সাথে প্রথম দেখা হয় মিলার। আর প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায় শুভ্রর। এদিকে একদিন কাহিনীক্রমে হাতের কোল্ড ড্রিংসের বোতল অসাবধানতাবশত মিলা ছুঁড়ে মারলে তা দুর্ভাগ্যক্রমে শুভ্রর গাড়িতে লাগলে গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। শুভ্র মিলার কাছে পরিণামে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পঞ্চাশ হাজার টাকা চায়। কিন্তু যেহেতু মিলার বাবা কৃপণ সেহেতু মিলা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এদিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিলাকে তাই এক মাস শুভ্র গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ করে। মিলাও যেহেতু শুভ্রকে পছন্দ করে তাই আর অস্বীকৃতি জানায়নি। আর এভাবেই এক সময় একজন আরেকজনের প্রেমে পড়ে যায়। মিলার বাবা মাও খুশি এমন ভালো ছেলে পেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। কাহিনী মোড় নেয় অন্যদিকে। আর এ সব কিছু জানতে দেখতে হবে ‘নিয়তি’ ছবির শেষ অব্দি।

ছবির কাহিনীকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আবদুল্লাহ জহির বাবুর নাম। আবার বলা হয়েছে কাহিনীটা নাকি হলিউডের ‘দ্যা নোটবুক’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে ছবিটির কোথাও দ্যা নোটবুকের ছায়া পাওয়া যায়নি। এমনকি ছবির মাঝখানের বিরতির আগ পর্যন্ত যতটুকু কাহিনী দেখানো হয় তার ৯৫% ছিল কোরিয়ান মুভি ‘হান্ডেট ডেইজ উইদ মিস্টার অ্যারোগানট’ ছবির কপি পেস্ট। এমন কপি পেস্টে কোন সমস্যা নেই কারণ আমাদের পাশের দেশের বলিউড ইন্ডাস্ট্রিজই হরহামেশা হলিউড, কোরিয়ান কিংবা তামিল মুভির কপি পেস্ট করে এবং ছবিগুলো ব্যবসায়িক ভাবে সাফল্যতাও পায়। কিন্তু কথা হল বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সুন্দর ভাবে কপি পেস্ট করাও শিখতে পারলো না মুভিতে। কপি পেস্ট করতে গিয়ে অসংগত বিষয়গুলো চলে আসে। যেমন ছবিতে দেখা যায় মিলি পার্কে হাঁটতে হাঁটতে কাঁচের বোতলে করে কোক খেতে থাকে। কোক খাওয়া শেষ করে বোতলটা দূরে ছুঁড়ে মারে। এখন কথা হল বাংলাদেশ তো দূরের কথা, ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও কি কোক কাঁচের বোতল সহ বিক্রি করে? এখানের দৃশ্যটা অন্যভাবে দেখানো যেত। আবার পুরো মুভিতে কিছু কিছু জায়গায় কাহিনী টেনে এত লম্বা করেছে যে পুরো বিরক্ত ধরে গেছে। বিশেষ করে ইমোশনাল দৃশ্যগুলো। ইমোশনের ব্যাপারগুলো এত্ত বার কারণ ছাড়া দেখানো হয়েছে যে পরে ইমোশনই রাগ করে দূরে সরে গেছে মন থেকে।

অভিনয়ের কথা যদি বলা হয় তবে বলবো আরেফিন শুভ যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। তবে ছবির শেষের দৃশ্যে বৃদ্ধ চরিত্রে তার অভিনয় ততটা ভালো লাগেনি, আরেকটু ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। মিলা এবং শুভ্রর বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা সকলের অভিনয় ভালো ছিল। ভালো ছিল ভিলেন চরিত্রে আরমান পারভেজ মুরাদের অভিনয়। কিন্তু জলির অভিনয় মন কেড়ে নিতে পারেনি। সংলাপের সাথে মুখের এক্সপ্রেশনের মিল পাওয়া যায়নি অনেক জায়গায়। সংলাপ বলার সময়ও নিজের কণ্ঠের উপর নিয়ন্ত্রন ছিল না তার। অভিনয়ে আরেকটু মনোযোগী হলে আর কণ্ঠকে ঠিক মত ব্যবহার করতে পারলে জলিও হয়তো হতে পারে আগামীর উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

ছবির শিল্প নির্দেশনা ভালো ছিল। ভালো লেগেছে রূপসজ্জাও। তবে শুভর বৃদ্ধ রূপকে আরও ভালো করে ফোটানো দরকার ছিল। ছবিতে সবার পোশাক পরিচ্ছেদও ভালো লেগেছে। অন্তত কারো পোশাক আশাকে খ্যাত তকমাটা লাগাতে পারা গেল না।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় জাজের ব্যানারে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিগুলোতে ভারতের ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশী। কোন কোন ছবিতে তো শুধু ভারতকেই পাওয়া যায় খুঁজে, বাংলাদেশের নাম গন্ধও পাওয়া যায় না। তবে নিয়তি ছবিতে এই ব্যাপারটা তেমন চোখে পড়েনি। বিষয়টা ভালো ছিল।

পুরো ছবিতে শতভাগ ভালো লাগার মত ছিল ছবির গানগুলো। প্রতিটা গানই একটা আরেকটার চেয়ে ভালো। ‘ঢাকাই শাড়ি’র মত ঝাকানাকা গান যেমন ছিল, তেমনি ছিল ‘তোকে ছাড়া’র মত সফট মেলোডিয়াস গান। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে নব্বই দশকের ছবি ‘ভালবাসি তোমাকে’ থেকে নেওয়া ‘অনেক সাধনার পরে’ গানটির রিমেক ভার্সন। সুর ঠিক রেখে ভিন্ন ধারার লয়ে গানটি ভালো লেগেছে।

সাড়ে তিন কোটি টাকা বাজেটের ছবিটি নিয়ে আশা ছিল অনেক। তবে সেই আশায় মোটামুটি গুঁড়েবালি। তবে তাও বলবো, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সামনে আরও ভালো ছবির প্রত্যাশায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:১৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×